বকেয়া বেতনের দাবিতে কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে অন্তত ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন চালক ও যাত্রীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলার পশ্চিম বেলাশহর এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন একদল শ্রমিক। তাঁরা সবাই বেলাশহর এলাকায় অবস্থিত ‘ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট’ নামে একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত। বেলা ১১টার পর স্থানীয় প্রশাসন এবং উপজেলা বিএনপির নেতা–কর্মীদের হস্তক্ষেপে অবরোধ প্রত্যাহার করে মহাসড়ক থেকে সরে যান আন্দোলনকারী।

শ্রমিকেরা সরে গেলে মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়। তবে অবরোধের কারণে যানজট লেগে যাওয়ায় বেলা দুইটা পর্যন্ত ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করে। বেলা দুইটার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এর আগেও বিভিন্ন সময় ডেনিম প্রসেসিং প্লান্টের শ্রমিকেরা বকেয়া বেতনের জন্য মহাসড়ক অবরোধ করেছিল। কারখানার একাধিক শ্রমিক জানান, দুই মাস ধরে তাঁদের বেতন দিচ্ছে না মালিক পক্ষ। এ মাসে তাঁদের মাত্র ছয় হাজার টাকা করে বেতনের অংশ দেওয়া হয়। এতে তাঁদের ঘর ভাড়া দেওয়া দূরের কথা, খাবারের টাকাও হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তাঁরা মহাসড়কে নেমেছেন।

এদিকে শ্রমিকদের অবরোধের কারণে সৃষ্ট যানজট নিরসনে পুলিশের পাশাপাশি কাজ শুরু করেন বিএনপি নেতা–কর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে চান্দিনা উপজেলা বিএনপির সম্মেলন রয়েছে। মহাসড়ক হয়ে সভাস্থলে আসা নির্বিঘ্ন করতে নেতা–কর্মীরা যানজট নিরসনে পুলিশকে সহায়তা করেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক মো.

আতিকুল আলম। তিনি বলেন, মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা মহাসড়ক থেকে সরে যান।

এ বিষয়ে ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট নামের পোশাক কারখানার কেউই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

কুমিল্লা থেকে ঢাকাগামী একটি পরিবহনের বাসচালক কবির হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছরই কয়েকবার এভাবে ওই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে। আজকেও একই ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায় করা হচ্ছে। আজকেও কয়েক ঘণ্টা দুর্ভোগে ছিলাম। আমরা এমন সমস্যার সমাধান চাই।’

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে যানজট নিরসনের চেষ্টা করা হয়। পরে শ্রমিকদের কথা শুনে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেতনভাতা পরিশোধের আশ্বাস দিলে তাঁরা মহাসড়ক থেকে সরে দাঁড়ান। সোয়া এক ঘণ্টার বেশি অবরোধের কারণে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। দুপুর পরে যানচলাচল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য নজট ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

লবণ মাঠ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দুপক্ষে সংঘর্ষ-গোলাগুলি, আহত ৩৫

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে লবণ মাঠ নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে সংঘর্ষ ও গোলগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ৩৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ও গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ ফোরকান, মোহাম্মদ মাহিম, আজিজুর রহমান ও নুর হোসেনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং মোহাম্মদ দেলোয়ার, শাহজাহান, মোহাম্মদ রুবেল, জমির উদ্দীন ও আবদুল করিমকে (৪৫) বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার উপকূলীয় সরল ইউনিয়নের উত্তর সরল নতুন বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে উত্তর সরল এলাকার জাফর আহমদের ছেলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন লবণ মাঠ থেকে ফিরছিলেন। নতুন বাজার এলাকায় পৌঁছালে আমানুল্লাহ ও কবিরের নেতৃত্বে তাকে আটক করে মারধর করা হয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে দেলোয়ারের লোকজন তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে আমানুল্লাহ ও কবিরের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এ সময় দেলোয়ারের লোকজন প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তাদের ওপর গুলি চালানো হয় বলে জানান আহতরা।

গুলিবিদ্ধ ও আহতরা হলেন- মৃত জালেকের ছেলে ফোরকান (৩০), বদি আলমের ছেলে মোহাম্মদ মাহিম (১৮), মৃত নুরুল আমিনের ছেলে আজিজুর রহমান (৫০), মৃত আমিরুজ্জামানের ছেলে নুর হোসেন (৩৭), জাফর আহমদের ছেলে দেলোয়ার (৩৮), মোহাম্মদ শাকিল (২১), মোহাম্মদ রাকিব (২০), লোকমান (২৭), সৈয়দ নুর (৪৫), নয়ন (১৯), শাহাব উদ্দীন (৩২), মোহাম্মদ ইউনুস (৩২), মোহাম্মদ পারভেজ (২৩), মোহাম্মদ রাশেদ (২৩), মোহাম্মদ হাবিব (২৪), আবদুল আলিম (৪৫), মোহাম্মদ তৈয়ব (৫২), আবু তালেব (৬০) ও মোহাম্মদ ফরিদ (৫২)।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ মাহিম বলেন, ‘আটক ও মারধরের খবর পেয়ে আমরা দেলোয়ারকে উদ্ধার করতে যায়। তখন প্রতিপক্ষ আমাদের ওপর হামলা ও গুলি চালায়। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম ও আবদুল্লাহ কবির লিটনের অনুসারী।’

হামলার বিষয়ে কবির হোসেন বলেন, ‘তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদেরও লোকজন আহত হয়েছেন। তবে তাদের ভয়ে আমরা আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি।’

এদিকে হামলা ও গুলিবর্ষণের পর ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

বাঁশখালী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘লবণ মাঠ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। আমরা বারবার উভয়পক্ষকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