Samakal:
2025-03-31@13:28:23 GMT

চলনবিলের খেজুরের গুড়

Published: 28th, February 2025 GMT

চলনবিলের খেজুরের গুড়

চলনবিল অঞ্চলে অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগেই খেজুর গাছের রস দিয়ে গুড় তৈরি করেন। তাদের সঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে আসা গাছিরাও চলনবিল অঞ্চলে ভালো মানের খেজুর গুড় তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখছেন বছরের পর বছর। মৌসুমে ভালো আয়-রোজগারও করছেন। রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার মনিকগ্রাম ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা জামরুল ইসলাম (৪৩)। তাঁর বাবা আকবর আলী মারা গেছেন। জীবিত অবস্থায় তিনিও ছিলেন ওই এলাকার পরিচিত গাছি। আকবর আলী চোখের পলকে উঠে যেতে পারতেন যে কোনো উঁচু খেজুর গাছে। তৈরি করতেন সুস্বাদু পাটালি, বাটি, নালি ও মসলা গুড়। বাবার কাছেই অল্প বয়সে গাছিয়া হওয়ার হাতেখড়ি নেন জামরুল। রপ্ত করেছেন বাবার মতোই ভালো মানের গুড় তৈরির কলাকৌশল। এ কাজটিকে পেশা হিসেবে নিয়ে তিনিও পার করেছেন প্রায় এক যুগ। নিজেও হয়েছেন স্বাবলম্বী। 
রাজশাহী অঞ্চলে শীতকালে তেমন কাজ থাকে না। আয়-রোজগারের আশায় পুরো সময়টাই চলনবিলের সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার সেরাজপুর, ওয়াশিন, কাস্তা, বেত্রাশিন গ্রামে গুড় তৈরির কাজ করেন তিনি। এ বছর শীত মৌসুম শুরুর আগেই কার্তিক মাসে প্রায় ২০৭টি খেজুর গাছ টাকা নয়, গুড়ের বিনিময়ে লিজ নিয়ে দিব্যি বাবার মতোই নজরুল ইসলাম ও মকবুল হোসেন নামের অভিজ্ঞ দুই গাছিকে সঙ্গী করে তৈরি করছেন সুস্বাদু বিভিন্ন ধরনের খেজুরের গুড়। জামরুলের গুড় কিনতে এলাকার বাইরে থেকেও লোকজন আসেন তাড়াশের সেরাজপুর গ্রামের কৃষক সাত্তারের বাড়ির উঠানে গেঁড়ে বসা অস্থায়ী আস্তানায়। মৌসুমি এ কাজে যে আয় হয় তাতেই বছরের কয়েক মাস খাওয়া-পরাসহ সাংসারিক খরচ মেটাবেন জামরুলসহ অন্য গাছিরা। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা থেকে এবার দুই শতাধিক গাছি চলনবিল এলাকায় এসেছেন।
তাড়াশের পাশের উল্লাপাড়া উপজেলার দোবিরগঞ্জ গ্রামে প্রায় ৩০০ খেজুর গাছ লিজ নিয়ে গুড় তৈরি করছেন নাটোর জেলার বাগাতীপাড়া উপজেলার পাকা গ্রামের আবুল কাসেম। এ কাজের সঙ্গী স্ত্রী ও দুই কিশোর ছেলে। একটু সচ্ছলতার মুখ দেখতে প্রায় সাড়ে চার মাসের জন্য বাড়ির বাইরে থাকতে হচ্ছে গাছিদের। যাতায়াতসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় এখানকার তৈরি খেজুরের গুড় বগুড়া, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন শহরে যাচ্ছে।
পঞ্চাশোর্ধ্ব গাছি মনছের সরদার জানান, কার্তিক মাসের প্রথম সপ্তাহে ধারালো ছেনি, বাটাল কিনে ও শান দিয়ে, রসের হাঁড়ি বা ডুকি, তাওয়া বা কড়াই, হরপাট, হাদা বা দা, মাটির তৈরি বাটি, খাদা, রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, বিছানাপত্র ও নানা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে চলে আসেন চলনবিলের কোনো এক গৃহস্থের বাড়িতে। সেখানে বানান থাকার মতো টংঘর। প্রথমে গাছে উঠে নিজের নিরাপত্তার জন্য মোটা রশি বা তাদের ভাষায় শক্ত করে ডোড়া বেঁধে লোহার তৈরি দা কিংবা ছেনি দিয়ে লিজ নেওয়া গাছের অপ্রয়োজনীয় ডাল-পাতা ছেঁটে ফেলেন। তারপর রস বের করতে নিখুঁতভাবে ধারালো বাটাল দিয়ে খেজুর গাছের উপরিভাগে অল্প অল্প করে গাছিদের ভাষায় কপালি বা কোটর কাটতে থাকেন। অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহেই রসের হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেন। এর আগেই মাটির বড়সড় আখা বা চুলা, জ্বালানি হিসেবে মরা ডালপালা, খড় কিংবা বর্তমান সময়ে গার্মেন্টসের ঝুট সংগ্রহ করে রাখতে হয়। রস এলেই শুরু হয় গুড় তৈরি।
কাসেম গাছি জানান, গাছিরা বেলা ১১টার দিকে খাবার খেয়েই রসের জন্য ছেনি-বাটাল দিয়ে খেজুর গাছের কপালি কাটতে গাছে উঠে যান। মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিটে একেকটি গাছের কপালি কাটা ও হাঁড়ি ঝোলাতে পারেন তারা। এভাবে বিকেলের মধ্যেই গাছের কপালি কাটা ও হাঁড়ি ঝোলানো শেষ করে ফেরেন টংঘরে। পরে রান্না করে সন্ধ্যার পরপরই খাবার খেয়ে দ্রুত ঘুমিয়ে যান। আবার রাত ৩টার দিকে ঘুম থেকে জেগে একেকটি খেজুর গাছ থেকে রসভরা হাঁড়ি নামিয়ে আনার কাজ শুরু করেন; যা ভোর হওয়ার মধ্যে শেষ করতে হয়। পড়ে আখা বা চুলায় অ্যালুমিনিয়ামের বড় কড়াই বা তাওয়ায় মণ পাঁচেক ওজনের রস ঢেলে শুরু হয় চুলায় জ্বাল দেওয়া। একসময় রসের জ্বাল দেওয়া পাত্রের রসে বলক উঠতে থাকে। তখন রসের ফেনা ফেলে দেওয়া, কাঠের তৈরি লম্বা হাতলের সাপরপাট দিয়ে অবিরাম নাড়ানাড়ি চলতে থাকে। এরপর গুড়ের রং এলে তা গাঢ় হওয়া পর্যন্ত রস চুলায় জ্বাল দেন। পাশাপাশি সেখান থেকে অল্প পরিমাণ গাঢ় গুড় নিয়ে গরম তাওয়ায় সারপাট দিয়ে মলে মলে তৈরি হয় গুড়ের বীজ। সে বীজ পুরো তাওয়ায় রাখা গুড়ে মিশিয়ে দিয়ে পাটালি বা বাটি আকারের পাত্রে রেখে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে তা শক্ত হয়ে গেলে হয় পরিপূর্ণ পাটালি খেজুর গুড়। তখন পাত্র থেকে তুলে কাগজ বা প্লাস্টিকের কার্টনে ভরে সে গুড় বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া হয়। নালি বা ঝোলা গুড় তৈরিতে গুড়ের বীজ মেশাতে হয় না। 
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, চলনবিল এলাকায় চাঁচকৈড়, মীর্জাপুর, হান্ডিয়াল, নওগাঁ, সলঙ্গা, নিগাছি, কাছিকাটা, সাইকোলাসহ ১৫ থেকে ২০টি হাটে সাপ্তাহিক হাটবারে প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ টাকার গুড় বিক্রি হয়। তা থেকে যে আয় আসে তাতে গাছি বা কৃষকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তারা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছেন। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

