Samakal:
2025-04-24@00:59:49 GMT

অপার স্নিগ্ধতায় ‘লেক জর্জ’

Published: 28th, February 2025 GMT

অপার স্নিগ্ধতায় ‘লেক জর্জ’

যারা যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে আসেন, তাদের বেশির ভাগেরই পছন্দ সেন্ট্রাল পার্ক, স্ট্যাচু অব লিবার্টি, জমজমাট টাইমস স্কয়ার। এসব জায়গায় গিয়ে একটা ছবি না তুলতে পারলে আমেরিকায় এসেছি বলে মনে হয় না আসলে। বেড়াতে ভালোবাসি, তাই এসব জায়গায় আমারও পায়ের ছাপ পড়েছে। এসব আমার চোখ কেড়েছে, দীর্ঘদিনের কৌতূহলও মিটিয়েছে। অপার শান্তি 
দিয়েছে ‘লেক জর্জ’। বিস্তীর্ণ মাঠ পেরিয়ে শান্ত জলরাশি আর চারপাশ ঘেরা সবুজ পাহাড়। মায়াময় স্নিগ্ধতায় ডুবে যাওয়ার এক অপূর্ব স্থান।
লেক জর্জের অবস্থান নিউ ইয়র্কের রাজধানী আলবানিতে। এর ডাক নাম ‘কুইন অব আমেরিকান লেক’; যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় আমেরিকার হ্রদের রানী। স্থানীয়রা একে বলেন ‘আন্দিয়া-তা-রক-তে’। এর কোনো আক্ষরিক অর্থ আছে কিনা আমার জানা নেই। এটি রাজ্যের উত্তর-পূর্ব অংশে অ্যাডিরন্ড্যাক পর্বতমালার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। লেকের কিনারা ঘেঁষে চওড়া রাস্তা। দু’দণ্ড বসতে জায়গায় জায়গায় বেঞ্চ। কেউ একা বসে থাকেন, কেউ প্রিয় সঙ্গীকে নিয়ে, কেউবা দল বেঁধে। তবে সবাই কেমন চুপচাপ। প্রকৃতি যেন বলেই দেয়– চুপ থাক। শান্ত হও। ছুটো না।
লেকের দিকে তাকালে কোথাও মনে হয় সবুজ। আবার কোথাও আকাশের সবটুকু নীল। আসলে প্রতিফলনের ওপর নির্ভর করে এই রং। কোথাও পাহাড়ের সবুজের ছায়া পড়েছে, সেখানে সবুজ জল আর কোথাও আকাশের প্রতিচ্ছবি। লেকের মধ্যে রয়েছে কাঠের তৈরি সাঁকো। চাইলেই কেউ জলের খুব কাছে যেতে পারবেন। পারবেন পা ভিজিয়ে মনের সুখে গুনগুন করে গাইতে। মনের ভেতর শুকিয়ে যাওয়া প্রেম যেন আবার ধরা দেয় এখানে এসে।
পুরো লেকটি ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে ক্রুজে ভ্রমণের ব্যবস্থা। জনপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ ডলার খরচ করলেই লেক ভ্রমণ করা যাবে। দেখা যাবে নদী আর পাহাড়ের সীমানাঘেঁষা জনজীবন। কী পরিচ্ছন্ন ছিমছাম বাড়িগুলো। শত বছরের পুরোনো আদলেই রয়েছে সব। সবকিছু সংরক্ষণ করা হচ্ছে অতি যত্নে। পুরোনোকে পুঁজি করেই গড়ে উঠেছে পর্যটনশিল্প। বেশ কিছু সাবেকি হোটেল-মোটেল রয়েছে। চাইলে রাতও কাটানো যাবে। ভাড়া একটু বেশি। স্থানীয়রা জানান অফ সিজনে, অর্থাৎ গ্রীষ্মের আগে বা পরে থাকা-খাওয়ার খরচ অনেকটা কম পড়ে।
ক্রুজ ভ্রমণের সুবিধা হলো– ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে আপনি ইতিহাসটা জানতে পারবেন। সেই সঙ্গে শীতল মিউজিক। প্রেমপূর্ণ যুগল হৃদয়ের জন্য এ ভ্রমণ হতে পারে আরও নান্দনিক। বাঙালি প্রেমিক মন অজান্তেই গেয়ে উঠবে– 
‘আমরা এমনি এসে ভেসে যাই
আমরা এমনি এসে ভেসে যাই
আলোর মতন, হাসির মতন
কুসুমগন্ধরাশির মতন
হাওয়ার মতন, নেশার মতন
ঢেউয়ের মতন ভেসে যাই’.

