ধর্মপাশায় এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি মাজারে আগুন, থানায় লিখিত অভিযোগ
Published: 28th, February 2025 GMT
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা সদরে এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি মাজারে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগুনে দুটি মাজারের শামিয়ানা, গিলাফসহ অন্যান্য উপকরণ পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাজারের অনুসারী ও সাধারণ মানুষেরা। তাঁরা জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক মাজার রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাজার রয়েছে সদর ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে হজরত লোড়া পীরের মাজারে গত রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে তিন দিনব্যপী ৪৫তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে মিলাদ, সামা কাউয়ালি ও বাউলগানের আয়োজন করা হয়। প্রথম দিনের কর্মসূচি রাত আড়াইটার দিকে শেষ হয়। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভোররাত আনুমানিক চারটার দিকে মাজারের শামিয়ানা ও গিলাফে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। ততক্ষণে মাজারের শামিয়ানা, গিলাফ পুড়ে যায় এবং মাজারের পশ্চিম পাশে থাকা দুটি সাউন্ড বক্সের বেশ কিছু অংশ পুড়ে যায়।
অপর দিকে উপজেলার নোয়াবন্দ গ্রামে হজরত কালাম শাহ (রহ.
কালাম শাহ (রহ.) মাজারের খাদেম শাহ আরিফুল হক এবং লোড়া পীরের মাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান (৩৫) বলেন, মাজারে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি তাঁরা কোনো অবস্থাতেই মেনে নিতে পারছেন না। মনে হচ্ছে, এটি উগ্রপন্থীদের কাজ। এ ঘটনায় তাঁরা পৃথকভাবে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। দ্রুত জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এনামুল হক আজ শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রাজনগর গ্রামের মাজারটিতে প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রল ভরে আগুন লাগিয়ে মাজারে ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। সেখান থেকে একটি আধা পোড়া প্লাস্টিকের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। নোয়াবন্দ গ্রামের মাজারটিতে কীভাবে আগুন লেগেছে, তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুনছয় মাসে ৮০ মাজারে হামলা, বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি২৩ জানুয়ারি ২০২৫দুই মাজারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পওয়ার কথা নিশ্চিত করে ওসি বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে উপজেলার সব কটি মাজারের লোকজন ও মাজারের খাদেমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। টহল বাড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
উপজেলার ধর্মপাশা মাস্টারবাড়ী ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ গোলাম জিলানী বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি মাজারে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাত আটটার পরপরই উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অনেকটাই জনশূন্য হয়ে পড়ে। মানুষজন চলাচল করতেও ভয় পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তরিকত ঐক্য পরিষদের ধর্মপাশা উপজেলা শাখার সভাপতি জুবায়ের পাশা বলেন, ‘মাজারে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। এ ঘটনায় আমরা খুবই ব্যথিত হয়েছি। সত্যিকারের কোনো মুসলমান মাজারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটাতে পারে না। অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার লক্ষ্যে একটি কুচক্রী মহল এতে জড়িত রয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।’
আরও পড়ুনময়মনসিংহে শর্তহীনভাবে মাজারে ওরস পালনের ঘোষণা ভক্তদের২৭ জানুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ দেশের শতাধিক গ্রামে ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় আজ রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হচ্ছে। সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল দরবার শরিফের অনুসারীরা হানাফি মাজহাবের নিয়ম অনুসরণ করে ঈদ উদ্যাপন করেন। এ দরবার শরিফের অনুসারীরা হানাফি মাজহাব মতে, বিশ্বের যেকোনো দেশে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ২০০ বছর ধরে এভাবে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ও চান্দ্রমাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ধর্মীয় অনুশাসন পালন করে আসছেন।
দরবারের সূত্র জানায়, মির্জাখীল দরবার শরিফের খানকাহ মাঠে সকাল ৯টার সময় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। হজরত শাহ জাহাঁগীর শেখুল আরেফীন (ক.), হজরত শাহ জাহাঁগীর ফখরুল আরেফীন (ক.), হজরত শাহ জাহাঁগীর শমসুল আরেফীন (ক.)–এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান সাজ্জাদানশীন হজরত শাহ জাহাঁগীর তাজুল আরেফীন (ক.)–এর তত্ত্বাবধানে তাঁর জানশিন (উত্তরাধিকারী) হজরত ইমামুল আরেফীন মাওলানা মুহাম্মদ মকছুদুর রহমান ঈদের নামাজে ইমামতি করেন।
এদিকে সকাল ৯টার সময় আনোয়ারা উপজেলার তৈলারদ্বীপ গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে বাঁশখালী উপজেলার কালীপুরে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।