Samakal:
2025-03-31@08:23:22 GMT

আ’লীগের জোটসঙ্গীরা অকূল পাথারে

Published: 28th, February 2025 GMT

আ’লীগের জোটসঙ্গীরা অকূল পাথারে

আওয়ামী লীগের সঙ্গে পথচলার দুই দশকে সাম্যবাদী দলের একমাত্র পাওয়া দিলীপ বড়ুয়ার মন্ত্রিত্ব। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে ১৪ দলের শরিক এই দলটির প্রধানকে মন্ত্রী করেছিলেন জোটনেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আন্দোলন-সংগ্রাম ও ত্যাগের কোনো পুরস্কারই মেলেনি দলটির। উল্টো এই সময়কালে অন্তত দু’দফা ভাঙনের কবলে পড়ে। বুর্জোয়া সংগঠন ও সরকারের লেজুড়বৃত্তির তকমা দিয়ে নেতারা সাম্যবাদী দল থেকে বেরিয়ে আলাদা দল গড়েন।

গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাম্যবাদী দলের রাজনৈতিক অস্তিত্বই হুমকির মুখে। কর্মসূচি দূরে থাক, প্রকাশ্যে দলের নেতাদের দেখা মেলাই ভার। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া অজানা স্থানে ঘাপটি মেরে আছেন। মোবাইল ফোনে অসংখ্যবার কল দিয়েও তাঁর সাড়া মেলেনি।            
প্রায় একই অবস্থা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বাকি শরিকদের। প্রভাবশালী দুই শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কার্যক্রম হয়েছে সংকুচিত। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একাধিক হত্যা মামলার আসামি হয়ে কারাগারে গেছেন। দু’দলের সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা ও জাসদের শিরীন আখতার আত্মগোপনে। এ পরিস্থিতিতে ওয়ার্কার্স পার্টি ভারপ্রাপ্ত দিয়ে এবং জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির মাধ্যমে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। 
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালের ১৫ জুলাই আত্মপ্রকাশ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। একসঙ্গে আন্দোলনের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে এ জোট। সে সময় জোটের শরিক দল ছিল ১০টি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি-জেপি, তরীকত ফেডারেশন ও বাসদ (রেজাউর) জোটে যুক্ত হওয়ায় শরিক দল দাঁড়ায় ১৩। 
তবে প্রায় ২০ বছরের ঐক্যবদ্ধ পথচলায় ১৪ দলীয় জোটের বড় দুই শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ ভেঙে নেতারা আলাদা দল গঠন করেন। এর পর আরও তিন দফা ভেঙেছে ওয়ার্কার্স পার্টি। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা দল ছেড়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি কিংবা বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ নামে নতুন দল গঠন করেন। কেউ কেউ সিপিবিতে যোগ দেন। একইভাবে ভাঙে জাসদও। দলটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতাসহ একটি বড় অংশ বেরিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ জাসদ নামে নতুন দল গঠন করে। 
১৪ দলের আরেক শরিক সাম্যবাদী দল ভেঙেছে দু’দফা, ন্যাপ ভেঙেছে এক দফা। গণতন্ত্রী পার্টি ভাঙলেও দলটির ব্রাকেটবন্দি দুই অংশ শেষ পর্যন্ত ১৪ দলেই ছিল। তরীকত ফেডারেশন থেকে বহিষ্কৃত কিছু নেতা আলাদা দল গড়েছেন। 

জোটের বাকি শরিক দল জাতীয় পার্টি (জেপি), কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং বাসদ (রেজাউর) অবহেলা, অবমূল্যায়ন ও বঞ্চনার ক্ষোভ চেপে রেখেই ১৫ বছর ধরে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী হিসেবে পথ চলেছে।
এদিকে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসন অবসানের পর ক্ষমতাচ্যুত দলটির সঙ্গে ফ্যাসিবাদের দোসর তকমা পাওয়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের ওপরও নেমে আসে বিপর্যয়। রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় অধিকাংশ দল। নেতাকর্মী চলে যান আত্মগোপনে। তবে দুই দলের শীর্ষ নেতা মেনন-ইনু গ্রেপ্তারের পরও ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ দলীয় কার্যালয়ে ঘরোয়া বৈঠক, বিভিন্ন দিবস পালন এবং বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তরীকত ফেডারেশন গণঅভ্যুত্থানের পরের সময়ে দু-একটা বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করলেও এখন নিশ্চুপ। অন্য শরিক দলগুলো ছয় মাস ধরেই নিষ্ক্রিয়।

