ইমাম নিয়োগকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ১০
Published: 28th, February 2025 GMT
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে মসজিদের ইমাম নিয়োগকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জুম্মার নামাজের পর ভিক্টোরিয়া কলেজ অনার্স শাখায় এই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি কলেজের ডিগ্রি শাখার মসজিদে তাবলিগের বিবদমান দুই পক্ষ মাওলানা সাদ ও জুবায়েরের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার জেরে গত ২০ জানুয়ারি মসজিদের সাপ্তাহিক তালিম সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দেন কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো.
পরে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিনের মতবিরোধে গত ২১ জানুয়ারি সকাল ১১টা ২০ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে কলেজের নজরুল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ধর্মপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা।
এরপরই ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ইমাম মো. মারুফ বিল্লাহকে নানান অভিযোগ তুলে অব্যাহতি দেয় কলেজ প্রশাসন। কিন্তু এলাকাবাসী ইমামকে পুনর্বহাল চেয়ে দাবি তোলে। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
ইমামকে চাকরিচ্যুত করার পর থেকেই কলেজে সংঘর্ষ চলে আসছে। প্রতি শুক্রবার নামাজের আগে ইমামকে বহালের দাবি করে আসছে স্থানীয় একটি পক্ষ। এসবের জের ধরে প্রতি শুক্রবারই শিক্ষকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে স্থানীয়দের ও কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশের।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভিক্টোরিয়া কলেজ মসজিদে নামাজ পড়াতে আসেন ভিক্টোরিয়া কলেজ নিউ হোস্টেল মসজিদের ইমাম। কিন্তু, স্থানীয়রা এটা মেনে নিতে পারেনি। এতে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি ও সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় দুই পক্ষেরই অন্তত ১০ জন আহত হন।
এসময় ভিক্টোরিয়া কলেজ অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঁইয়ার গায়ে হাত তোলাসহ ভিক্টোরিয়া কলেজ হলের একাধিক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, হামলায় জিহাদ নামের এক কিশোরকে এলোপাথাড়ি কিল, লাথি দিয়ে আহত করেছেন ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
নজরুল হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তারা স্বাভাবিকভাবেই শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়তে যান। নামাজের শুরুতে প্রিন্সিপাল স্যার নিউ হোস্টেল মসজিদের ইমাম সাহেব নামাজ পড়াবেন এ কথা মাইকে ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে তা নিয়ে এলাকাবাসীরা হট্টগোল শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা প্রিন্সিপালের গায়ে হাত তুলে বসেন। শিক্ষার্থীরা এটা বাধা দিতে গেলে তাদের গায়েও হাত তোলে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই ভিক্টোরিয়া কলেজ মসজিদে নামাজ পড়েন। এখানকার ইমাম সাহেব মারুফ বিল্লাহ অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রিন্সিপাল বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে উনাকে ইমামের পদ থেকে অব্যাহতি দেন। আজকে আমরা নামাজ পড়তে গিয়ে নতুন ইমামের পিছনে নামাজ পড়তে অপারগতা জানাই। তখন কলেজের হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাদের উপর হামলে পড়ে। জিহাদ নামে আমাদের এক ছোট ভাইকে মসজিদের মাঝখানে রেখেই এলোপাতাড়ি লাথি দিতে থাকে তারা। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অতি দ্রুত আমাদের ইমাম সাহেবকে মসজিদে পুনর্বহাল চাই।”
এ বিষয়ে কলেজ শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক গাজী মুহাম্মদ গোলাম সোহরাব হাসান বলেন, ‘‘হামলায় অধ্যক্ষসহ শিক্ষকরা আহত হয়েছেন। আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। মূলত ইমামকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটে।”
ভিক্টোরিয়া কলেজ অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঁইয়া বলেন, “আমরা সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়েই একাডেমিক কাউন্সিলের সাথে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে, তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।”
কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, “ঘটনা জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছি। দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”
ঢাকা/রুবেল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক ব স মসজ দ র স ঘর ষ আম দ র কল জ র র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
জেনে নিন, জান্নাতি ২০ সাহাবির নাম
ইসলামের ইতিহাসে সাহাবিদের অবদান অতুলনীয়। তাঁরা ছিলেন রাসুল (সা.)-এর সবচেয়ে নিকটতম সঙ্গী, যাঁরা ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় অসাধারণ ত্যাগ ও নিষ্ঠা প্রদর্শন করেছিলেন।
তাঁদের মধ্যে কিছু সাহাবি জীবদ্দশায়ই রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। এই সাহাবিদের মধ্যে ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ বা জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন সাহাবির নাম সহিহ হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে।
