দীর্ঘদিন কোণঠাসা ছিল জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হয়েছিল। নিষিদ্ধও করা হয়েছিল দলটিকে। তবে সরকার পতনের পর রাতারাতি তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দলকে তৃণমূল পর্যায়ে আরও শক্তিশালী করতে সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনমুখী কার্যক্রমও শুরু করেছেন নেতারা। চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকা জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এসব এলাকাকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে কাজ চলছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা করা হলেও, অন্তত সাতটি আসন নিয়ে স্বপ্ন বুনছে জামায়াত।

চট্টগ্রামে রয়েছে জামায়াতের ভোটব্যাংক। যেসব আসন নিয়ে স্বপ্ন দেখছে জামায়াত, সেসব আসনে বিএনপিরও শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। তাই আগামী নির্বাচনে এসব আসনে থাকবে সবার নজর। জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রামের যে সাতটি আসনে সাংগঠনিক কাজে জোর দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো হলো– চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড), চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী), চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর), চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ১০, ১৫ ও ১৬ আসন নিয়ে বেশি আশাবাদী তারা।

একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৫ আসনে প্রার্থী হতে পারেন জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম। চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী হবেন মহানগর জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। কোনো কারণে মাওলানা শামসুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে নির্বাচন করতে না পারলে, তখন সেই আসনে চলে যেতে পারেন শাহজাহান চৌধুরী। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী হতে পারেন  নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী। চট্টগ্রাম-১৬ আসনে নির্বাচন করতে পারেন উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম। এ ছাড়া প্রার্থী তালিকায় চট্টগ্রাম-১ আসনে আছেন জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান, চট্টগ্রাম-৩ আসনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আলাউদ্দিন সিকদার, চট্টগ্রাম-৪ আসনে ব্যবসায়ী আনোয়ার সিদ্দিকী ও চট্টগ্রাম-৮ আসনে ডা.

মো. আবু নাসের। কোনো কারণে তাদের কেউ নির্বাচন করতে না পারলে আসনগুলোতে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বিকল্প প্রার্থীও।

অন্যান্য আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন– চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) অধ্যক্ষ নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) শাহজাহান মঞ্জুর, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) ডা. ফজলুল হক, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) শফিউল আলম, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) ইঞ্জিনিয়ার লোকমান, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান এবং চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ডা. শাহাদৎ হোসাইন।

চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী সমকালকে বলেন, ‘জামায়াত গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনমুখী দল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার শেষে নিশ্চয়ই দ্রুত নির্বাচন দেবে। তাই দলকে শক্তিশালী করতে কাজ চলছে। নিয়মিত সভা-সমাবেশসহ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আমরা যেহেতু নির্বাচনে যাব, সে কারণে আমাদের মধ্যে পরিকল্পনা থাকাটাও স্বাভাবিক। তবে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হলে আনুষ্ঠানিকভাবে দল কোন আসনে কে প্রার্থী হবে, তা ঘোষণা দেবে। এখন আসনভিত্তিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হচ্ছে এবং কিছু আসনে ঘোষণাও দেওয়া হচ্ছে।’
মহানগর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ সমকালকে বলেন, ‘জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যারা এটি করেছে, তারা মনে করেছিল, এভাবে হয়তো জামায়াতকে শেষ করে দেওয়া যাবে; কিন্তু তা হয়নি। দল আরও শক্তিশালী হয়েছে। নির্বাচন আসছে। তাই মাঠ পর্যায়ে দলকে গোছানোর পাশাপাশি নির্বাচনমুখী কার্যক্রম চলছে, তৈরি করা হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা।’
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন জামায়াতের মূল ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আসনটি থেকে একাধিকবার নির্বাচনে জয়ী হন দলটির নেতারা। সরকারের জামায়াতবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে এক পর্যায়ে নিজেদের ঘাঁটিতেই কোণঠাসা হয়ে পড়েন তারা। এখন সেখানে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে জামায়াত।

