রোজা শুরুর আগেই লেবু শসা ও বেগুনে উত্তাপ
Published: 1st, March 2025 GMT
অন্য বছরের তুলনায় এবার রোজার আগে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম বলা চলে এক প্রকার স্বাভাবিক। তবে কয়েকটি পণ্যে রোজার আঁচ লেগেছে। বিশেষ করে এ তালিকায় রয়েছে লেবু, বেগুন, শসাসহ ইফতারিতে ব্যবহার হয় এমন পণ্য। চাহিদা বাড়ার সুযোগে পণ্যগুলোর দর কিছুটা বেড়েছে।
শুক্রবার ছুটির দিনে কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। শনিবার চাঁদ দেখা গেলে রোববার থেকে শুরু হবে পবিত্র মাহে রমজান। এর আগে সবাই অগ্রিম বাজার করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এর কিছুটা প্রভাবও পড়েছে বাজারে।
খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলেন, এখন লেবুর মৌসুম নয়। ফলে প্রায় এক মাস ধরে দর বাড়তি। এ ছাড়া বেগুন, শসাসহ যেগুলোর দাম বেড়েছে তার মূল কারণ ক্রেতাদের বেশি পরিমাণে কেনা। রোজার আগমুহূর্তে প্রতিবছরই এসব পণ্যের দর বাড়ে। তবে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সামনের দিনগুলোতে দর বাড়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন তারা।
শরবত তৈরির অন্যতম উপাদান লেবু। রমজানে ইফতারে কমবেশি সবাই শরবত খাওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে লেবুর চাহিদা বেড়ে যায়। আর এ সুযোগে বাড়তি দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে প্রতি হালি শরবতি বা সুগন্ধি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং আকারভেদে অন্য লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। মাসখানেক আগে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে কেনা গেছে লেবুর হালি। তবে এখনও বাড়লেও গত বছরের এ সময়ের তুলনায় কিছুটা কম রয়েছে দাম।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি লেবু ব্যবসায়ী জালাল আহমেদ সমকালকে বলেন, লেবুর উৎপাদন কম। কারণ, এখন লেবুর মৌসুম নয়। তাছাড়া অনেক দিন ধরে বৃষ্টিপাত নেই। এ জন্য ফলন ভালো হচ্ছে না। সেজন্য বাজারে লেবু কম আসছে। কিন্তু রোজার কারণে মানুষ আগেভাগে লেবু কিনছেন। মূলত এ জন্য দর বাড়তি।
বাজারে এখন ভরপুর শসা রয়েছে। হাইব্রিড ও দেশি শসার পাশাপাশি ছোট আকারের খিরাও পাওয়া যাচ্ছে। হাইব্রিড শসা ও খিরার কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেনা গেলেও দেশি জাতের শসা কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে এসব শসা অন্তত ১০ থেকে ৩০ টাকা কমে কেনা গেছে। অবশ্য, এ দর গেল রমজানের চেয়ে বেশ কম। গত বছর এ সময় শসার কেজি সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ছুঁয়েছিল।
এখনও টমেটোর ভর মৌসুম চলছে। ফলে বাজারে দেশি টমেটোর পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে। সেজন্য দাম এখনও নাগালে। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ টাকায়।
বেগুনি তৈরি করতে লম্বা বেগুনের দরকার হয়। সেজন্য রোজার সময় লম্বা বেগুনের চাহিদা বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়েছে দামে। পাঁচ-ছয় দিন আগেও প্রতি কেজি লম্বা বেগুন কেনা গেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। প্রায় দ্বিগুণের মতো দর বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লায় ভ্যান থেকে কিনতে গেলে ক্রেতাকে কেজিতে বাড়তি গুনতে হচ্ছে অন্তত আরও ১০ টাকা। বছরের অন্য সময়ে গোল বেগুনের দর বেশি থাকলেও এখন স্বাভাবিক। প্রতি কেজি কেনা যাবে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা ইয়াকুব আলী বলেন, এখনও শীতের সবজিতে বাজার ভরপুর। লম্বা বেগুনের চাহিদা বেশি। এ কারণে কেউ কেউ দর বেশি নিচ্ছে। তবে অন্য জায়গায় দর বাড়লেও কারওয়ান বাজারে বাড়েনি বলে দাবি করেন এই বিক্রেতা।
গাজরের সরবরাহ রয়েছে বেশ ভালো। ফলে দর বাড়ার তালিকায় উঠতে পারেনি মিষ্টি জাতীয় সবজিটি। প্রতি কেজি গাজর কেনা যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর কম দরে মিলছে পেঁয়াজ। মানভেদে দেশি প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।
