যে মন্তব্য করে ‘চার ম্যাচের’ নিষধাজ্ঞা পেলেন মোরিনহো
Published: 28th, February 2025 GMT
কিংবদন্তি ফুটবল ম্যানেজার জোসে মোরিনহো একবার বলেছিলেন, “আমি কথা না বলার পক্ষে। আমি যদি কথা বলি তাহলে আমি সমস্যার মুখে পড়ব।” এই বাক্যটি পর্তুগিজ ম্যানেজারের জন্য সমার্থকই হয়ে গিয়েছে। ‘ঠোঁটকাটা’ স্বভাবের এই ৬২ বছর বয়সী কোচ আবারও বিপদে পড়েছেন মন্তব্য করে। তবে এবার এক মন্তব্যের জন্যই তাকে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পেতে হলো। যদিও এই শাস্তির পেছনে সত্যিকার অর্থেই পাওয়া যাচ্ছে প্রতিপক্ষের ইন্ধন!
মোরিনহো বর্তমানে তার্কিশ ক্লাব ফ্যানারবাচের ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) দিবাগত রাতে ইস্তানবুল ডার্বিতে মুখোমুখি হয়েছিল গালাতাসারে-ফ্যানারবাচ। সেই ম্যাচে শেষে গণমাধ্যমে কথা বলেন পর্তুগিজ ম্যানেজার। তার প্রেক্ষিতে তার্কিশ ফুটবল ফেডারেশন বৃহস্পতিবার জানায়, ৪৪ হাজার ডলার জরিমানা গুণতে হবে মরিনহোকে। সঙ্গে থাকছে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা। অন্যদিকে গালাতাসারে ক্লাব কতৃপক্ষ মোরিনহোর বিপক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তার্কিশ ফেডারেশন উল্লেখ করে, তার্কিশ রেফারির প্রতি ‘অপমানজনক ও আক্রমণাত্মক’ মন্তব্যের জন্য এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। মরিনিহোর মন্তব্য খেলাধুলার নৈতিকতা ভঙ্গ করেছে, সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা উসকে দিয়েছে এবং সমর্থকদের উত্তেজিত করে তুলতে পারে বলে মনে করে ফেডারেশন।
আরো পড়ুন:
সোসিয়েদাদ দর্শকদের অসহিষ্ণুতা, ম্যাচের পার্থক্য গড়লেন এনদ্রিক
কোচের ঘাড় চেপে ধরে লঘু শাস্তি মেসির
গত রোববার তুরস্কের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই ক্লাব গালাতাসারে-ফ্যানারবাচের লড়াই শেষ হয় গোলশূন্য ড্রয়ে। দুই ক্লাবই ফেডারেশনকে অনুরোধ করেছিল এই ম্যাচে যেন বিদেশি রেফারি আনা হয়। সেই অনুরোধে স্লোভেনিয়া থেকে ম্যাচটি পরিচালনার জন্য রেফারি স্লাভকো ভিনচিচকে উড়িয়ে আনে ফেডারেশন।
সেই ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মরিনহো জানান তিনি রেফারিদের কক্ষে গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে দেখা করতে। মোরিনহো বলেন, “ম্যাচ শেষে রেফারিদের রুমে গিয়েছিলাম আমি। চতুর্থ রেফারিও ছিলেন একজন তার্কিশ, তিনি তার্কিশ। মূল রেফারিকে (ভিনচিচ) আমি বলেছি, ‘আসার জন্য ধন্যবাদ। কারণ বড় একটি ম্যাচে আপনি দায়িত্ব পালনে এসেছেন।’ এরপর চতুর্থ রেফারির দিকে ঘুরে বলেছি, ‘এই ম্যাচে আপনি রেফারি থাকলে বিপর্যয় হয়ে যেত।’ আমি আসলে (তুরস্কের) সবাইকেই বুঝিয়েছি, তাদের সহজাত প্রবণতা।”
এরপর মোরিনহো ফিরে যান মাঠের প্রসঙ্গে। ম্যাচে ফেনারবাচের ১৯ বছর বয়সী ডিফেন্ডার ইউসুফ আকচিচেকের একটা ট্যাকেলের প্রসঙ্গ টেনে আনেন পর্তুগিজ কোচ। জানান সেই ঘটনায় কার্ড না দেখানোয় রেফারি ভিনচিচ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
মোরিনহো বলেন, “আমার রেফারিকে ধন্যবাদ দিতে হবে। কারণ, ওদের একজন যেভাবে ডাইভ দিয়েছে, ওদের বেঞ্চের ফুটবলাররা বাচ্চা ছেলেটির (আকচিচেক) ওপর যেভাবে বানরের মতো লাফালাফি করছি প্রথম মিনিটেই… তুর্কি রেফারি থাকলে এসব দেখেই হলুদ কার্ড দিয়ে দিত এক মিনিটেই। ফলে পাঁচ মিনিট পর আমার তার বদলি কাউকে নামাতে হতো।”
মরিনিয়োর এসব মন্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যমে কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় গালাতাসারে। ৬২ বছর বয়সী পর্তুগিজ এই কোচের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেয় ক্লাবটি।
ফেনারবাচে কোচের পক্ষ নিয়ে একটা বিবৃতি দিয়েছে। তাদের দাবি মরিনহোর মন্তব্যকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে এবং বিকৃত করা হয়েছে। তারাও ভিত্তিহীন অভিযোগেরর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে দেয়।
