‘নারীরা সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন’
Published: 28th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত ‘নারী, উত্তরাধিকার ও পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার’ শীর্ষক কর্মশালায় নারী নেতারা বলেন, “সংবিধানের মৌলিক অধিকার অধ্যায়ের ২৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সব নাগরিকের জন্য সমান অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার করেছে রাষ্ট্র। তবু, নারীরা উত্তরাধিকার ও পারিবারিক সম্পত্তিতে সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ধর্মীয় ও সামাজিক প্রথার অজুহাতে নারীরা লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।”
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রাজধানীর বাবর রোযে বিএনপিএস সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালা সঞ্চালনা করেন বিএনপিএস পরিচালক শাহনাজ সুমী।
আরো পড়ুন:
সালমা জেতালেন মোহামেডানকে, গুলশানের প্রথম হার
বিবিএসের জরিপ
দেশের ৭০ শতাংশ নারী পুরুষ সঙ্গীর সহিংসতার শিকার
বক্তৃতা করেন গ্রাম বিকাশ সহায়তা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত মাসুদা ফারুক রত্না, পার্লামেন্ট নিউজ সম্পাদক সাকিলা পারভীন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লবির পরিচালক (লিগ্যাল) দিপ্তী শিকদার, বরিশালের আভাসের নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল, রংপুরের সিড-এর নির্বাহী পরিচালক সারথী রানী সাহা, কক্সবাজারের অগ্রযাত্রার নির্বাহী পরিচালক মো.
কর্মশালায় উত্থাপিত মূল প্রবন্ধে বলা হয়, উত্তরাধিকার আইন একটি জটিল কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যার প্রধান উৎস হলো ধর্মীয় আইন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের দ্বারা প্রণীত বৈষম্যমূলক ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইনের কারণে নারীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা স্পষ্টভাবে নারীদের মানবাধিকার ও সমান অধিকার লঙ্ঘন করে। নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন, বাল্যবিবাহ এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন উত্তরাধিকার ও পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এটি শুধু নারীদের ক্ষমতায়নই নয়, সমাজের সমতা ও ন্যায্যতার জন্যও অপরিহার্য।
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আন্দোলন মনে হয় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে: তাহির জামান প্রিয়র মা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা সামসি আরা জামান বলেছেন, আজকে আট মাস পরে আমার উপলব্ধি হচ্ছে আন্দোলন মনে হয় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সবাই মনে হয় সবার জায়গা থেকে বাণিজ্য করছে। মামলা বাণিজ্য হচ্ছে যতটুকু বুঝি। এরা কারা করছে আমরা সবাই বুঝি। খুনি হাসিনাকে যেমন আশেপাশে সবাই ফ্যাসিস্ট হতে সাহায্য করেছিল, আমি চাই না আর কেউ ফ্যাসিস্ট হোক।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৪২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন শামসি আরা জামান। এ সময় প্রিয়র চার বছর বয়সী মেয়ে সাবিরা জামানও তার সঙ্গে ছিলেন।
সামসি আরা জামান বলেন, আমি এত রাজনীতি বুঝি না। আমি মা। ১৯ জুলাই যখন আমার ছেলে নিহত হয়, ২০ আগস্ট যখন মামলা করতে আসি, আমাকে ১৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আমি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম, গেটের বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি ছেলেরা হাততালি দিয়ে স্লোগান দিচ্ছে, প্রিয় ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। আস্তে আস্তে পুরো থানা ভরে গেলো। আন্দোলনে যেভাবে একসঙ্গে এত মানুষ জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছিল। আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সব জায়গায় এখন ক্ষমতার চর্চা চলছে, কে কীভাবে কে ক্ষমতায় যাবে। যে ক্ষমতাকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে বিদায় করেছে, সেই আবার ক্ষমতার লড়াই দেখছি। এই সংগঠন ক্ষমতার জন্য না, জনগণের জন্য মানুষের জন্য কাজ করছে। আগামীতে কেউ যেন ফ্যাস্টিস্ট না হয়ে উঠতে পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, আমিও সঙ্গে থাকবো।
সমাবেশ শেষে একটি বর্ণিল শোভাযাত্রা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, টিএসসি, দোয়েল চত্বর হয়ে জিমনেশিয়ামে গিয়ে শেষ হয়।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনির সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম। এ ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, শামসুল আলম সজ্জন ও বাকী বিল্লাহ; সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর আলম, রাকসুর সাবেক ভিপি রাগীব আহসান মুন্না প্রমুখ।
রাগীব নাঈম তার বক্তব্যে বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটাতে সক্ষম হলেও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এখনো সম্ভব হয়নি। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতে টালবাহানা, সকল শহীদ পরিবারে সহায়তা পৌঁছাতে না পারা, শ্রমিকদের উপর নির্বিচার গুলি চালানো, ছাত্র আন্দোলনে ন্যাক্কারজনক পুলিশি হামলা অব্যাহত রাখাসহ নানা ঘটনা আমরা লক্ষ্য করছি।
তিনি বলেন, এসব ঘটনায় সরকারের ভূমিকা ও নিষ্ক্রিয়তা নিশ্চিতভাবেই শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি। হাসিনার পতনের বছরপূর্তি হবার আগেই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন থেকে দূরে সরে যাওয়ার ঘটনা আমাদেরকে পুনর্বার রাজপথে নামার আহ্বান জানাচ্ছে।
অনুষ্ঠিত সমাবেশে সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক তামজীদ হায়দার চঞ্চল বলেন, জুলাইয়ে শুরু হওয়া সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মকে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকারীদের কাছে সরকার একরকম আত্মসমর্পন করে বসে আছে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দেশি-বিদেশী স্বার্থান্বেষী মহলের আজ্ঞাবহতা বর্জন করে সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথে ফিরে আসতে বাধ্য করা হবে।
সম্মেলনে শুভকামনা জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ হরিজন ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন্সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ছাত্র ইউনিয়নের ৪২তম সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে। আগামী ২৬ এপ্রিল বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে সংগঠনের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।