হেপাটাইটিস বি মারাত্মক সংক্রামক ভাইরাস, যা লিভার বা যকৃতের প্রদাহ সৃষ্টি করে। রক্ত, বীর্য এবং শরীরের অন্যান্য তরলের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা নারী আক্রান্ত হলে শিশুর আক্রান্ত হওয়ায় আশঙ্কা অনেক বেশি। 

বি ভাইরাসে স্বল্পমেয়াদি (অ্যাকিউট) সংক্রমণের পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ীও (ক্রনিক) হতে পারে। ফলে বি ভাইরাস সংক্রমণে জন্ডিস, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তবে সৌভাগ্যবশত, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর টিকা আছে।

এটাই রোগটি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। টিকা আবিষ্কারের পর থেকে বিশ্বজুড়ে এই রোগের সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। 

আরও পড়ুনদীর্ঘমেয়াদি রোগে কী কী টিকা নেবেন২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

হেপাটাইটিস বি টিকার কার্যকারিতা

হেপাটাইটিস বি তিনটি ডোজের টিকা গ্রহণের পর ৯৫–১০০ শতাংশ মানুষের শরীরে এই রোগের প্রতিরোধক্ষমতা বা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এই টিকা শিশুদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাদের দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। টিকা গ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের লিভার ক্যানসার এবং লিভার সিরোসিসের মতো মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

হেপাটাইটিস বি টিকার ডোজ

মা বি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে নবজাতককে জন্মের প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বি ভাইরাসের টিকা এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া হয়। বাংলাদেশে ইপিআই ভ্যাকসিন শিডিউলে নবজাতকদের ৬, ১০ এবং ১৪ সপ্তাহ বয়সে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি যেকোনো সময় হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা নিতে পারেন।

টিকার সাধারণত তিনটি ডোজ প্রয়োজন হয়। প্রথম ডোজের এক মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ এবং ছয় মাস পরে তৃতীয় ডোজ নিতে হয়। তবে টিকার ডোজ সম্পন্ন করার দু–তিন মাস পরে অবশ্যই অ্যান্টিবডি টাইটার পরীক্ষা করে পরিপূর্ণ সুরক্ষা পাওয়ায় ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষদের অতিরিক্ত ডোজ প্রয়োজন হতে পারে।

যাঁরা হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন কিন্তু টিকা নেননি, তাঁদের ক্ষেত্রে টিকা ছাড়াও হেপাটাইটিস বি ভাইরাস রোগপ্রতিরোধী ইমিনোগ্লোবিউলিন দেওয়া উচিত।

আরও পড়ুনবিয়ের আগেই কেন মেয়েদের জরায়ুমুখের ক্যানসারের টিকা নিতে হবে২৪ জানুয়ারি ২০২৫

হেপাটাইটিস বি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

হেপাটাইটিস বি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম বা সাধারণত হালকা হয়ে থাকে। কারও কারও টিকা নেওয়ার জায়গায় সামান্য ব্যথা, লালভাব বা ফোলাভাব হতে পারে এবং সঙ্গে হালকা জ্বর বা মাথাব্যথাও হতে পারে। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কয়েক দিনের মধ্যেই চলে যায়।

কাদের হেপাটাইটিস বি টিকা নেওয়া উচিত

সব নবজাতক, শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের হেপাটাইটিস বি টিকা নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যাঁরা কিছু নির্দিষ্ট রোগের ঝুঁকির মধ্যে আছেন, তাঁদের জন্য এই টিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাঁদের পরিবারে হেপাটাইটিস বি সংক্রমণের ইতিহাস আছে, যাঁরা বি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে বসবাস করেন, স্বাস্থ্যকর্মী (কারণ, তাঁরা রক্ত এবং অন্যান্য শারীরিক তরলের সংস্পর্শে আসেন), এইডস রোগী, ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া রোগী, যাঁরা ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক নেন এবং যাঁদের একাধিক যৌনসঙ্গী আছে।

