সমাজকল্যাণ, সাংবাদিকতা, ব্যবসায় উদ্যোগ এবং ক্রীড়াঙ্গনে অনন্য অবদান রাখায় ‘রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা-২০২৪’ পেয়েছেন চার নারী। শুক্রবার রাজধানীর শেরাটনের বলরুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাদের এই সম্মাননা দেওয়া হয়।

সম্মাননা পাওয়া চার নারী হলেন– জলবায়ু, শিশু অধিকার, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নানা খাতে দুর্নীতি বিষয়ে সোচ্চার সাংবাদিক শারমিন রিমা, পরিচয়-সংকটে থাকা একঝাঁক শিশুকে শিক্ষার আলোয় স্বনির্ভর করে তুলতে নিরলস কাজ করে যাওয়া হাজেরা বেগম, কক্সবাজারের ‘সবুজ উদ্যোক্তা’ জাহানারা ইসলাম এবং ক্রীড়াবিদ ও কারাতে প্রশিক্ষক নাইমা খাতুন।

১৯ বছর ধরে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ব্র্যান্ড ‘রাঁধুনী’ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্ব অর্জনকারী নারীদের স্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশানুযায়ী দিবসের প্রতিপাদ্য– অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’ শীর্ষক ভাবনার প্রতিফলন ছিল রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননার এবারের আয়োজনে। যার সূচনা হয় পূজা সেনগুপ্ত ও তাঁর দল তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটারের মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। বছরব্যাপী স্কয়ার গ্রুপের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে পালিত হচ্ছে স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রবাদপ্রতিম শিল্পব্যক্তিত্ব প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর শততম জন্মবার্ষিকী। তাই অনুষ্ঠানের প্রথমভাগে অতিথিদের উপস্থিতিতে তাঁর অনুকরণীয় আদর্শকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়।

স্বাগত বক্তব্যে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা পারভেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, অধিকার ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারীরা যখন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তখনই সমাজ এগিয়ে যায়।

বিশেষ অতিথি হিসেবে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এখন টিভির সম্পাদকীয় প্রধান তুষার আবদুল্লাহ, ইনোভেশন ফর ওয়েল বিয়িং ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন মনিরা রহমান, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের হেড অব উইমেনস উইং হাবিবুল বাশার সুমন এবং বরেণ্য চিত্রশিল্পী কনকচাঁপা চাকমা। আরও উপস্থিত ছিলেন স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, প্রতিষ্ঠানের বিপণন বিভাগের প্রধান ইমতিয়াজ ফিরোজ।

নির্বাচক প্যানেলের সদস্য ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, গুটিপার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসলিমা মিজি, সাংবাদিক মোস্তফা মামুন এবং প্রযুক্তিসেবা প্রতিষ্ঠান ডিক্যাস্টালিয়ার পরিচালক সাবিলা ইনুন। আয়োজনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল বিজ্ঞাপনী সংস্থা মিডিয়াকম লিমিটেড।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

আন্দোলন মনে হয় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে: তাহির জামান প্রিয়র মা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা সামসি আরা জামান বলেছেন, আজকে আট মাস পরে আমার উপলব্ধি হচ্ছে আন্দোলন মনে হয় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সবাই মনে হয় সবার জায়গা থেকে বাণিজ্য করছে। মামলা বাণিজ্য হচ্ছে যতটুকু বুঝি। এরা কারা করছে আমরা সবাই বুঝি। খুনি হাসিনাকে যেমন আশেপাশে সবাই ফ্যাসিস্ট হতে সাহায্য করেছিল, আমি চাই না আর কেউ ফ্যাসিস্ট হোক।

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৪২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন শামসি আরা জামান। এ সময় প্রিয়র চার বছর বয়সী মেয়ে সাবিরা জামানও তার সঙ্গে ছিলেন।

সামসি আরা জামান বলেন, আমি এত রাজনীতি বুঝি না। আমি মা। ১৯ জুলাই যখন আমার ছেলে নিহত হয়, ২০ আগস্ট যখন মামলা করতে আসি, আমাকে ১৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আমি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম, গেটের বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি ছেলেরা হাততালি দিয়ে স্লোগান দিচ্ছে, প্রিয় ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। আস্তে আস্তে পুরো থানা ভরে গেলো। আন্দোলনে যেভাবে একসঙ্গে এত মানুষ জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছিল। আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

তিনি বলেন, সব জায়গায় এখন ক্ষমতার চর্চা চলছে, কে কীভাবে কে ক্ষমতায় যাবে। যে ক্ষমতাকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে বিদায় করেছে, সেই আবার ক্ষমতার লড়াই দেখছি। এই সংগঠন ক্ষমতার জন্য না, জনগণের জন্য মানুষের জন্য কাজ করছে। আগামীতে কেউ যেন ফ্যাস্টিস্ট না হয়ে উঠতে পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, আমিও সঙ্গে থাকবো।

সমাবেশ শেষে একটি বর্ণিল শোভাযাত্রা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, টিএসসি, দোয়েল চত্বর হয়ে জিমনেশিয়ামে গিয়ে শেষ হয়।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনির সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম। এ ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, শামসুল আলম সজ্জন ও বাকী বিল্লাহ; সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর আলম, রাকসুর সাবেক ভিপি রাগীব আহসান মুন্না প্রমুখ।

রাগীব নাঈম তার বক্তব্যে বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটাতে সক্ষম হলেও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এখনো সম্ভব হয়নি। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতে টালবাহানা, সকল শহীদ পরিবারে সহায়তা পৌঁছাতে না পারা, শ্রমিকদের উপর নির্বিচার গুলি চালানো, ছাত্র আন্দোলনে ন্যাক্কারজনক পুলিশি হামলা অব্যাহত রাখাসহ নানা ঘটনা আমরা লক্ষ্য করছি।

তিনি বলেন, এসব ঘটনায় সরকারের ভূমিকা ও নিষ্ক্রিয়তা নিশ্চিতভাবেই শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি। হাসিনার পতনের বছরপূর্তি হবার আগেই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন থেকে দূরে সরে যাওয়ার ঘটনা আমাদেরকে পুনর্বার রাজপথে নামার আহ্বান জানাচ্ছে।

অনুষ্ঠিত সমাবেশে সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক তামজীদ হায়দার চঞ্চল বলেন, জুলাইয়ে শুরু হওয়া সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মকে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকারীদের কাছে সরকার একরকম আত্মসমর্পন করে বসে আছে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দেশি-বিদেশী স্বার্থান্বেষী মহলের আজ্ঞাবহতা বর্জন করে সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথে ফিরে আসতে বাধ্য করা হবে।

সম্মেলনে শুভকামনা জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ হরিজন ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন্সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

ছাত্র ইউনিয়নের ৪২তম সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে। আগামী ২৬ এপ্রিল বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে সংগঠনের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