তুরস্কের ফুটবলে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করে গালাতাসারে। এই ব্যাপারে বেশ কিছু দিন ধরেই কথা বলে আসছিলেন মোরিনহো। ফুটবল বিশেষজ্ঞদের ধারণা প্রথম সুযোগেই মোরিনহোর সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়াটা নিশ্চিত করেছে গালাতাসারে।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল পর ত গ জ র জন য ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
‘ও’ পজিটিভের বদলে ‘বি’ পজিটিভি রক্ত পুশ, রোগীর মৃত্যু
মানিকগঞ্জে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় চিকিৎসাধীন এক রোগীর শরীরে ‘ও’ পজিটিভের বদলে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করায় সেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে রক্ত দেওয়ার পর রাত ১০টার দিকে রোগীর মৃত্যু হয়। নিহত ওই রোগীর নাম মো. বিল্লাল। তিনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা।
এর আগে, গত বুধবার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
আরো পড়ুন:
চোর সন্দেহে গণপিটুনির ২ দিন পর যুবকের মৃত্যু
ধান মাড়াইয়ের সময় বজ্রপাত, নারীর মৃত্যু
রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে আমাদের ভুল রক্ত দেওয়া হয়েছে। আমরা সেটি এনে নার্সের কাছে দেওয়ার পর নার্সরা বলেন, ডাক্তারের অর্ডারপত্র লাগবে। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার রক্ত দেখে অর্ডারপত্র দিয়েছেন। এরপর নার্সরা রোগীর শরীরে সেটি পুশ করেন। এরপর থেকেই রোগীর সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। আমরা তখনো বুঝিনি যে রোগীকে ভুল রক্ত দেওয়া হয়েছে। পরে বাইরের একজন লোক বলেন, রোগীকে ভুল রক্ত দেওয়া হচ্ছে। এরপর আমরা হাসপাতালের নার্স ও ডাক্তারদের অনেক ডাকাডাকি করলেও তারা এসে রোগীর কোনো চিকিৎসা দেননি। তারা তড়িঘড়ি করে সেই রক্তের ব্যাগ ও রক্ত সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে চলে যান। পরে রাত ৮টার দিকে আরেকজন ডাক্তার এসে আমাদের রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। আমরা বলেছি, রোগীকে ঢাকায় নেওয়ার মত অবস্থা আমাদের নেই। এটা একটা সরকারি মেডিকেল, আমাদের রোগীর চিকিৎসা এখানেই করেন। তারপর তারা রোগীকে আর কোনো চিকিৎসা দেয়নি। এটি ভুল রক্ত নাকি সঠিক রক্ত সেটি বোঝার ক্ষমতা তো আমাদের নেই। তারা তিন জায়গায় চেক করে রক্ত দিয়েছে। এক জায়গায় ভুল হতে পারে, তিন জায়গায় তো ভুল হওয়ার কথা না। তাদের ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘‘বিকেল ৪টার দিকে ডিউটিতে ছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী ও মেডিকেল অফিসার ডা. নূরজাহান। সেসময় রোগীর শরীরে ‘ও’ পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করা হয়েছে। এরপর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আমি রাত ৮টায় ডিউটি শুরু করেছি। আমি ডিউটি শুরু করার পর যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি। এরপরও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘রোগীর শরীরে খুব বেশি রক্ত যায়নি। তবে, কাগজপত্র না দেখে রক্ত পুশ করা ঠিক হয়নি। এটি একটি মারাত্মক ভুল।’’
রোগীর মৃত্যু সনদে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে।’’ ভুল রক্ত পুশ করার বিষয়টি উল্লেখ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এটি করা হয়েছে।’’
এ বিষয়ে জানতে ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী ও মেডিকেল অফিসার ডা. নূরজাহানকে খুঁজলেও পাওয়া যায়নি।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, ‘‘এ ঘটনায় এখনো আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/চন্দন/রাজীব