বাড়ির আঙ্গিনায় অল্প পুঁজিতে মাশরুম চাষে সফল যুবক
Published: 28th, February 2025 GMT
বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করে তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তুলেছেন লক্ষ্মীপুরের মো. দেলোয়ার হোসেন নামের এক যুবক। প্রবাস থেকে ফিরে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় অল্প পুঁজিতে মাশরুমের খামার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জের বিনোদধর্মপুর গ্রামের সফল এ উদ্যোক্তার দেখাদেখি মাশরুম চাষে এখন আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকে। স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভজনক এ পণ্য বিদেশে রপ্তানী করে নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি ও এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছেন এ উদ্যেক্তা।
কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় নতুন এ খাদ্যপণ্যকে ঘিরে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আগ্রহীদের পাশে আছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর সুস্বাদু ও ঔষধি গুণ সম্পূর্ণ খাবার। পুষ্টি ও ঔষধিগুণ থাকায় ইতোমধ্যেই এটি সারাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মাঝে মাশরুম চাষে বেশি আগ্রহ বাড়ছে। মাশরুম চাষে বেকার সমস্যার সমাধান ও বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মাশরুম চাষে কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না।
চাষের জমি না থাকলেও বসতঘরের পাশে অব্যবহৃত জায়গা ও ঘরের বারান্দা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। মাশরুম বীজ উৎপাদনের জন্য যেসব কাঁচামালের প্রয়োজন হয়ে থাকে যেমন, খড়, কাঠের গুঁড়া, কাগজ, গমের ভূসি ইত্যাদি জিনিস আমাদের দেশে সহজলভ্য।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, খড়কুটো, কাঠ ও গমের ভূষি, ক্যালসিয়াম চুন এবং পানির মিশ্রণে তৈরি করা হচ্ছে স্পন (মাশরুম তৈরির প্রধম ধাপ)। লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় কৃষক দেলোয়ারের মাশরুম খামারের প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার চিত্র এটি। বাড়ির পাশে গড়ে তোলা এ খামারটিতে নিজেও স্ত্রী-স্বজনসহ শ্রমিকদের প্রতিদিনের কর্ম ব্যস্ততা। পলিথিনের মোড়ানো প্যাকেটে গর্ত করে প্লাস্টিকের সাদা মুখ লাগিয়ে এসব ভর্তি করা হয় প্রথমে।
পরে জীবানুনাশক মেশিনে ২৪ ঘণ্টা রাখা হয়। এরপর ল্যাবে নিয়ে টেস্ট টিউবে মাদার টিস্যু দিয়ে ২৮ দিন রাখা হয় ল্যাব ঘরে (এসি রুমে)। পরে মূল খামারে সারিবদ্ধভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয় প্যাকেটগুলো। এতে পলিথিনগুলো ভেদ করে বেরিয়ে আসে ছোট-বড় মাশরুম।
প্রতিদিন ২০-২৫ কেজি হারে তা তুলে বাজারজাত করেন এ খামারী। প্রতি কেজি মাশরুম বিক্রি করা হয় ২০০-২৫০ টাকা হারে। সুস্বাদু মজাদার খাবার হিসেবে আশে পাশের মানুষ কিনে নিয়ে যান মাশরুম।
নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও ঢাকায়ও বিক্রি হয় এখানকার উৎপাদিত পণ্য। কেউ মাংসের সঙ্গে, আবার কেউবা স্যুপ ও সবজি হিসেবে খেতে পছন্দ করেন।
জানা যায়, বিদেশে সুস্বাদু মাশরুম খেয়ে দেশে ফিরে খামার গড়ার স্বপ্ন জাগে প্রবাস ফেরৎ লক্ষ্মীপুরের যুবক দেলোয়ারের মনে। অধিক পুষ্টি গুণ সম্বৃদ্ধ মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ২০২২সালে সেই স্বপ্ন পূরণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে মাশরুমের খামার গড়ে তোলেন তিনি। ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ শুরু করেন। বর্তমানে ৩ জাতের মাশরুম রয়েছে তার খামারে।
নিজের চেষ্টা, শ্রম আর মেধায় খামারজুড়ে সারিসারি পলিথিনের প্যাকেট সাদা রঙ্গের মাশরুমে স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি এ উদ্যোক্তা।
উদ্যেক্তা দেলোয়ার জানান, এসব মাশরুমকে ঘিরে শুরুতে অনেকের অনীহা ছিল। বর্তমানে সবাই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সচেতনতা সৃষ্টি আর সঠিক বাজারজাত করতে পারলে মাশরুম উৎপাদনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ১০০ টাকা খরচে ৪০ টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি। লাভজনক হওয়ায় আশে পাশের যুবকরা মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠৈছেন।