সংঘর্ষ ও খুনের পর মিরসরাই বিএনপির তিন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত

সংঘর্ষ ও খুনের পর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত তিনটি কমিটির কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি মিরসরাই উপজেলা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারিয়ারহাট পৌরসভার তিনটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদিত বিএনপির কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশেষ একটি পক্ষ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এলাকায় জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একজন নিরীহ মানুষ হত্যার শিকার হন এবং ১৫ জন গুরুতরভাবে জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সাম্প্রতিক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মিরসরাইয়ের জনগণের পাশে থাকার লক্ষ্যে অনুমোদিত তিন কমিটির কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হলো।

কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির বিষয়ে পরবর্তী করণীয় বসে ঠিক করা হবে। কমিটি গঠনের পর হত্যাসহ নানা নৈরাজ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৮ মার্চ মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মিরসরাই উপজেলা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারিয়ারহাট বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

নতুন ঘোষিত বিএনপির উপজেলা আহ্বায়ক কমিটিতে আবদুল আওয়াল চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও আজিজুর রহমান চৌধুরীকে সদস্যসচিব মনোনীত করা হয়। ঘোষিত এই কমিটির বিরোধিতা করে ২৫ মার্চ দুপুরে মিরসরাই উপজেলা সদরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিনের অনুসারীরা। সেই ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নতুন আহ্বায়ক কমিটিকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিএনপির দুই পক্ষের এমন উত্তেজনা শুরু হলে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ফুল দিতে এলে দুই পক্ষের মধ্যে সহিংসতার শঙ্কায় ২৬ মার্চ সকালে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য মিরসরাই উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। সেদিন বেলা ১১টায় মিছিল গণজমায়েত করে প্রশাসনের দেওয়া ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শহীদ মিনারে এসে ফুল দিয়ে যান মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের অনুসারীরা। এরপর উপজেলার বারিয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মইনুদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মোহাম্মদ জাবেদ নামের এক যুবক নিহত হন। সংঘর্ষের সেই ঘটনায় বিএনপির আরও অন্তত ১৩ নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংঘর্ষ ও খুনের পর মিরসরাই বিএনপির তিন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত