ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের পদত্যাগের পরে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সেখানে রাষ্ট্রপতি তথা কেন্দ্রের শাসন জারি করা হয়। এরপর রাজ্যটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় এবং কুকিসহ অন্যান্য জাতির সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। রাজ্যের নতুন রাজ্যপাল ও সাবেক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয়কুমার ভাল্লার বেঁধে দেওয়া সেই সময়সীমা বৃহস্পতিবার হয়। শেষ দিন সশস্ত্র মেইতেই গোষ্ঠী ‘আরামবাই টেঙ্গোল’ অস্ত্র জমা দেয়।

তবে এখনো বিপুল অস্ত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই অস্ত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা ৬ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকটি গাড়িতে করে আরামবাই টেঙ্গোলের সদস্যরা অস্ত্র জমা দিতে পশ্চিম ইম্ফলের মণিপুর রাইফেলসের দপ্তরে প্রবেশ করছেন। ছাদখোলা পিকআপ ভ্যানে রয়েছে অসংখ্য অস্ত্র। তাতে রয়েছে রকেট লঞ্চার, মর্টার, স্বয়ংক্রিয় ও আধা স্বয়ংক্রিয় বন্দুক, মেশিনগান ও গোলাবারুদ। অস্ত্রের ভান্ডারের ওপরে বসে রয়েছেন আরামবাই টেঙ্গোলের সদস্যরা।

আরামবাই টেঙ্গোল মোট ২৪৬টি বিপজ্জনক প্রাণঘাতী অস্ত্র জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

টেঙ্গোলের একটি প্রতিনিধিদল রাজ্যপাল ভাল্লার সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করেছিল। বৈঠকের পরে গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) আরামবাই টেঙ্গোলের জনসংযোগ কর্মকর্তা রবিন মাঙ্গাং খোয়াইরাকপাম স্থানীয় প্রচারমাধ্যমে বলেন, ‘ভাল্লা আমাদের বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র সমর্পণ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। আমরা কিছু শর্ত পেশ করেছি এবং তাঁকে আশ্বস্ত করেছি যে শর্ত পূরণ হলে সব অস্ত্র সমর্পণ করা হবে।’ শর্তগুলো কী কী, তা তিনি জানাননি। মনে করা হচ্ছে, এখনো কিছু অস্ত্র তাদের হাতে রয়ে গেছে।

মণিপুর রাজ্য সরকারের বিভিন্ন অস্ত্রাগার, থানা ও চৌকি থেকে গত দেড় বছরে যেসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়েছে, সেগুলোই এখন ফেরত আসছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে। এসব প্রতিবেদনের হিসাব অনুযায়ী, আড়াই হাজার থেকে ছয় হাজার পর্যন্ত অস্ত্র লুট হয়েছে। এর বাইরে বিপুলসংখ্যক অস্ত্র মিয়ানমার থেকে কুকিসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে পৌঁছেছিল, এমনটাই দাবি করেছিল বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার।

আরও পড়ুনমণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসনে কি শান্তি ফিরবে২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫কুকি ও অন্যান্য জাতির অস্ত্র সমর্পণ

কী ধরনের অস্ত্র জমা পড়েছে, এক সপ্তাহ ধরে মণিপুর পুলিশ তা তালিকা প্রকাশ করে জানিয়েছে। আজ পার্বত্য অঞ্চলের চার জেলা থেকে ১০৯টি অস্ত্র জমা পড়েছে। এর বড় অংশই জমা দিয়েছে কুকিসহ অন্যান্য জাতি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। নানা ধরনের অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী অস্ত্র এর মধ্যে রয়েছে। স্বল্পপাল্লার রকেট লঞ্চার ও মর্টারের পাশাপাশি এসব অস্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, পিস্তল, কার্তুজ, গ্রেনেড, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও যোগাযোগের ওয়্যারলেস সেটও রয়েছে।

তবে যত অস্ত্র বাইরে থেকে এসেছে বা লুট হয়েছে, সেগুলোর সবই জমা পড়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে এখনো বিপুল অস্ত্র রয়ে গেছে।

মণিপুরের সশস্ত্র আন্দোলন বিশেষজ্ঞ ও প্রবীণ এক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে বন্দুকের আয়ু সাধারণত খুব বেশি হয়। তবে একটি স্বয়ংক্রিয় বন্দুক যদি ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তা অনায়াসে ৪০-৫০ বছর কাজ করতে পারে। এই বিষয়টি মাথায় রাখলে মেনে নিতে হয় যে এখনো বিপুল অস্ত্র জমা পড়েনি। এই দিকটি বিপজ্জনক।’

আরও পড়ুনপদত্যাগ করলেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২০২৩ সালের মে মাসে মণিপুরে জাতিগত সংঘাত শুরু হয়। প্রায় দেড় বছরের সংঘাতে সেখানে আড়ই শর বেশি মানুষ মারা গেছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এখনো মণিপুর সফরে যাননি।

আরও পড়ুনভারতের মণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সশস ত র গ ষ ঠ অন য ন য জ ত ন সশস ত র ত র সমর

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদে তারকারা কে কোথায়?

