মণিপুরে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্ত্র সমর্পণ, অস্ত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়ল
Published: 28th, February 2025 GMT
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের পদত্যাগের পরে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সেখানে রাষ্ট্রপতি তথা কেন্দ্রের শাসন জারি করা হয়। এরপর রাজ্যটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় এবং কুকিসহ অন্যান্য জাতির সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। রাজ্যের নতুন রাজ্যপাল ও সাবেক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয়কুমার ভাল্লার বেঁধে দেওয়া সেই সময়সীমা বৃহস্পতিবার হয়। শেষ দিন সশস্ত্র মেইতেই গোষ্ঠী ‘আরামবাই টেঙ্গোল’ অস্ত্র জমা দেয়।
তবে এখনো বিপুল অস্ত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই অস্ত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা ৬ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকটি গাড়িতে করে আরামবাই টেঙ্গোলের সদস্যরা অস্ত্র জমা দিতে পশ্চিম ইম্ফলের মণিপুর রাইফেলসের দপ্তরে প্রবেশ করছেন। ছাদখোলা পিকআপ ভ্যানে রয়েছে অসংখ্য অস্ত্র। তাতে রয়েছে রকেট লঞ্চার, মর্টার, স্বয়ংক্রিয় ও আধা স্বয়ংক্রিয় বন্দুক, মেশিনগান ও গোলাবারুদ। অস্ত্রের ভান্ডারের ওপরে বসে রয়েছেন আরামবাই টেঙ্গোলের সদস্যরা।
আরামবাই টেঙ্গোল মোট ২৪৬টি বিপজ্জনক প্রাণঘাতী অস্ত্র জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
টেঙ্গোলের একটি প্রতিনিধিদল রাজ্যপাল ভাল্লার সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করেছিল। বৈঠকের পরে গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) আরামবাই টেঙ্গোলের জনসংযোগ কর্মকর্তা রবিন মাঙ্গাং খোয়াইরাকপাম স্থানীয় প্রচারমাধ্যমে বলেন, ‘ভাল্লা আমাদের বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র সমর্পণ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। আমরা কিছু শর্ত পেশ করেছি এবং তাঁকে আশ্বস্ত করেছি যে শর্ত পূরণ হলে সব অস্ত্র সমর্পণ করা হবে।’ শর্তগুলো কী কী, তা তিনি জানাননি। মনে করা হচ্ছে, এখনো কিছু অস্ত্র তাদের হাতে রয়ে গেছে।
মণিপুর রাজ্য সরকারের বিভিন্ন অস্ত্রাগার, থানা ও চৌকি থেকে গত দেড় বছরে যেসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়েছে, সেগুলোই এখন ফেরত আসছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে। এসব প্রতিবেদনের হিসাব অনুযায়ী, আড়াই হাজার থেকে ছয় হাজার পর্যন্ত অস্ত্র লুট হয়েছে। এর বাইরে বিপুলসংখ্যক অস্ত্র মিয়ানমার থেকে কুকিসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে পৌঁছেছিল, এমনটাই দাবি করেছিল বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার।
আরও পড়ুনমণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসনে কি শান্তি ফিরবে২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫কুকি ও অন্যান্য জাতির অস্ত্র সমর্পণকী ধরনের অস্ত্র জমা পড়েছে, এক সপ্তাহ ধরে মণিপুর পুলিশ তা তালিকা প্রকাশ করে জানিয়েছে। আজ পার্বত্য অঞ্চলের চার জেলা থেকে ১০৯টি অস্ত্র জমা পড়েছে। এর বড় অংশই জমা দিয়েছে কুকিসহ অন্যান্য জাতি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। নানা ধরনের অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী অস্ত্র এর মধ্যে রয়েছে। স্বল্পপাল্লার রকেট লঞ্চার ও মর্টারের পাশাপাশি এসব অস্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, পিস্তল, কার্তুজ, গ্রেনেড, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও যোগাযোগের ওয়্যারলেস সেটও রয়েছে।
তবে যত অস্ত্র বাইরে থেকে এসেছে বা লুট হয়েছে, সেগুলোর সবই জমা পড়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে এখনো বিপুল অস্ত্র রয়ে গেছে।
মণিপুরের সশস্ত্র আন্দোলন বিশেষজ্ঞ ও প্রবীণ এক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে বন্দুকের আয়ু সাধারণত খুব বেশি হয়। তবে একটি স্বয়ংক্রিয় বন্দুক যদি ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তা অনায়াসে ৪০-৫০ বছর কাজ করতে পারে। এই বিষয়টি মাথায় রাখলে মেনে নিতে হয় যে এখনো বিপুল অস্ত্র জমা পড়েনি। এই দিকটি বিপজ্জনক।’
আরও পড়ুনপদত্যাগ করলেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫২০২৩ সালের মে মাসে মণিপুরে জাতিগত সংঘাত শুরু হয়। প্রায় দেড় বছরের সংঘাতে সেখানে আড়ই শর বেশি মানুষ মারা গেছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এখনো মণিপুর সফরে যাননি।
আরও পড়ুনভারতের মণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সশস ত র গ ষ ঠ অন য ন য জ ত ন সশস ত র ত র সমর
এছাড়াও পড়ুন:
বনানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে বাধা, বিক্ষোভ-ভাঙচুর
রাজধানীর বনানী এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে বাধা দেওয়ায় বিক্ষোভ ও পুলিশের একটি বক্সে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের গুলশান অঞ্চলের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এই তথ্য জানান।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় কয়েকজন পথচারীকে মারধর করেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা।
পুলিশ বলছে, তারা বনানী ১১ নম্বর সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে বাধা দেয়। এ সময় কয়েকটি ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে পুলিশের একটি বক্সে ভাঙচুর চালান তাঁরা। কয়েকজন পথচারীও মারধরের শিকার হন।
ট্রাফিক পুলিশের গুলশান অঞ্চলের সহকারী কমিশনার আবু সায়েম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের পরে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার ভিডিও ধারণ করার সময় এক গণমাধ্যমকর্মীকে মারধর করেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এই গণমাধ্যমকর্মী প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা পুলিশের একটি বক্সে হামলা করেন। তিনি ভিডিও করতে যান। তখন চালকেরা তাঁর ওপর হামলা করেন। তাঁর গায়ের গেঞ্জি ছিঁড়ে ফেলেন।