চট্টগ্রামের ফুসফুসখ্যাত সিআরবি এলাকার বড় বড় গর্জন ও শিরীষগাছগুলো আস্তে আস্তে তাঁদের প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলছে। ১০ বছর ধরে গাছগুলোর ডালপালায় মড়ক লেগেছে। কোনো রোগ কিংবা ছত্রাকের আক্রমণে নয়, বয়স ও কংক্রিটের আস্তরণের কারণে গাছগুলো মৃত্যুপথযাত্রী। সম্প্রতি বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) অনুসন্ধান ও গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবি এলাকাটি চট্টগ্রামের সবুজ ও উন্মুক্ত এলাকার মধ্যে অন্যতম। এ এলাকায় শিরীষ, গর্জন, সোনালুসহ নানা প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। এসব ছায়াদানকারী গাছগুলোর টানে সারা দিন নগরের নানা এলাকার মানুষ ছুটে যান সিআরবিতে। বড় গাছগুলোর বয়স ৭০ থেকে ৮০ বছরের কম নয়। দুই বছর আগে এই গাছগুলো কেটে সেখানে হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলেন চট্টগ্রামের মানুষ। প্রতিবাদের মুখে ওই প্রকল্পও বাতিল হয়।

তবে এখানকার বড় গাছগুলোতে মড়ক লেগেছে কয়েক বছর আগে থেকে। গাছের ডালপালা শুকিয়ে ভেঙে পড়ছিল। এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য তখনই একবার বন বিভাগের লোকজন সিআরবি এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। বর্তমানে গাছগুলোর ডালপালায় মড়ক আরও বেশি হয়েছে। সম্প্রতি রীতু পারভীন নামের এক পরিবেশকর্মী বিষয়টি পুনরায় বন বিভাগের নজরে আনেন। এরপর বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) বন রক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো.

আহসানুর রহমান ও গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান এবং মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মতিয়ার রহমানের সমন্বয়ে গত ৩০ জানুয়ারি একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। তাঁরা এলাকাটি পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ এবং গবেষণার পর ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন।

অনুসন্ধান দলের প্রধান বিএফআরআইয়ের বন রক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আহসানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সড়কের আইল্যান্ডের মাঝখানে থাকা গর্জন ও শিরীষগাছগুলোর ডালপালা মারা যাচ্ছে। এর কয়েকটি কারণের মধ্যে গাছগুলোর বয়স একটা কারণ। এ ছাড়া গাছের গোড়া চারদিক থেকে কংক্রিটের আস্তরণে ঢাকা। ফলে শিকড় বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানি–আলো–বাতাস কম পাচ্ছে। এমনিতে গাছগুলোর বয়স ৭০ থেকে ৮০ বছর, তাই আস্তে আস্তে জীবনশক্তি ক্ষয় হচ্ছে।

সিআরবিতে সড়ক বিভাজকের প্রস্থ আনুমানিক দুই মিটার। বিভাজকে আটটি গর্জনগাছ ও একটি সোনালুগাছ পাওয়া যায়। এ ছাড়া রাস্তার পাশের ফুটপাতে ছয়টি গর্জনগাছ দেখা গেছে। রাস্তার অপর পাশে শতবর্ষী একটি শিরীষগাছ রয়েছে, যার আয়ুষ্কাল প্রায় শেষ পর্যায়ে। গর্জনগাছগুলোর বয়স ৭০ থেকে ৮০ বছর। গাছগুলোর গড় উচ্চতা ২৫ থেকে ৩৫ মিটার এবং বেড় ২৫০ থেকে ৩০০ সেন্টিমিটার।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেশির ভাগ গর্জনগাছের আগা ও ডালপালা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। গাছের পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়েছে। কিছু গাছের বাকল শুকিয়ে গেছে। আক্রান্ত গাছের শিকড়ে পচন দেখা গেছে।