..
আমাদের ক্রুজ ভ্রমণ শেষ হতে হতে পরন্ত বিকেল। খিদে পেয়েছে। এখানে লোকাল খাবারের খুব নাম। আমরা বাসা থেকে খিচুড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। কাছেই একটি পার্ক। সেখানেই ঘাসের ওপর চাদর বিছিয়ে খেয়েছি। তারপর কিছু সময় ছোটাছুটি। পার্ক থেকে লেকটি খুব অদ্ভুত লাগে। পার্কটিও চমৎকার। পেছনে পাহাড়, সামনে লেক। এত বড় পার্কে খুব কম মানুষই চোখে পড়ল। যাদের দেখলাম তারা কেউ নির্জনে বসে পড়ছেন, কেউ সঙ্গী নিয়ে বসে আছেন। সঙ্গী কেবল মানুষই নয়, রয়েছে বিড়াল-ককুরের মতো প্রিয় পোষা প্রাণীও।
সবার মধ্যেই আমি কেমন একা হয়ে গেলাম। মনে হলো– 
‘মুগ্ধ পরান যতদূর চায়
ততদূর ভালোবাসি’। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ রমণ র মতন

এছাড়াও পড়ুন:

জিম্বাবুয়ের কাছেও হারল বাংলাদেশ

ধারাভাষ্যকার আর ক্যামেরার নড়াচড়া না থাকলে পুরস্কারের মঞ্চকে মনে হতো ভাঙা হাট। বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আর জিম্বাবুয়ের ফাস্ট বোলার ব্লেসিংস মুজারাবানি ছাড়া খেলোয়াড়দের কেউ ছিল না পুরস্কার বিতরণীতে।

দোতলায় বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুম থেকে বিমর্ষ ফিল সিমন্স উদাস তাকিয়ে সেই দৃশ্য দেখছিলেন। ছোট দলের কাছে টেস্ট হারলে বড় দলের কোচদের যে অনুভূতি থাকে, সিমন্স কি সেভাবে কল্পনার জগতে ডুবে গিয়েছিলেন? নাকি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মতো তাঁকেও হারের শোক-তাপ স্পর্শ করে না? নাজমুল হোসেন শান্তরাই যেখানে নিজ দেশকে হারিয়ে সেভাবে হতাশা বোধ করেন না, সেখানে বিদেশি কোচের মুখে সন্তাপ দেখতে চাওয়াও ভুল ভাবনা। 

সিলেটে যে দলের কাছে বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচ হেরেছে, সেই জিম্বাবুয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ না। ক্রিকেটের বাণিজ্যের রমরমা বাজার নেই তাদের দেশে। বেতন-বোনাসের দাবিতে মাঝেমধ্যে বিদ্রোহও তো হতে দেখা গেছে অতীতে। সেই জিম্বাবুয়ে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এসে সিলেটে কী দারুণ ক্রিকেটই না খেলেছে! ২০২১ সালের পর আরেকটি জয়ের স্বাদ পাওয়া সত্যিই জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটারদের জন্য বিশাল অর্জন। স্পোর্টিং কন্ডিশন পেয়ে ম্যাচের প্রথম থেকে ভালো ক্রিকেট খেলে তিন উইকেটে ম্যাচ জিতেছে সফরকারীরা। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টো। বাংলাদেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করার কথা না। ২০২৩ সালে সিলেটের এই মাঠেই তো নিউজিল্যান্ডকে হারের স্বাদ দিয়েছিলেন শান্তরা। 

