ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. জ্যাক সিম সম্প্রতি এক সেমিনারে অংশ নিতে বাংলাদেশ এসেছিলেন। সমকালের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি ডব্লিউটিওর গড়ে ওঠা, স্যানিটেশন আন্দোলন, বর্তমান পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার হাসনাইন ইমতিয়াজ
সমকাল: স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?
জ্যাক সিম: আমার বয়স যখন ৪০ তখন দেখলাম বিশ্বের ৪০ শতাংশের বেশি লোক খোল জায়গায় মল ত্যাগ করে। বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করে তোলে। পরে নিজের ১৬টি কোম্পানি বিক্রি করে স্যানিটেশন নিয়ে কাজ শুরু করি। এক পর্যায়ে ২০০১ সালে ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশন (ডব্লিউটিও) গড়ে ওঠে।
সমকাল: সংস্থাটির শুরুর দিনগুলো কেমন ছিল?
জ্যাক সিম: স্যানিটেশন নিয়ে কথা বলা সহজ ছিল না। লোকজন হাসাহাসি করত। পরে ধীরে ধীরে লোকজন বুঝতে পারে। দেশে দেশে স্যানিটেশন নিয়ে কাজ শুরু হয়। জাতিসংঘ স্যানিটেশনকে নিজেদের এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব টয়লেট দিবসকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। সেই থেকে প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। 
সমকাল: মানসম্মত স্যানিটেশন জরুরি কেন?
জ্যাক সিম: মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা সুস্থ জাতি গঠনের পূর্বশর্ত। এ খাতে বিনিয়োগ দেশের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব পর্যায়েই ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। কারণ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা নাগরিককে সুস্থ, সবল ও সক্ষম রাখে, যা সুস্থ সমাজের লক্ষণ। 
সমকাল: বাংলাদেশের স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
জ্যাক সিম: বাংলাদেশ স্যানিটেশন খাতে যথেষ্ট উন্নতি করলেও এখনও দেশের ৬১ শতাংশ জনগণ নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের বাইরে। দেশের ২ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ এখনও অনুন্নত শৌচাগার ব্যবহার করছে। দেশের জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ মৌলিক হাত ধোয়ার সুবিধার আওতায় আছে এবং মাত্র ১৬ শতাংশের বাড়িঘরে বর্জ্যপানি পরিশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে। তাই এ খাতে বাংলাদেশের যথেষ্ট উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনায় উন্নতি আনা জরুরি। খোলা স্থানে মল ত্যাগ করলে বায়ু, পরিবেশ, পানি দূষিত হয়। ঠিকমতো হাত না ধুলে অসুখ ছড়ায়। স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট না থাকলে পর্যটক আসবে না। তাই স্যানিটেশন নিয়ে জাতি সচেতন হলে আখেরে লাভ। অসুখ কম হবে। মন ভালো থাকবে। সমাজ সুস্থ থাকবে।
সমকাল: স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? 
জ্যাক সিম: একটি দেশে মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব জরুরি। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। 
সমকাল: বাংলাদেশের মতো দেশগুলো কীভাবে টেকসই স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারে?
জ্যাক সিম: চীন, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো পাবলিক টয়লেটের জন্য উদাহরণ। সিঙ্গাপুরে পাবলিক টয়লেট বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। সেখানে খাবার হোটেল, রেস্টুরেন্ট করতে হলে ক্লিন টয়লেট করতেই হবে। এমন আইন থাকায় সহজেই মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। চীনে পাবলিক টয়লেটের দেয়ালে বিজ্ঞাপন দিয়ে আয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই মডেল বাংলাদেশ গ্রহণ করতে পারে। এভাবে সরকারি উদ্যোগে এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় টেকসই ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।
সমকাল: বৈশ্বিকভাবে স্যানিটেশন এখন কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে?
জ্যাক সিম: বর্তমানে স্যানিটেশনের চেয়ে আরও অনেক ইস্যু আলোচনার মূল অংশ হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ, উদ্বাস্তুসহ নানা ইস্যুতে স্যানিটেশন চাপা পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সুস্বাস্থ্যের জন্য স্যানিটেশন নিয়ে আমাদের আলোচনা জারি রাখতে হবে।
সমকাল: প্রযুক্তি স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে?
জ্যাক সিম: এখন স্যানিটেশনকেন্দ্রিক বিভিন্ন উদ্ভাবন হচ্ছে। নতুন নতুন স্টার্টআপ আসছে। টয়লেটে অনেক আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে। যদিও সেগুলো বেশ ব্যয়বহুল। একসময় চাহিদা বাড়লে দাম কমে আসবে।
সমকাল: বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
জ্যাক সিম: দেশের পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন-ওয়াশ খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। নাগরিকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে যথাযথ প্রযুক্তিসম্পন্ন টয়লেট গড়ে তুলতে হবে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র সমক ল টয়ল ট

