গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হচ্ছে আজ। গতকাল এর নাম ঠিক করা হয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নতুন এ দলের নামের ইংরেজি রূপ হবে ‘ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি’ (এনসিপি)। শুক্রবার বেলা তিনটায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বড় জমায়েতের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করবে দলটি।

দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান ঘিরে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের সড়কে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের জন্য মঞ্চ প্রায় প্রস্তুত। এখন চলছে শেষ সময়ের মঞ্চ গোছানোর কাজ। 

জানা যায়, দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত যোদ্ধারা অংশ নেবেন। এ ছাড়া দেশের ৬৪ জেলা থেকেই মানুষ আসবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কূটনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেবেন।

ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানস্থলে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। এই আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বড় জমায়েতের লক্ষ্য রয়েছে তাদের।

বাংলাদেশে আজ নতুন এক সূর্যোদয় হবে এমন কথা জানিয়ে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা তরুণরা বলেন, দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত করার জন্য তরুণরা আজ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের মধ্য দিয়ে শপথ গ্রহণ করবেন। 

জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষে মুশফিক উস সালেহীন জানিয়েছেন, দুপুর ১২টার পর শুধু মানিক মিয়া এভিনিউয়ের পশ্চিম দিকের প্রবেশপথ (আড়ংয়ের দিকে) দিয়ে মঞ্চের সামনের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করা যাবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌথ বৈঠক হয়। সেখানে অংশ নেওয়া জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল চারজন নেতা দলের নাম ও যেসব পদে নেতৃত্ব চূড়ান্ত হয়েছে, সেগুলো নিশ্চিত করেন।

দলটির দক্ষিণের মুখ্য সংগঠক হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং উত্তরের মুখ্য সংগঠক হিসেবে সারজিস আলমকে চূড়ান্ত করা হয়। এছাড়া মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী এবং যুগ্ম সমন্বয়ক হিসেবে হান্নান মাসুদের নাম চূড়ান্ত করা হয়।

নতুন কমিটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত নেতৃত্ব দেবেন বলে জানা গেছে। এজন্য দলের আহ্বায়ক কমিটির আকার বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কমিটির একটা খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এতে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সম্মুখযোদ্ধাদের স্থান দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে। এছাড়াও জুলাই আন্দোলনের আলোচিত নারী নেত্রীরা নতুন দলে জায়গা পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ছ ত র জনত কম ট র ক কম ট ন র জন

এছাড়াও পড়ুন:

বিনা খরচে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডে হিসাব খুলতে পারবেন ফ্রিল্যান্সাররা

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষ হিসাব সেবা চালু করেছে বহুজাতিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। এর নাম ‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ফ্রিল্যান্সার অ্যাকাউন্ট’। এই হিসাব পুরোপুরি মাশুলবিহীন। হিসাব খোলা থেকে সবকিছুই ডিজিটাল। ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সাররা এই হিসাব খুলে সেবা নিতে পারবেন।

হিসাব খোলা হলে একই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রা ও টাকায় দুটি হিসাব খোলা হবে। আয়ের ৩৫ শতাংশ অর্থ বিদেশি মুদ্রা হিসাবে ও বাকিটা টাকা হিসাবে জমা রাখা যাবে। এর বিপরীতে ডেবিট কার্ড পাবেন ফ্রিল্যান্সাররা, যা দিয়ে দেশে-বিদেশে খরচ করা যাবে। পাশাপাশি এই হিসাবধারীদের ক্রেডিট কার্ড ও ব্যক্তিগত ঋণ দেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড।

আজ রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে এই সেবা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান লুৎফুল হাবিব, কান্ট্রি হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং বিটপী দাশ চৌধুরী, বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমানসহ খাতসংশ্লিষ্টরা।

অনুষ্ঠানে শুরুতে বিটপী দাশ চৌধুরী বলেন, ১২০ বছর ধরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কখনো ব্যাংকটির সেবা বন্ধ ছিল না। এখন ডিজিটাল সেবার দিকে প্রাধান্য দিচ্ছে ব্যাংক। ফ্রিল্যান্সারদের কাজের ধরনের সঙ্গে চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে। সে জন্য নতুন এই সেবা চালু হচ্ছে। এই সেবা ডিজিটাল মাধ্যমে পাওয়া যাবে। সে জন্য কাউকে ব্যাংকে আসতে হবে না।

