পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) শের-ই-বাংলা হলে (বর্তমানে জিয়াউর রহমান হল) ছাত্রদলের ব্যানারে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাতে বাধা দেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে-ই-বাংলা হলের ব্যাডমিন্টন কোর্টে ছাত্রদলের ব্যানারে শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ব্যানার সরিয়ে ফেলতে বললে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে তর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

একপর্যায়ে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বরত সহকারী প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক মো.

আব্দুর রহিম এবং ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মেহেদী হাসান সিকদার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন। পরে তারা ছাত্রদলের ব্যানার নামিয়ে ফেলতে বাধ্য হন।

এ বিষয়ে কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন নাইম বলেন, যেহেতু ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাই রাজনৈতিক দলের ব্যানারে টুর্নামেন্ট আয়োজন স্পষ্টতই আইন লঙ্ঘন। আমাদের একমাত্র চাওয়া, ছাত্রলীগের যে ফ্যাসিবাদী রূপ, সেটি যেন অন্য কোনোভাবে ক্যাম্পাসে ফিরে না আসে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার যে নিয়ম রয়েছে, তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা কখনোই চাইনি খেলা বন্ধ হোক, শুধু চেয়েছি কোনো রাজনৈতিক ব্যানার থাকবে না। তবে ঘটনাস্থলে যেসব শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন, তারা প্রথমে ব্যানার রেখে খেলা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দেন, যা আমাদের মর্মাহত করে। পরে প্রতিবাদ ও তোপের মুখে তারা ব্যানার সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতা আজিম হাসান দিপু বলেন, ছাত্রদলের স্পন্সরশিপে আমরা একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করি, কিন্তু হঠাৎ কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে বাধা দেয় এবং খেলা বন্ধ করার হুমকি দেয়। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের তর্ক ও ধাক্কাধাক্কি হয়। তবে আমরা কোনো ঝামেলা চাইনি, তাই শিক্ষকদের মাধ্যমে বিষয়টির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও ছাত্রদলের ব্যানারে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হলো কীভাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা বাধা দিয়েছে, তারা চাইলে সরাসরি প্রশাসনকে অভিযোগ জানাতে পারত। প্রশাসন মনে করলে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত। কিন্তু এভাবে এসে বাধা দেওয়ার কোনো অধিকার তাদের নেই।

এ বিষয়ে শেরে-ই-বাংলা হল-১ এর প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল মালেক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং প্রশাসন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দিচ্ছে না। এ টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকালের ঘটনাটি অনভিপ্রেত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে এবং পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ছ ত রদল র ব য ন র র জন ত ক আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙন রোধে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করুন

নদীর এক কূল ভাঙে, আরেক কূল গড়ে। শত শত বছর ধরে এ ভূমির মানুষেরা নদীর খেয়ালিপনার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়েই জীবন যাপন করে এসেছেন। আজ যিনি আমির, দেখা যেত, নদীভাঙনে কালকেই তিনি নিঃস্ব হয়েছেন। আবার নতুন জেগে ওঠা চরে বসতি গড়ে নতুন করে জীবন গড়ার স্বপ্ন এঁকেছেন তাঁরা। নদী তাই আমাদের জীবনযাপন ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। গত কয়েক দশকে দখল ও দূষণে বাংলাদেশের অনেক নদী যেমন মরে গেছে, আবার মৃতপ্রায় হয়ে যেগুলো এখনো টিকে আছে, সেগুলোও স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। এ কারণে বর্ষাকালে নদীগুলো যখন ফুলেফেঁপে ওঠে, তখন আমরা ভাঙনটাই বেশি দেখতে পাই। নতুন চর জাগা বা নতুন বসতি গড়ে ওঠার ঘটনা এখন বিরল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জলবায়ু পরিবর্তনের যে অভিঘাত, তাতে নদীভাঙনে প্রতিবছর অনেক মানুষ নিঃস্ব হচ্ছেন। সবকিছু হারিয়ে তাঁরা জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে ঢাকাসহ বড় নগরগুলোয় আশ্রয় নিচ্ছেন। ফলে ধারণক্ষমতার চেয়ে এমনিতেই কয়েক গুণ বেশি জনসংখ্যার নগরগুলোয় আরও চাপ বাড়ছে। নগরমুখী এই জনস্রোত ঠেকাতে গেলে নদীভাঙন রোধের বিকল্প নেই। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা নদীভাঙনের সঙ্গে টিকে থাকার জন্য রীতিমতো লড়াই করে চলেছেন।

অনেক বছর ধরেই কুশিয়ারা নদীতীরবর্তী এলাকাটি ভাঙছে। নদীভাঙনে বিপন্ন মানুষ নতুন ঠিকানার খোঁজ করেন। অন্য কোথাও গিয়ে ঘরবাড়ি তৈরির সামর্থ্য যাঁদের নেই, তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে ভাঙনের কাছাকাছি কোথাও মাথা গোঁজার চেষ্টা করছেন। নদীপারের কালারবাজার-নলুয়ারমুখা বাজারটিও ভাঙনের কবলে পড়েছে। একটা সময় মানুষের জীবন ছিল নিয়তিনির্ধারিত। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের এই যুগেও কেন মানুষ প্রকৃতির কাছে এতটা অসহায় থাকবে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সিলেটের বালাগঞ্জের দিকে কুশিয়ারা নদীর বুকে একটা চর জেগে আছে। সেই চরে উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোত ধাক্কা খেয়ে রাজনগরের গ্রামগুলোয় আঘাত করছে। সে কারণে ভাঙনটা আরও তীব্র হচ্ছে। চরটি অপসারণে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।

পাউবো বলছে, কুশিয়ারা নদীর ভাঙন ঠেকাতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করি, কুশিয়ারা নদীর ভাঙন রোধে গড়িমসি না করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। টেকসই বাঁধ নির্মাণ এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