এছাড়াও পড়ুন:

কালুখালীতে পুনর্মিলনী, নবীনবরণ ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা 

রাজবাড়ীর কালুখালীতে পুনর্মিলনী, নবীনবরণ ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব কালুখালীর উদ্যোগে বুধবার বিকেলে কালুখালী সরকারি কলেজ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি নবীন প্রবীণের মিলনমেলায় পরিণত হয়, যেখানে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষকরাও ছিলেন। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তারা হারিয়ে যান শৈশবে। একই সঙ্গে সংগঠনকে গতিশীল করার কথাও বলেন তারা।

কালুখালী উপজেলার বাসিন্দা যারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি কার্যালয়ে চাকরি করছেন, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন কিংবা সদ্য ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন এমন ২৫০ জন যোগ দেন এ অনুষ্ঠানে। তাদের মধ্যে ছিলেন ফরিদপুর ইয়াছিন কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক খান, ফরিদপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল আলম খান, কালুখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ খান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর নাসির উদ্দিন, ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সহযোগী অধ্যাপক কামাল হোসেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আশরাফুল আলম, রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফ আলী খান, রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রশিদ, রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফজলুল হক গোলাপ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আহাদ আলী, সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল আন্ড কলেজের শিক্ষক এমডি ইমরান হোসেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের অতিথি দৈনিক সমকালের প্রকাশক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই অনুষ্ঠানে এসে আমি মুগ্ধ। অনেক মেধাবীর সঙ্গে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগছে। নিশ্চয় তাদের হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা সব সময় ভালো কাজ করার চেষ্টা করি। চেষ্টার ভেতর থেকে যতদূর সফল হতে পারি। শিক্ষার্থীদের তিনি সমকালের শিক্ষা পাতায় লেখার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা অনেক। আমরা সাধারণ মানুষের ট্যাক্সে পড়াশোনা করেছি। আমরা শুধুমাত্র পরিবারের জন্য কাজ করব না, দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করব।

ফরিদপুর ইয়াছিন কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক খান বলেন, ১৯৮৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা গিয়েছি। নিভৃত পল্লী থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। অর্থের জন্য পড়াশোনা থেমে থাকেনি। আমাদের সময় কোনো কোচিং ছিল না। তবুও আমরা এগিয়ে গেছি। অনেক অনেক মেধাবীদের সমন্বয়ে গড়া এ সংগঠন নিশ্চয় থেমে যাবে না। অনেক দূর এগিয়ে যাবে। 

শৈশবের স্মৃতিচারণ করে ফরিদপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল আলম খান বলেন, আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়তাম তখন নিমতলায় একটা ঘাট ছিল। এখন সেখানে ব্রিজ হয়েছে। ওই সময় বাড়ি থেকে হেঁটে রতনদিয়া হাই স্কুলে যেতাম। সকাল বেলা প্রাইভেট পড়তে যেতাম বোয়ালিয়ায় অমল স্যারের কাছে। এখন যেখানে হেলথ কমপ্লেক্স মাঠ। সেখানে কোনো ফসল ভালো হতো না। তখন আমি চিন্তা করতাম এই জনপদের কি উন্নতি হবে না, এমনই থাকবে? এখন কালুখালী উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ওই জায়গাটি।  

নবীন শিক্ষার্থীদের মাঝে বক্তৃতা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী প্রেয়সী পাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইমন বিশ্বাস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র আল আমিন হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র আহাদ আলী, শিহাব উদ্দিন প্রমুখ।

তারা বলেন, পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব কালুখালী নামের এই সংগঠনটি ভালো কাজের মাধ্যমে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে- এটি আমাদের প্রতাশা। এর সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তারা সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করলে অনেক ভালো কাজ করা সম্ভব। নবীন শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা নবীন প্রবীণের মধ্যে একটি দৃঢ়বন্ধন তৈরি করার জন্য এ আয়োজন করেছি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মনিরুল ইসলাম উজ্জল। আলোচনা সভা শেষে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগপ্রাপ্ত ২০ জন শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