জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ‘সর্বাত্মক প্রস্তুতির’ সিদ্ধান্ত বিএনপির
Published: 28th, February 2025 GMT
জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে দলকে ‘সর্বাত্মক প্রস্তুত’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলের বৃহস্পতিবারের বর্ধিত সভার প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনআকাঙ্ক্ষা পূরণের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তাঁদের জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে জনগণের মধ্যে সক্রিয় হতে হবে। কথা–কাজে জনগণের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। দলীয় নীতি, আদর্শ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে অবহেলা করা যাবে না। দুর্নীতি-অনাচারসহ গণবিরোধী সব কর্মকাণ্ড ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে বিরত থাকার কঠোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনের এলডি হল-সংলগ্ন মাঠে বিএনপির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টায় শুরু হওয়া এ বর্ধিত সভা রাত সাড়ে ১১টায় শেষ হয়। সভায় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটি, মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, পৌর কমিটির নেতা, অঙ্গসংগঠনের নেতা, ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী, প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীসহ সাড়ে তিন হাজার নেতা অংশ নেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনলাইনে যুক্ত হয়ে উদ্বোধনী ও সমাপনী বক্তব্য দেন।
শুক্রবার সভার প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘স্বাধীনতার ঘোষক ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ঘোষিত “ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়” আদর্শকে ধারণ করে আমরা এগিয়ে যাব। “ঐক্যেই শক্তি, ঐক্যেই মুক্তি” ঘোষণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দলের সৎ ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করে আমরা বিজয়ের পথে এগিয়ে যাব।’
সভায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলা হয়, ঐকমত্যে গৃহীত যেসব সংস্কার প্রস্তাব নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন সম্ভব, তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং যেসব সংস্কারের জন্য আইন কিংবা সংবিধান পরিবর্তন প্রয়োজন, তা নির্বাচিত জাতীয় সংসদে অনুমোদনের লক্ষ্যে পেশ করার জন্য বর্ধিত প্রস্তাব করেছে বিএনপি।
‘সর্বাগ্রে সংসদ নির্বাচনের দাবি’বিএনপির বর্ধিত সভা মনে করে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে থাকে। এই মৌলিক অধিকার থেকে এ দেশের জনগণকে প্রায় দেড় যুগ বঞ্চিত রাখা হয়েছে। ফলে এ বঞ্চনার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।
দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অযৌক্তিক ঊর্ধ্বগতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান অবনতিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপির বর্ধিত সভা। সভা থেকে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল এবং শ্রেণি-পেশার সংগঠনকে আস্থায় নিয়ে সম্মিলিতভাবে পতিত সরকারের সৃষ্ট ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের পাশাপাশি অযৌক্তিক কারণে আন্দোলনের নামে জনজীবন বিপর্যয়ের অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। চাঁদাবাজি, দখল ও বিশৃঙ্খলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারি ব্যর্থতা গ্রহণযোগ্য নয়।
সরকারের কাছে ব্যাখ্যা দাবিগণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ তাঁর সহযোগীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়া এবং এখনো অসংখ্য অপরাধী অবাধে বিচরণ করছে। এর একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বিএনপির বর্ধিত সভা সরকারের কাছে দাবি করেছে। এসব অপরাধীর বিচার ও শাস্তি দিতে দেরি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদেশে অবস্থান করে যারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং শান্তি-শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা এবং তাদের দেশীয় সহযোগীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কূটনৈতিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের আরও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
একই সঙ্গে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার এবং তাদের সহযোগী এক-এগারোর সরকারের করা সব মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দ্রুত প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
