বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষের সাথে বেঈমানি করেছে। তার মেয়ে শেখ হাসিনাও একইভাবে বাঙ্গালী জাতির সাথে দেশের সাথে বেঈমানি করেছে। এদেশের হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে, এদেশের রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে গুম করেছে। এদেশের ২৭ হাজার কোটি টাকা নিয়ে ভারতে পালিয়েছে। তার বিচার এই বাংলার মাটিতে হবে। হাসিনা যে পরিমাণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে তাকে যদি ৩১ বারও ফাঁসি দেওয়া হয়; তাও তার বিচার শেষ হবে না।

আজ শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লার চান্দিনা ডা.

ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামে জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা উল্লেখ করে বুলু বলেন, শেখ মুজিব পাকিস্তানীদের কাছে জমাই আদরে আত্মসমর্পণ করে আত্মগোপন করেছিলেন। তখন এই বাঙ্গালী জাতিকে দিক নির্দেশনা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে শহীদ প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াউর রহমান সকল সেনা বাহিনীর সদস্যদের বলেছিলেন, আমরা আজ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলাম। আর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়।

বুলু চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, শেখ পরিবারের কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে থাকে এমন প্রমাণ যদি কেউ দিতে পারেন, তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দিব।

সম্মেলনে উপজেলা বিএনপি আহবায়ক মো. আতিকুল আলম শাওনকে সভাপতি, মো. কাজী আশরাদ কে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট চান্দিনা উপজেলা বিএনপি এবং পৌর বিএনপির আহবায়ক এবিএম সিরাজুল ইসলামকে সভাপতি ও সদস্য সচিব সাবেক পৌর মেয়র মো. আলমগীর খাঁনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পৌর বিএনপি’র কমিটি গঠন করা হয়। 

চান্দিনা উপজেলা বিএনপি সভাপতি মো. আতিকুল আলম শাওন এর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তার বক্তৃতা করেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় বিএনপি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) হাজী মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপি আহবায়ক মো. আক্তারুজ্জামান সরকার।

অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন- উপজেলা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া, পৌর বিএনপি সভাপতি এবিএম সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. আলমগীর খাঁন, উপজেলা যুবদল আহবায়ক মাও. আবুল খায়ের। এসময় উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল সহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, প্রায় ৬ বছর পর চান্দিনা উপজেলা বিএনপি’র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। প্রায় ১০ সহস্রাধিক নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠসহ আশপাশের সড়কগুলো। এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে অনানুষ্ঠানিক ভাবে গঠিত হয়েছিল চান্দিনা উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র কমিটি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ আওয় ম ল গ প র ব এনপ সদস য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্কুলের ধ্বংসস্তূপে সন্তানদের নাম ধরে ডাকছেন অসহায় বাবা-মায়েরা

গোলাপী-নীল-কমলা রঙের স্কুলব্যাগগুলো পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। চূর্ণ-বিচূর্ণ ইটের সঙ্গে মিশে গেছে ভাঙা চেয়ার, টেবিল। স্পাইডারম্যান খেলনা আর অক্ষর সাজানোর বর্ণমালাগুলোও পড়ে আছে। প্রায় ১৫টি শিশুর স্কুলব্যাগ ধ্বংসস্তূপের নিচে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ছোট সন্তানদের খুঁজছেন, নাম ধরে ডাকছেন অসহায় বাবা-মায়েরা। কাঁদতে কাঁদতে রাত পর্যন্ত সন্তানদের নাম ধরে ডাকতে দেখা যাচ্ছে। তিন দিন পর সোমবার ঘটনাস্থলটি নীরব। স্থানীয় লোকদের মুখে শোকের ছাপ। 

মিয়ানমারের ভূমিকম্পে বিধ্স্ত একটি প্রাক প্রাথমিক স্কুলের চিত্র এটি। মান্দালয় থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে কিয়ুকসে শহরটি ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি। 

স্থানীয়রা বলছেন- পুরো শহরের লোকজন উদ্ধার কাজে সাহায্য করতে এসেছিল এই স্কুলে। শুক্রবার বেশ কয়েকটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় সেখান থেকে। তারা বলছেন, শুক্রবার স্কুলে দুই থেকে সাত বছর বয়সী প্রায় ৭০ জন শিশু আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করছিল। কিন্তু এখন ইট, সিমেন্ট ও লোহার রডের স্তূপ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে ১২ জন শিশু ও একজন শিক্ষক মারা গেছেন। তবে স্থানীয়দের বিশ্বাস- সংখ্যাটি কমপক্ষে ৪০ জন হবে। সেখানকার বাসিন্দা ও অভিভাবকরা হতাশ।   

৭১ বছর বয়সী কিউয়ে নাইইন স্কুলটির ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। পাঁচ বছর বয়সী নাতনি থেট হটার সানের শেষকৃত্যের প্রস্তুতি নিচ্ছে তার পরিবার। তিনি বলেন, ভয়াবহ ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সময় সানের মা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। তিনি স্কুলে দৌড়ে যান, কিন্তু ভবনটি সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়ে। প্রায় তিন ঘণ্টা পরে ছোট্ট শিশুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। ঘটনার ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত, আমরা আমাদের প্রিয়জনের মৃতদেহ অক্ষত অবস্থায় পেয়েছি, এক টুকরো অবস্থায়।’

