স্যানিটেশন খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে
Published: 28th, February 2025 GMT
ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. জ্যাক সিম সম্প্রতি এক সেমিনারে অংশ নিতে বাংলাদেশ এসেছিলেন। সমকালের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি ডব্লিউটিওর গড়ে ওঠা, স্যানিটেশন আন্দোলন, বর্তমান পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার হাসনাইন ইমতিয়াজ
সমকাল: স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?
জ্যাক সিম: আমার বয়স যখন ৪০ তখন দেখলাম বিশ্বের ৪০ শতাংশের বেশি লোক খোল জায়গায় মল ত্যাগ করে। বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করে তোলে। পরে নিজের ১৬টি কোম্পানি বিক্রি করে স্যানিটেশন নিয়ে কাজ শুরু করি। এক পর্যায়ে ২০০১ সালে ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশন (ডব্লিউটিও) গড়ে ওঠে।
সমকাল: সংস্থাটির শুরুর দিনগুলো কেমন ছিল?
জ্যাক সিম: স্যানিটেশন নিয়ে কথা বলা সহজ ছিল না। লোকজন হাসাহাসি করত। পরে ধীরে ধীরে লোকজন বুঝতে পারে। দেশে দেশে স্যানিটেশন নিয়ে কাজ শুরু হয়। জাতিসংঘ স্যানিটেশনকে নিজেদের এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব টয়লেট দিবসকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। সেই থেকে প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে।
সমকাল: মানসম্মত স্যানিটেশন জরুরি কেন?
জ্যাক সিম: মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা সুস্থ জাতি গঠনের পূর্বশর্ত। এ খাতে বিনিয়োগ দেশের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব পর্যায়েই ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। কারণ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা নাগরিককে সুস্থ, সবল ও সক্ষম রাখে, যা সুস্থ সমাজের লক্ষণ।
সমকাল: বাংলাদেশের স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
জ্যাক সিম: বাংলাদেশ স্যানিটেশন খাতে যথেষ্ট উন্নতি করলেও এখনও দেশের ৬১ শতাংশ জনগণ নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের বাইরে। দেশের ২ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ এখনও অনুন্নত শৌচাগার ব্যবহার করছে। দেশের জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ মৌলিক হাত ধোয়ার সুবিধার আওতায় আছে এবং মাত্র ১৬ শতাংশের বাড়িঘরে বর্জ্যপানি পরিশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে। তাই এ খাতে বাংলাদেশের যথেষ্ট উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনায় উন্নতি আনা জরুরি। খোলা স্থানে মল ত্যাগ করলে বায়ু, পরিবেশ, পানি দূষিত হয়। ঠিকমতো হাত না ধুলে অসুখ ছড়ায়। স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট না থাকলে পর্যটক আসবে না। তাই স্যানিটেশন নিয়ে জাতি সচেতন হলে আখেরে লাভ। অসুখ কম হবে। মন ভালো থাকবে। সমাজ সুস্থ থাকবে।
সমকাল: স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
জ্যাক সিম: একটি দেশে মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব জরুরি। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
সমকাল: বাংলাদেশের মতো দেশগুলো কীভাবে টেকসই স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারে?
জ্যাক সিম: চীন, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো পাবলিক টয়লেটের জন্য উদাহরণ। সিঙ্গাপুরে পাবলিক টয়লেট বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। সেখানে খাবার হোটেল, রেস্টুরেন্ট করতে হলে ক্লিন টয়লেট করতেই হবে। এমন আইন থাকায় সহজেই মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। চীনে পাবলিক টয়লেটের দেয়ালে বিজ্ঞাপন দিয়ে আয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই মডেল বাংলাদেশ গ্রহণ করতে পারে। এভাবে সরকারি উদ্যোগে এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় টেকসই ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।
সমকাল: বৈশ্বিকভাবে স্যানিটেশন এখন কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে?
জ্যাক সিম: বর্তমানে স্যানিটেশনের চেয়ে আরও অনেক ইস্যু আলোচনার মূল অংশ হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ, উদ্বাস্তুসহ নানা ইস্যুতে স্যানিটেশন চাপা পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সুস্বাস্থ্যের জন্য স্যানিটেশন নিয়ে আমাদের আলোচনা জারি রাখতে হবে।
সমকাল: প্রযুক্তি স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে?
জ্যাক সিম: এখন স্যানিটেশনকেন্দ্রিক বিভিন্ন উদ্ভাবন হচ্ছে। নতুন নতুন স্টার্টআপ আসছে। টয়লেটে অনেক আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে। যদিও সেগুলো বেশ ব্যয়বহুল। একসময় চাহিদা বাড়লে দাম কমে আসবে।
সমকাল: বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
জ্যাক সিম: দেশের পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন-ওয়াশ খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। নাগরিকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে যথাযথ প্রযুক্তিসম্পন্ন টয়লেট গড়ে তুলতে হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য হটলাইন চালুর ঘোষণা পুলিশের
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জরুরি যোগাযোগের জন্য হটলাইন সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। হটলাইন নম্বরে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে নিরাপত্তাজনিত যেকোনো সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানানো এবং দ্রুত সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
সম্প্রতি গাজায় হামলা নিয়ে বিক্ষোভের সময় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইজিপি ও বিডা চেয়ারম্যান। বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল– নেসলে বাংলাদেশ, কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, বাটা সু কোম্পানি বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, পেপসিকো ও জুবিল্যান্ট ফুড ওয়ার্কস বাংলাদেশ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৭ ও ৮ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন শহরে এসব কোম্পানির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় অন্তত ১৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রায় এক ডজন মামলা হয়েছে।
বৈঠকে বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, ‘আইজিপি, জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা ও বিডার কর্মকর্তাদের একসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বসা শুধু সময়োপযোগী নয়, নজিরবিহীন। এটি কেবল একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়। এটি এক ধরনের বার্তা যে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের পাশে আছে, বিশেষ করে যখন চ্যালেঞ্জ আসে।’
তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো হাজার হাজার কর্মজীবী ও তাদের পরিবারের জীবিকার উৎস। প্রতিবাদের অধিকার আছে, কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মসংস্থান, স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে, সেগুলো ধ্বংস করা কোনো সমাধান নয়। পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন বিডা চেয়ারম্যান।
প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা ভাঙচুর, ক্ষয়ক্ষতি ও কার্যক্রমে বিঘ্ন নিয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। আইজিপি বাহারুল আলম বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য এখানে আসিনি, বরং আস্থা গড়ে তুলতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই এসেছি।’
এ আলোচনার ফলে বিডা, পুলিশ ও ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে একটি প্রতিরোধ পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল, দ্রুত সাড়া দেওয়া ইউনিট এবং সংকটকালে উন্নত যোগাযোগ চ্যানেল।