প্রায় দুই মাস পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থেকে কক্সবাজার টেকনাফ সীমান্তে আবারও মুহুর্মুহু গোলার বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফ সাবরাং সীমান্তসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় রাখাইন থেকে বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। গোলার শব্দে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধের পর মিয়ানমারে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর (জান্তা সরকার) মধ্য তুমুল সংঘর্ষ ফের শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। তার আগে দীর্ঘ ১১ মাসের লড়াই-সংঘাতের পর ২০২৪ সালের ৭ ডিসেম্বর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের ২৭০ কিলোমিটার এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এরপরও স্বস্তিতে নেই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। মাঝখানে প্রায় দুই সংঘাত বন্ধ থাকার পর আবারো ওপার থেকে এপারে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
ওপারের গোলার বিকট শব্দের সীমান্তের এপার কাঁপছে উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘আমিও দুটি মুহুর্মুহু গোলার বিকট শব্দ শুনেছি। তবে সীমান্তে আামদের দায়িত্বরত বাহিনীরদের মাধ্যমে খোঁজখবর রাখছি।’
জানতে চাইলে টেকনাফ পৌরসভাস্থল সীমান্তের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, ‘সীমান্তের খুব কাছে হওয়ায় ওপারে গোলার বিস্ফোরণ হলে আমার বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় মিয়ানমারের গোলার শব্দ শোনা গেছে। ঘরে থাকা লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে।’
শাহপরীর দ্বীপ বড় মাদ্রাসার শিক্ষক মো.
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলির শব্দ এ পারেও শোনা যাচ্ছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
তবে এ বিষয়ে সীমান্তে দায়িত্বে থাকা টেকনাফ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র খ ইন ট কন ফ র খ ইন
এছাড়াও পড়ুন:
বর্জ্যের দূষণে নদীটি টিকে থাকবে তো?
দেশের নদ-নদীর বিপন্ন হওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নাগরিকদের জন্য কোনো কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থা না থাকা। ফলে জেলা-উপজেলার মফস্সল শহর ও পৌরসভা শহরগুলোর বর্জ্যের দিন শেষে স্থান হয় স্থানীয় নদ-নদীতে। এর ফলে নদ-নদীগুলো দূষিত হয় এবং দিন দিন বিপন্ন হওয়ার দিকেই ঝুঁকে। যেমনটি আমরা দেখছি নওগাঁ পৌর শহরের ছোট যমুনা নদীর ক্ষেত্রে। বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নওগাঁ শহরের অন্তত ২৫টি স্থানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা ও বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীর তীরে। এর ফলে নদীর পানি কালো হয়ে পড়েছে। আশপাশে মশা-মাছি উড়ছে। নদীতীরের বাসিন্দারা পড়েছেন দুর্ভোগে। অনেক স্থানে নদীর বাঁধ থেকে নদীর ভেতরের অংশে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, চালকল গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলো থেকে বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ছোট যমুনা নদীর তীরে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও বাসিন্দাদের অসচেতনতার কারণে নদীটি দূষিত হচ্ছে। বর্জ্য ফেলার কার্যক্রম বন্ধ করা না হলে দূষণ আরও ভয়াবহ হবে।
নওগাঁ শহরের পারঘাটি ধোপাপাড়া এলাকার এক বাসিন্দার বক্তব্য, ‘শহরের অন্যান্য এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা-আবর্জনা নিয়ে যান। কিন্তু আমাদের এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা নেওয়া হয় না। এ ছাড়া আশপাশে ডাস্টবিনও নেই। ফলে বাধ্য হয়ে বাসাবাড়ির বর্জ্য নদীর তীরে গিয়ে ফেলছেন বাসিন্দারা।’
নদী সংগঠকদের মতে, শুধু ছোট যমুনা নদী নয়, সারা দেশেই নদীগুলোর একই অবস্থা। নদী হচ্ছে জীবন্ত সত্তা। মানুষের প্রয়োজনেই নদীকে বাঁচাতে হবে। নদী রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য হাইকোর্টের আদেশও আছে। কিন্তু প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অবহেলা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অসচেতনতার কারণে নদীগুলোর অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।
নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসকের বক্তব্য, পৌরসভার জনবলসংকটের কারণে এখনো অনেক এলাকার সব বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। দূষণ রোধ করতে নদীতীরে ময়লা আবর্জনা না ফেলার জন্য বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে নদীদূষণের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মিললে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
আমরা আশা করব, দ্রুত জনবলসংকট কাটিয়ে বর্জ্য সংগ্রহের কার্যক্রমকে বেগবান করা হবে। পৌরবাসীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় পরিবেশবিষয়ক ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সর্বোপরি কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরিতে পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকতে হবে।