পরিবারে সচ্ছলতা আনতে ধারদেনা করে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন তোফাজ্জল হোসেন (৪৬)। তবে নিজের স্বপ্ন পূরণ হয়নি, উল্টো পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার। এক মাস আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। এখনো তাঁর মরদেহ দেশে পৌঁছায়নি। মরদেহ দ্রুত দেশে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ পরিবারের।

তোফাজ্জল হোসেনের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারার ঝিকড়ার মীরপাড়া গ্রামে। গত ২৮ জানুয়ারি সৌদি আরবের মদিনায় তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি সেখানে আল-আওলাদ কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গাড়িচাপায় ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারান। এর পর থেকে তাঁর মরদেহ সেখানে হিমঘরে রয়েছে।

তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী পারুল বেগম জানান, তিন বছর আগে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সৌদি আরবে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। দীর্ঘদিন ভালো কাজের সন্ধান করলেও পাননি। শেষে আল-আওলাদ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে নির্মাণশ্রমিকের কাজ পান। বাংলাদেশের টাকায় বেতন পেতেন ৩০ হাজার টাকা। নিজের খরচের পর দেশে টাকা পাঠাতেন তিনি। এই টাকা দিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হতো। পাশাপাশি সংসার ও দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানো হতো।

দ্রুত স্বামীর মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে পারুল বেগম বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। সহযোগিতার জন্য রাজশাহী শ্রম অধিদপ্তরেও যোগাযোগ করেছি। স্বামীর পাসপোর্টে আমার নাম পারুল বেগম; জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও জন্ম নিবন্ধন সনদে পারুল বিবি রয়েছে। এ সমস্যা হয়েছে। এটা সংশোধনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে গতকাল বৃহস্পতিবার আবেদন করেছি।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সব সরকারি দপ্তরে আশানুরূপ সহযোগিতার আশ্বাস পাচ্ছেন না।

তোফাজ্জল হোসেনের সহকর্মী নওগাঁর গণ্ড গোহালী গ্রামের হামিদুল ইসলাম বলেন, তাঁরা একসঙ্গে কাজ করছিলেন। ওই দিন (২৮ ফেব্রুয়ারি) পানির একটি গাড়ি এসে তাঁকে (তোফাজ্জল হোসেন) চাপা দেয়। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাঁদের চোখের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মরদেহ হিমঘরে রয়েছে। মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য তিনি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

তোফাজ্জল হোসেন ও স্ত্রী পারুল বেগম দম্পতির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে তাহমিদা আক্তার (২২) রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে স্নাতকে (সম্মান) পড়েন। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে বাবার পাঠানো টাকায় পড়াশোনার খরচ চলত। নিজের লেখাপড়া খরচ নিয়ে এখন তিনি চিন্তিত। আর হয়তো লেখাপড়া হবে না—বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বাবার মরদেহ দ্রুত সরকারি খরচে দেশে আনার দাবি জানান। পাশাপাশি আর্থিকভাবে সহযোগিতারও আবেদন করেন।

এ বিষয়ে আজ শুক্রবার বাগমারার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘পারুল বেগমের নাম সংশোধনীর দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে। তোফাজ্জল হোসেনের লাশ দেশে আনতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র ল ব গম ন র জন য মরদ হ দ সহয গ ত দ র ঘটন র মরদ হ পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

কুষ্টিয়ায় মিরপুরের ইউএনওর বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল

কু‌ষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বি‌বি ক‌রিমু‌ন্নেছার দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্ত‌রের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সমাবেশ থেকে ইউএনওর বিরুদ্ধে উপ‌জেলা প্রশাস‌নের কা‌জে উদাসীনতা ও আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করার মতো বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়। দা‌বি না মান‌লে আগামী র‌বিবার (২ মার্চ) ইউএনও‌কে নিজ কার্যাল‌য়ে তালাবদ্ধ ক‌রে রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। 

বৃহস্প‌তিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দি‌কে ‘মিরপুরের সর্বস্ত‌রের জনতা’র ব্যানারে শহ‌রের ঈগল চত্বর থে‌কে ঝাড়ু মি‌ছিল বের হ‌য়ে উপ‌জেলা প‌রিষদের সামনে বি‌ক্ষোভ সমা‌বেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

এর আগে ঝাড়ু মিছিলে অংশ নেন এলাকার কয়েকশ’ নারী-পুরুষ। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন মিরপুর পৌর যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রফিক, ধুবাইল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. যাহার হাজী, মিরপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ ইসলাম ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিমু। 

সমাবেশে বক্তারা বলেন, “ইউএনও বি‌বি ক‌রিমু‌ন্নেছা মিরপু‌রে যোগদানের পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার ক‌রে আস‌ছেন। সম্প্রতি আওয়ামী লী‌গের পদধারী‌দের নি‌য়ে উপ‌জেলা প‌রিষদ চত্ব‌রে মি‌টিং ক‌রে‌ছেন। তি‌নি আওয়ামী লীগ‌কে পুনর্বাসন করার চেষ্টা কর‌ছেন। তা‌কে মিরপুর থে‌কে বদলি করা হ‌য়ে‌ছে। তবু‌ও এখন পর্যন্ত ক্ষমতা হস্তান্তর ক‌রে‌নি।” 

উপ‌জেলা প্রশাসন সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে, গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপসচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক‌টি প্রজ্ঞাপনে বিবি করিমুন্নেছাকে পদায়‌নের মাধ‌্যমে বদলি করা হয়েছে। তাকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে। সেখা‌নে তি‌নি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন কর‌বেন। 

এর আগে ইউএনও বি‌বি ক‌রিমু‌ন্নেছার বিরু‌দ্ধে উপজেলা পরিষদের দুইটি প্রবেশদ্বার বন্ধ রাখার অভি‌যোগ ওঠে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিরা ভোগান্তিতে পড়েন। এছাড়া নিজ ক্ষমতায় উপ‌জেলা সাব রে‌জিষ্ট্রার অফি‌সের সীমানা প্রচীর নির্মা‌ণের কাজ বন্ধ ও আওয়ামী লীগ পদধারী চেয়ারম‌্যান‌দের‌ নি‌য়ে আইনশৃঙ্খলা সভা করায় আলোচনায় আসেন তি‌নি। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য ইউএনও বি‌বি ক‌রিমু‌ন্নেছার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। 

এ ব্যাপারে কু‌ষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌ‌ফিকুর রহমান বলেন, “বিষয়‌টি খতিয়ে ‌দেখা হ‌চ্ছে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শহীদ মিনারের স্বীকৃতি মিলবে কত যুগ পর
  • শাল্লার সাবেক ইউএনও, পাউবো কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে কৃষকের মামলা
  • কুষ্টিয়ায় মিরপুরের ইউএনওর বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল
  • শিবগঞ্জে দুই পক্ষের উত্তেজনার মধ্যে নাগরিক ঐক্যের ৯ নেতাকে আসামি করে যুবদল নেতার মামলা
  • দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষক নিহত: সালথায় মাহিন্দ্রা বন্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের
  • শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে রেখে শিক্ষার্থীদের তালা, মুক্ত করলেন ইউএনও