ব্যাংকটির আমানত বিভাগের প্রধান নাভিদ হাসান বলেন, ঘরে বসে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের ঘরে বসে সেবা নেওয়ার সুযোগ এসেছে। ঘরে বসেই তাঁরা হিসাব খুলতে পারবেন। বিদেশ থেকে অর্থ আসতে ফরম সি পূরণ করতে হয়, তা-ও ঘরে বসে করা যাবে যাবে। কার্ড দিয়ে বিভিন্ন দেশের এটিএম থেকে টাকা তুলতে পারবেন। এসব হিসাবে মাশুল কাটা হবে না। ক্রেডিট কার্ড ও ব্যক্তিগত ঋণও দেওয়া হবে। দেশের অন্য কোনো ব্যাংকে ফ্রিল্যান্সারদের এত সুবিধা দিচ্ছে না।

ব্যাংকটির রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান লুৎফুল হাবিব বলেন, ‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশে এক শতকের বেশি বেশি সময় ধরে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রথম ঋণপত্র, প্রথম এটিএম, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড চালু করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। এখন বেসরকারি ব্যাংকের ২০-২৫ জন এমডি রয়েছেন, যাঁরা কোনো না কোনো সময় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বা গ্রিনলেজে কাজ করতেন। আমরা দেশের স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিয়ে যাচ্ছি। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড দেশের একমাত্র বিদেশি ব্যাংক, যাদের সব সেবা আছে। এখন আধুনিক ও ডিজিটাল সেবার দিকে নজর দিয়েছে। আমাদের ৭০ শতাংশ গ্রাহক ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা গ্রহণ করছেন। গত দুই বছরে শাখায় গ্রাহক আসা ৪৫ শতাংশ কমে গেছে।’

লুৎফুল হাবিব বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সাররা দেশের জন্য বিদেশি মুদ্রা আনছেন। ভারতের পরেই আমাদের দেশে বেশি আয় আসছে। উন্নত দেশে শ্রমের মূল্য অনেক বেশি। তাই আমাদের দেশে এই খাতের বিকশিত হওয়ার আরও সম্ভাবনা আছে। সে জন্য ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষ হিসাব সেবা চালু করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। ঘরে বসে বিনা মাশুলে মিলবে এই সেবা। শুধু সরকারি কর কাটা হবে।’

বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমান বলেন, ‘দেশে বসে কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কাজ পাচ্ছেন ফ্রিল্যান্সাররা। সে জন্য তাঁদের সম্মান দেওয়া উচিত। বিদেশ থেকে টাকা আনতে হয়রানি হতে হয়। এখন বিদেশি ব্যাংক এই সেবা দেওয়ায় অনেকে এই পেশায় আসতে আগ্রহী হবেন।’

এ পেশায় টিকে থাকার হার ৩৫ শতাংশ। সম্মান পেলে আরও অনেকে এই সেবায় থেকে যাবে বলে মনে করেন তানজিবা রহমান। অভিভাবকেরা সন্তানদের এই পেশায় পাঠাতে আগ্রহী হবেন। এখন দেশের সাড়ে ১০ লাখ মানুষ ফ্রিল্যান্সিং পেশার সঙ্গে যুক্ত। বছরে ১ বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলার আসে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। এখন আয়ের মাত্র ৩০ শতাংশ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে আসছে, কারণ ব্যাংকগুলো সহযোগিতা করছে না।

ডা. তানজিবা রহমান আরও বলেন, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও আইনজীবীরাও এখন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। এআইয়ের কারণে অনেক চাকরি চলে যাবে, তবে এআইয়ের পেছনে কাজ করার জন্য অনেক মানুষের প্রয়োজন হবে। ফ্রিল্যান্সার কত আয় করছেন, তা প্রচার না করে কী কাজ করছেন, তাঁর যোগ্যতা কী, সেটাও প্রচারের আহ্বান জানান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