হাতিরঝিলে অস্ত্র ঠেকিয়ে মোটরবাইক ছিনতাইয়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি নিয়ে আলোচনার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, সেটি আসলে ছিনতাই নয়, একটি শুটিংয়ের দৃশ্য।

ঢাকায় ছিনতাই নিয়ে ডামাডোলের মধ্যে প্রকাশ্যে আসা ভিডিওটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, দিনদুপুরে হাতিরঝিলে ওভারপাসের নিচে ‘অস্ত্র ঠেকিয়ে’ চার যুবক মোটরসাইকেল ছিনতাই করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, এটি একটি সতর্কতামূলক ভিডিও তৈরির শুটিংয়ের দৃশ্য।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে হাতিরঝিলের ২ নম্বর ব্রিজের মহানগর পূর্ব পাশের এলাকায় দৃশ্যটি ধারণ করা হয়। তবে শুটিংয়ের দৃশ্যের অংশবিশেষ ফেসবুকে প্রকাশের পর বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

বিভ্রান্তি এড়াতে কনটেন্ট ক্রিয়েটর সাকিব রাজ পুরো ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ভিডিওতে শুটিংয়ের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সাকিব রাজ লিখেছেন, ‘কিছু মানুষ এই ভিডিওটা অল্প একটু ক্রপ (কর্তন) করে ছেড়ে সেটা ভাইরাল করে দিয়েছে। এখন যেভাবে ছিনতাই–ডাকাতি হচ্ছে, তা নিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করার জন্য ভিডিওটি বানিয়েছে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ লিখেছে, ‘পূর্ণাঙ্গ ও প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে না জেনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের খণ্ডিত ভিডিও বা সংবাদ প্রচারে জনমনে শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে।’

প্রকৃত ঘটনা যাচাই না করে খণ্ডিত ভিডিও প্রচারে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

আরও পড়ুনভাইরাল ছবিটি শাহরুখ খানের? নাকি অন্য কারও০৩ জুন ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আইডিইবিতে কারিগরি শিক্ষার্থীদের সম্মেলন বৃহস্পতিবার

ছয় দফা দাবি আদায়ে আবার সক্রিয় হচ্ছেন কারিগরির শিক্ষার্থীরা; কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থেকে ঢাকায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-আইডিইবিতে প্রতিনিধি সম্মেলন ডাকা হয়েছে। 

‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’ নামে সমন্বিত প্ল্যাটফর্মের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মো. মাসফিক ইসলাম বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাত ৯টায় সম্মেলনে আয়োজনের বিষয়ে রাইজিংবিডি ডটকমকে তথ্য দিয়েছেন। 

তিনি বলেছেন, বৃহস্পতিবার সারা দেশের পলিটেকনিকের প্রতিনিধিরা সেখানে অংশ নিচ্ছেন। 

আরো পড়ুন:

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে কুয়েটে কফিন মিছিল

গণিত পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় এসএসসির কেন্দ্র ভাঙচুর

মাসফিক ইসলাম বলেন, “আগামীকাল (২৪ এপ্রিল) সারা দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধি নিয়ে আইডিইবি ভবনে দিনব্যাপী সম্মেলন হবে।”

এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ছয় দাবিতে টানা কয়েক দিন আন্দোলন চালিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া কারিগরির শিক্ষার্থীরা আবার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ফিরছেন।

সারা দেশে আন্দোলন স্থগিতের যে ঘোষণা ছিল, বুধবারই কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, আন্দোলন সাময়িক স্থগিতের নির্দেশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্মতিক্রমে প্রত্যাহার করা হলো।

কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের অস্থায়ী সেল সম্পাদক মো. সাব্বির আহমেদের সই করা বিজ্ঞপ্তিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে, যেখানে পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনা ও কর্মসূচি প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) নিশ্চিত করে জানানো হবে। এরই মধ্যে অনেক বিভাগীয় প্রতিনিধি ঢাকায় উপস্থিত হয়েছেন। বাকি বিভাগীয় প্রতিনিধিদের দ্রুত ঢাকায় উপস্থিত হওয়ার আহ্বান করা হলো। ওই বিজ্ঞপ্তির পর রাতে তাদের সম্মেলনের স্থান ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরো পরিষ্কার বার্তা পাওয়া গেল।

পূর্বাপর

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) অন্তর্বর্তীকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী কাজী সাখাওয়াত হোসেন কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সাময়িক স্থগিতের তথ্য দিয়েছিলেন।

সামগ্রিক প্রেক্ষাপট নিয়ে সোমবার (২১ এপ্রিল) আইডিইবির আহ্বায়ক প্রকৌকশলী মো. কবীর হোসেন ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী কাজী সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ. ম. কবীরুল ইসলামের সঙ্গে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের যৌথ আলোচনা সভা হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মো. হাবিবুর রহমান, লিমন হাসান, মাশরাফি বিন মাফি, জুবায়ের পাটোয়ারী, রহমত উল আলম শিহাব, আশরাফুল ইসলাম মিশান, রমজান আলী, সাব্বির আহমেদ, শিহাবুল ইসলাম শিহাব।

আলোচনায় শিক্ষা সচিব বলেছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতি বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে আদালত রায়টি স্থগিত করেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ননটেক অধ্যক্ষকে তার পদ থেকে ইতোমধ্যে বদলি করা হয়েছে।

সচিব ড. খ. ম. কবীরুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে আইডিইবি ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করে শিগগিরই উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হবে এবং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সকল দাবি পূরণ করা হবে।”

সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা এলেও আবার কর্মসূচি দিতে চলেছে কারিগরি শিক্ষার্থীরা। ছয় দফা দাবি আদায়ে কাফন মিছিল পর্যন্ত করেছেন তারা।

কারিগরি শিক্ষার্থীদের ছয় দাবি

জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন ও মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে।

২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (১০ম গ্রেড) পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এ পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে ‘কারিগরি ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়‘ নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা/রায়হান/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