অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া সোহাগ এখন নিজেই বিপন্ন
Published: 28th, February 2025 GMT
পাড়া-মহল্লার মানুষের কাছে বিপদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত সোহাগ আলম (৪৬)। চেনা-অচেনা মানুষের যে কোনো বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। দু’হাত ভরে দান করতেন। রাজধানীর পুরান ঢাকার এই বাসিন্দা চাকরি করতেন একটি হজ ট্রাভেলিং এজেন্সিতে। সারাদিন পরিশ্রম শেষে সংসারে তাঁর মায়ের কাছে ফিরতেন সোহাগ। এগুলো এখন তাঁর কাছে রূপকথার মতো। দুই বছর আগে তাঁর এমন সচ্ছল ও প্রাণোচ্ছল জীবন হঠাৎ থমকে যায়। একটি সড়ক দুর্ঘটনা বদলে দেয় তাঁর জীবনের চিত্রপট। সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে সোহাগকে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে অফিসের কাজ শেষে রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন সোহাগ। হঠাৎ পেছন থেকে তাঁর রিকশাকে ধাক্কা দেয় একটি পাজেরো গাড়ি। ছিটকে পড়ে গিয়ে কোমর, ডান পা ও স্পাইনাল কর্ডে আঘাত পান তিনি। কিছুদিন পর রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল থেকে স্পাইনাল কর্ডে অস্ত্রোপচার করান। কিছুটা সুস্থ হলেও কয়েক মাসের মধ্যে দেখা দেয় ডায়াবেটিস, কিডনি ও লিভারের সমস্যা। মেরুদণ্ডের সমস্যা আরও জটিল হতে থাকে। দেশ ও বিদেশের বড় বড় চিকিৎসক দেখানো শুরু করেন। ভারতের মুম্বাই ও চেন্নাই এবং সিঙ্গাপুরেও চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। ব্যয়বহুল এসব চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের পরও সুস্থ হতে পারেননি। চিকিৎসায় শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি সোহাগ। গত দুই বছরে চিকিৎসার পেছনে ১ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। সাড়ে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন গাজীপুরের ১২ শতক জমি। পাশাপাশি নিজের পুরো জীবনের সঞ্চয় ও আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় এতদিন চিকিৎসার খরচ চালিয়ে এসেছেন। বর্তমানে তাঁর ১০ লাখ টাকার বেশি ঋণ। বিগত দুই বছর কোনো আয়-রোজগার নেই। দেশের একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকা প্রয়োজন হলেও নিরুপায় তিনি।
সরেজমিন দেখা যায়, পুরোনো একটি বাড়ির দোতলায় জীর্ণশীর্ণ বিছানায় শুয়ে আছেন তিনি। কোমর ও পায়ের ব্যথায় মাঝে মাঝে চিৎকার করছেন। অবস্থা এতটাই খারাপ, কয়েক
কদমের বেশি হাঁটতে পারেন না। জীবনসঙ্গী না থাকায় তাঁর দেখাশোনা করেন বৃদ্ধ মা ও ছোট বোন। বোনের বিয়ে হলেও ভাইয়ের সেবা করার জন্য বেশির ভাগ সময় এ বাড়িতেই থাকেন। অভাব-অনটনে দৈনন্দিক খাবারেও টান পড়েছে। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের
সহায়তা এবং ধারদেনা করে চলছে খাবার ও ওষুধের খরচ।
সোহাগ আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার পর হাঁটাচলা করতে পারি না। সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকি। চিকিৎসার জন্য অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছি, অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারিনি। এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে আর কত টাকা নেওয়া যায়? আমি এখন নিরুপায়।
সোহাগ আলমের ছোট বোন ফারহানা আলম সাথী বলেন, ভাই ছিল খুবই পরোপকারী ও পরিশ্রমী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির দুর্ঘটনার পর অন্ধকার নেমে আসে সংসারে। নিজেদের যা কিছু ছিল, সব বিক্রি করা শেষ। ধারদেনা করে চলছি দীর্ঘদিন। তিনি তাঁর ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য সহায়তার আবেদন জানান।
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা– ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, হিসাবের নাম ফারহানা আলম সাথী, ১৩৬১৫১০০৮৩০৬৭, নয়াবাজার শাখা। ০১৬৭৪০০১৮৩৭ (বিকাশ+ রকেট), ০১৭১৮৩৩২৫৬৮ (নগদ)।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কেমন ছিল ’৭১–এর ঈদ
সাড়ে সাত কোটি বাঙালি স্বাধীন হয়েছিল ঠিক ৫৪ বছর আগে—১৯৭১ সালে। স্বাধীনতাযুদ্ধের সেই বছরের পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়েছিল ২০ নভেম্বর, বারের হিসাবে দিনটি ছিল শনিবার। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, মা-বোনদের ধর্ষণ, মুক্তিবাহিনী ও সংখ্যালঘুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ চালাচ্ছিল। তাই একাত্তরে বিজয়ের প্রতীক্ষায় থাকা স্বজন হারানো বাঙালির ঈদ–আনন্দ ‘ম্লান’ হয়ে গিয়েছিল বলে স্মৃতিচারণামূলক বিভিন্ন লেখা ও সাক্ষাৎকারে তথ্য পাওয়া যায়।
ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি যুদ্ধ হয়। বহু মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, আহত হন অনেকে। অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য যুদ্ধে মারা যান, অনেকেই আবার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়েন।
১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর ঈদ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বাণী