গত বছর রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করা, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে হারিয়ে দেওয়া দলই দেশের মাটিতে হেরে গেছে টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের ১২ নম্বর দলের কাছে। ২০১৮ সালেও এই ভেন্যুতে হ্যামিলটন মাসাকাদজারা হতবিহ্বল করে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসানদের। সাত বছর পর সিলেটে আরেকটি জিম্বাবুয়ে শকে শোকাহত ক্রিকেটানুরাগীরা। এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর ক্রিকেটার বা কোচিং স্টাফের পুরস্কারের মঞ্চে দাঁড়াতে পারার কথা না। বিসিবি পরিচালকদেরও মঞ্চে দেখা মেলেনি। পরিচালক নাজমুল  আবেদীন ফাহিমকে যেখানে মেয়ের ক্রিকেট লিগের পুরস্কার বিতরণীতে নিয়মিত দেখা যায়, তাঁকেও গতকাল দেখতে পায়নি কেউ। সিলেট টেস্টের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চকে তাই ভাঙা বিয়েবাড়ির মতোই দেখায়। 

এই টেস্টের প্রথম দিন থেকেই ইতিবাচক একটা চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা ছিল বাংলাদেশ দলের সদস্যদের। প্রথম দিন সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হওয়া সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ইতিবাচক কথা বলার  চেষ্টা করে গেছেন। দ্বিতীয় দিনের সংবাদ সম্মেলনে মেহেদী হাসান মিরাজ স্মরণ করিয়ে দেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে পিছিয়ে থেকেও টেস্ট জেতার ঘটনা। গত পরশু মুমিনুল হক জোর গলায় বলেছিলেন, ২৭০ থেকে ৩০০ রানের টার্গেট দিয়ে জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করতে পারবেন তারা।

ব্যাটারদের ব্যর্থতার মিছিলের পরও টেল এন্ডারদের ওপর ভরসা করে স্বপ্ন দেখেছিলেন অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটার। এই ‘স্টোরি টেলার’দের ভুল প্রমাণ করে জিম্বাবুয়ে সত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুজারাবানি বলেছিলেন, ২০০ রানের লক্ষ্য পেলেও ম্যাচ জিতবেন। লক্ষ্য ২০০ পৌঁছানোর আগেই বেঁধে ফেলতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে। সফরকারী দলের পেসার আরও বলছিলেন, প্রতিপক্ষ দলের রানের কথা না ভেবে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে চতুর্থ দিন খেলবেন তারা। নিজেদের কাজটা পরিকল্পনা মতোই করে যেতে পেরেছেন তারা। 

ছয় উইকেট আর ১৯৪ রান নিয়ে চতুর্থ দিন ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। আগের রাতের অপরাজিত থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকের আলী জুটি অক্ষত রেখেছিলেন মাত্র এক বল। দিনের দ্বিতীয় বলেই মুজারাবানির শিকার অধিনায়ক। ৬০ রানে শান্তর আউটে বিশাল লিড নেওয়ার স্বপ্নে ভেস্তে গেছে। গতকাল খেলা দেখে থাকলে পরের গল্প জানা থাকার কথা। উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাকের একা লড়াই করে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৫ রানে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশকে। তিনি এক প্রান্ত আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তের ব্যাটাররা মিছিল করে আউট হয়েছেন। ১১১ বলে ৫৮ রান করে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন তিনি।

মিডলঅর্ডার এ ব্যাটার হাফ সেঞ্চুরি না পেলে ১৭৩ রানের লক্ষ্য দেওয়া সম্ভব হতো না। বৃষ্টিও তো বাংলাদেশকে কম সহযোগিতা করেনি। বৃষ্টি না হলে চতুর্থ দিন সকালের সেশনেই ম্যাচ শেষ হয়ে যেতে পারত।

এই টেস্টে বাংলাদেশকে ১৯১ রানে অলআউট করে জিম্বাবুয়ে করেছিল ২৭৩ রান। ৮২ রানে এগিয়ে থাকাই জিম্বাবুয়েকে জয়ের পথ ঠিক করে দিয়েছে। পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৫ রান করার পরও তাই লো টার্গেট হয়েছে। এই টেস্টে হাতাশার মধ্যেও প্রাপ্তি বলতে মেহেদী হাসান মিরাজের ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার। এই  ম্যাচ দিয়েই ৫২ টেস্টে ২০০ উইকেটের মাইলফলক পেলেন তিনি। সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের পর তৃতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেট প্রাপ্তি ক্লাবের সদস্য হলেন মিরাজ। যদিও ম্যাচ হেরে যাওয়ায় ব্যক্তিগত অর্জন গুরুত্ব হারিয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