রমজানে কাঁচামরিচের চাহিদা বেশি থাকে। তবে এবার ঝালজাতীয় পণ্যটির দর নাগালের মধ্যেই রয়েছে। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। মাস দুই-তিনেক ধরে এ দরের আশপাশেই বিক্রি হচ্ছে মরিচ।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও ঢাকা বিভাগীয় প্রধান বিকাশ চন্দ্র দাস সমকালকে বলেন, রোজা উপলক্ষে রোববার থেকে ঢাকা মহানগরে ১০টি বিশেষ তদারকি দল মাঠে নামবে। তারা বিভিন্ন বাজারে তদারকি করবে। রমজানজুড়ে চলবে এ তদারকি কার্যক্রম। রোববার সকালে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কারওয়ান বাজারে এ তদারকি কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ত যপণ য ন ত যপণ য র দ ম রমজ ন ক রওয় ন ব জ র ৪০ থ ক দর ব ড় ৬০ ট ক বছর র রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সাবিত সারওয়ারের গল্পের বই ‘মেছো ভূতের কান্না’
‘মেছো ভূতের কান্না’ ছোটদের গল্পের বই। গতানুগতিক ভূতের গল্প নয়। বাস্তব কাহিনী অবলম্বনে লেখা। তবে, বয়ানের ভাঁজে ভাঁজে লেখক খানিকটা কল্পনার রঙ ছিটিয়ে দিয়েছেন। যে কারণে বৈঠকি ঢঙে জমে ওঠে গল্পের আসর। এক মলাটে ৯টি ভিন্ন স্বাদের গল্পে গল্পকার চেষ্টা করেছেন শিশুকিশোরদের মনন ও বিনোদনের মেলবন্ধন ঘটাতে। প্রায় প্রতিটি গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে শিশুমনের কল্পনা ও কৌতূহল। বিষয়বস্তুতে নজর দেওয়া হয়েছে শিক্ষণীয় দিক। যেন মানবিক হতে পারি আমরা। নতুন প্রজন্ম যেন বেড়ে ওঠে সম্প্রীতি ও সহনশীলতার চর্চা নিয়ে।
নাম শিরোনামের গল্প মেছোভূতের কান্নায় গল্পকার তুলে ধরেছেন গ্রামীণ এক গল্পের পটভূমি। ছায়াসুনিবিড় সেই গ্রাম এখন খানিকটা শহুরে আদল পেয়েছে। তবুও গল্পের সেই কাল এখনও সমান তালে প্রাসঙ্গিক। কাহিনী পর্বের খণ্ডচিত্রে দেখানো হয়েছে অখণ্ড সেই গ্রামীণ পরিবেশ। যেখানে দবির ও মতি ভাই নামে দুই বন্ধু চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে গল্পটি। প্রতিদিন ভোররাতে নদীতে মাছ শিকারে যান। একদিন ভরা পূর্ণিমায় দবির সেজে মতি ভাইকে শ্মশানঘেরা নদীতে ডেকে নেয় মেছোভূত। মতি ভাই বুঝতে পারে না এখনও সকাল হয়নি। বরং দিনভর ক্লান্তির কারণে তার মনে হয় গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন সে। বারবার দবির ডাক শুনে জাল-দড়ি নিয়ে বন্ধু দবিরের পেছন পেছন রওনা হয়। আকাশে তখন খণ্ড মেঘের ওড়াউড়ি। কাঁচা জোছনার আলোয় পথঘাট স্পষ্ট দেখা যায়। দীর্ঘ পথ নানা গল্পগুজব। সেই তড়িৎ পায়ে গন্তব্যে যাত্রা। তবে সব কথাই মতি ভাইয়ের। দবির সমস্ত পথ নিশ্চুপ। একই সঙ্গে কোনোভাবেই তার নাগাল পায় না মতি ভাই।
একপর্যায়ে পৌঁছে যায় সালতা নদীর বাঁকে। শ্মশানঘাটের পাশে ঝপ ঝপ করে দ্রুত জাল ছোড়ে দবির। জাল ভরে মাছ ওঠার শব্দ শোনে মতি ভাই। অথচ মতি ভাইয়ের মাছশূন্য জাল। কৌতূহল বেড়ে যায় তার। হঠাৎ দ্রুত পায়ে দবিরের আরো কাছাকাছি চলে যায়। দেখে এক অবাক কাণ্ড। দবির জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে পাত্রে না রেখে মুখে ভরছে। কাঁচামাছ চিবিয়ে কসমস করে গিলছে। দেখেই বেহুশ হয়ে পড়ে মতি ভাই। এরপর শুরু হয় মেছোভূত ও মতি ভাইয়ের সংলাপ। চলে দীর্ঘ সময় একে অপরকে পরাস্ত করার কসরত। পুরো গল্প পড়লে যেকোনো বয়সী পাঠকই নতুন এক স্বাদ অনুভব করতে পারবেন।
আরো পড়ুন:
বইমেলায় ‘ভূতের উপহার’
বইমেলায় রিদওয়ান আক্রামের ‘ম্যাওয়ের কত সাহস’
এ ছাড়াও, কালরাতে ফুলপরি এসেছিল, দুষ্টু ইঁদুরের কাণ্ড, একজন বাবার অভাবে এবং থ্যাংক ইউ মিসসহ চমৎকার চমৎকার ৯টি গল্প। যেখানে শুধু বিনোদন নয়- বরং মনন ও বিনোদনের সমন্বয়ে শিশুকিশোরদের মানসিক বিকাশ তৈরির রসদ রয়েছে।
৪ কালারের প্রচ্ছদে বইটি প্রকাশ করেছে পুথিনিলয় প্রকাশনী। মেলার ১৬ নম্বর প্যাভিলিয়নসহ দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনেও বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
ঢাকা/এনএইচ