এমন অবস্থা মিয়ানমারের আরও অনেক জায়গায়। উদ্ধার ও চিকিৎসা তৎপরতা যথেষ্ট  নয। উদ্ধারকর্মীরা খালি হাতে ধ্বংসস্তুূপ ঘেঁটে দেখছেন। সাহায্যকারী সংস্থাগুলো মিয়ানমারে মানবিক সংকটের আরও অবনতির বিষয়ে সতর্ক করছে। হাসপাতালগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

মান্দালয় থেকে বিবিসি বার্মিজের রিপোর্টার হতেত নাইং জাও-এর বক্তব্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এটি এলাকা দেখেছি যেখানে একটি ভবন ছিল যা সরকারি কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা। পুরো নিচতলাটি ধসে পড়েছে, যার উপরে আরও তিনটি তলা এখনও দাঁড়িয়ে। ধ্বংসস্তূপে রক্তের দাগ। তীব্র দুর্গন্ধ থেকে বোঝা যাচ্ছিল, সেখানে অনেক লোক মারা গেছে, কিন্তু উদ্ধার কাজের কোনো চিহ্ন নেই। একদল পুলিশ আসবাবপত্র ও গৃহস্থালীর জিনিসপত্র ট্রাকে ভরছিল। মনে হচ্ছিল, তারা এখনও ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র উদ্ধার করার চেষ্টা করছে। দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসার আমাদের সাক্ষাৎকার দেননি, যদিও কিছুক্ষণের জন্য ভিডিও করার অনুমতি দিয়েছিল। আমরা স্থানীয় লোকদের শোকাহত ও নিশ্চুপ অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলাম। সামরিক সরকারের ভয়ে তারা মিডিয়ার সঙ্গে হয়তো কথা বলতে চাইছিল না।

হতেত নাইং জাও বলেন, আমাদের অনেক প্রশ্ন ছিল। ধ্বংসস্তূপের নিচে কতজন লোক থাকতে পারে? তাদের মধ্যে কেউ কি এখনও বেঁচে থাকতে পারে? কেন কোনো উদ্ধারকাজ করা হয়নি, এমনকি মৃতদেহও উদ্ধার করা হয়নি?

মিয়ানমারের রাজধানীর একটি হাসপাতালের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা রাজধানীর সবচেয়ে বড় হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি, যা এক হাজার শয্যার হাসপাতাল। 
ওই হাসপাতালের জরুরি কক্ষের ছাদ ভেঙে পড়েছে। প্রবেশপথে, ইংরেজিতে ‘জরুরি বিভাগ"’ লেখা একটি সাইনবোর্ড মাটিতে পড়েছিল। বাইরে ছয়টি সামরিক চিকিৎসা ট্রাক এবং বেশ কয়েকটি তাঁবু ছিল, যেখানে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছিল। তীব্র গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য তাঁবুগুলোতে পানি ছিটানো হয়। দেখে মনে হচ্ছিল, সেখানে প্রায় ২০০ জন আহত ব্যক্তি ছিলেন, যাদের কারও কারও মাথা রক্তাক্ত, কারও কারও হাত-পা ভাঙা ছিল।

হতেত নাইং জাওয়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আমরা একজন কর্মকর্তাকে জরুরি অবস্থার সময় কাজে না আসা কর্মীদের তিরস্কার করতে দেখলাম। আমি বুঝতে পারলাম লোকটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. থেট খাইং উইন। এক সাক্ষাৎকারের জন্য তার কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু তিনি সাক্ষাৎকারের অনুরোধে তিনি সাড়া দেননি। শহরে ঢোকার পথে, মহাসড়কের কেন্দ্রীয় রিজার্ভেশনে গাছের নিচে মানুষ দলবেঁধে বসেছিল প্রচণ্ড রোদ থেকে কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার জন্য। এটা বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম সময়। তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিন্তু আফটারশকের (ভূকম্প পরবর্তী কম্পন) কারণে তারা ভবনের ভেতরে থাকতে ভয় পাচ্ছিল।

প্রতিবেদক বলেন, আমরা রোববার ভোর ৪টায় ইয়াঙ্গুন থেকে ভূমিকম্প অঞ্চলে যাত্রা শুরু করেছিলাম যা মান্দালয় থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণে। রাস্তায় আলো ছিল না। তিন ঘণ্টারও বেশি সময় গাড়ি চালানোর পর আমরা কমলা রঙের পোশাক পরা প্রায় ২০ জন উদ্ধারকর্মীর একটি দলকে দেখতে পেলাম, যাদের জ্যাকেটের ওপর লোগো ছিল যাতে লেখা- তারা হংকং থেকে এসেছেন। আমরা উত্তর দিকে গাড়ি চালানোর সময় রাস্তায় ফাটল দেখতে শুরু করি।

সাধারণত এই রুটে বেশ কয়েকটি চেকপয়েন্ট থাকে, কিন্তু আমরা ১৮৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে একটি চেকপয়েন্ট দেখতে পাই। একজন পুলিশ অফিসার আমাদের জানান, ভাঙা সেতুর কারণে সামনের রাস্তা বন্ধ। তিনি আমাদের একটি বিকল্প পথ দেখিয়ে দিলেন। আমরা আশা করেছিলাম, রোববার রাতের মধ্যে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে পৌঁছাব। কিন্তু সেই পথ ও গরমে আমাদের গাড়ির সমস্যা হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। একদিন পর, আমরা অবশেষে শহরে পৌঁছে যাই। শহরটি সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে আছে, রাস্তার বাতি জ্বলছে না। ঘরবাড়িতে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা নেই। সকাল হলে এখানে কী পাব তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