জন্মভূমিতে ফেরার নিশ্চয়তা চাইলেন রোহিঙ্গা নেতারা
Published: 28th, February 2025 GMT
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি আজ শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছেন। সেখানকার আশ্রয়শিবিরে পৃথক তিনটি বৈঠকে রোহিঙ্গা নেতারা তাঁদের জন্মভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফেরার (প্রত্যাবাসন) ক্ষেত্রে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং থাকার পরিবেশ নিশ্চিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা চেয়েছেন।
রাখাইন রাজ্যের ৮০ শতাংশ এলাকা দখলে রাখা দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্ক উন্নয়ন ও যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার কথাও তুলে ধরেন রোহিঙ্গা নেতারা।
জবাবে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি রোহিঙ্গা নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং শরণার্থী সংকট নিয়ে আরকান আর্মির সঙ্গে যদি বাংলাদেশ সরকার সংলাপ করে, দুই পক্ষের দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করে—সে ক্ষেত্রে জাতিসংঘ অবশ্যই সহযোগিতা করবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে।
চার দিনের সফরে গত বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশে আসেন ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ সকাল ৯টায় ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছে সড়কপথে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি যান ৪৫ কিলোমিটার দূরে উখিয়ার বালুখালী (ক্যাম্প-১২) আশ্রয়শিবিরে। এই শিবিরে ৭২ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস। বেলা ১১টার দিকে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির নেতৃত্বে আসা জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলটি বালুখালী আশ্রয়শিবিরে ইউএনএইচসিআর পরিচালিত নিবন্ধন সেন্টারের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
সেখান থেকে পাশের বালুখালী ক্যাম্প-৮ আশ্রয়শিবিরে গিয়ে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে ওঠে ক্যাম্প পরিস্থিতি দেখেন। দুপুরে কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের ( ক্যাম্প-১ পশ্চিম) একটি সেন্টারে বিভিন্ন বয়সী রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় নেতা, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, কমিউনিটিভিত্তিক সুরক্ষা দল ও রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।
বৈঠকে আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তা, ত্রাণতৎপরতা, সমস্যা, বর্তমান রাখাইন পরিস্থিতি ও প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলেন। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। এ পর্যন্ত একজনকেও প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি।
বেলা দেড়টার দিকে মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৪ ওয়েস্ট) বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিদর্শন করে কক্সবাজার শহরের দিকে রওনা দেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার। এ সময় সঙ্গে ছিলেন ইউএনএইচসিআরের রিজওনাল ব্যুরো অব এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের পরিচালক হ্যাই ক্যুন জুন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রমুখ।
বিকেলে কক্সবাজার শহরে ফিরে এসে আরআরআরসি কার্যালয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। রাতে তিনি ঢাকায় ফিরে যান।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বার্থে প্রত্যাবাসন নিয়ে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পৃথক তিনটি বৈঠকে তিনি ( ফিলিপ্পো) প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলেছেন। সমস্যার কথা শুনেছেন। রোহিঙ্গারা তাঁকে জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে তাঁরা বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে পালিয়ে এসেছেন। এখন আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিটি পরিচয়েই ভালো কাজকে প্রাধান্য দিতে চাই: ফাহমিদা নবী
ফাহমিদা নবী। নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ও সুরকার। সম্প্রতি আজব রেকর্ড থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একক গান ‘না হয় শুধু এতটুকুই হোক’। নতুন এ আয়োজন, বর্তমান ব্যস্ততা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।
অনেকে বলছেন, ‘না হয় শুধু এতটুকুই হোক’ গানটি মেলেডি সুরের হলেও আপনার আগের সব আয়োজন থেকে কিছুটা আলাদা। তাদের এই কথার সঙ্গে কী আপনি একমত?
দ্বিমত পোষণ করার কোনো কারণ নেই। কারণ সুরকার জয় শাহরিয়ার এ গান যখন শোনায়, তখনই মনে হয়েছে এর সুর একটু আলাদা ধরনের। মেলোডি গান যারা পছন্দ করেন, তাদের হৃদয় স্পর্শ করার মতো ম্যাজিক্যাল কিছু এতে আছে। তানবীর সাজিবের লেখা এর গীতিকথাও একটু আলাদা ধরনের, যা গানের শিরোনাম থেকেই অনুমান করা যায়। তাই আনন্দ নিয়েই গানটি গেয়েছি।
বাংলাঢোল স্টুডিওর অ্যাকুস্টিক টেলস অনুষ্ঠানে গাওয়া ‘দিনলিপি’ গানটিও প্রকাশিত হলো। এই আয়োজনে শ্রোতার প্রতিক্রিয়া কী?
সবার কথা জানি না, তবে যারা অনাপ্লাগড ভার্সনের গান পছন্দ করেন, তাদের অনেকের কাছে অ্যাকুস্টিক টেলসের ‘দিনলিপি’ গানটি ভালো লেগেছে। অ্যাকুস্টিক বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে গাওয়া যে কোনো গানই একটু অন্যরকম শোনায়, যার আলাদা শ্রোতা আছে।
গত কয়েক বছরে বেশ কিছু গানের সুর করে শ্রোতার প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এ বছর আপনার সুরের কোনো গান কি প্রকাশ পাবে?
নিশ্চিত করে এখনই কিছু বলা কঠিন। তার পরও সম্ভাবনা যে একেবারে নেই, তা নয়। সুর করা এখন অনেকটা নেশায় পরিণত হয়েছে। কয়েক বছর আগেও ভাবিনি, এই কাজটি নিয়মিত করব। যখনই কারও লেখা গানের কথা ভালো লেগে যাচ্ছে, তখনই তাতে সুর বসানোর চেষ্টা করছি। এখন মনে হয়, সুরকার হিসেবে থেমে থাকার আর সুযোগ নেই। গান যেমন গাইতে হবে, তেমনি সৃষ্টি করতে হবে নতুন সুর। কিছু গানের সুর করে রেখেছি, দেখা যাক এ বছর সেগুলো প্রকাশ করা যায় কিনা।
কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যেমন মেলোডি গান প্রাধান্য দিয়ে আসছেন, সুরকার হিসেবেও কী একই চিন্তাধারা নিয়ে কাজ করেন?
মেলোডি সুরের আবেদন চিরকালই ছিল। হয়তো সে কারণেই আমার কণ্ঠে শ্রোতারা সবসময় এ ধরনের গানই শুনতে চান। তাই যখন কোনো গানের সুর করি, তখন মেলোডিকেই প্রাধান্য দেই। অন্য শিল্পী গাইলেও সেখানে যেন আমার কাজের ছাপ থাকে, সে দিকে লক্ষ রাখি।
সংগীত প্রযোজক হিসেবে আপনার ভাবনা জানতে চাই, আপনার চ্যানেলে কোন ধরনের গান তুলে ধরতে চান?
গান যদি শ্রুতিমধুর হয়, তাহলে সেটি কোন ঘরনার তা নিয়ে ভাবতে চাই না। সংগীত প্রযোজক হিসেবে এ বিষয়টা প্রাধান্য দিচ্ছি। কারণ সুরের বাইরে গিয়ে কাজ করা কখনই সমর্থন করি না। নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল থাকা মানে কাজের অবাধ স্বাধীনতা। কিন্তু অবাধ স্বাধীনতা পেলেও কখনও স্রোতে গা ভাসাব না। শিল্পী, সুরকার, প্রযোজক– প্রতিটি পরিচয়েই ভালো কাজকে প্রাধান্য দিতে চাই। এর চেয়ে বড় কথা হলো আমি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে নিজের চ্যানেল চালু করা কিংবা গানের প্রযোজনা শুরু করিনি। ভিউর দৌড়ে অংশ না নিয়ে ভালো কাজই শ্রোতার কাছে তুলে ধরতে চাই। শিল্পী, সংগীতায়োজকরা তারকাদের কাজই বেছে নেবে, বিষয়টা এমনও নয়। শিল্পী হিসেবে যেমন, তেমনই প্রযোজক হিসেবে তরুণ শিল্পীদের পাশে আছি সবসময়।
গানের প্রকাশনা ধরে রাখলেও স্টেজ শোতে অনুপস্থিতি চোখে পড়ে। এ নিয়ে কখনও ভাবেন?
এটি সত্যি যে অন্য শিল্পীদের চেয়ে আমাকে স্টেজে কম দেখা যায়। অনুষ্ঠান আয়োজকদের কারণেই এটা হয়েছে। বেশির ভাগ আয়োজকই চান, এমনভাবে অনুষ্ঠান সাজাতে যেখানে দর্শকরা হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠতে পারেন। সেসব অনুষ্ঠানে শিল্পীদের যে ধরনের গান গাইতে হয়, সে ধরনের গান আমার গাওয়া হয়ে ওঠে না।