সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা সদরে এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি মাজারে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগুনে দুটি মাজারের শামিয়ানা, গিলাফসহ অন্যান্য উপকরণ পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাজারের অনুসারী ও সাধারণ মানুষেরা। তাঁরা জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক মাজার রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাজার রয়েছে সদর ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে হজরত লোড়া পীরের মাজারে গত রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে তিন দিনব্যপী ৪৫তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে মিলাদ, সামা কাউয়ালি ও বাউলগানের আয়োজন করা হয়। প্রথম দিনের কর্মসূচি রাত আড়াইটার দিকে শেষ হয়। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভোররাত আনুমানিক চারটার দিকে মাজারের শামিয়ানা ও গিলাফে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। ততক্ষণে মাজারের শামিয়ানা, গিলাফ পুড়ে যায় এবং মাজারের পশ্চিম পাশে থাকা দুটি সাউন্ড বক্সের বেশ কিছু অংশ পুড়ে যায়।

অপর দিকে উপজেলার নোয়াবন্দ গ্রামে হজরত কালাম শাহ (রহ.

) মাজারে গত বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসেন। রাত ১২টার দিকে এই আগুন নেভাতে সক্ষম হলেও মাজারের শামিয়ানা ও গিলাফ পুড়ে যায়।

কালাম শাহ (রহ.) মাজারের খাদেম শাহ আরিফুল হক এবং লোড়া পীরের মাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান (৩৫) বলেন, মাজারে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি তাঁরা কোনো অবস্থাতেই মেনে নিতে পারছেন না। মনে হচ্ছে, এটি উগ্রপন্থীদের কাজ। এ ঘটনায় তাঁরা পৃথকভাবে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। দ্রুত জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।

ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এনামুল হক আজ শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রাজনগর গ্রামের মাজারটিতে প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রল ভরে আগুন লাগিয়ে মাজারে ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। সেখান থেকে একটি আধা পোড়া প্লাস্টিকের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। নোয়াবন্দ গ্রামের মাজারটিতে কীভাবে আগুন লেগেছে, তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুনছয় মাসে ৮০ মাজারে হামলা, বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি২৩ জানুয়ারি ২০২৫

দুই মাজারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পওয়ার কথা নিশ্চিত করে ওসি বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে উপজেলার সব কটি মাজারের লোকজন ও মাজারের খাদেমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। টহল বাড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

উপজেলার ধর্মপাশা মাস্টারবাড়ী ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ গোলাম জিলানী বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি মাজারে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাত আটটার পরপরই উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অনেকটাই জনশূন্য হয়ে পড়ে। মানুষজন চলাচল করতেও ভয় পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তরিকত ঐক্য পরিষদের ধর্মপাশা উপজেলা শাখার সভাপতি জুবায়ের পাশা বলেন, ‘মাজারে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। এ ঘটনায় আমরা খুবই ব্যথিত হয়েছি। সত্যিকারের কোনো মুসলমান মাজারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটাতে পারে না। অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার লক্ষ্যে একটি কুচক্রী মহল এতে জড়িত রয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।’

আরও পড়ুনময়মনসিংহে শর্তহীনভাবে মাজারে ওরস পালনের ঘোষণা ভক্তদের২৭ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র এ ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা

সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা সবকিছুর নিয়ন্ত্রক মহান আল্লাহ। মন সব সময় ভালো রাখা কঠিন। নানা কারণে মন খারাপ হতে পারে। মন খারাপ হলে ভেঙে পড়বেন না। আল্লাহ মানুষকে কষ্টের ওপর নির্ভরশীল করেই সৃষ্টি করেছেন।

মন খারাপ হলে কী করতে হবে, এ সম্পর্কে নবী-রাসুল ও সাহাবাদের জীবনেই রয়েছে মানুষের জন্য সর্বোত্তম শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা। আল কোরআনে আছে, ‘অবশ্যই আমি মানুষকে কষ্ট নির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা বালাদ, আয়াত: ৪)

নবী ও রাসুলদের জীবন আমাদের কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পেতে সহায়তা করে।

হজরত আদম (আ.)–কে প্রথমে একাকী সঙ্গীবিহীন সৃষ্টি করা হয়েছিল। যখন মানুষ নির্জন ও একাকিত্বে ভোগে, তখনো ভেঙে পড়া যাবে না।

হজরত নুহ (আ.) তার পরিবারের সবাইকে হেদায়েতের পথে আনতে পারেনি। সাড়ে ৯০০ বছর দাওয়াত দিয়ে মাত্র ৮০ জনকে হেদায়েতের পথে আনতে পেরেছিলেন। তাই কোনো কারণে পরিবার ও সন্তানকে যথাযথ পথে আনার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে হতাশ হওয়া যাবে না।

হজরত ইব্রাহিম (আ.)–এর বাবা পৌত্তলিক ছিলেন। তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ হয়।

আরও পড়ুননামাজে রাকাত নিয়ে সন্দেহ হলে১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

হজরত ইউসুফ (আ.)–এর ভাইয়েরা গভীর কূপে ফেলে দিয়েছিলেন। এরপর জীবনের এক পর্যায়ে এসে তিনি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। সেই ভাইদের মুখে নিজের ব্যাপারে মিথ্যা দোষারোপও শুনেছিলেন। রক্তসম্পর্কীয় কেউ কারও সঙ্গে প্রতারণা করলেও নিজের সৎসাহসে অটল থাকতে হবে।

হজরত ইউনুস (আ.) আটকে ছিলেন মাছের পেটে। সেখান থেকে উদ্ধার পাওয়ার উপায় ছিল না। আল্লাহর রহমতে পেয়েছিলেন। চরম বিপদে আল্লাহর ওপর ভরসা ছাড়া যাবে না।

আল্লাহর নবী হজরত আইয়ুব (আ.) দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন। আল্লাহ তাকে নিজে সুস্থ করেছিলেন।

মহানবী (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির ষষ্ঠ বছর। মক্কায় তিনি দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। হামজা (রা.) ও ওমর (রা.)-সহ মক্কার প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা ইসলাম গ্রহণ করেছেন। মহানবী (সা.) প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন। বিপরীতে মক্কায় মুশরিকদের ক্রোধ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবিদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি মহানবী (সা.)-কে থামানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছিল। অন্যদিকে গোত্র বনী হাশেম ও বনী মুত্তালিবকেও মহানবী (সা.)-এর সাহায্য থেকে বিরত রাখতে পারছিল না মক্কার অবিশ্বাসীরা। ফলে তারা এ দুই গোত্রসহ মুহাম্মদ (সা.)-কে বয়কট করার ফন্দি আঁটে। ইসলামের ইতিহাসে যা শিআবে আবি তালিবের বয়কট নামে পরিচিত। কিন্তু মহানবী (সা.) অবিচল থেকে বিজয় অর্জন করেন।

আরও পড়ুননামাজে অন্য যেকোনো সুরা পড়ার আগে সুরা ফাতিহা পড়তে হয়১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রমজানে কোরআন অধ্যয়ন
  • নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা
  • পরিবারের জন্য অভিভাবক দোয়া করবেন