কাককে ঢিল মেরে আজ দেশসেরা সুমাইয়া, জারিফও পেলেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নের স্বাদ
Published: 28th, February 2025 GMT
যেকোনো খেলার খেলোয়াড়েরা দেশসেরা নির্বাচিত হন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে। বিস্ময়কর হলেও সত্য, বাংলাদেশের টেনিসে গত ১২ বছর কোনো জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ হয়নি। ২০১৩ সালের পর এই প্রথম হওয়া জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ দিনে আজ বাংলাদেশের টেনিস পেয়েছে নতুন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন।
ছেলেদের বিভাগে দেশসেরা যিনি হয়েছেন, তাঁর উঠে আসাটা হঠাৎ করে নয়। গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন জারিফ আবরার। দেশে অনেক টুর্নামেন্টেই হয়েছেন সেরা। রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে পুরুষ এককের ফাইনালে জারিফ হারিয়েছেন বিকেএসপির মাহাদ বিন মালেককে। সেনানিবাস অফিসার্স ক্লাবের হয়ে খেলা জারিফ ৬-১, ৬-৩ গেমে জিতেছেন।
মেয়েদের এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ঝালকাঠি টেনিস ক্লাবের সুমাইয়া আক্তার। বয়স মাত্র ১৪ বছর ১ মাস। বছর চারেক ধরে খেলছেন টেনিস। মেয়েদের এককের ফাইনালে আজ বিকেএসপির সুবর্ণা খাতুনকে ৬-০, ৬-৪ গেমে হারিয়েছেন সুমাইয়া। সুস্মিতা সেনকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন দ্বৈতেও।
টেনিসে এলেন কীভাবে, জানতে চাইলে সুমাইয়া দিয়েছেন চমকপ্রদ এক তথ্য। ছোটখাটো গড়নের সুমাইয়া বললেন, ‘ক্লাস ফোরে যখন পড়ি.
সুমাইয়া যে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছেন, তা উঠে এসেছে তাঁর সঙ্গে গল্প করতে করতে। বাবা একটি খাবার হোটেলে চাকরি করেন, মা গৃহিণী। ছোট এক ভাই আছে। যখন নিজেকে নিয়ে বলছিলেন, রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে তখন সঙ্গে তাঁর স্যার জাহাঙ্গীর আলম, যিনি টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। এখন টেনিস শেখান।
সুমাইয়ার কাকের গল্পটা বলেন তিনিও, ‘সুমাইয়ার কাককে ঢিল মারা দেখে মনে হয়েছিল সে ভালো টেনিস খেলোয়াড় হতে পরবে। আজ সে দেশের সেরা খেলোয়াড় হয়েছে। আমার বাসার কাছেই ওর বাবা কাজ করেন একটি হোটেলে।’
পাশে দাঁড়ানো সুমাইয়ার কণ্ঠে তখন ঝালকাঠিতে টেনিস সুবিধা না থাকার অতৃপ্তি, ‘এখানে কোর্টটা খুব নিম্নমানের। অনেক কষ্ট করে শিখতে হয়। তবে স্যার খুব যত্ন করে শেখান। তিনি আমাকে সব সহায়তা করেছেন। র্যাকেট কিনে দিয়েছেন।’
ঠিক উল্টোভাবে বেড়ে উঠেছেন জারিফ। বিদেশে খেলার স্বাদ নিয়েছেন তিনি অল্প বয়সেই। বাংলাদেশের হয়ে ডেভিস কাপ খেলা সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড়দের একজন জারিফ। একটি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০২৩ সালে দুই ধাপে যুক্তরাষ্ট্রে ৯ মাস প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বিশ্ব টেনিসের অন্যতম সেরা কোচ যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড অ্যাশলে হবসনের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে গেলে থাকেনও হবসনের বাসায়। ৩ মার্চ আবার যাচ্ছেন।
ফ্লোরিডায় স্থানীয় একটি অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জারিফ। অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগে রানারআপ। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত বয়সভিত্তিক ছয়টি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন। বয়সের তুলনায় তাঁর টেনিস মেধা ভালো।
অ্যাশলে বলেছেন, জারিফের দেশের বাইরে খেলা উচিত। উন্নত কোচিং সেন্টারে যাওয়া উচিত। সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন জারিফের পরিবার। মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র জারিফ বর্তমানে ফ্লোরিডায় একটি একাডেমিতে অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।
রাজশাহীতে মুজিববর্ষ জাতীয় টেনিস টুর্নামেন্টে অনূর্ধ্ব-১২ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। বালক অনূর্ধ্ব-১৪ বিভাগে রানারআপ। ঢাকায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে হাবিব মেমোরিয়াল আন্তক্লাব টেনিসে বালক অনূর্ধ্ব-১৪ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন। ২০২২ সালের মার্চে স্বাধীনতা দিবস টেনিসে অনূর্ধ্ব-১৬ বালক বিভাগে চ্যাম্পিয়ন। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় অনূর্ধ্ব-১৬ জুনিয়র ডেভিস কাপে ছয় দেশের প্রতিপক্ষকেই হারিয়েছেন। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জুনিয়র ডেভিস কাপে বাংলাদেশ দলে প্রথম সুযোগ মেলে।
জারিফের বাবা মেজর (অব.) সাজমুল হক খেলাপ্রেমী। ছেলেকে নিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে জারিফ ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক টেনিসে নিয়মিত প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। কিন্তু টেনিস খুব ব্যয়বহুল খেলা। তার খরচ জোগানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’
