জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে দলকে ‘সর্বাত্মক প্রস্তুত’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলের বৃহস্পতিবারের বর্ধিত সভার প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তে এ কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনআকাঙ্ক্ষা পূরণের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তাঁদের জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে জনগণের মধ্যে সক্রিয় হতে হবে। কথা–কাজে জনগণের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। দলীয় নীতি, আদর্শ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে অবহেলা করা যাবে না। দুর্নীতি-অনাচারসহ গণবিরোধী সব কর্মকাণ্ড ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে বিরত থাকার কঠোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনের এলডি হল-সংলগ্ন মাঠে বিএনপির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টায় শুরু হওয়া এ বর্ধিত সভা রাত সাড়ে ১১টায় শেষ হয়। সভায় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটি, মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, পৌর কমিটির নেতা, অঙ্গসংগঠনের নেতা, ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী, প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীসহ সাড়ে তিন হাজার নেতা অংশ নেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনলাইনে যুক্ত হয়ে উদ্বোধনী ও সমাপনী বক্তব্য দেন।

শুক্রবার সভার প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘স্বাধীনতার ঘোষক ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ঘোষিত “ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়” আদর্শকে ধারণ করে আমরা এগিয়ে যাব। “ঐক্যেই শক্তি, ঐক্যেই মুক্তি” ঘোষণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দলের সৎ ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করে আমরা বিজয়ের পথে এগিয়ে যাব।’

সভায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলা হয়, ঐকমত্যে গৃহীত যেসব সংস্কার প্রস্তাব নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন সম্ভব, তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং যেসব সংস্কারের জন্য আইন কিংবা সংবিধান পরিবর্তন প্রয়োজন, তা নির্বাচিত জাতীয় সংসদে অনুমোদনের লক্ষ্যে পেশ করার জন্য বর্ধিত প্রস্তাব করেছে বিএনপি।

‘সর্বাগ্রে সংসদ নির্বাচনের দাবি’

বিএনপির বর্ধিত সভা মনে করে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে থাকে। এই মৌলিক অধিকার থেকে এ দেশের জনগণকে প্রায় দেড় যুগ বঞ্চিত রাখা হয়েছে। ফলে এ বঞ্চনার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অযৌক্তিক ঊর্ধ্বগতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান অবনতিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপির বর্ধিত সভা। সভা থেকে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল এবং শ্রেণি-পেশার সংগঠনকে আস্থায় নিয়ে সম্মিলিতভাবে পতিত সরকারের সৃষ্ট ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের পাশাপাশি অযৌক্তিক কারণে আন্দোলনের নামে জনজীবন বিপর্যয়ের অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। চাঁদাবাজি, দখল ও বিশৃঙ্খলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারি ব্যর্থতা গ্রহণযোগ্য নয়।

সরকারের কাছে ব্যাখ্যা দাবি

গণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ তাঁর সহযোগীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়া এবং এখনো অসংখ্য অপরাধী অবাধে বিচরণ করছে। এর একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বিএনপির বর্ধিত সভা সরকারের কাছে দাবি করেছে। এসব অপরাধীর বিচার ও শাস্তি দিতে দেরি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদেশে অবস্থান করে যারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং শান্তি-শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা এবং তাদের দেশীয় সহযোগীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কূটনৈতিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের আরও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

একই সঙ্গে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার এবং তাদের সহযোগী এক-এগারোর সরকারের করা সব মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দ্রুত প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

‘বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার অঙ্গীকার’

বর্ধিত সভায় ঐক্যবদ্ধ বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে আরও ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী, কার্যকর ও জনপ্রিয় করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অধিকারহীন, অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত জনগণকে তাদের কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানবিক মর্যাদায় ফিরিয়ে দেওয়ার প্রধান দায়িত্ব বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের।

বিএনপির বর্ধিত সভায় বলা হয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের ভিত্তি স্থাপন ও শক্তিশালী করায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কৌশলী, সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছে।

