গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার মিসরের কায়রোতে আলোচনা শুরু হয়।

মধ্যস্থতাকারীদের আশা, এই আলোচনার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে গাজায় যুদ্ধের অবসান হবে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ২০২৩ সালে দেশটিতে হামাসের হামলা ঠেকাতে তাদের ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থতা’ স্বীকার করার এক দিন পর এ আলোচনা শুরু হলো।

আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর গতকাল বৃহস্পতিবারই বলেছে, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে ‘নিবিড়’ আলোচনায় অংশ নিতে ইসরায়েল, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল কায়রোতে অবস্থান করছে। কয়েক মাসের আলোচনার পরই কেবল প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা সম্ভব হয়েছিল।

মিসরের সরকারি সংস্থা স্টেট ইনফরমেশন সার্ভিস বলেছে, পূর্বে হওয়া সমঝোতার বাস্তবায়নের চলমান প্রচেষ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী ধাপগুলো নিয়ে নিবিড় আলোচনা শুরু করেছে।

প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আগামীকাল শনিবার শেষ হতে চলেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে চার জিম্মির দেহাবশেষ হস্তান্তর করার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কায়রোতে আলোচকদের পাঠান।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েলের সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এএফপির করা হিসাব অনুসারে হামলায় ১ হাজার ২১৮ জন নিহত হয়েছেন। জবাবে একই দিন গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে তখন থেকে চলা ওই যুদ্ধে ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের চালানো হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত পরিচালনা করেছে। গতকাল এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এক সেনা কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের ওই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু উল্লেখ করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ হামলা ঠেকাতে না পারাটা সম্পূর্ণভাবেই সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা।

একই সংবাদ সম্মেলনে এক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে যে তারা অতি আত্মবিশ্বাসী ছিল। হামলার আগে হামাসের সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে তাদের ভুল ধারণা ছিল।

তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসরায়েলের সেনাপ্রধান জেনারেল হারজি হালেভি বলেন, ‘এ দায় আমার।’ ৭ অক্টোবরের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতা স্বীকার করে গত মাসেই হালেভি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

সেনাবাহিনী নিয়ে নেতিবাচক চর্চা বিপজ্জনক

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিশেষত সামাজিক মাধ্যমে যে নেতিবাচক চর্চা হয়েছে, তা সচেতন কোনো মানুষেরই নজর এড়ায়নি। যে উদ্দেশ্যেই তা করা হোক, এটি যে বিশেষত দেশ ও জাতির জন্য বিপজ্জনক– তা সচেতন ব্যক্তিমাত্রেরই না বোঝার কোনো কারণ নেই। তাই এ লেখার অবতারণা।

বিষয়টির সূত্রপাত ঘটান সদ্যঘটিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একজন শীর্ষসারির নেতা। তিনি সেনাপ্রধানের সঙ্গে তাঁর আরেক সতীর্থসহ একটি বৈঠক করেছিলেন নিজেদেরই আগ্রহে। সেই বৈঠকের ১০ দিন পর এ নিয়ে তিনি এক ফেসবুক পোস্ট দেন, যেখানে তিনি সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে কার্যত কিছু অভিযোগ করেন, যদিও পরবর্তী সময়ে তাঁর সতীর্থ এক ফেসবুক পোস্টে ওই অভিযোগের বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেন। একই সময়ে সামাজিক মাধ্যমে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) এক নেতার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে ওই নেতা সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনী সম্পর্কে ব্যাপক বিষোদ্গার করেন। 

একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম হলো সেনাবাহিনী। তাকে সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবেও মনে করা হয়। তাই সচেতন মহল সাধারণত সেনাবাহিনী সম্পর্কে যে কোনো আলোচনাকে স্পর্শকাতর মনে করে থাকে। অন্তত সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা কোনো দেশপ্রেমিক বা সচেতন মানুষ করেন না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও এ ধারণার বাইরে নয়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে মূলধারার সংবাদমাধ্যমও এ বাহিনী সম্পর্কে যে কোনো বিতর্ক এড়িয়ে চলে।

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিশেষত ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে দেশের প্রায় সব মানুষই তাকিয়ে আছে সেনাবাহিনীর দিকে। গণঅভ্যুত্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রধান দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ প্রতিষ্ঠান হিসেবে যে ক্ষতির মুখে পড়েছে, তাতে বাহিনীটির সোজা হয়ে দাঁড়াতে আরও অনেক সময় লাগবে। জানমাল রক্ষাসহ পুলিশের বিশাল দায়িত্ব সেনাসদস্যরা কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এখন প্রতিষ্ঠানটি যদি অকার্যকর হয়ে পড়ে তাহলে আক্ষরিক অর্থেই দেশে এক মাৎস্যন্যায় নেমে আসতে পারে। এ কারণেও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওই বিষোদ্গার ভয়ংকর বলে বিবেচিত হচ্ছে।

বর্তমান সেনাপ্রধান অভ্যুত্থানের সময় এবং অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বেশ ধৈর্য ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে দেশ-জাতি এবং বিশেষত গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি জনপরিসরে প্রশংসা কুড়িয়েছে বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। সেই সেনাপ্রধান ও তাঁর নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিরুদ্ধে যারা বিকৃত রুচির বক্তব্য দিয়ে চলেছেন, তারা তাদের বিকৃত মানসিকতারই পরিচয় দিচ্ছেন। অথবা অন্য কোনো অভিসন্ধিও থাকতে পারে তাদের। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে উৎসাহী লোকের তো অভাব নেই এ দেশে।

আশার বিষয় হলো, সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আলোচ্য বিষোদ্গার ব্যাপক নিন্দাও পেয়ে চলেছে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমেই এর বিরুদ্ধে সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছেন। দেশের অর্থনীতি যে গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যেভাবে নানা কারণে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন, তার মধ্যে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা হলে, তার ফল ভয়াবহ হতে বাধ্য। জাতীয় স্বার্থেই সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা উচিত নয়।

শেষ কথা হলো, যারা রাজনীতি করেন তাদের কিন্তু অনেক ধৈর্যশীল ও বিচক্ষণ হতে হয়। সৌজন্যবোধ তাদের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈশিষ্ট্য। তদুপরি কোথায় কোন কথা বলা হলে কী ফল হতে পারে তাদের তাও জানতে হয়।

সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেইমারের সঙ্গে বিতর্কে জড়ানো জেসুসই কি হচ্ছেন ব্রাজিলের কোচ
  • দেশজুড়ে ঈদের দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস যা বলছে
  • ঈদের ছুটিতে ২ দিনে ঢাকা ছেড়েছেন প্রায় ৪১ লাখ সিমধারী
  • তাহলে কে হচ্ছেন ব্রাজিলের কোচ
  • যে কারণে ছয় মাসে ৫১ কোটি টাকা লোকসান করল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল
  • সেনাবাহিনী নিয়ে নেতিবাচক চর্চা বিপজ্জনক
  • যেসব কারণে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়
  • ভারতীয়দের বিদেশে পড়াশোনায় আগ্রহ কমছে, কারণ কি শুধুই রাজনীতি
  • ইশরাক যদি মেয়র হয়, আমাকেও এমপি ঘোষণা করা হোক: হিরো আলম
  • বাড়ছে আমদানিনির্ভর কৃষিপণ্যের উৎপাদন