বর্তমানে তার খামারে ২০-২৫ কেজি মাশরুম উৎপাদন হয়। আগামীতে ৫০০ কেজি কিংবা চাহিদার আলোকে আরো বাড়তি মাশরুম উৎপাদন করার ব্যাপারে আশাবাদী এ উদ্যোক্তা। এছাড়া মাশরুমকে ঘিরে বিদেশে রপ্তানি করে নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি এবং গ্রামের বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সরকারি সহায়তার দাবী জানান তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, দেলোয়ারেরর মাশরুমের খামার এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তার দেখাদেখি মাশরুম চাষে আগ্রহী উঠেছেন অনেকে।
এদিকে দেলোয়ারের এ উদ্যোগকে আরো সফল করতে তার স্ত্রী ও স্বজনরা সহযোগিতা করছেন। এছাড়া প্রতিবেশীরা শ্রম দিয়ে বাড়তি টাকাও আয় করছেন।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহেল মো.
ঢাকা/লিটন/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর খামারবাড়ি থেকে অবরোধ তুলে নিলেন ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর এগ্রি ব্লকেড কর্মসূচির প্রত্যাহার করেছেন কৃষি ডিপ্লোমার শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে তারা খামারবাড়ি ছেড়ে চলে যান।
এর আগে সকাল ১০টায় রাজধানীর খামারবাড়ির মূল গেট বন্ধ করে দেন কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা। এতে ডিএই'র কর্মকর্তারা অফিসে ঢুকতে পারেননি। সাড়ে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ অবস্থার পর দুপুর ১টার দিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা বৈঠক করেন। বৈঠকে শিক্ষার্থীরা তাদের আট দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের ৮ দফা দাবি নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করে ডিএই কর্তৃপক্ষ। এরপর কৃষি মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিকেলে বৈঠক করবে বলে আশ্বস্ত করে। এরপর শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে খামারবাড়ির অবরোধ তুলে নেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অন্যতম নেতা রায়হান উদ্দিন শামীম সমকালকে বলেন, আমাদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নেই। ডিপ্লোমা পাস করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিতে হয়। আমাদের এই দাবি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূরণ করার কথা। কিন্তু তারা টালবাহানা করছে। কৃষি মন্ত্রণালয় আমাদের আশ্বস্ত করেছে, আমরা এখন কৃষি মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছি।
কৃষিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার জন্য বাংলাদেশে সরকারি ১৮টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ ২৬০টি বেসরকারি কৃষি কলেজ রয়েছে, যেখানে কৃষিতে ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে অধ্যয়ন করা হয়। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী আছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে গেজেট করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে এবং প্রতিবছর নিয়োগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষকসংকট দূর করতে হবে।
বাকি দাবিগুলো হলো— কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) অধীন থেকে বের করে সম্পূর্ণভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আলাদা প্রতিষ্ঠান করতে হবে। সব কৃষি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদটি শুধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের জন্য সংরক্ষিত করতে হবে। ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ন্যূনতম দশম গ্রেডের পে-স্কেলে বেতন দিতে হবে। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের মাঠ সংযুক্তি ভাতা প্রদান করতে হবে এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের চাকরিতে প্রবেশের পর ছয় মাসের ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছে, তাদের অধিকাংশ দাবি পূরণ করা হয়েছে। কিছু দাবি অন্য মন্ত্রণালয়কে দেখার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করার পরও এ আন্দোলন অযৌক্তিক।