তবে রক্ত পরীক্ষায় কারও হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ধরা পড়লে টিকা নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রয়োজন। 

ভ্যাকসিন দিলেই কি আপনি সুরক্ষিত

হেপাটাইটিস বি অ্যান্টিবডি টাইটার রক্ত পরীক্ষায় যদি ১০ এমআইইউ/এমএলের নিচে থাকে, তবে ধরে নিতে হবে আপনি পর্যাপ্ত সুরক্ষিত নন। এবং এই গ্রুপকে ‘লো’ অথবা ‘নন-রেসপন্ডার’ বলা হয়। সে ক্ষেত্রে আবার একটি বুস্টার ডোজ নিতে বলা হয়।

সেটি আগে নেওয়া টিকার ব্র্যান্ড বা অন্য কোনো বেশি কার্যকর ব্র্যান্ডের টিকা হতে পারে। এরপরও অ্যান্টিবডি টাইটার সন্তোষজনক না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দেখা যেতে পারে।হেপাটাইটিস বি টিকা নিরাপদ ও কার্যকর, যা আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে এই রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এই টিকা গ্রহণের মাধ্যমে আপনি শুধু নিজেকেই নয়, বরং একটি সুস্থ সমাজ গঠনেও ভূমিকা রাখতে পারেন।

ডা.

কাকলী হালদার, সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

আরও পড়ুনহেপাটাইটিস থেকে বাঁচার উপায়২৮ জুলাই ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ প ট ইট স ব ক র যকর স ক রমণ পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

নৌপরিবহন অধিদপ্তরে চাকরি, ডিপ্লোমা ডিগ্রিতে আবেদন

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন নৌপরিবহন অধিদপ্তর জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি দুটি পদে পাঁচজন কর্মী নিয়োগের জন্য এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আগ্রহী প্রার্থীরা নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদনপত্র সরাসরি বা ডাকযোগে পাঠিয়ে আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন।

১. পদের নাম: মেকানিক (গ্রেড-১৫)

পদসংখ্যা: ৪

বেতন স্কেল: ১৭,৭০৫ টাকা (সাকল্যে)

আবেদনের যোগ্যতা: মেকানিক্যাল অথবা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকতে হবে।

২. পদের নাম: লাইটকিপার (গ্রেড-১৬)

পদসংখ্যা:

বেতন স্কেল: ১৭,০৪৫ টাকা (সাকল্যে)

আবেদনের যোগ্যতা: কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে;

আবেদনে প্রার্থীর বয়স: ১৮-৩২ বছর (৮ মে ২০২৫ তারিখ)। বয়স প্রমাণের ক্ষেত্রে এফিডেভিট গ্রহণযোগ্য হবে না।

আবেদনপত্র সংগ্রহ করবেন যেভাবে-

আগ্রহী প্রার্থীরা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। আগ্রহী প্রার্থীরা এখানে ক্লিক করে ফরম ডাউনলোড করে তা পূরণের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।

আরও পড়ুনইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম মুসলিম দেশ-মঙ্গল শোভাযাত্রা-রেডিও বেগম জেনে নিন বিস্তারিত১৭ এপ্রিল ২০২৫আবেদন ফি-

নৌপরিবহন অধিদপ্তর, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা–এর অনুকূলে ১০০ টাকা চালানের (আবেদন ফি বাবদ) মাধ্যমে জমা দিতে হবে। টাকা জমার রসিদ আবেদনপত্রের সঙ্গে অবশ্যই পাঠাতে হবে।

আবেদনপত্র পাঠানোর ঠিকানা-

প্রকল্প পরিচালক, ইজিআইএমএনএস, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, এফ ১২/সি-১, আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭ বরাবর আবেদনপত্র পাঠাতে হবে। আবেদনপত্র সরাসরি অথবা ডাকযোগে পাঠাতে হবে।

আবেদনের শেষ সময়: ৮ মে ২০২৫ তারিখ বিকেল ৫টা পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।

আরও পড়ুনস্কুলে দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়াশোনা শিকেয় ওঠে১৯ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