গবেষক দল সূত্রে জানা গেছে, গাছগুলোর গোড়ার মাটি ও আক্রান্ত ডালের নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়েছে। গাছের মৃত অংশে এবং মাটিতে কোনো রোগ সৃষ্টিকারী প্যাথোজেনিক ছত্রাকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। কয়েক প্রজাতির সাধারণ পরিবেশগত ছত্রাক শনাক্ত করা হয়েছে, যা মূলত মৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত গাছে জন্মায়। এসব ছত্রাক পরিবেশে বাস্তু, পানি ও মাটিতে সচরাচর এমনিতেই পাওয়া যায়, যা গর্জন ও শিরীষগাছের জন্য ক্ষতিকর নয়। আক্রান্ত গাছগুলোতে কোনো ক্ষতিকর পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায়নি বলেও গবেষকেরা জানান।

গোড়ার চারপাশে কংক্রিটের আস্তরণ। ডালপালা শুকিয়ে ভেঙে পড়েছে গাছটির। আজ সকালে সিআরবিতে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র রহম ন স আরব

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্রিল্যান্সার সেবায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

সারাদেশে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় যুক্ত ১০ লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীর জন্য বৈদেশিক অর্থ গ্রহণের প্রক্রিয়া  সহজ ও ডিজিটাল করতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক চালু করেছে ‘ফ্রিল্যান্সার অ্যাকাউন্ট’। ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে সবকিছুই হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। 
বিদেশি অর্থ ও টাকায়– দু’ভাবেই হিসাব খোলা হবে। আয়ের ৩৫ শতাংশ অর্থ বিদেশি অর্থে আর ৬৫ শতাংশ টাকা হিসেবে জমা হবে। জমার বিপরীতে ফ্রিল্যান্সাররা ডেবিট কার্ডের সুবিধা পাবেন, যা দিয়ে দেশে-বিদেশে খরচ করা যাবে। ফ্রিল্যান্সার অ্যাকাউন্ট গ্রাহকরা ঋণ ও ক্রেডিট কার্ড সুবিধা পাবেন। 
উদ্যোক্তারা জানান, ফ্রিল্যান্সাররা ঘরে বসেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন, যা খুলতে কোনো প্রারম্ভিক অর্থ জমা দিতে হবে না। অন্যদিকে, অ্যাকাউন্টে লেনদেন ও অন্যসব কার্যক্রম ব্যাংকে না গিয়ে অ্যাপ থেকেই করা যাবে।
বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমান বলেন, সারাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কাজ নিয়ে আসছেন দেশি ফ্রিল্যান্সাররা। এ জন্য তারা সম্মানের যোগ্য। বিদেশ থেকে টাকা উপার্জন করা সহজ নয়। বিদেশি ব্যাংকের পরিষেবার কারণে অনেকেই ফ্রিল্যান্সার পেশায় নতুন করে আগ্রহী হবেন। সারাদেশে ১০ লাখের বেশি পেশাজীবী ফ্রিল্যান্সিং করছেন। যাদের সম্মিলিত আয়ের মাত্র ৩০ শতাংশ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে পৌঁছায়। কারণ, অনেক ব্যাংকের সহযোগিতা এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। ফ্রিল্যান্সার অ্যাকাউন্টে গ্রাহকরা বিদেশি মুদ্রায় আয়ের জন্য সুদহীন ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট সুবিধা পাবেন, যা স্থানীয় সেভিংস বা কারেন্ট অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। বৈদেশিক ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে বৈধ ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত ব্যয় পরিচালনা করা যাবে। অনলাইনে ফরম-সি জমা দিয়ে সহজে রেমিট্যান্স নেওয়া যাবে। চার্জহীন স্মার্ট অ্যাকাউন্ট, বিনামূল্যে রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট ও বিশেষ ছাড়ে ক্রেডিট কার্ড ও ব্যক্তিগত ঋণ সুবিধা নেওয়া যাবে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড মার্কেটিং বিটপী দাশ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা সারাবিশ্বে কাজ করছেন। তারা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছেন। এমন অবদানকে সম্মান জানাতেই ফ্রিল্যান্সার অ্যাকাউন্ট করার উদ্যোগ নিয়েছি।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান লুৎফুল হাবিব বলেন, বাংলাদেশে প্রথম এটিএম, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড চালু করেছি। আমাদের ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক শুধু দেশে নয়, আফ্রিকা থেকে শুরু করে সারাবিশ্বে ছড়ানো। ফ্রিল্যান্সার অ্যাকাউন্ট উদ্ভাবনী সেবার ধারাবাহিকতায় নতুন সংযোজন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