ক্রিকেটারদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় দেখভাল করে থাকে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কোয়াবের সভাপতি নাঈমুর রহমান রয়েছেন আত্মগোপনে। এ অবস্থায় সংগঠনটিকে নতুন করে গঠনের চেষ্টা শুরু হয়েছে।

আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এ নিয়ে কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পালের উপস্থিতিতে বৈঠকও করেছেন ক্রিকেটাররা। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলতে রাজধানীতে আছেন—এমন ৩৫–৪০ জন ক্রিকেটার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। ক্রিকেটারদের মধ্যে ছিলেন তামিম ইকবাল, নুরুল হাসান, তাইজুল ইসলাম ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারও।

বৈঠকে কী নিয়ে আলাপ হয়েছে, জানতে চাইলে উপস্থিত এক ক্রিকেটার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, পুরো কোয়াবের কার্যক্রম নতুন করে শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। যত দ্রুত সম্ভব বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে প্রতিটি বিভাগ থেকে প্রতিনিধি নিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি ও তাঁদের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করতে চান ক্রিকেটাররা। কোয়াবের গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য একজন আইনি পরামর্শকও নিয়োগ দেওয়া হবে।

এসবের বাইরে ক্রিকেটাররা তাঁদের পারিশ্রমিক ইস্যু নিয়ে কোয়াবের বৈঠকে কথা বলেছেন। বিপিএলে পারিশ্রমিকের বকেয়া এখনো বুঝে পাননি অনেক ক্রিকেটার। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও গত আসরের তুলনায় অর্ধেক পারিশ্রমিকে খেলতে হচ্ছে তাঁদের। এ নিয়ে বৈঠকে ক্ষোভ জানিয়েছেন কেউ কেউ।

সর্বশেষ ২০২৩ সালের মে মাসে কোয়াবের কমিটি গঠন হয়। তখন ‘উপায় না পেয়ে’ নতুন করে দায়িত্ব নেন ২০১৪ সাল থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা নাঈমুর রহমান ও দেবব্রত পাল।

এখন যেহেতু ক্রিকেটাররা নতুন করে নির্বাচন চাচ্ছেন, তাহলে তাঁদের ভাষ্য কী? জানতে চাইলে কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র সমুন্নত রেখে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আমরা আবারও বসব। পরবর্তী করণীয় দ্রুতই ঠিক হবে।’

আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব না ছাড়লেও নতুন করে নির্বাচন হলে বর্তমান সভাপতি নাঈমুরেরও কোনো আপত্তি থাকবে না বলে মনে করেন দেবব্রত পাল।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্যমান সংবিধানের অধীনের সরকারকে বৈধ মনে করি না: ফরহাদ মজহার

বিদ্যমান সংবিধানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট তৈরি হয়েছে, তাই এর অধীনের সরকারকে বৈধ বলে মনে করেন না রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, এই গণঅভ্যুত্থান আমাদেরকে নতুন রাষ্ট্র গঠনের দিকে নেয়নি। গণঅভ্যুত্থানের শেষে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বহাল রাখা হয়েছে। তা ঠিক বলে মনে করি না। এই সংবিধানের অধীনের সরকারকে বৈধ মনে করি না। আমি জনগণের পক্ষে কথা বলি। এ সরকারের পক্ষে সবসময় থাকার প্রশ্নই আসে না। সকল প্রকার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে ইমাজিনেক্সট ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘জাতীয় সংস্কৃতি : প্রেক্ষিতে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিকে দেশের নতুন গঠনতন্ত্র উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, সংবিধান মানে আইন। ইংরেজরা আইন প্রণয়ন করে। জনগণ গঠনতন্ত্র করে। সংবিধান মানেই হচ্ছে ঔপনিবেশিক শাসক। আপনি লুটেরা মাফিয়া শ্রেণির পক্ষে, আপনি একটা শাসনতন্ত্র বানাবেন। একটা আইন দিয়ে গরিবদেরকে শোষণ করবেন। সাধারণ মানুষকে শোষণ করবেন। আগের মতোই চলবেন। আর গঠনতন্ত্র মানে জনগণ নিজেরা অংশগ্রহণ করে।