সভায় দীর্ঘ ১৬ বছরের অবিরাম আন্দোলন ও এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং আহত ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়। পাশাপাশি প্রকৃত শহীদদের তালিকা তৈরি, তাঁদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, তাঁদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র ক র যকর র জন য ব যবস গ রহণ সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনীতিতে নতুনত্বের ছাপ প্রত্যাশিত

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সাড়ে ছয় মাসের মাথায় পদত্যাগ করলেন। তিনি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে নতুন দল গঠিত হচ্ছে—এই খবর চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের বিষয়টিও সামনে আসে।

সরকারের সঙ্গে নীতিগত বিরোধের কারণে নয়, বরং নতুন দলের নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যেই নাহিদ ইসলামের এই পদত্যাগ। মঙ্গলবার দুপুরের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে তিনি পতাকাবিহীন গাড়িতে করে যমুনা ছাড়েন।

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্ব যে দল শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে, নাহিদ ইসলাম সেই দলের প্রধান হবেন বলে জানা গেছে। রাজনীতিতে যুক্ত হতে ও একটি নতুন দলের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মন্ত্রী পর্যায়ের পদ ছেড়ে দেওয়ার তাঁর এই সিদ্ধান্ত অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে। আমরা তাঁর পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট গঠিত মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকারে তিনজন ছাত্রনেতা যোগ দিয়েছিলেন। বাকি দুজন হলেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর প্রশ্ন এসেছে, তাঁরা কী করবেন? এই দুই উপদেষ্টা যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নতুন দলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা বা দলের কার্যক্রমে কোনো ভূমিকা রাখেন, তাহলে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তবে নতুন দল থেকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁরা নিজেদের দূরে রাখতে পারলে সেই প্রশ্ন এড়ানো যাবে।

তবে দুই উপদেষ্টার ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার বাইরে এর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তির বিষয়টিও রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত কেউ সরকারে আছেন—এমন বাস্তবতা সরকারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনটি নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এই পটভূমিতে আগামী নির্বাচনটি এমন হতে হবে, যা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি না হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পদত্যাগপত্রে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আপনার নেতৃত্বে দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট থেকেছি। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমার ছাত্র-জনতার কাতারে উপস্থিত থাকা উচিত মর্মে আমি মনে করি।’ গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার জন্য এবং গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার শক্তিকে সংহত করতে সরকারে থাকার চেয়ে রাজপথে তাঁর ভূমিকা বেশি হবে বলে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, সেটি প্রণিধানযোগ্য।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সংগঠিত রাজনৈতিক পালাবদলের পর মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা আরও তীব্র হয়েছে। জনগণ আর পুরোনো রাজনীতি দেখতে চায় না। ছাত্র-তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ সেই আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন। নতুন দলের সামনে তাই চ্যালেঞ্জ অনেক।

আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী তরুণেরা বলেছেন, পুরোনো রাজনীতি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন দল জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে পরিচালিত হোক, সেটাই প্রত্যাশিত। তবে দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা এগিয়ে নিতে পুরোনো দলগুলোর অভিজ্ঞতা ও তরুণদের উদ্যমের সমন্বয় প্রয়োজন। নতুন দল তাদের নীতি, আদর্শ ও কর্মসূচির অভিনবত্বে রাজনীতিতে নতুনত্বের ছাপ রাখতে সক্ষম হবে আশা করি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুক্তিযুদ্ধ নিছক শাসক বদলের যুদ্ধ ছিল না
  • জাতীয় নাগরিক পার্টির লক্ষ্য ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা
  • ‘রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে জনআকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে না’
  • এমন রাজনীতি চাই যেখানে পারিবারিক আধিপত্য থাকবে না: তাসনিম জারা
  • যারা জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে মূল্যায়ন করবো : সজল
  • দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধের দাবিতে রাজশাহীতে জামায়াতের বিক্ষোভ
  • টাঙ্গাইলে বাড়ছে খুন-ডাকাতি-চুরি
  • বাংলাদেশের শত্রুরা এখনো গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে: খালেদা জিয়া
  • রাজনীতিতে নতুনত্বের ছাপ প্রত্যাশিত