যারা যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে আসেন, তাদের বেশির ভাগেরই পছন্দ সেন্ট্রাল পার্ক, স্ট্যাচু অব লিবার্টি, জমজমাট টাইমস স্কয়ার। এসব জায়গায় গিয়ে একটা ছবি না তুলতে পারলে আমেরিকায় এসেছি বলে মনে হয় না আসলে। বেড়াতে ভালোবাসি, তাই এসব জায়গায় আমারও পায়ের ছাপ পড়েছে। এসব আমার চোখ কেড়েছে, দীর্ঘদিনের কৌতূহলও মিটিয়েছে। অপার শান্তি
দিয়েছে ‘লেক জর্জ’। বিস্তীর্ণ মাঠ পেরিয়ে শান্ত জলরাশি আর চারপাশ ঘেরা সবুজ পাহাড়। মায়াময় স্নিগ্ধতায় ডুবে যাওয়ার এক অপূর্ব স্থান।
লেক জর্জের অবস্থান নিউ ইয়র্কের রাজধানী আলবানিতে। এর ডাক নাম ‘কুইন অব আমেরিকান লেক’; যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় আমেরিকার হ্রদের রানী। স্থানীয়রা একে বলেন ‘আন্দিয়া-তা-রক-তে’। এর কোনো আক্ষরিক অর্থ আছে কিনা আমার জানা নেই। এটি রাজ্যের উত্তর-পূর্ব অংশে অ্যাডিরন্ড্যাক পর্বতমালার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। লেকের কিনারা ঘেঁষে চওড়া রাস্তা। দু’দণ্ড বসতে জায়গায় জায়গায় বেঞ্চ। কেউ একা বসে থাকেন, কেউ প্রিয় সঙ্গীকে নিয়ে, কেউবা দল বেঁধে। তবে সবাই কেমন চুপচাপ। প্রকৃতি যেন বলেই দেয়– চুপ থাক। শান্ত হও। ছুটো না।
লেকের দিকে তাকালে কোথাও মনে হয় সবুজ। আবার কোথাও আকাশের সবটুকু নীল। আসলে প্রতিফলনের ওপর নির্ভর করে এই রং। কোথাও পাহাড়ের সবুজের ছায়া পড়েছে, সেখানে সবুজ জল আর কোথাও আকাশের প্রতিচ্ছবি। লেকের মধ্যে রয়েছে কাঠের তৈরি সাঁকো। চাইলেই কেউ জলের খুব কাছে যেতে পারবেন। পারবেন পা ভিজিয়ে মনের সুখে গুনগুন করে গাইতে। মনের ভেতর শুকিয়ে যাওয়া প্রেম যেন আবার ধরা দেয় এখানে এসে।
পুরো লেকটি ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে ক্রুজে ভ্রমণের ব্যবস্থা। জনপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ ডলার খরচ করলেই লেক ভ্রমণ করা যাবে। দেখা যাবে নদী আর পাহাড়ের সীমানাঘেঁষা জনজীবন। কী পরিচ্ছন্ন ছিমছাম বাড়িগুলো। শত বছরের পুরোনো আদলেই রয়েছে সব। সবকিছু সংরক্ষণ করা হচ্ছে অতি যত্নে। পুরোনোকে পুঁজি করেই গড়ে উঠেছে পর্যটনশিল্প। বেশ কিছু সাবেকি হোটেল-মোটেল রয়েছে। চাইলে রাতও কাটানো যাবে। ভাড়া একটু বেশি। স্থানীয়রা জানান অফ সিজনে, অর্থাৎ গ্রীষ্মের আগে বা পরে থাকা-খাওয়ার খরচ অনেকটা কম পড়ে।
ক্রুজ ভ্রমণের সুবিধা হলো– ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে আপনি ইতিহাসটা জানতে পারবেন। সেই সঙ্গে শীতল মিউজিক। প্রেমপূর্ণ যুগল হৃদয়ের জন্য এ ভ্রমণ হতে পারে আরও নান্দনিক। বাঙালি প্রেমিক মন অজান্তেই গেয়ে উঠবে–
‘আমরা এমনি এসে ভেসে যাই
আমরা এমনি এসে ভেসে যাই
আলোর মতন, হাসির মতন
কুসুমগন্ধরাশির মতন
হাওয়ার মতন, নেশার মতন
ঢেউয়ের মতন ভেসে যাই’.
আমাদের ক্রুজ ভ্রমণ শেষ হতে হতে পরন্ত বিকেল। খিদে পেয়েছে। এখানে লোকাল খাবারের খুব নাম। আমরা বাসা থেকে খিচুড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। কাছেই একটি পার্ক। সেখানেই ঘাসের ওপর চাদর বিছিয়ে খেয়েছি। তারপর কিছু সময় ছোটাছুটি। পার্ক থেকে লেকটি খুব অদ্ভুত লাগে। পার্কটিও চমৎকার। পেছনে পাহাড়, সামনে লেক। এত বড় পার্কে খুব কম মানুষই চোখে পড়ল। যাদের দেখলাম তারা কেউ নির্জনে বসে পড়ছেন, কেউ সঙ্গী নিয়ে বসে আছেন। সঙ্গী কেবল মানুষই নয়, রয়েছে বিড়াল-ককুরের মতো প্রিয় পোষা প্রাণীও।
সবার মধ্যেই আমি কেমন একা হয়ে গেলাম। মনে হলো–
‘মুগ্ধ পরান যতদূর চায়
ততদূর ভালোবাসি’।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দেশজুড়ে ঈদের দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস যা বলছে
দেশের ৪ জেলা এবং ৩ বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল রবিবার কয়েকটি জেলায় তাপপ্রবাহ কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। কিছু এলাকায় অপরিবর্তিত ছিল। আজ পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনেও গতকালের মতো তাপপ্রবাহ অপরিবর্তিত থাকবে। তবে আজ তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, গতকাল রবিবার দেয়া এক পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস বলছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
সোমবারের (৩১ মার্চ) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। তবে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে।
মঙ্গলবারের (১ এপ্রিল) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এদিন সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে, তবে সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
এ ছাড়া বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঢাকা/হাসান//