নীলফামারীর সৈয়দপুরের সাহেবপাড়ায় সরকারি বাংলো দখল করে বসবাস করছেন শ্রমিক লীগ নেতা তরুণ কুমার মণ্ডল। শুধু তাই নয়, বাংলোর সামনের প্রায় ১৫ শতক জমিতে আধা পাকা টিনশেড ঘর করে ভাড়া দিয়েছেন তিনি।
তরুণ কুমার সৈয়দপুর শ্রমিক লীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ হেভি রিপেয়ারিং (সিএইচআর) শপে মিস্ত্রি পদে কর্মরত ছিলেন। গত বছর আগস্টে অবসরে যান তিনি।
জানা যায়, তরুণের কাছে থাকা বাংলো ও জমি দখলমুক্ত করতে একাধিকবার চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতি মাসে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অবৈধভাবে বাংলোয় বসবাস ও জমি দখলে রেল কর্মচারীদের সঙ্গে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক রেল কর্মচারী জানান, তরুণ কুমার শ্রমিক লীগের প্রভাবশালী নেতা। তার ওপর বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ায় গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বেশির ভাগ দিন কর্মস্থলে থাকতেন না। দায়িত্ব পালনের চেয়ে বেশি দল ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকতেন তিনি।
দেশের বৃহত্তর রেলওয়ে কারখানা ঘিরে সৈয়দপুর শহরের গোড়াপত্তন। কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য শহরের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে ২ হাজার ৪৮৮টি বাংলো ও কোয়ার্টার। এখানে রেলের এলাকাভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসবাস করেন। কিছু কোয়ার্টার দখল হলেও দেয়ালে ঘেরা থাকায় সুরক্ষিত রয়েছে বাংলোগুলো। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে টি-১৪/বি নম্বর বাংলোর দখল নেন তরুণ কুমার। এটি মহিলাঙ্গন সমিতির কার্যালয় ছিল এবং সমিতি পরিচালনা করতেন রেল কর্মকর্তাদের সহধর্মিণীরা। সমিতির আয় বৃদ্ধির জন্য তরুণকে বাংলোটি ভাড়া দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে সমিতির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে বাংলো ও চারপাশের প্রায় ১৫ শতক জমি দখলে নেন তরুণ। টিনশেড ঘর করে ভাড়া ও বাকি জমিতে শাকসবজি ফলান তিনি।
সম্প্রতি রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি দখলমুক্ত করতে কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। পরে তরুণ আবারও সেখানে স্থাপনা করেন।
স্থানীয়রা বলছেন, রেলের কর্মচারী হয়ে বাংলো ও এর সামনের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ বেমানান। শ্রমিক লীগের প্রভাব খাটিয়ে তিনি দখল করেছেন। বিগত সময়ে রেল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে রেল কর্তৃপক্ষের উচিত তরুণের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া এবং সব জমি দখলমুক্ত করা।
জানতে চাইলে তরুণ কুমার বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন বাংলোটিতে আছি। বিনিময়ে মহিলাঙ্গন সমিতির বিভিন্ন কর্মসূচিতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি।’ বাংলোর সামনের জমি দখল করে স্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যতদিন আছি, ভাড়া তুলছি। চলে গেলে স্থাপনাসহ সব রেলের হয়ে যাবে।’
বাংলো ও কোয়ার্টারের দায়িত্বে থাকা রেলের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কারখানা) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘তরুণ কুমার বাংলোটিতে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। কারণ, এটি মহিলাঙ্গন কিংবা রেলের কারও নামে বরাদ্দ নেই। বাংলোর সামনের জমির স্থাপনা উচ্ছেদে গেলে তিনি লোকজন নিয়ে বাধা দেন। এর পরও কিছু অংশ দখলমুক্ত করা হয়। পরে সেখানে আবারও তরুণ স্থাপনা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মোস্তফা জাকির হাসান বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। তরুণ কুমার যতদিন বাংলোতে অবৈধভাবে বাস করছেন, সেই পরিমাণ টাকা তাঁর অবসর ভাতা থেকে কেটে নেওয়া হবে। স্থাপনাগুলো নিজ খরচে না সরালে তিনি চূড়ান্ত ক্লিয়ারেন্স পাবেন না।’
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র স মন র স য়দপ র র ল কর র লওয় বসব স

এছাড়াও পড়ুন:

