মা-বাবার কবরের পাশে চিরশায়িত হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান। শুক্রবার আসর নামাজের পর গ্রামের বাড়ি রাউজানের গহিরায় পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে দাফন করা হয়।
জোহর নামাজের পর চট্টগ্রাম নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ এবং আসর নামাজের পর রাউজানের গহিরা আবদুর জব্বার ইয়াংমেন সোসাইটি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন দল, পেশাজীবী সংগঠন ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ হাজার হাজার মানুষ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর চোখের জলে তারা শেষ বিদায় জানান আবদুল্লাহ আল নোমানকে। এর আগে মরদেহ নেওয়া হয় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি কার্যালয় নাসিমন ভবনে। সেখানে দলের নেতাকর্মীরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে জানাজার আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আবদুল্লাহ আল নোমান পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি অত্যন্ত ভদ্র ও অনুসরণ করার মতো একজন মানুষ। দল তাঁকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তিনি তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন।’ আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান তূর্য বলেন, ‘আমার বাবা অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। কখনো কোনো বিষয়ে নিজের কৃতিত্ব দাবি করতেন না। তিনি চাইতেন, আমরা দুই ভাইবোন যেন মানুষের সেবা করি।’
এ ছাড়া স্মৃতিচারণ করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম, বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহসহ নেতারা।
গতকাল সকালে নগরীর খুলশীতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এবং পরে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়েছিল নোমানের মরদেহ। গহিরায় জানাজার সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারসহ দলের নেতারা। গত মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীতে মারা যান আবদুল্লাহ আল নোমান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ আল ন ম ন ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
সংঘর্ষ ও খুনের পর মিরসরাই বিএনপির তিন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত
সংঘর্ষ ও খুনের পর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত তিনটি কমিটির কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি মিরসরাই উপজেলা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারিয়ারহাট পৌরসভার তিনটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদিত বিএনপির কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশেষ একটি পক্ষ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এলাকায় জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একজন নিরীহ মানুষ হত্যার শিকার হন এবং ১৫ জন গুরুতরভাবে জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সাম্প্রতিক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মিরসরাইয়ের জনগণের পাশে থাকার লক্ষ্যে অনুমোদিত তিন কমিটির কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হলো।
কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির বিষয়ে পরবর্তী করণীয় বসে ঠিক করা হবে। কমিটি গঠনের পর হত্যাসহ নানা নৈরাজ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৮ মার্চ মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মিরসরাই উপজেলা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারিয়ারহাট বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নতুন ঘোষিত বিএনপির উপজেলা আহ্বায়ক কমিটিতে আবদুল আওয়াল চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও আজিজুর রহমান চৌধুরীকে সদস্যসচিব মনোনীত করা হয়। ঘোষিত এই কমিটির বিরোধিতা করে ২৫ মার্চ দুপুরে মিরসরাই উপজেলা সদরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিনের অনুসারীরা। সেই ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নতুন আহ্বায়ক কমিটিকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিএনপির দুই পক্ষের এমন উত্তেজনা শুরু হলে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ফুল দিতে এলে দুই পক্ষের মধ্যে সহিংসতার শঙ্কায় ২৬ মার্চ সকালে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য মিরসরাই উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। সেদিন বেলা ১১টায় মিছিল গণজমায়েত করে প্রশাসনের দেওয়া ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শহীদ মিনারে এসে ফুল দিয়ে যান মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের অনুসারীরা। এরপর উপজেলার বারিয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মইনুদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মোহাম্মদ জাবেদ নামের এক যুবক নিহত হন। সংঘর্ষের সেই ঘটনায় বিএনপির আরও অন্তত ১৩ নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন।