সমকাল: এটা কি ঠিক, গত ১৫ বছর ধরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী কমছে?
মিনহাজ মান্নান: হ্যাঁ, ঠিক। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি প্রতিষ্ঠান সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, এখন সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ, যা ১০-১৫ বছর আগেও ৩৫ লাখ ছিল। অর্থাৎ, এই সময়ে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমেছে। এখন যে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা দেখানো হচ্ছে, এটাও প্রকৃত সংখ্যা নয়। এখানে একই ব্যক্তির একক অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি যৌথ অ্যাকাউন্টও রয়েছে। আবার একই ব্যক্তির নামেও বহু অ্যাকাউন্ট আছে। প্রকৃত বিনিয়োগকারী অ্যাকাউন্ট ১০-১২ লাখ হতে পারে। আবার সক্রিয় বিনিয়োগকারী এরও অর্ধেক।
সমকাল: কবে থেকে বিনিয়োগকারী কমছে?
মিনহাজ মান্নান: ২০০৭ সালের ১/১১ সরকারের সময়ে শেয়ারবাজারে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছিল। তখন থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী বেড়েছিল। ওই বছরের শেষে ইতিহাসের সর্বোচ্চ বড় ধস নামলে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারান। তার পর থেকে ক্রমেই বিনিয়োগকারী কমছে।
সমকাল: গত ১৫ বছরে অর্থনীতির আকার বৃদ্ধিসহ নানা উন্নয়নের বিপরীতে এটা কি উল্টো চিত্র নয়?
মিনহাজ মান্নান: অবিশ্বাস্য হলেও এ কথাই সত্যি। যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে মানুষের হাতে সঞ্চয়ের টাকা বেড়েছে, সেখানে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী কমার যৌক্তিক কোনো কারণই নেই। তা সত্ত্বেও এমনটি হয়েছে। আমরা বছর বছর জিডিপির আকার এবং জাতীয় বাজেট বড় হতে দেখেছি। শুনতে অবাক হওয়ার মতো হলেও এটাই সত্য, পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় চলা এ দেশটির এমন উন্নয়ন চিত্রে শেয়ারবাজারের কোনো ভূমিকা ছিল না। উল্টো গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজার ক্রমে সংকুচিত হয়েছে, যার হার প্রায় ৩৭ শতাংশ, অর্থাৎ তিন ভাগের দুই ভাগেরও নিচে নেমেছে।
সমকাল: এ অবস্থার কারণ কী?
মিনহাজ মান্নান: দেখুন, কিছু মানুষ ব্যাংক, সরকারি সঞ্চয়পত্র বা বন্ডের মতো নিরাপদ বিনিয়োগ না করে কেন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আসে? আসে এ কারণে, সঞ্চয়পত্র, বন্ড বা ব্যাংক আমানতের তুলনায় মুনাফা বেশি, তবে ঝুঁকিও আছে। সেই ঝুঁকিরও একটা মাত্রা আছে। বিশ্বের কোনো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগই ঝুঁকিহীন নয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শেয়ারবাজারেও ধস নেমেছে, শেয়ারের দর কমেছে। কিন্তু সরকার ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে তার পুনরুদ্ধারও হয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। ২০১০ সালের ধসের পর মানুষ পরবর্তী চার-পাঁচ বছর অপেক্ষায় ছিল বাজার বুঝি ঘুরে দাঁড়ায়। তা হয়নি। কারণ এখন পরিষ্কার। সরকারের হিসাবের মধ্যে শেয়ারবাজার ছিল না। ২০১০ সালের ধসের পর ওই ক্ষত উপশমের জন্য যে খায়রুল কমিশন এবং শিবলী কমিশনকে সরকার নিয়োগ করেছিল, তারা পরিকল্পিতভাবে এ বাজার ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। ঋণে জর্জরিত, মালিকরা কিছুদিনের মধ্যে খেলাপি হবেন, কোম্পানি দেউলিয়া হবে– এমন সব কোম্পানির ভুয়া অ্যাকাউন্টস তৈরি করে সেগুলোকে আইপিওতে এনে বাজার ভর্তি করেছেন। স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে এগুলোর আইপিও বিষয়ে নেতিবাচক মতামত দেওয়া হয়েছিল। কমিশন তা উপেক্ষা করেছে। একাধিক দফায় আইপিওতে আসা কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওই কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে বাধ্য করেছিল। খোদ কমিশনপ্রধানরা অনিয়মে জড়িয়েছেন। কারসাজিকে উস্কে দিয়েছেন। ফলে বিনিয়োগকারীরা একসময় হতাশ হয়ে বাজার ছাড়তে শুরু করেন।
সমকাল: অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে কি?
