শচীন টেন্ডুলকার আর বিরাট কোহলির মধ্যে কে সেরা—এই আলোচনা নতুন নয়। অর্জনে, কীর্তিতে কোথাও টেন্ডুলকার এগিয়ে, কোথাও–বা কোহলি। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কোহলি পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর দুজনের মধ্যে কে সেরা সেই আলোচনা নতুন করে গতি পেয়েছে।

তবে দুই কিংবদন্তীর মধ্যে পার্থক্য করতে রাজি নন সুনীল গাভাস্কার। ভারতের এই সাবেক ক্রিকেটার মনে করেন টেন্ডুলকার ও কোহলি নিজেদের জায়গায় আলাদা। ভিন্ন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের মধ্যে তুলনা টানাকে ‘উপমহাদেশীয় দুর্বলতা’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

‘ড্রেসিংরুম শো’তে অংশ নিয়ে গাভাস্কার যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘আমি কখনোই প্রজন্মের মধ্যে তুলনা করতে চাই না। কারণ, খেলার কন্ডিশন ভিন্ন থাকে, পিচ ভিন্ন থাকে, প্রতিপক্ষ ভিন্ন থাকে। যে কারণে ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের মধ্যে তুলনা করা খুবই কঠিন। আমার মতে তুলনা করাটা উপমহাদেশের দুর্বলতা।’

আমরা সব সময়ই খেলোয়াড়দের মধ্যে তুলনা করি। কিন্তু আপনারা কি কখনো এমন শুনে থাকেন যে গ্রেগ চ্যাপেলের চেয়ে রিকি পন্টিং ভালো।সুনীল গাভাস্কার

তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১০০ সেঞ্চুরি করা টেন্ডুলকারের সঙ্গে কোহলির তুলনা টানা হয়ে থাকে, বিশেষভাবে ওয়ানডের জন্য। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো টেন্ডুলকার ৪৫২ ইনিংসে করেছেন ১৮৪২৬ রান, বিপরীতে ২৮৭ ইনিংসে ১৪০৮৫ রান হয়ে গেছে কোহলির। সেঞ্চুরিতে অবশ্য কোহলি এখনই এগিয়ে। টেন্ডুলকারের ৪৯ ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে কোহলির এরই মধ্যে ৫১ সেঞ্চুরি হয়ে গেছে।

আরও পড়ুনসুনীল গাভাস্কার হয়ে দেখতে পারেন সাকিব–সৌম্য২৬ অক্টোবর ২০২১

তবে টেন্ডুলকার-কোহলির মধ্যে কে সেরা, এই আলোচনা উঠলেও উপমহাদেশের বাইরে এমন কিছু হয় না বলে মনে করেন গাভাস্কার। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ১০ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছানো এই ব্যাটসম্যান উদাহরণ টেনে বলেন, ‘আমরা সব সময়ই খেলোয়াড়দের মধ্যে তুলনা করি। কিন্তু আপনারা কি কখনো এমন শুনে থাকেন যে গ্রেগ চ্যাপেলের চেয়ে রিকি পন্টিং ভালো। কেউই এমন তুলনা করে না। যারা বর্তমান ক্রিকেটার, তাদের বর্তমান হিসেবে বিবেচনা করুন। তুলনা করবেন না।’

আরও পড়ুনচ্যাম্পিয়নস ট্রফি: গ্যালারিতে ইফতার পাবেন দর্শক৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক হল র

এছাড়াও পড়ুন:

শুরুর ‘জট’ খুলছেই না

পেসার নায়ুচির লেন্থ বলে আত্মঘাতি শট খেলে স্লিপে ক্যাচ দিলেন সাদমান ইসলাম। বেনেট সামনে ঝাঁপিয়ে বল তালুবন্দি করলেন অতি সহজে।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্টের নবম ওভার চলছিল। বলের উজ্জ্বলতা একটুও হারায়নি। উইকেট থেকে জিম্বাবুয়ের দুই পেসার তেমন কোনো সাহায্যও পাচ্ছিলেন না। হালকা সিমের মুভমেন্ট ছিল যেটা নতুন বলে স্বাভাবিকভাবেই থাকে। উইকেটের জন্য ব্যাটসম্যানদের ‘ভুলের’ অপেক্ষায় অতিথিরা।

সাদমান নিজের উইকেট ছুঁড়ে অতিথিদের মুখে ফুটিয়েছেন হাসি। সামদানের (১২) আউটে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। এক ওভার পর সঙ্গী মাহমুদুল হাসান জয়ও পথ হারালেন। একই পেসারের বলে ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে আলগা শটে। তার রান ১৪। ৩২ রানে বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাজঘরে।