রেলের জমিতে বাড়ি শ্রমিক লীগ নেতার

নীলফামারীর সৈয়দপুরের সাহেবপাড়ায় সরকারি বাংলো দখল করে বসবাস করছেন শ্রমিক লীগ নেতা তরুণ কুমার মণ্ডল। শুধু তাই নয়, বাংলোর সামনের প্রায় ১৫ শতক জমিতে আধা পাকা টিনশেড ঘর করে ভাড়া দিয়েছেন তিনি।
তরুণ কুমার সৈয়দপুর শ্রমিক লীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ হেভি রিপেয়ারিং (সিএইচআর) শপে মিস্ত্রি পদে কর্মরত ছিলেন। গত বছর আগস্টে অবসরে যান তিনি।
জানা যায়, তরুণের কাছে থাকা বাংলো ও জমি দখলমুক্ত করতে একাধিকবার চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতি মাসে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অবৈধভাবে বাংলোয় বসবাস ও জমি দখলে রেল কর্মচারীদের সঙ্গে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক রেল কর্মচারী জানান, তরুণ কুমার শ্রমিক লীগের প্রভাবশালী নেতা। তার ওপর বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ায় গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বেশির ভাগ দিন কর্মস্থলে থাকতেন না। দায়িত্ব পালনের চেয়ে বেশি দল ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকতেন তিনি।
দেশের বৃহত্তর রেলওয়ে কারখানা ঘিরে সৈয়দপুর শহরের গোড়াপত্তন। কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য শহরের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে ২ হাজার ৪৮৮টি বাংলো ও কোয়ার্টার। এখানে রেলের এলাকাভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসবাস করেন। কিছু কোয়ার্টার দখল হলেও দেয়ালে ঘেরা থাকায় সুরক্ষিত রয়েছে বাংলোগুলো। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে টি-১৪/বি নম্বর বাংলোর দখল নেন তরুণ কুমার। এটি মহিলাঙ্গন সমিতির কার্যালয় ছিল এবং সমিতি পরিচালনা করতেন রেল কর্মকর্তাদের সহধর্মিণীরা। সমিতির আয় বৃদ্ধির জন্য তরুণকে বাংলোটি ভাড়া দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে সমিতির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে বাংলো ও চারপাশের প্রায় ১৫ শতক জমি দখলে নেন তরুণ। টিনশেড ঘর করে ভাড়া ও বাকি জমিতে শাকসবজি ফলান তিনি।
সম্প্রতি রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি দখলমুক্ত করতে কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। পরে তরুণ আবারও সেখানে স্থাপনা করেন।
স্থানীয়রা বলছেন, রেলের কর্মচারী হয়ে বাংলো ও এর সামনের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ বেমানান। শ্রমিক লীগের প্রভাব খাটিয়ে তিনি দখল করেছেন। বিগত সময়ে রেল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে রেল কর্তৃপক্ষের উচিত তরুণের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া এবং সব জমি দখলমুক্ত করা।
জানতে চাইলে তরুণ কুমার বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন বাংলোটিতে আছি। বিনিময়ে মহিলাঙ্গন সমিতির বিভিন্ন কর্মসূচিতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি।’ বাংলোর সামনের জমি দখল করে স্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যতদিন আছি, ভাড়া তুলছি। চলে গেলে স্থাপনাসহ সব রেলের হয়ে যাবে।’
বাংলো ও কোয়ার্টারের দায়িত্বে থাকা রেলের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কারখানা) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘তরুণ কুমার বাংলোটিতে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। কারণ, এটি মহিলাঙ্গন কিংবা রেলের কারও নামে বরাদ্দ নেই। বাংলোর সামনের জমির স্থাপনা উচ্ছেদে গেলে তিনি লোকজন নিয়ে বাধা দেন। এর পরও কিছু অংশ দখলমুক্ত করা হয়। পরে সেখানে আবারও তরুণ স্থাপনা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মোস্তফা জাকির হাসান বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। তরুণ কুমার যতদিন বাংলোতে অবৈধভাবে বাস করছেন, সেই পরিমাণ টাকা তাঁর অবসর ভাতা থেকে কেটে নেওয়া হবে। স্থাপনাগুলো নিজ খরচে না সরালে তিনি চূড়ান্ত ক্লিয়ারেন্স পাবেন না।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