ঈদ আনন্দ পরিবার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ব্যস্ত শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছেন অনেকে। তারকাদের কেউ কেউ বিদেশে উড়ে গিয়েছেন। চলুন জেনে নিই, কোন তারকা কোথায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। 

সাদিয়া ইসলাম মৌ
ঈদের ছুটিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন জনপ্রিয় মডেল-নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌ। বছরজুড়ে ব্যস্ত থাকায় ঈদের সময়ে একটু অবসর পান। সেভাবেই পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। মৌ বলেন, “ঈদের ছুটিতে ঢাকায় আছি। এই ঈদে আমার অভিনীত দুটি নাটক প্রচার হওয়ার কথা। আশা করি, দর্শকরা ভালো কিছু দেখতে পাবেন। আমার মেয়ে দেশের বাইরে পড়াশোনা করছে। ঈদের দিন ওকে মিস করছি।” 

জয়া আহসান
টানা শুটিং করেছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ছুটির মুডে আছেন। ঢাকার বাসায়ই পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছেন। জয়া আহসান বলেন, “বাসায় সবাই মিলে আমার অভিনীত ওয়েব সিরিজ ‘জিম্মি’ দেখব। ঈদে প্রতিটা বাড়িতে যা রান্না হয়, আমাদের বাসাতেও সেটা রান্না হয়। তবে ঈদের দিন আমার বাসার আশপাশের বাচ্চাদের মাংস-ভাত খাওয়াব। এটা আমি তাদের জন্য নিজে হাতে রান্না করি। ঈদের দিনটা ওরা খাবে না আমি খাব, এটা ভাবতেই পারি না।” 

আরো পড়ুন:

ঈদের আগে উড়াল দিলেন ফারিণ

হুইলচেয়ারে বসে কেন প্রিমিয়ারে মোশাররফ করিম?

আজমেরী হক বাঁধন
ঈদুল ফিতর ঢাকায় উদযাপন করছেন আজমেরী হক বাঁধন। এ অভিনেত্রী বলেন, “ঢাকায় মা-বাবা, মেয়ে ও পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছি। ছোটবেলায় ঈদের জন্য বড়সড় পরিকল্পনা করতাম। এখন মেয়ে পরিকল্পনা করে, এটা ভালো লাগে। ঈদে যারা গ্রামে গিয়েছেন, তাদের ঈদ বেশি আনন্দের হোক এটাই প্রত্যাশা করি।” 

জাকিয়া বারী মম
রাজধানী ঢাকায় কাটছে লাক্স তারকা অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মমর ঈদুল ফিতর। তার মা, ভাই ও ভাবি হজে গিয়েছেন। ফলে, তাদেরকে মিস করছেন। মম বলেন, “মা-ভাই-ভাবি ফিরে এলেই মূলত আমার ঈদ শুরু হবে। তাই আপাতত বড় কোনো পরিকল্পনা করিনি।” 

পরীমণি
দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। তার ঈদের আনন্দ দুই সন্তানকে ঘিরেই। এই চিত্রনায়িকা বলেন, “আমার সব আনন্দের মূলে ওরা দুজন। ঈদের আনন্দও ওদের নিয়েই। ঈদের ছুটিতে ঢাকাতেই আছি। সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে যেতে পারি। তবে নানাকে মিস করছি। আমার নানাভাইয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন।” 

তাসনিয়া ফারিণ
ঈদুল ফিতরের আগে যুক্তরাজ্যে উড়ে গিয়েছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ। তার স্বামী শেখ রেজওয়ান যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে বসবাস করেন। স্বামীর সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে দূরদেশে উড়ে গিয়েছেন এই অভিনেত্রী। তবে যাওয়ার আগে স্বামীর জন্য লাগেজ ভর্তি জিনিসপত্র নিয়েছেন এই শিল্পী। 

তানজিম সাইয়ারা তটিনী
এ সময়ের জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী তটিনী। অন্য তারকাদের মতো ঈদুল ফিতর ঢাকায় উদযাপন করছেন না। বরং নিজ বাড়ি বরিশালে গিয়েছেন; যেখানে তার শৈশব কেটেছে। এই অভিনেত্রী বলেন, “বরিশালে আমার অনেক স্মৃতি। ব্যস্ততার কারণে কয়েকবছর যাওয়া হয়নি। এবার আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিলাম ঈদের ছুটিতে বরিশাল যাব, কয়েকটি দিন কাটাব। বরিশাল আমার প্রিয় শহর। এখানে আমার নানাবাড়ি-দাদাবাড়ি।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