আরো পড়ুন:

ক্যাচ প্র্যাকটিস করে আউট শান্ত

নাহিদকে নিয়ে উইলিয়ামসের মন্তব্যে শান্তর ‘খোঁচা’

শুরুর লড়াইয়ে আবার ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে মুমিনুল ও শান্ত ৬৬ রান যোগ করেন। কিন্তু বাংলাদেশের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইনিংসের শুরুতে রান না পাওয়া। যেই ‘জট’ খুলছেই না।

টেস্ট ক্রিকেটে জুটির বিকল্প নেই। ভালো রান, বড় রান করতে হলে জুটি গড়তেই হবে। সাদা পোশাকে সঙ্গ দিয়ে ব্যাটিং করতে না পারলে, দলের হাল ধরতে না পারলে লড়াই করা যায় না। তাতে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অধিংকাশ সময়ই। একক নৈপূণ্যে এই ফরম্যাটে লড়াই অধরাই থাকে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ২৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে তোলার কথা ফুটে উঠে।

অথচ মাঠে নেমেই শুরুতে বিপর্যয়ে পড়তে হয়। নতুন বলে উইকেট হারানো নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা। এই টেস্টে মাঠে নামার আগে ৩১ ইনিংসে ওপেনিংয়ে কোনো সেঞ্চুরির জুটি ছিল না। সিলেটে প্রথম ইনিংসে সংখ্যাটি আরো বেড়েছে। ২০২২ সালে ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসান ১২৪ রানের জুটি গড়েছিলেন। এরপর পাঁচটি জুটি ইনিংস উদ্বোধনে মাঠে নেমেছিল। কিন্তু কোনো জুটিই দলের রান তিন অঙ্কে নিয়ে যেতে পারেননি। ভাবনার সবচেয়ে বড় জায়গা হলো, ৩১ ইনিংসের ১১টিতেই দুই অঙ্কে যেতে পারেনি। ফিফটি রানের জুটি কেবল ২টি। নতুন বলে পেসারদের বিপক্ষে ওপেনারদের যে দূর্বলতা তা ফুটে উঠেছে এসব হতশ্রী পরিসংখ্যানেই।

অবশ‌্য ওপেনিং জুটি বাংলাদেশের জন‌্য সব সময়ই মাথা ব‌্যথার কারণ ছিল। ১৫১ টেস্ট খেলা বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে সেঞ্চুরি এসেছে কেবল নয়টি। যেখানে দেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল ছিলেন সাতটিতে। তার সঙ্গে ইমরুল কায়েস চারটিতে, সৌম‌্য, মাহমুদুল হাসান জয় ও জুনায়েদ সিদ্দিকী একটি করে জুটিতে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন। এছাড়া জাভেদ ওমর ও নাফিস ইকবাল এবং নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসান জুটি একটি করে সেঞ্চুরির জুটি পেয়েছেন।

টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে তোলার যে প্রত‌্যয় ব‌্যক্ত করেছেন অধিনায়ক শান্ত সেজন‌্য লড়াই শুরু হবে ইনিংসের শুরু থেকে। অথচ ওপেনাররা এখনো পায়ের নিচের মাটি শক্ত করতে পারছেন না। পারফরম‌্যান্সে নেই জোর। নিবেদনে প্রবল ঘাটতি। তাতে ভুগছে দলও। জাকির, সামদান, মাহমুদুল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টেস্টে ওপেনিং করছেন। আশানুরূপ পারফরম‌্যান্স নেই তাদের ব‌্যাটে।

মাহমুদুল ১৭ টেস্টে ৩২ ইনিংসে ৭২৮ রান করেছেন ২২.৭৫ গড়ে। সাদমান ২০ টেস্টে ৩৯ ইনিংসে ৯২৩ রান করেছেন ২৪.৯৪ গড়ে। জাকির ১৩ টেস্টে ২৬ ইনিংসে ৫৯৩ রান করেছেন ২৩.৭২ গড়ে। তিনজনই একেবারে কাছাকাছি পর্যায়ের। সামনে এগিয়ে যেতে বিকল্প খুঁজতে হবে কিনা সেই প্রশ্নটাও উঠছে সিলেটে প্রথম ইনিংসে হতশ্রী আউটের পরপরই।

সিলেট/ইয়াসিন/নাভিদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শুরুর ‘জট’ খুলছেই না