১৪ দলের কয়েকজন নেতা জানান, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তাদের মারাত্মক রাজনৈতিক সংকটে ফেলেছে। প্রকাশ্যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে পারছেন না তারা। 
বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীর ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যক্তিজীবন বিপর্যস্ত। গণঅভ্যুত্থানের প্রায় সাত মাস পার হলেও দলগুলোর নেতাকর্মীর আতঙ্ক কাটছে না। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল– সবখানে একই অবস্থা চলছে। এ অবস্থার অবসান কবে, কীভাবে হবে, সেটি নিয়েও তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তারা আরও বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশ ও দেশের বাইরে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা এখন পর্যন্ত শরিক দলের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তবে শরিক দলগুলো একে অন্যের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রক্ষা করছে। এর মাধ্যমে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের চেষ্টা করছে তারা। 
সম্প্রতি ‌যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ১৪ দলের শরিক নেতাকর্মীর মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। সারাদেশে মূলত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হলেও শরিক দলের নেতাকর্মীরাও নজরদারিতে রয়েছেন। ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় শরিক দলের নেতাকর্মীকে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে, ১৪ দলের নেতাকর্মীকে সেসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হতে পারে– এমন ভয়ও কাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে গা-ঢাকা দিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা সমকালকে বলেন, ‌‘সংকটের মধ্যেও আমরা দলীয় আদর্শ ও নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে দলকে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছি। দলকে যেমন বাঁচিয়ে রাখতে হবে, তেমনি নেতাকর্মীকেও টিকিয়ে রাখতে হবে। আমরা সেই চেষ্টাই করছি।’
একই কথা বলেন তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী। তাঁর ভাষায়, বিপর্যয়ের মধ্যে দলকে যতটুকু গুছিয়ে থাকা যায়, সেই চেষ্টা করছি।
বাসদের (রেজাউর) আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান বলেন, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দল গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আগামী মার্চে জেলা-উপজেলা সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করা হবে।    

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ গণঅভ য ত থ ন ল র ন ত কর ম ন ত কর ম র দল র ন ত র ক দল র র জন ত ক ন র পর দলট র আওয় ম ক ষমত গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্যাসিস্ট সরকার আর এক বছর থাকলে আমাকে ঝুলিয়ে দিত: বাবর

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকার আরও এক বছর ক্ষমতায় থাকলে আমাকে ঝুলিয়ে দিত। 

শুক্রবার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন। 

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অসাধারণ। তবে এখানে কারো একার কৃতিত্ব দেওয়া ঠিক হবে না। 

লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছে তাদের সুচিকিৎসা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। 

তিনি বলেন, সাড়ে ১৭ বছর কারাগারে থাকার পর যে আমি এখানে এসেছি তা কল্পনাও করতে পারি নি।

দীর্ঘ সময় কারাবাসের পর গত ১৬ জানুয়ারি মুক্তি পান লুৎফুজ্জামান বাবর। এর আগে ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় অস্ত্র আইনে করা পৃথক মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দায় থেকে খালাস পান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারী’ পুরস্কার পাওয়ায় জুলাইকন্যাদের প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
  • যুক্তরাষ্ট্রের ‌‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারী’ পুরস্কার পাওয়ায় জুলাই কন্যাদের প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
  • ‘ছাত্র-জনতার ভোটের অভ্যুত্থানে জুলুমবাজের দল পালিয়ে যাবে’
  • নির্বাচনের পরে সংস্কার হবে না: নাহিদ ইসলাম
  • ফ্যাসিস্ট সরকার আর এক বছর থাকলে আমাকে ঝুলিয়ে দিত: বাবর