এ ছাড়া বেশ কয়েকজন সাহাবিকে আল্লাহর রাসুল বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে জান্নাতি হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
আশারায়ে মুবাশশারা: জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ সাহাবি‘আশারায়ে মুবাশশারা’ অর্থ সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন। এই ১০ জন সাহাবি জীবদ্দশায় রাসুল (সা.) থেকে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন।
একটি হাদিসে সাঈদ ইবনে জায়িদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘১০ জন জান্নাতে যাবে: আবু বকর জান্নাতি, ওমর জান্নাতি, উসমান জান্নাতি, আলী জান্নাতি, তালহা জান্নাতি, জুবাইর ইবনুল আওয়াম জান্নাতি, আবদুর রহমান ইবনে আউফ জান্নাতি, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস জান্নাতি, সাঈদ ইবনে জায়িদ জান্নাতি এবং আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ জান্নাতি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৬৮০)
আরও পড়ুনতিরন্দাজ এক সাহাবী১৩ নভেম্বর ২০২৩এই ১০ সাহাবিকে ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় হলো—
১. আবু বকর আস-সিদ্দিক (রা.): ইসলামের প্রথম খলিফা, রাসুল (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী পুরুষ।
২. ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.): দ্বিতীয় খলিফা, যিনি ইসলামি রাষ্ট্রের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
৩. উসমান ইবনে আফফান (রা.): তৃতীয় খলিফা, যিনি কোরআনের সংকলন ও প্রমিতকরণে অবদান রাখেন।
৪. আলী ইবনে আবু তালিব (রা.): চতুর্থ খলিফা, রাসুল (সা.)-এর চাচাতো ভাই ও জামাতা।
৫. তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রা.): প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারী ও বদর যুদ্ধের বীর।
৬. জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.): রাসুল (সা.)-এর চাচাতো ভাই ও বীর যোদ্ধা।
৭. আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.): প্রথম আটজন ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন, দানশীলতার জন্য বিখ্যাত।
৮. সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.): কাদিসিয়া যুদ্ধের নায়ক এবং প্রথম দিকের মুসলিম।
৯. সাঈদ ইবনে জায়িদ (রা.): প্রথম দিকের মুসলিম ও সাহাবিদের মধ্যে বিশিষ্ট।
১০. আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.): ‘আমিনুল উম্মাহ’ (উম্মাহর বিশ্বস্ত) হিসেবে পরিচিত।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) এবং এক কুস্তিগিরের গল্প১০ এপ্রিল ২০২৫জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত অন্যান্য সাহাবিআরও কয়েকজন সাহাবি জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন, যদিও তাঁদের নাম একত্রে এক হাদিসে উল্লেখ নেই, তবে বিভিন্ন হাদিসে পৃথকভাবে এসেছে। যেমন
১১. খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.): রাসুল (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী। হাদিসে আছে, জিবরাইল (আ.) তাঁকে জান্নাতে মুক্তার প্রাসাদের সুসংবাদ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৮২০)
১২. ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ (রা.): রাসুল (সা.)-এর কন্যা, যিনি জান্নাতি নারীদের সরদার হবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)
১৩. হাসান ইবনে আলী (রা.): রাসুল (সা.)-এর নাতি, জান্নাতের যুবকদের সরদার। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)
১৪. হোসাইন ইবনে আলী (রা.): রাসুল (সা.)-এর নাতি, জান্নাতের যুবকদের সরদার। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)
১৫. আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.): সাবেক ইহুদি পণ্ডিত, যিনি ইসলাম গ্রহণের পর জান্নাতের সুসংবাদ পান। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮১৬)
১৬. উক্কাশা ইবনে মুহসিন (রা.): বদর যুদ্ধের সাহাবি, যিনি জান্নাতের সুসংবাদ পান। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৪)
১৭. জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.): রাসুল (সা.)-এর পালিত পুত্র, যিনি কোরআনে যার নাম উল্লেখ আছে এবং জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৩৭)
১৮. আয়েশা বিনতে আবু বকর (রা.): রাসুল (সা.)-এর স্ত্রী, যিনি জান্নাতি নারীদের অন্যতম। (ফাতহুল বারি, ইবনে হাজার আসকালানি, পৃষ্ঠা: ৭/১২৩, দারুল মা’রিফা, ১৯৮৯)
১৯. আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.): প্রথম দিকের মুসলিম, যিনি জান্নাতের সুসংবাদ পান। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮০০)
২০. বেলাল ইবনে রাবাহ (রা.): মুয়াজ্জিন এবং প্রথম দিকের মুসলিম, যিনি জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪৫৮)
কিছু সূত্রে হজরত হোসাইন ইবনে হারিস (রা.), আউফ ইবনে উসাসা (রা.) বা ইয়াজিদ ইবনে রুকাইশ (রা.)-এর নামও উল্লেখ করা হয়, কিন্তু সহিহ হাদিসে এই নামগুলোর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। (মান বুশশিরা বিল জান্নাহ মিন গাইরিল আশারাহ, পৃষ্ঠা: ৫৫, দারুল উলুম প্রকাশনী, ২০১৫)
আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