১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান আলাদা হয়ে যাওয়া। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯০-এর দশকে সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা—এসব ঘটনার পর রাজনৈতিক শক্তিগুলো জনগণের আকাঙ্ক্ষা থেকে বিকশিত হয়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল।

রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আজ শুক্রবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে একটি নতুন রাজনৈতিক দল। গতকাল এর নাম ঠিক করা হয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নতুন এ দলের নামের ইংরেজি রূপ হবে ‘ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি (এনসিপি)’।

শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারকে পতন ঘটানো তরুণদের উদ্যোগে প্রায় সাত মাস পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন করা হলো। দলটির তরুণ নেতৃত্ব দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন, গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে এবং সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত হয়েছে। 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মূলত ১৯২০ সালে গঠিত অল ইন্ডিয়া কমিউনিস্ট পার্টির উত্তরসূরি সংগঠন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর দলটি কমিউনিস্ট পার্টি অব পাকিস্তান নামে পরিচিত হয় এবং ১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ কলকাতায় অল ইন্ডিয়া কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।

আওয়ামী লীগ

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর প্রগতিশীল শক্তিগুলো মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক ও ডানপন্থি রাজনীতির বিরোধিতা করতে শুরু করে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের নেতৃত্বে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একটি অংশ ১৯৪৯ সালে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠন করে। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এই দলের সভাপতি ও শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে দলের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘মুসলিম’ শব্দটি নাম থেকে বাদ দেওয়া হয় এবং এটি পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হিসেবে বিকশিত হয়।

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)

১৯৫৭ সালের জুলাই মাসে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা, বিশেষ করে মওলানা ভাসানী ও তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিলেন। ভাসানীর নেতৃত্বাধীন বামপন্থি গোষ্ঠী দাবি করেছিল, বাংলাদেশকে কোনো পরাশক্তির সঙ্গে জোটবদ্ধ না হয়ে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করতে হবে। তার অন্যতম প্রধান দাবি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের অক্টোবরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠিত হয়। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিভক্তি থেকে এই দলটির জন্ম নেয়। বামপন্থি এই দল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সিরাজুল আলম খান ও আ স ম আব্দুর রব।

বাকশাল

১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত হয় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)। এটি একটি একদলীয় শাসনব্যবস্থার রূপরেখা থেকে তৈরি করা হয়। বাকশালের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দেশ এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। সেই সময় থেকে জেনারেল জিয়াউর রহমান কার্যত দেশের সামরিক নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এরপর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে পদত্যাগ করে ক্ষমতা জিয়ার হাতে তুলে দেন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন, যা পরে তার রাজনৈতিক দল গঠনের পথ তৈরি করে দেয়।

১৯৭৮ সালে তার পৃষ্ঠপোষকতায় 'জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল)' গঠিত হয় এবং এর আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার।

পরে জাগদল বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)' প্রতিষ্ঠিত হয়। জেনারেল জিয়া নিজেই দলটির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন।

বিএনপির নেতৃত্বে বামপন্থি ও দক্ষিণপন্থি—উভয় মতাদর্শের নেতারা এই দলে ছিলেন।

বিএনপির ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, জাতীয় অর্থনৈতিক মুক্তি, স্বনির্ভরতা এবং জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে অগ্রগতির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

জামায়াতে ইসলামী

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা এবং যুদ্ধাপরাধের কারণে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে দলটি পুনরায় বৈধতা পায়।

১৯৩০-এর দশকের শুরুতে মওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ভারতে একটি ইসলামিক রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৪১ সালে মওলানা মওদুদীর নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশে ১৯৫০-এর দশক থেকে দলটির কার্যক্রম শুরু হয়। আল্লাহ ওপর বিশ্বাস ও আস্থার ভিত্তিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে একটি ইসলামী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে।

দলটি রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামি আদর্শ অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে।

জাতীয় পার্টি (জাপা)

জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের মার্চে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এরপর বিচারপতি এএফএম আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এরশাদ নিজের একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করেন এবং আহসানউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘জনদল’ গঠন করেন। পরবর্তীতে এরশাদের উদ্যোগে ‘জাতীয় ফ্রন্ট’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক জোট গঠিত হয়।

বিএনপির কিছু নেতা, জনদলের একটি অংশ, মুসলিম লীগ, গণতন্ত্রী দল ও ইউনাইটেড পিপলস পার্টির সদস্যরা এই ফ্রন্টে যোগ দেন।

অবশেষে ১৯৮৬ সালের জানুয়ারিতে ‘জাতীয় পার্টি’ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে, যার চেয়ারম্যান হন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

৯০ পরবর্তী রাজনীতি

জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে এরশাদ সরকার পতনের পর বাংলাদেশে বেশ কিছু নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। এর মধ্যে অন্যতম ইসলামী ঐক্যজোট।

ইসলামিক ঐক্য জোট

১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে ইসলামিক ঐক্য জোট প্রতিষ্ঠিত হয়। এই জোটে ছিল সাতটি দল। সেগুলো হলো—

খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম, ফরায়েজী জামাত, ইসলামী মোর্চা, উলামা কমিটি, ন্যাপ (ভাসানী) দলের একাংশ ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন।

এই জোটের প্রধান লক্ষ্য ছিল একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলন পরিচালনা করা, যা খেলাফতের আদলে ইসলামিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে।

গণফোরাম

বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ড.

কামাল হোসেন ১৯৯৩ সালের আগস্টে ‘গণফোরাম’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি উদারপন্থি দল, যা শক্তিশালী নাগরিক সমাজ এবং আইনের শাসন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে।

বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ

২০২১ সালের অক্টোবরে ‘বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। এর আহ্বায়ক হন সাবেক গণফোরাম নেতা রেজা কিবরিয়া এবং সদস্যসচিব হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে গত বছর ১ জুলাই শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। পরে সেটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর রাজনৈতিক দল গড়তে গত ৮ সেপ্টেম্বর গঠন করা হয় জাতীয় নাগরিক কমিটি। 

গতকাল জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’। নতুন এ দলের নামের ইংরেজি রূপ হবে ‘ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি’ (এনসিপি)। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় রাজধানীর বাংলামোটরে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক দল র র জন ত ক র ষ ট রপত গণতন ত র র রহম ন ইসল ম ক তৎক ল ন ব যবস থ পরবর ত দল গঠন ন র পর ব এনপ এনস প মওল ন ক ষমত দলট র এরশ দ

এছাড়াও পড়ুন:

আজ টিভিতে যা দেখবেন (৩১ মার্চ ২০২৫)

আইপিএল ও লা লিগায় আছে একটি করে ম্যাচ।আইপিএল

মুম্বাই ইন্ডিয়ানস–কলকাতা নাইট রাইডার্স
রাত ৮টা, টি স্পোর্টস ও স্টার স্পোর্টস ১

লা লিগা

সেলতা ভিগো–লাস পালমাস
রাত ১টা, জিএক্সআর ওয়ার্ল্ড ওয়েবসাইট

সম্পর্কিত নিবন্ধ