কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে মসজিদের ইমাম নিয়োগ নিয়ে বহিরাগতদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। বহিরাগতরা কলেজের অধ্যক্ষসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছে। এ সময় অধ্যক্ষসহ কিছু শিক্ষক প্রশাসনিক ভবনে আটকা পড়েন।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর ভিক্টোরিয়া কলেজের ধর্মপুর ডিগ্রি শাখায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া শিক্ষকদের বিকেল ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঁইয়া।

জানা গেছে, গত ১৩ জানুয়ারি কলেজের ডিগ্রি শাখার মসজিদে তাবলিগের বিবদমান দু’পক্ষ মাওলানা সাদ ও জুবায়েরের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর জেরে গত ২০ জানুয়ারি মসজিদের সাপ্তাহিক তালিম সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দেন কলেজ অধ্যক্ষ। বিষয়টি নিয়ে গত ২১ জানুয়ারি বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখেন কলেজের নজরুল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ধর্মপুরের বাসিন্দারা। এর পরই ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ইমাম মারুফ বিল্লাহকে নানা অভিযোগ তুলে অব্যাহতি দেয় কলেজ প্রশাসন। কিন্তু এলাকাবাসী ইমামকে পুনর্বহালের দাবি তোলে। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ইমামকে চাকরিচ্যুত করার পর থেকেই কলেজে সংঘর্ষের সূত্রপাত।

প্রতি শুক্রবার নামাজের আগে ইমামকে বহালের দাবি করে আসছে স্থানীয় একটি পক্ষ। গতকাল শুক্রবার নামাজ শুরুর আগেই স্থানীয় লোকজন কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় নজরুল হলের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের রক্ষা করতে গেলে হামলায় আহত হন ৫-৬ জন। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে আবার কলেজ ক্যাম্পাস ও ফটকে অবস্থান নেয় বহিরাগতরা।

কলেজের শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক গাজী মুহাম্মদ গোলাম সোহরাব হাসান বলেন, ‘হামলায় অধ্যক্ষসহ শিক্ষকরা আহত হয়েছেন। আমাদের অনেকটা সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। মূলত ইমামকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।’

নজরুল হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, স্বাভাবিকভাবেই শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন তারা। নামাজের শুরুতে নিউ হোস্টেল মসজিদের ইমাম নামাজ পড়াবেন এ কথা মাইকে ঘোষণা দিয়েছিলেন অধ্যক্ষ। এটা নিয়ে হট্টগোল শুরু করেন এলাকাবাসী। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষের গায়ে হাত তোলে তারা। শিক্ষার্থীরা বাধা দিতে গেলে তাদের গায়েও হাত তোলে। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীও আহত হয়েছেন।

কয়েকজন এলাকাবাসী পাল্টা অভিযোগ করেন, তাদের এলাকার বেশির ভাগ মানুষই ভিক্টোরিয়া কলেজ মসজিদে নামাজ পড়েন। এখানকার ইমাম মারুফ বিল্লাহ অনেক ভালো মানুষ। কিন্তু ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ইমামের পদ থেকে অব্যাহতি দেন। শুক্রবার নামাজ পড়তে গিয়ে নতুন ইমামের পেছনে নামাজ পড়তে অপারগতা প্রকাশ করলে কলেজের হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী হামলা চালায়।

ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঁইয়া বলেন, ‘বহিরাগতরা আমাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় বিকেল ৪টার পর আমরা ক্যাম্পাস থেকে বের হই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’

কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিনুল ইসলাম জানান, উভয়পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। তবে কেউ বড় ধরনের আহত হয়নি। অবরুদ্ধ শিক্ষকদের উদ্ধার করেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ শ ক ষকদ র কজন শ ক ষ অবর দ ধ স ঘর ষ ন কল জ মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তারে অনুমতির সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে রিটের শুনানি বুধবার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়কার ঘটনায় করা মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে—ঢাকা মহানগর পুলিশের এমন সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে রিট শুনানির জন্য আগামী বুধবার (২৩ এপ্রিল) দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

শুনানির জন্য বিষয়টি উত্থাপন করা হলে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এই দিন ধার্য করেন।

৯ এপ্রিল ঢাকা মহানগর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন-সংক্রান্ত মামলায় আসামি গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়। আদেশে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন-সংক্রান্ত মামলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা অধিক। এসব মামলার এজাহারভুক্ত কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণসহ অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। উপযুক্ত প্রমাণ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনার মামলার এজাহারভুক্ত কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার না করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এই আদেশের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন গতকাল রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন। আজ সকালে আদালতে রিটের বিষয়টি উত্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রিট আবেদনকারী মো. জসিম উদ্দিন।

আরও পড়ুনবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে রিট২২ ঘণ্টা আগে

পরে আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিটের বিষয়টি উত্থাপন করা হলে আদালত ২৩ এপ্রিল শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন।’

রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, ৯ এপ্রিলের অফিস আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়। রুল হলে বিচারাধীন অবস্থায় অফিস আদেশের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে রিটে। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, ডিবি প্রধান, সিআইডি প্রধান, এসবি প্রধানসহ সাতজনকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

আরও পড়ুনবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে১২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