তিনি বলেন, সাংস্কৃতিকভাবে ফ্যাসিবাদের বিরোধিতাই আমাদের সংস্কৃতির মূল চরিত্র। সকল প্রকার জাতিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। এটা বাঙালি জাতিবাদের পাশাপাশি সকল প্রকার ধর্মীয় জাতিবাদের বিরুদ্ধেও অবস্থান। ইসলামে জাতিবাদের স্থান নেই।

পয়লা বৈশাখের মাধ্যমে উৎসব নজির অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেখিয়েছে মন্তব্য করে এই রাষ্ট্রচিন্তক বলেন, এই উৎসবে ধর্মনিরপেক্ষ, ধার্মিক, আস্তিক, নাস্তিক, সনাতন ধর্মাবলম্বী, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সকলে অংশগ্রহণ করেছে। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে গোষ্ঠীটি তৈরি হয় তাকে জাতি বলা হয়। এটা হচ্ছে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী।

গোলটেবিল বৈঠকে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, আমার সংস্কৃতি যত শক্তিশালী হোক আমাকে কিন্তু সেখানে বাইরের পৃথিবীর সংস্কৃতির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে টিকে থাকতে হবে। আকর্ষণ তৈরি করতে হবে। সেই জায়গা তৈরি নিয়ে ভাবতে হবে।

চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, বাইরে পৃথিবীতে বাংলাদেশের অনেক বন্ধু আছে। আমাকে খুঁজে বের করতে হবে, আমি আমার বন্ধুটাকে কীভাবে পেতে চাই। আমি যদি ভালোভাবে পেতে পারি, চাইতে পারি, আমার ধারণা বাংলাদেশে প্রচুর বন্ধু আছে, সেটা আমরা এখনো দেখছি, আগেও দেখেছি এবং আমার ধারণা ভবিষ্যতে আমরা দেখতে পারব।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনির্বাচিত সরকার না বলার দাবি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকারের সুনির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। জনসম্মতিহীন অবৈধ সরকারকে অনির্বাচিত সরকার বলা হয়। যেমন এক/এগারোর সরকার, আওয়ামী লীগ সরকার। এ সরকার অবৈধ বা জনসম্মতিহীন সরকার না। এটা ঠিক, সরকার ভোটের মাধ্যমে আসেনি।

অতীতে ৩০-৩৫ শতাংশ ভোটে বাংলাদেশের ক্ষমতায় রাজনৈতিক দলগুলো এসেছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ সরকারের প্রতি ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের সমর্থন রয়েছে। তাহলে এ সরকার কেন অনির্বাচিত? অনির্বাচিত সরকার তো বীনা সিক্রি (বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার) বলে বেড়ান। ভারতের সেনাবাহিনী বলে আমরা নির্বাচিত সরকার এলে সম্পর্ক স্বাভাবিক করব। অর্থাৎ সরকার অনির্বাচিত এবং দেশে অবৈধ সরকার চলছে।

ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হলে বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা হবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে সরোয়ার তুষার বলেন, আপনি বলছেন ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হলে দেশে বিশৃঙ্খলা হবে। ধরা যাক সরকার নির্বাচনটা মার্চে নিয়ে গেল। এখন যদি ডিসেম্বরের পরে বিশৃঙ্খলা হয় তার দায় কার? যারা এ কথা বলেছেন অবশ্যই তাদের নিতে হবে।

নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের সভাপতিত্বে ও ইমাজিনেক্সট ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র ও নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ ইমতিয়াজের সঞ্চালনায় ধারণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাফর ফিরোজ। আরও বক্তব্য দেন শিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্ধারিত সময়ে জাকসু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা
  • বিদ্যমান সংবিধানের অধীনের সরকারকে বৈধ মনে করি না: ফরহাদ মজহার