মাছ চাষে ভাগ্য ফিরিয়ে কোটিপতি রাসেল
Published: 28th, February 2025 GMT
পনেরো বছর আগে মায়ের দেওয়া এক লাখ টাকায় মাছ চাষ শুরু করেছিলেন রাসেল সরদার। বর্তমানে শতাধিক পুকুর ও ঘের ছাড়াও একটি মৎস্য হ্যাচারি ও মাছের ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর। এসব প্রতিষ্ঠানে দেড় শতাধিক যুবককে চাকরি দিয়েছেন রাসেল। সফল উদ্যোক্তা হিসেবে ইতোমধ্যে একাধিক স্বীকৃতি পেয়েছেন আগৈলঝাড়া উপজেলার বারপাইকা গ্রামের এই যুবক।
মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছেন রাসেল। তাঁর হ্যাচারিতে পাবদা, সরপুঁটি, ট্যাংরা, শিং, কৈ, গুলশা, পাঙাশ, ভিয়েতনাম কৈ, মনোসেক্স তেলাপিয়াসহ কার্প-জাতীয় মাছের উন্নত মানের রেণু-পোনা উৎপাদন হয়। এসব পোনা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন খামারে বিক্রি করা হয়। মাছ চাষে রাসেলের সাফল্য দেখে এলাকার শিক্ষিত তরুণ-যুবকরা মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
রাসেল জানালেন, তাঁর হ্যাচারিতে বছরে দুই কোটি রেণু-পোনা উৎপাদন হয়। মাছের নিরাপদ ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে গড়ে তুলেছেন পদ্মা ফিড নামে একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রতিদিন ১০ টন উন্নত মানের মাছের খাবার উৎপাদন হয়। এ প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত ফিড তাঁর পুকুরের মাছের খাবারের চাহিদা মিটিয়ে অন্য চাষিদের কাছে বিক্রি করা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বরপাইকা গ্রামে রাসেল সরদারের যমুনা মৎস্য হ্যাচারিতে মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। হ্যাচারিতে কর্মরতরা নিজস্ব একাধিক পুকুর থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির মা-মাছ (ডিমওয়ালা মাছ) ধরে হ্যাচারির হাউসে রেখে ৫-৬ ঘণ্টা ঝরনা দিয়ে পানি দিচ্ছেন। পরে ইনজেকশনের সাহায্যে এসব মাছে হরমোন দেওয়ার পর পুরুষ মাছের সঙ্গে একই হাউসে রাখা হয়। পরে মা-মাছ ডিম দেওয়ার ২-৩ দিনের মধ্যে ডিম থেকে রেণু উৎপাদন হয়। হ্যাচারিতে কর্মরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে প্রকারভেদে ২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা কেজি দরে মাছের রেণু বিক্রি হয়। এ ছাড়া রেণু কিছুটা বড় করে পোনা হিসেবে বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন প্রকার মাছের পোনার আকৃতির ওপর দাম নির্ধারণ করা হয়।
কাঠিরা গ্রামের মৎসচাষি পরেশ বিশ্বাস জানান, তিনি নিজস্ব পুকুরে মাছ চাষের জন্য রাসেল সরদারের হ্যাচারি থেকে বিভিন্ন দেশীয় মাছের রেণু-পোনা ও মাছের খাবার কেনেন। দেশের বিভিন্ন এলাকার মৎস্য খামারিদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেকেই রাসেলের
হ্যাচারি থেকে রেণু-পোনা কিনে মাছ চাষ করছেন। তাঁর কারণে এলাকার অনেকেই মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
রাসেল সরদার বলেন, ২০১০ সালে নিজের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চাকরি ছেড়ে যখন মাছ চাষ শুরু করেন, তখন এলাকার অনেকেই তাঁকে পাগল বলে উপহাস করত। এখন তাঁর শতাধিক পুকুর ও মৎস্য ফিড কারখানায় দেড় শতাধিক লোক কর্মরত আছে। মাছের রেণু-পোনা উৎপাদনে সফলতার জন্য উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সেরা মৎস্যচাষি সম্মাননা পেয়েছেন।
আগৈলঝাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মানিক মল্লিক বলেন, দেশিয় প্রজাতির অনেক মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। রাসেলের হ্যাচারিতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছের রেণু-পোনা উৎপাদন করা হয়, যা স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্যচাষিদের চাহিদা মেটাতে বড় ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া তাঁর প্রতিষ্ঠানে অনেক যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ জানান, তিনি একাধিকবার রাসেল সরদারের হ্যাচারি পরিদর্শন করেছেন। মাছের রেণু-পোনা ও খাবার উৎপাদনে জেলার মধ্যে তাঁর প্রতিষ্ঠান অন্যতম সেরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র স ল সরদ র এল ক র শত ধ ক মৎস য উপজ ল উৎপ দ র মৎস
এছাড়াও পড়ুন:
এই কঠিন সময়ে ঐক্য ধরে রাখা প্রয়োজন: ঢাবি উপাচার্য
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির ঐক্য রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান।
উপাচার্য বলেন, ‘আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি। এক অর্থে জাতির জন্য এটি একটি ক্রান্তিকাল। এই সময়ে আমাদের ঐক্য ধরে রাখা একান্তই প্রয়োজন।’
আজ রোববার সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের কাছে নিয়াজ আহমেদ খান এ কথা বলেন।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস জাতির জন্য পরম শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও মমতার দিন। এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। তাঁদের সেই চূড়ান্ত আত্মত্যাগ ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে আছে।
নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, যুগে যুগে ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ এ জাতিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং সাহস জুগিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় জাতি ১৯৯০ ও ২০২৪ সালের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে।
উপাচার্য আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ আজও জাতির ঐক্য ধরে রাখার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোকবর্তিকা। একই সঙ্গে ১৯৫২, ১৯৬৮, ১৯৬৯, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে যাঁরা রক্ত ও জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ১৯৫২ থেকে ২০২৪—এর প্রতিটি দিন ও ঘটনাপ্রবাহ জাতির মৌলিক পরিচয়ের মাইলফলক। এর কোনো অংশ বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ইতিহাসই যুগে যুগে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে, আর বর্তমান সময়ে সেই ঐক্য ধরে রাখাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।