১৯৯১ সালে এ আসনে তৎকালীন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুকে হারিয়ে জয়লাভ করেন জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা শাহজাহান চৌধুরী। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে শাহজাহান চৌধুরীকে হারিয়ে জয়ী হন বিএনপির তৎকালীন নেতা ও বর্তমানে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। ২০০১ সালে অলিকে হারিয়ে জয় পান শাহজাহান চৌধুরী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অলিকে হারিয়ে জেতেন জামায়াতের আরেক প্রভাবশালী নেতা শামসুল ইসলাম। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
সিটি করপোরেশনের ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে গত তিন নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আফছারুল আমীন। বিএনপি থেকে এখানে নির্বাচন করেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। বিভিন্ন সময় আসনটি থেকে জামায়াত প্রার্থী দিতে চাইলেও বিএনপি রাজি হয়নি। এবার এ আসন নিয়ে জামায়াতের আগ্রহ আরও বেড়েছে। আসনটির আওতাধীন শুলকবহর ওয়ার্ড থেকে একবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন শামসুজ্জামান হেলালী। পাহাড়তলী ও উত্তর আগ্রাবাদেও দলটির বিপুল সমর্থক রয়েছে। তাই আসনটি নিয়ে বড় পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এই আসন থেকে দলের হয়ে লড়তে পারেন শাহজাহান চৌধুরী। তিনি নির্বাচন করতে না পারলে প্রার্থী করা হতে পারে শামসুজ্জামান হেলালীকে।
এক সময় বাঁশখালীও ছিল জামায়াতের ঘাঁটি। আসনটি থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেছিলেন উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা জহিরুল ইসলাম। এবার তাঁকে সামনে রেখে ছক কষছে জামায়াত। এখানে বিএনপি কয়েক গ্রুপে বিভক্ত। এ পরিস্থিতি কাজে লাগাতে চাইছে জামায়াত। দলের স্থানীয় এক নেতা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে যেসব আসনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে বাঁশখালীও রয়েছে। এখানে নির্বাচনমুখী বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সখ্য দীর্ঘদিনের। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সম্পর্কে চিড় ধরেছে। নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগবিহীন মাঠের রাজনীতিতে পরস্পরের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে এই দুটি দল। কোনো কোনো স্থানে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়ছে তারা।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ হজ হ ন চ ধ র নগর জ ম য় ত র আসন ন য় ল ইসল ম হয় ছ ল পর য য় উপজ ল আওয় ম সরক র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে ১৬ আসনের ৭টিতে বিশেষ নজর জামায়াতের

দীর্ঘদিন কোণঠাসা ছিল জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হয়েছিল। নিষিদ্ধও করা হয়েছিল দলটিকে। তবে সরকার পতনের পর রাতারাতি তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দলকে তৃণমূল পর্যায়ে আরও শক্তিশালী করতে সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনমুখী কার্যক্রমও শুরু করেছেন নেতারা। চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকা জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এসব এলাকাকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে কাজ চলছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা করা হলেও, অন্তত সাতটি আসন নিয়ে স্বপ্ন বুনছে জামায়াত।

চট্টগ্রামে রয়েছে জামায়াতের ভোটব্যাংক। যেসব আসন নিয়ে স্বপ্ন দেখছে জামায়াত, সেসব আসনে বিএনপিরও শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। তাই আগামী নির্বাচনে এসব আসনে থাকবে সবার নজর। জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রামের যে সাতটি আসনে সাংগঠনিক কাজে জোর দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো হলো– চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড), চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী), চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর), চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ১০, ১৫ ও ১৬ আসন নিয়ে বেশি আশাবাদী তারা।

একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৫ আসনে প্রার্থী হতে পারেন জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম। চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী হবেন মহানগর জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। কোনো কারণে মাওলানা শামসুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে নির্বাচন করতে না পারলে, তখন সেই আসনে চলে যেতে পারেন শাহজাহান চৌধুরী। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী হতে পারেন  নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী। চট্টগ্রাম-১৬ আসনে নির্বাচন করতে পারেন উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম। এ ছাড়া প্রার্থী তালিকায় চট্টগ্রাম-১ আসনে আছেন জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান, চট্টগ্রাম-৩ আসনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আলাউদ্দিন সিকদার, চট্টগ্রাম-৪ আসনে ব্যবসায়ী আনোয়ার সিদ্দিকী ও চট্টগ্রাম-৮ আসনে ডা. মো. আবু নাসের। কোনো কারণে তাদের কেউ নির্বাচন করতে না পারলে আসনগুলোতে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বিকল্প প্রার্থীও।

অন্যান্য আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন– চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) অধ্যক্ষ নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) শাহজাহান মঞ্জুর, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) ডা. ফজলুল হক, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) শফিউল আলম, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) ইঞ্জিনিয়ার লোকমান, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান এবং চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ডা. শাহাদৎ হোসাইন।

চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী সমকালকে বলেন, ‘জামায়াত গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনমুখী দল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার শেষে নিশ্চয়ই দ্রুত নির্বাচন দেবে। তাই দলকে শক্তিশালী করতে কাজ চলছে। নিয়মিত সভা-সমাবেশসহ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আমরা যেহেতু নির্বাচনে যাব, সে কারণে আমাদের মধ্যে পরিকল্পনা থাকাটাও স্বাভাবিক। তবে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হলে আনুষ্ঠানিকভাবে দল কোন আসনে কে প্রার্থী হবে, তা ঘোষণা দেবে। এখন আসনভিত্তিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হচ্ছে এবং কিছু আসনে ঘোষণাও দেওয়া হচ্ছে।’
মহানগর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ সমকালকে বলেন, ‘জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যারা এটি করেছে, তারা মনে করেছিল, এভাবে হয়তো জামায়াতকে শেষ করে দেওয়া যাবে; কিন্তু তা হয়নি। দল আরও শক্তিশালী হয়েছে। নির্বাচন আসছে। তাই মাঠ পর্যায়ে দলকে গোছানোর পাশাপাশি নির্বাচনমুখী কার্যক্রম চলছে, তৈরি করা হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা।’
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন জামায়াতের মূল ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আসনটি থেকে একাধিকবার নির্বাচনে জয়ী হন দলটির নেতারা। সরকারের জামায়াতবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে এক পর্যায়ে নিজেদের ঘাঁটিতেই কোণঠাসা হয়ে পড়েন তারা। এখন সেখানে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে জামায়াত।

১৯৯১ সালে এ আসনে তৎকালীন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুকে হারিয়ে জয়লাভ করেন জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা শাহজাহান চৌধুরী। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে শাহজাহান চৌধুরীকে হারিয়ে জয়ী হন বিএনপির তৎকালীন নেতা ও বর্তমানে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। ২০০১ সালে অলিকে হারিয়ে জয় পান শাহজাহান চৌধুরী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অলিকে হারিয়ে জেতেন জামায়াতের আরেক প্রভাবশালী নেতা শামসুল ইসলাম। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
সিটি করপোরেশনের ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে গত তিন নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আফছারুল আমীন। বিএনপি থেকে এখানে নির্বাচন করেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। বিভিন্ন সময় আসনটি থেকে জামায়াত প্রার্থী দিতে চাইলেও বিএনপি রাজি হয়নি। এবার এ আসন নিয়ে জামায়াতের আগ্রহ আরও বেড়েছে। আসনটির আওতাধীন শুলকবহর ওয়ার্ড থেকে একবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন শামসুজ্জামান হেলালী। পাহাড়তলী ও উত্তর আগ্রাবাদেও দলটির বিপুল সমর্থক রয়েছে। তাই আসনটি নিয়ে বড় পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এই আসন থেকে দলের হয়ে লড়তে পারেন শাহজাহান চৌধুরী। তিনি নির্বাচন করতে না পারলে প্রার্থী করা হতে পারে শামসুজ্জামান হেলালীকে।
এক সময় বাঁশখালীও ছিল জামায়াতের ঘাঁটি। আসনটি থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেছিলেন উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা জহিরুল ইসলাম। এবার তাঁকে সামনে রেখে ছক কষছে জামায়াত। এখানে বিএনপি কয়েক গ্রুপে বিভক্ত। এ পরিস্থিতি কাজে লাগাতে চাইছে জামায়াত। দলের স্থানীয় এক নেতা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে যেসব আসনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে বাঁশখালীও রয়েছে। এখানে নির্বাচনমুখী বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সখ্য দীর্ঘদিনের। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সম্পর্কে চিড় ধরেছে। নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগবিহীন মাঠের রাজনীতিতে পরস্পরের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে এই দুটি দল। কোনো কোনো স্থানে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়ছে তারা।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