মিনহাজ মান্নান: বর্তমান সরকার আসার পর মানুষের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল। এ সরকারের প্রথম চার কার্যদিবসে ৭৮৬ পয়েন্ট সূচক বাড়ে। এর পর যে পতন শুরু হয়, গত সাতে মাসে ঘুরেফিরে সূচক আগের অবস্থানে ফিরেছে। মানুষ এখনও আস্থা পাচ্ছে না। কারণ, বিদ্যমান ব্যবস্থায় এখনও দৃশ্যমান বদল নেই। যদিও কারসাজির বিচারের জন্য কিছু ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। কিছু পুরোনো ঘটনায় বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে বর্তমান কমিশন। জরিমানা আদায় যে নেই, তা সবাই জানে। এ প্রক্রিয়ায় কখনও কারসাজি দমন হয়নি। এ সময়ে ভালো কোম্পানির আইপিও আসা দরকার ছিল। বর্তমান কমিশন বড় কিছু শিল্প গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করেছে। প্রক্রিয়াগত কারণে চাইলেও এত স্বল্প সময়ে বড় কোম্পানি আসতে পারবে না, সময় লাগবে। এ ক্ষেত্রে বড় বাধা সম্পদের হিসাবসহ আর্থিক হিসাব প্রস্তুত করা। তবে ইউনিলিভারের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অ্যাকাউন্টস হালনাগাদ থাকার কথা। নীতিগত সিদ্ধান্ত হলে স্বল্প সময়ে এগুলো বাজারে আসতে পারে। এ নিয়ে পদক্ষেপ নেই। উল্টো এসএমই বাজারে এক কোম্পানিকে মূলধন সংগ্রহের অনুমতি দিয়ে এর আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় দ্রুত তার অনুমতি স্থগিত করার ঘটনা ঘটেছে। এতে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। প্রথমত, তারা দেখছে, কমিশন সমালোচনাকে আমলে নিয়েছে। আবার এটাও দেখেছে, আগের কমিশনের মতো এই কমিশনও আইপিও অনুমোদন করেছে। আবার নানা পর্যায়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বহাল আছেন। ফলে এখনই নতুন করে মানুষ বিনিয়োগে আসবেন না। তারা হয়তো পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার কেমন হয়, তা দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহীম
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র ১৫ বছর আইপ ও সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সংঘর্ষ ও খুনের পর মিরসরাই বিএনপির তিন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত
সংঘর্ষ ও খুনের পর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত তিনটি কমিটির কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি মিরসরাই উপজেলা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারিয়ারহাট পৌরসভার তিনটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদিত বিএনপির কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশেষ একটি পক্ষ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এলাকায় জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একজন নিরীহ মানুষ হত্যার শিকার হন এবং ১৫ জন গুরুতরভাবে জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সাম্প্রতিক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মিরসরাইয়ের জনগণের পাশে থাকার লক্ষ্যে অনুমোদিত তিন কমিটির কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হলো।
কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির বিষয়ে পরবর্তী করণীয় বসে ঠিক করা হবে। কমিটি গঠনের পর হত্যাসহ নানা নৈরাজ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৮ মার্চ মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মিরসরাই উপজেলা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারিয়ারহাট বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নতুন ঘোষিত বিএনপির উপজেলা আহ্বায়ক কমিটিতে আবদুল আওয়াল চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও আজিজুর রহমান চৌধুরীকে সদস্যসচিব মনোনীত করা হয়। ঘোষিত এই কমিটির বিরোধিতা করে ২৫ মার্চ দুপুরে মিরসরাই উপজেলা সদরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিনের অনুসারীরা। সেই ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নতুন আহ্বায়ক কমিটিকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিএনপির দুই পক্ষের এমন উত্তেজনা শুরু হলে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ফুল দিতে এলে দুই পক্ষের মধ্যে সহিংসতার শঙ্কায় ২৬ মার্চ সকালে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য মিরসরাই উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। সেদিন বেলা ১১টায় মিছিল গণজমায়েত করে প্রশাসনের দেওয়া ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শহীদ মিনারে এসে ফুল দিয়ে যান মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের অনুসারীরা। এরপর উপজেলার বারিয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মইনুদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মোহাম্মদ জাবেদ নামের এক যুবক নিহত হন। সংঘর্ষের সেই ঘটনায় বিএনপির আরও অন্তত ১৩ নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন।