কেন সামাজিক মাধ্যমে ‘যাওয়ার সময়’ লিখেছেন, খোলাসা করলেন অমিতাভ
Published: 28th, February 2025 GMT
বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চন আর অভিনয় করবেন না! এমন গুঞ্জনে রাতের ঘুম ছুটেছে অনুরাগীদের। বহু ঝড় বয়ে গেছে তাঁর জীবনে। কখনও সম্পর্ক নিয়ে, কখনও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একাধিক বার তাঁর পেশাজীবন থমকে যেতে যেতেও শেষরক্ষা হয়েছে। যত বার দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে তত বার ‘বিগ বি’ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এখনও সেই লড়াই জারি। চলতি বছর ৮২-তে পা দিয়েছেন তিনি। এ বার কি ‘শাহেনশা’ ক্লান্ত?
এত আলোচনা, এত প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে তাঁরই দেওয়া সাম্প্রতিক একটি পোস্ট। অমিতাভ রাত ২টার সময় সমাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘যাওয়ার সময়’। প্রতি দিনই বলিউড ‘শাহেনশা’ সমাজিক মাধ্যমে কিছু না কিছু লেখেন। প্রতি রোববার তাঁর ‘জলসা’ বাংলোর সামনে সাক্ষাতের পাশাপাশি এ ভাবেও তিনি যোগাযোগ রাখেন অনুরাগীদের সঙ্গে। তাঁরাও উত্তর দেন অমিতাভকে। এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) এই পোস্ট দেখে প্রত্যেকের আক্কেলগুড়ুম। বলিউডেও চর্চা শুরু, তা হলে অভিনয় থেকে বিদায় আসন্ন? অবশেষে সকলের সব কৌতূহল অমিতাভ নিজ দায়িত্বে মিটিয়ে দিলেন।
সম্প্রতি ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র সেটে। সেখানে নতুন পর্বের শুটিং চলছিল। শুটিং চলাকালীন দর্শকের মধ্যে থেকে একজন অভিনেতার কাছে বিষয়টি সরাসরি জানতে চান। সঙ্গে সঙ্গে হেসে ফেলেন ‘শাহেনশা’। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে রসিকতাও করেন। প্রথমে পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, “কেন, আমি কি কিছু ভুল লিখেছি?” তাঁর বলার ভঙ্গিতে হেসে ওঠেন উপস্থিত সমস্ত দর্শক। তার পর তিনি খোলসা করেন, আদতে কী লিখতে চেয়েছিলেন তিনি।
অমিতাভের কথায়, “রিয়্যালিটি শো-এর সেট থেকে রাত ১টার আগে ছুটি মেলে না। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ২টো। গভীর রাতে যখন বাড়ি ফিরি তখন ঘুম ভর করে দু’চোখে। ওই ঘুমন্ত অবস্থাতেই সে দিন লিখেছিলাম, ‘যাওয়ার সময়’। অর্থাৎ, বাড়ি যাওয়ার সময় হয়েছে। পরের দিন আবার কাজে ফিরতে হবে।” কিন্তু ঘুমের চোটে পুরোটা আর লিখে উঠতে পারেননি। আর ওই অর্ধেক পোস্ট পড়েই শঙ্কিত অনুরাগীরা।
‘শাহেনশাহ’র মুখ থেকে পুরোটা জানার পর স্বস্তি অনুরাগীমহলে। চওড়া হাসি সেটে উপস্থিত প্রত্যেক দর্শকের মুখে। অমিতাভ এখনও রুপালি পর্দায় পুরোদমে কাজ করবেন, জানার পরে খুশির হাওয়া বলিউডেও। সূত্র: আনন্দবাজার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অন র গ
এছাড়াও পড়ুন:
সুপেয় পানি সংকটের স্থায়ী সমাধানের পথ
পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু ব্যবহারযোগ্য পানি পাওয়া এখন বিশ্বের বড় চ্যালেঞ্জ। অক্সফাম পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মানুষ এখনও ব্যবহারযোগ্য ও নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশে এখনও ৪১ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি সুবিধার বাইরে। কাজের কারণে আমাকে বরাবরই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেতে হয়। বাংলাদেশের এ অঞ্চলের উপকূল, যেগুলো এক সময় প্রকৃতির দানে পরিপূর্ণ ছিল; সেই সঙ্গে ছিল যথেষ্ট পরিমাণে সুপেয় পানির আধার, সেখানে এখন সুপেয় পানির সংকট। এক সময় যেই পানি ছিল ওই অঞ্চলের মানুষের প্রধান সম্বল; সংকট ছিল স্বল্পস্থায়ী; কালের ধারাবাহিকতায় এখন তা নিয়মিত এবং তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ সমস্যার কারণে দুর্যোগপ্রবণ মোট ১৯টি জেলার কোটি মানুষের জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়েছে।
সুস্থভাবে জীবন যাপনে একজন মানুষের প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে শহরাঞ্চলের মানুষের কাছে দৈনিক ৩-৪ লিটার পানি পাওয়া তেমন বিষয় নয়। একটি কল ঘুরিয়ে বা পরিশোধিত পানির বোতল খুললেই তাদের প্রয়োজন মিটে যায়। কিন্তু উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য এই পানি সংগ্রহ করতে গড়ে ১-২ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়। সেই সঙ্গে প্রয়োজন হয় আর্থিক বিনিয়োগের।
এই সংকটের একক কারণ হিসেবে অনেকে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করলেও নানা স্থানীয় কারণও এর সঙ্গে যুক্ত, চিড়িং চাষের আধিপত্য যার অন্যতম। চিংড়ি চাষ একদিকে জমির উর্বরতা নষ্ট করছে, অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির লবণাক্ততা বাড়াচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত কোনো নেতৃত্ব না থাকায় পানীয় জলের সমস্যা আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তঃসীমান্ত নদী গঙ্গা (পদ্মা) থেকে পানির প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে। এর শাখা নদী গড়াই থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের নদীগুলোতে পানি প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুপেয় পানির এই সংকট সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে নারীদের ওপর। উপকূলীয় অঞ্চলে নারীরাই সাধারণত পরিবারের জন্য পানি সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে পানি সংগ্রহের জন্য পথ পাড়ি দেওয়া তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে। অনেক সময় নিরাপদ পানির অভাবে নারীরা প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পান করতে পারছেন না, যা তাদের স্বাস্থ্য বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
এ সমস্যার সমাধান কী?
এটা বলার আগে আমি এ অঞ্চলের খাবার পানির উৎসগুলোকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করতে চাই। ভূগর্ভস্থ পানি, ভূপৃষ্ঠের পানি এবং বৃষ্টির পানি। তবে উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভূপৃষ্ঠের পানির প্রধান উৎস হিসেবে পুকুরের পানিকেই ধরা হয়। সমস্যা সমাধানে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে এই পুকুর। পুকুরের পানিকে এক বিশেষ পরিশোধন ব্যবস্থায় (পিএসএফ) পরিশোধিত করে দৈনন্দিন খাবার ও রান্নার পানি হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। এ ছাড়া যেসব এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণের পরিমাণ কম সেসব এলাকায় বাড়িভিত্তিক বায়োস্যান্ড ফিল্টার (বিএসএফ) ব্যবহার করেও উপকূলীয় অঞ্চলের এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ পানির আওতায় আনা সম্ভব।
নম্বই দশকের শেষের দিকে এ অঞ্চলের পানি ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করে রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং (আরডব্লিউএইচ), যেখানে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সঞ্চয় করা হয়। এখানকার অনেক বাসাবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয়ে এই প্রক্রিয়ায় পানি সংগ্রহ করা হয়, যা শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর খাবার পানির
চাহিদা অনেকাংশেই মেটাতে সক্ষম। এ ছাড়া বর্তমানে পানীয় জল পরিশোধনে আধুনিক কিন্তু ব্যয়বহুল রিভার্স অসমোসিস ব্যবস্থার প্রচলন উল্লেখযোগ্য হারে দেখা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, পানীয় জল বিশুদ্ধকরণে ব্যবহারের এই পদ্ধতিটি পানি বিশুদ্ধকরণে কার্যকরী হলেও পরিশোধনকালে এর থেকে উৎপাদিত ময়লা পানি (গ্রে ওয়াটার) নিয়ে বিভিন্ন মহলে আপত্তি রয়েছে।
উপকূলীয় এই বিশাল জনগোষ্ঠীর সংকটে সরকার, দাতা সংস্থাসহ দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। তবে সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টার অভাবে মৌলিক এই সমাধানের স্থায়ী পথ এখনও অধরা থেকে গেছে। এই মুহূর্তে সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া কোনোভাবেই সুপেয় পানির এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে পানি ব্যবস্থাপনায় নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য টেকসই সমাধান বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবি।
দেবরাজ দে: উন্নয়নকর্মী