ভারতের উত্তরাখন্ডে ভয়াবহ তুষারধসের ফলে বরফের নিচে আটকা পড়েন ৫৭ জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্য থেকে ১৬ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বরফের নিচে আটকে ছিলেন ৪১ জন। ওই শ্রমিকেরা সড়ক নির্মাণের কাজ করছিলেন।

আজ রাজ্যের চামোলি জেলার বদ্রিনাথ শহরের মানা এলাকায় শ্রমিকদের একটি শিবিরের ওপর ওই তুষারধস হয়। এই এলাকার পাশেই তিব্বত সীমান্ত। চামোলি জেলার জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা সন্দ্বীপ তিওয়ারি বিবিসিকে জানিয়েছেন, তুষারধসের ঘটনায় কেউ নিহত হয়েছেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তুষারধসের পর ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স এবং উদ্ধারকারী দলের উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ চালাতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন, ভারত-তিব্বতীয় সীমান্ত পুলিশসহ বেশ কয়েকটি দল উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে।

মানা গ্রাম পঞ্চায়েতের সাবেক সদস্য বিবিসিকে জানিয়েছেন, তুষারধসের স্থানে স্থায়ীভাবে কেউ বসবাস করেন না। শুধু শীতকালে সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য শ্রমিকেরা সেখানে থাকেন। এর পাশাপাশি কিছুসংখ্যক সেনাসদস্যও সেখানে অবস্থান করেন। ওই এলাকায় দুই দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছিল বলে শোনা গেছে। তুষারধসের সময় শ্রমিকেরা তাঁদের শিবিরের মধ্যে ছিলেন।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর থেকে সতর্কতা জানিয়ে বলা হয়েছিল, ভারতের উত্তরাঞ্চলের রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের পাশাপাশি হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখন্ডে ভারী বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত হতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পর্দা নামল প্রাণের মেলায়

ছিল সপ্তাহের শেষ দিন। সরকারি ছুটি। পুরো মাস বইমেলায় যারা যেতে পারেননি, শিশুসন্তানকে হাতে আগলে ছুটেছেন মেলা প্রাঙ্গণে। সকাল থেকে মেলা শুরু হলেও ভিড় বাড়ে বিকেলে। সন্ধ্যায় জনারণ্যে পরিণত হয়। নতুন জামা পরে তরুণ-তরুণীরা হাজির হন। কেউ কেউ বই কিনছেন; কেউ তুলছেন সেলফি। ঘুরে বেড়াচ্ছেন মেলাজুড়ে। তবে প্রকাশকরা জানিয়েছেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেক প্রকাশক হতাশার সুরে বলেন, এবার তাদের বিক্রি আশানুরূপ হয়নি। 

গতকাল শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার এবারের আসরের পর্দা নেমেছে। মাসজুড়ে চলা মেলায় বিক্রি কেমন ছিল– এমন প্রশ্নে অমর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী অমর সাহা বলেন, ‘আমি বলব, আমার প্রকাশনী থেকে বিক্রি ভালোই হয়েছে। যা হয়েছে, সবকিছু মিলিয়ে তাতেই চলে যাবে। তবে সার্বিক মেলায় অনেক সিঙ্গেল ইউনিটে প্রকাশকদের বিক্রির হার কম ছিল।’ ম্যাগনাম ওপাসের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার ফরিদী বলেন, এবারের মেলাটি ছিল অসফল। বিক্রি নেই, পাঠক নেই। শুধু বই ও স্টলের সঙ্গে ছবি তোলা ও ঘুরে বেড়ানো।

শেষ দিনে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণে বিকেলে ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। মেলা মাঠে দেখা হয় কথাসাহিত্যিক হামিম কামালের সঙ্গে। পুরো মেলা প্রসঙ্গে তিনি আশাবাদের সুরে বলেন, শুরুর দিকে কিছু শঙ্কা কাজ করছিল। ছন্দপতনও ঘটেছে। কিন্তু মানুষের ভেতর জ্ঞানের প্রতি ও মিলনমেলার প্রতি খুবই মৌলিক আগ্রহ ও ব্যগ্রতা দেখা গেছে। এ কারণে মেলার পরের দিনগুলোতে দেখতে পাই– সব দ্বিধা ও পশ্চাৎপদতা দূরে ঠেলে তারা মেলায় শামিল হয়েছেন।

ছুটির দিনে বেলা ১১টা থেকে শুরু হয় মেলা। শেষ প্রহরে বিকেল ৫টায় সমাপনী আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ এর সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মফিদুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। 
মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘এমন এক পরিস্থিতিতে এবার বইমেলার আয়োজন করতে হয়েছে, যখন দেশে পুলিশ নেই, ব্যুরোক্রেসি ফাংশন করছে না। সংস্কৃতির ট্রেনটা লাইনে তুলতে ভীষণ বেগ পেতে হয়েছে। আমার মনে হয়, সেটি এখন ঠিক লাইনে চলছে।’ 

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, চব্বিশের অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কিছু অস্থিরতা সত্ত্বেও এ বছর আমরা বইমেলার আয়োজন করেছি। প্রতি বছর মেলায় সেরা বইগুলোর জন্য বাংলা একাডেমি থেকে বিশেষ পুরস্কার প্রবর্তন করা প্রয়োজন। 
সদস্য সচিব সরকার আমিন প্রতিবেদনে বলেন, বইমেলায় বাংলা একাডেমিসহ সব প্রতিষ্ঠানের বই ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি হয়েছে। একাডেমি ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৩ টাকার বই বিক্রি করেছে।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের চেতনাবহ ফেব্রুয়ারি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ভাষার জন্য জীবনদানকারী শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার একটি মাধ্যম।’
এবার বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৩ হাজার ২৯৯টি। এর আগে ২০২৪ সালে বই প্রকাশিত হয় ৩ হাজার ৭৫১টি ও ২০২৩ সালে ৩ হাজার ৭৩০টি। লেখক বলছি মঞ্চে নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শিমুল পারভীন ইতি, গবেষক আবদুল আলীম, গবেষক এম এ মোনায়েম এবং কবি মঈন মুনতাসীর। 

সাহিত্য পুরস্কার পেলেন আল মুজাহিদী, হান্স হার্ডার ও বর্ণালী সাহা
শেষ দিনে কবি জসীম উদ্‌দীন সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫ এবং সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ দেওয়া হয়। বাংলা একাডেমির ‘কবি জসীম উদ্‌দীন  সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫’ এ ভূষিত হয়েছেন কবি আল মুজাহিদী এবং ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’-এ ভূষিত হয়েছেন অধ্যাপক হান্স হার্ডার ও কথাশিল্পী বর্ণালী সাহা। তাদের পুরস্কারের অর্থ, সম্মাননাপত্র ও স্মারক দেওয়া হয়। 

গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার পেল যেসব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান
অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কথাপ্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৫ দেওয়া হয়। গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঠক সমাবেশ (প্লেটো: জীবন ও দর্শন– আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া), ঐতিহ্য (ভাষাশহিদ আবুল বরকত: নেপথ্য কথা– বদরুদ্দোজা হারুন) এবং কথাপ্রকাশকে (গোরস্তানের পদ্য : স্মৃতি ও জীবনস্বপ্ন-সিরাজ সালেকীন) মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হয়। 
২০২৪ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কাকাতুয়াকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হয়েছে।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