‘বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার অঙ্গীকার’বর্ধিত সভায় ঐক্যবদ্ধ বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে আরও ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী, কার্যকর ও জনপ্রিয় করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অধিকারহীন, অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত জনগণকে তাদের কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানবিক মর্যাদায় ফিরিয়ে দেওয়ার প্রধান দায়িত্ব বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের।
বিএনপির বর্ধিত সভায় বলা হয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের ভিত্তি স্থাপন ও শক্তিশালী করায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কৌশলী, সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছে।
সভায় দীর্ঘ ১৬ বছরের অবিরাম আন্দোলন ও এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং আহত ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়। পাশাপাশি প্রকৃত শহীদদের তালিকা তৈরি, তাঁদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, তাঁদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র ক র যকর র জন য ব যবস গ রহণ সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিপির কাছে প্রত্যাশা
সচেতন জনগণ দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিকল্প দল খুঁজছে। বিগত সরকারের আমলে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য কিছুটা এগিয়ে জনগণের মনে আশার সঞ্চার করলেও আওয়ামী লীগের কারণে তা ভেস্তে যায়। এর পর কোনো দলকে ফ্যাসিস্ট সরকার বিকল্প গড়তে দেয়নি। চব্বিশের আন্দোলনে বিজয়ী ছাত্রদের নতুন দল নিয়ে আবার জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। আশার দিক হচ্ছে, ছাত্রদের দল জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে জনবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে যাবে এবং এক সময় ক্ষমতায় গিয়ে স্বাধীনতার অধরা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে। যেখানে থাকবে না বসবাসে আকাশসম বৈষম্য; থাকবে না কথা বলার ভয়। সংখ্যালঘুরা নিজেদের দেশ নিয়ে গর্ব করবে। থাকবে নারী স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার।
স্বাধীনতার পর থেকে আমরা দেখে আসছি আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে দেশ-বিদেশে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ সংখ্যালঘুরা তাদের দ্বারাই বেশি নির্যাতিত হয়েছে বলে আমরা জানি। তাই নতুন দল ‘এনসিপি’কে প্রকৃত অর্থেই একটি অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। ভুললে চলবে না– একাত্তর আমাদের শিকড়। গাছ যেমন শিকড় বিনা বাঁচতে পারে না, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ও আকাঙ্ক্ষা ধারণ ব্যতীত কোনো দল সামনে এগোতে পারবে না। তাই প্রত্যাশা, এনসিপি মধ্য বাম দল হিসেবে গড়ে উঠবে এবং ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’-এর পরিবর্তে উচ্চারিত হবে ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’। গতানুগতিক বা মধ্যপন্থি দল বিএনপি তো রয়েছে, যাকে একই পন্থায় এনসিপি অতিক্রম করতে পারবে না। অন্যদিকে এনসিপি সংবিধান সংস্কার কমিশনের সঙ্গে ২৯টিতে ভিন্নমত পোষণ করলেও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ মতবাদ বাদ দেওয়া এবং ‘বহুত্ববাদ’ গ্রহণে ঐকমত্য পোষণ করেছে। কিন্তু ‘বহুত্ববাদ’ একটি অস্পষ্ট ধারণা, যা দ্বারা অনির্দিষ্ট অনেক কিছুকে বোঝায়। আবার যেখানে সংবিধানে রাষ্ট্রের নিজস্ব ধর্ম রয়েছে, সেখানে বহুত্ববাদের গুরুত্ব আর থাকে না। এনসিপিকে দ্রুত এগোতে হলে প্রকৃতই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে হবে, যেন দলনিরপেক্ষ উদারমনা জনতা ও সংখ্যালঘুরা এর নিচে আশ্রয় নিতে পারে। এনসিপির মূল বা শিকড় হতে হবে স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়া সব নেতার অবদানের মূল্যায়ন এবং স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করা।
এ সরকারের মন্দ কাজের জোরালো সমালোচনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে– সরকারঘেঁষা কোনো দল সহজে জনপ্রিয় হয় না। ‘এনসিপি’কে বুঝতে হবে আধুনিক দুনিয়ায় কোনো চরম পন্থার স্থান নেই এবং যারা
চরম ডান বা চরম বামের রাজনীতি করছেন, তাদেরকেও ভবিষ্যতে সাচ্চা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতিতে ফিরে আসতে হবে। আশা করি, এনসিপির গঠনতন্ত্রে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ধারা দেখতে পাব।
নুরুল আমিন: নিবন্ধকার, ঢাকা
cuzamanctg@gmail