যতই কঠিন হোক, জারিফের লক্ষ্য আরও সামনে যাওয়া। ‘আমি চাই ইউএস ওপেনসহ শীর্ষ পর্যায়ের টুর্নামেন্ট খেলতে’—একবাক্যেই বুঝিয়ে দেন টেনিসে কতটা মজে আছেন জারিফ।
টেনিসে মজে আছেন সুমাইয়াও। জুনিয়র দলগত প্রতিযোগিতা বিলি জিন কিং কাপে খেলতে গতকাল রাতেই চার সদস্যের দলের সঙ্গী হয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা তাঁর। দারিদ্র্য জয় করাসহ সুমাইয়ার চোখে এখন অনেক অনেক স্বপ্ন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন র ধ ব হয় ছ ন ন হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৩ সালে কর ফাঁকি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, সিপিডির গবেষণা
কর ফাঁকির কারণে ২০২৩ সালে (২০২২-২৩ অর্থবছর) আনুমানিক ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে কর ফাঁকির এই পরিমাণ ছিল ৯৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত ১১ বছরে দেশে কর ফাঁকির পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।
আজ সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে ‘করপোরেট আয়কর সংস্কার ও কর ন্যায্যতার দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়।
সিপিডির গবেষণায় উঠে এসেছে, একদিকে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে অনেক প্রতিষ্ঠান কর দিতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়ছেন। গবেষণায় অংশ নেওয়া ৪৫ শতাংশ কোম্পানি জানিয়েছে, করপোরেট কর দেওয়ার সময় কর কর্মকর্তারা ঘুষ চেয়েছেন। এ ছাড়া বিদ্যমান কর হার অন্যায্য বলে দাবি করেছে ৮২ শতাংশ কোম্পানি।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে আলোচনা করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামিম আহমেদ।
করপোরেট আয়কর নিয়ে গবেষণার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়-এমন মোট ১২৩টি কোম্পানির তথ্য নিয়েছে সিপিডি। এ ছাড়া তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক, তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চামড়া-এই পাঁচটি খাতের ব্যবসায়ী নেতাদের মতামত নেওয়া হয়েছে। জরিপটি পরিচালিত হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে।
সিপিডির মতে, ২০২৩ সালে আনুমানিক ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা কর ফাঁকি হয়েছে। এর মধ্যে করপোরেট কর ফাঁকির পরিমাণই অর্ধেক বা ৫০ শতাংশ; সেই হিসাবে ২০২৩ সালে আনুমানিক ১ লাখ ১৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা করপোরেট কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১১ সালের পর থেকে দেশে কর ফাঁকি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ২০১২ সালে কর ফাঁকির পরিমাণ ছিল ৯৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা-২০১৫ সালে যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকায়। সিপিডি বলছে, উচ্চ করহার, দুর্বল নজরদারি, জটিল আইন-কানুন ও কর ব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি কর ফাঁকির মূল কারণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কর ন্যায্যতার দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপক কর ফাঁকি সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে এবং আইনের প্রতি অনুগত নাগরিকদের ওপর করের বোঝা বাড়িয়ে দেয়।’
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় থাকা বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ। এলডিসি উত্তরণের পর বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার ফলে কর ফাঁকি ও কর পরিহারের ঝুঁকিও বাড়বে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সিপিডি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর ব্যবস্থার ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন ও নীতিগত সংস্কারের সুপারিশ করেছে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, কর ফাঁকি ছাড়াও প্রণোদনা ও কর ছাড়ের কারণে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে। বিনিয়োগের কথা বলে বিভিন্ন খাত ভিত্তিক কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করা উচিত। প্রণোদনা বা কর ছাড় বিনিয়োগের ভিত্তি হতে পারে না বলে তাঁর মত।
বাংলাদেশের প্রণোদনা কাঠামো পরিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় তৈরি বলে অভিযোগ করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তাঁর মত, এই কাঠামো থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, কর ফাঁকি ছাড়াও প্রণোদনা ও কর ছাড়ের কারণে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে। বিনিয়োগের কথা বলে বিভিন্ন খাত ভিত্তিক কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করা উচিত। প্রণোদনা বা কর ছাড় বিনিয়োগের ভিত্তি হতে পারে না বলে তাঁর মত।
বাংলাদেশের প্রণোদনা কাঠামো পরিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় তৈরি বলে অভিযোগ করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তাঁর মত, এই কাঠামো থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।