পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কালাইয়া বন্দর হাটের এক বছরের ইজারা মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সঙ্গে ২৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করলে ইজারা মূল্য দাঁড়াচ্ছে পৌনে ৫ কোটি টাকার মতো, যা গত দুই বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।

সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরের জন্য হাটের ইজারাদার নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী ইকবাল আহম্মেদ মিয়া। তাঁর বাবা আব্দুল হালিম মিয়া স্থানীয় কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান।

এর আগে ২০২৪ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত কালাইয়া হাটের ইজারা মূল্য ছিল ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তার আগের বছর ছিল ১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ইজারাদার ছিলেন কালাইয়া ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে মনির হোসেন মোল্লা।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কালাইয়া হাট ঘিরে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। হাট দখল করে খাজনা আদায়কে কেন্দ্র করে বিরোধে জড়ায় বিএনপির দুটি পক্ষ। একপর্যায়ে আগের ইজারাদারের কাছ থেকে কালাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জসিম আহম্মেদ (তুহিন) কিনে নিয়ে খাজনা উত্তোলনের দায়িত্ব নেন। এ নিয়ে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আগামী এক বছরের জন্য ইজারাদার নির্বাচিত হওয়া ইকবাল আহম্মেদ বর্তমানে খাজনা উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা বিএনপির নেতা জসিম আহম্মেদের বড় ভাই।

গতকাল বৃহস্পতিবার হাটের ইজারাকে কেন্দ্র করে বিএনপির তিন পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সকাল থেকেই উপজেলা পরিষদ এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকায় বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এবার মোট পাঁচ ব্যক্তি ইজারার দরপত্রে অংশ নেন। সবাই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থক।

২০০ বছরের বেশি পুরোনো কালাইয়া হাটে প্রতি সোমবার গবাদিপশু ও ধানের বিশাল হাট বসে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ গবাদিপশু কেনাবেচা ও ধান কিনতে হাটে আসেন। হাট হিসেবে পরিচিত হলেও প্রতিদিন বাজার বসে। তাজা মাছ ও সবজি পাওয়া যায়। কালাইয়া বন্দর নামেও চেনে মানুষ। হাট এলাকায় একাধিক ব্যাংক, নৌ পুলিশ ফাঁড়ি আছে। এ ছাড়া দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি ডিগ্রি কলেজ, দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি কামিল মাদ্রাসা আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আগের এক ইজারাদার বলেন, যে পরিমাণ ইজারা মূল্য তাতে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে যিনি ইজারা নিয়েছেন, তাঁদের পরিবার খুবই বিত্তশালী। তাঁরা লাভের আশা না করে ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করলে অন্তত লোকসান হবে না।

নতুন ইজারাদারের এক স্বজনের ভাষ্য, বর্তমান প্রেক্ষাপটে হাটটির ইজারাদার অন্য কেউ হলে তাঁরা সমাজে ছোট হতেন। পরিবারের সম্মানের দিকে তাকিয়ে বেশি দামে হাটের ইজারা নিয়েছেন। কোনো লাভের আশায় না।

মহাজনপট্টি মুদি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো.

নূরুল আমিন বলেন, ইজারা মূল্য বেশি হয়েছে। তবে যিনি ইজারাদার, তিনি ও তাঁর পরিবার কখনো মানুষের ক্ষতির কারণ হননি। আশা করছেন, কালাইয়া হাটের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে হাটে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে বর্তমান ইজারাদার সহনশীল আচরণ করবেন। তাহলে হাটের পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর থাকবে।

ইজারাদার ইকবাল আহম্মেদ মিয়া বলেন, তাঁর ও তাঁদের পরিবারের প্রতি মানুষের যে আস্থা, তা ম্লান হয়ে যাক, এমন কোনো কাজ তিনি করবেন না। ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা হলেন হাটবাজারের প্রাণ। তাঁদের সঙ্গে অবশ্যই ভালো আচরণ করা হবে। কোনো অবস্থাতেই জুলুম করা হবে না।

বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সর্বোচ্চ দরদাতাকে হাটের ইজারাদার নির্বাচিত করা হয়েছে। আশা করছেন, সরকারি নিয়ম মেনেই খাজনা উত্তোলন করা হবে। এর ব্যত্যয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। চাহিদা অনুযায়ী হাটের উন্নয়ন করা হবে বলে তিনি জানান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ট র ইজ র র ইজ র দ র ল আহম ম দ ব এনপ র ব যবস য় র পর ব পর ব র উপজ ল বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

গাড়ির শব্দে বিরক্ত হয় পাখিরা

সাতসকালে বারান্দায় এক কাপ চা নিয়ে দাঁড়ালে দারুণ এক শহরের দেখা মেলে। একটু সময় বাড়লেই দূর থেকে বাড়তে থাকে ট্রাফিকের শব্দ আর গাড়ির হর্ন। কখনো কখনো গাড়ির শব্দে আমাদের মেজাজ বিগড়ে যায়। এমন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার ঘটনা পাখিদের মধ্যেও দেখা যায় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বিশ্বের নানা প্রান্তে পাখিরা শহরায়ণের কারণে বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছে। নতুন এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, রাস্তাঘাটের গাড়ির অতিরিক্ত শব্দের কারণে পাখিরা বিরক্ত হয়। বিজ্ঞানীরা গ্যালাপাগোসের কিছু পাখির ওপর এই পরীক্ষা চালিয়ে গাড়ির শব্দের প্রভাব জানার চেষ্টা করেছেন। রাস্তাঘাটের গাড়ির শব্দের কারণে অনেক পাখিকে আগ্রাসী আচরণ করতে দেখা যায়। এই রাগের কারণে প্রায়ই কিছু পাখি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। গাড়ির শব্দে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় পাখিদের।

যুক্তরাজ্যের অ্যাঙ্গেলিয়া রাস্কিন ইউনিভার্সিটি (এআরইউ) ও অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনরাড লরেঞ্জ রিসার্চ সেন্টারের গবেষকেরা পাখির এই অদ্ভুত রাগের আচরণ সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেছেন। পাখিদের আচরণের তথ্য অ্যানিমাল বিহেভিয়ার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা গান গাওয়া পাখি ইয়েলো ওয়ার্বলারদের ওপর দৃষ্টি দেন। গ্যালাপাগোসে এদের বাস অনেক। এই প্রজাতির উপস্থিতির কারণে গ্যালাপাগোসকে একটি প্রাকৃতিক জীবন্ত পরীক্ষাগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গবেষণার জন্য ফ্লোরিয়ানা ও সান্তা ক্রুজ দ্বীপের ওয়ার্বলারদের আবাসের আশপাশে নজর রাখেন। এসব পাখি বাস করে এমন ৩৮টি স্থানে একটি স্পিকার থেকে রেকর্ড করা গাড়ির শব্দ অনবরত বাড়াতে থাকেন। এসব পাখির বাস নিকটতম রাস্তার সংলগ্ন ছিল বা রাস্তা থেকে কমপক্ষে ১০০ মিটার দূরে ছিল।

গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, রাস্তাসংলগ্ন অঞ্চলে বসবাসকারী পাখিরা নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। গাড়ির শব্দ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের আগ্রাসন স্তর বেড়ে যায়। আবার দেখা যায়, যেসব পাখি রাস্তা থেকে দূরে থাকে, তাদের রাগের মাত্রা কম। বিজ্ঞানী কাগলার আকচে বলেন, পাখিরা নিজের প্রতিরক্ষা হিসেবে গানকে সংকেত হিসেবে ব্যবহার করে। গাড়ির শব্দ পাখির সংকেতকে হস্তক্ষেপ করে। পাখিরা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় গাড়ির শব্দে, আর এতেই রেগে যায় পাখিরা।

গাড়ি শব্দ শুনে রাস্তার ধারের পাখিরা তাদের গানের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়িয়ে দেয়। গাড়ির শব্দের চেয়ে নিজেদের শব্দ বেশি জোরে শোনাতে চায় পাখিরা। গাড়ির বিকট শব্দের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না বলেই শারীরিকভাবে আক্রমণাত্মক ভাব প্রদর্শন করে পাখিরা।

সূত্র: এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গরুরা কি পরস্পরের সঙ্গে কথা বলতে পারে
  • গাড়ির শব্দে বিরক্ত হয় পাখিরা