সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

দখলদার ইসরায়েল গাজায় যে ভয়াবহভাবে সামরিক অভিযান চালিয়েছে তা ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক। তিনি বলেন, এটি কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ’

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলে গাজা, ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে এ মন্তব্য করেন তিনি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশন (ওএইচসিএইচআর)- এর প্রতিবেদনে হামাসকে ৭ অক্টোবর থেকে গুরুতর লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তুর্ক বলেছেন, ‘হামাস ইসরাইলি ভূখণ্ডে নির্বিচারে প্রজেক্টাইল (ভূপৃষ্ঠ থেকে নিক্ষেপ করা মিসাইল বা রকেট) নিক্ষেপ করেছেন, যা যুদ্ধাপরাধের সামিল। ’

ইসরায়েলে পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১২০০ মানুষ নিহত হন। আর ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা।

ওইদিন থেকেই গাজায় প্রতিশোধমূলক হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। দীর্ঘ ১৫ মাসের এ হামলায় ৪৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন আর আহত হয়েছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ।

এদিকে, ওএইচসিএইচআর-এর প্রতিবেদনের বিষয়ে নিজেদের মত জানাতে কোনও প্রতিনিধি পাঠায়নি ইসরায়েল। চিলির প্রতিনিধি বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।

ইসরায়েল অবশ্য বরাবরই গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে এসেছে। তাদের দাবি, তাদের অভিযান কেবল হামাস সদস্যদের লক্ষ্য করে এবং বেসামরিক ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

তুর্ক বলেছেন, ‘গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা বিশাল – ঘর-বাড়ি থেকে শুরু করে হাসপাতাল, স্কুল পর্যন্ত। ’ ইসরাইলের আরোপিত বিধিনিষেধ একটি মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে বলেও জানান তুর্ক।

মানবাধিকার কমিশনের ৫৮তম কাউন্সিলে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে তুর্ক আরও কিছু গুরুতর উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন। প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, হামাস গাজায় মানবিক আইনের অন্যান্য লঙ্ঘনও করতে পারে। এ ধরনের লঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে বেসামরিক নাগরিক এবং সামরিক কার্যক্রম একই স্থানে পরিচালনা করা।

এনজে

.

উৎস: SunBD 24

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাইয়ে কিছু ক্ষেত্রে বিক্ষোভকারীদের খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়: জাতিসংঘ

গত জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকালে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল। এ সময় কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের খুব কাছে থেকে গুলি করে হত্যা করে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয়ের সাম্প্রতিক তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “...রোম সংবিধির ৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।” 

এতে আরো বলা হয়, কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার উদ্দেশ্যেই খুব কাছে থেকে তাদের গুলি করে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি ওএইচসিএইচআরের জেনেভা কার্যালয় থেকে ‘২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের বিক্ষোভের সাথে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন’ শীর্ষক তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে যে, অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী সামরিক রাইফেল ও স্বয়ংক্রিয় পিস্তল থেকে জনতার ওপর প্রাণঘাতী গুলি চালিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মাথা ও শরীর লক্ষ্য করে গুলি করা হয়।

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের শরীরের এসব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে শটগানের গুলি ছোড়ে। সাধারণত একাধিক বন্দুকধারী কয়েক রাউন্ড করে গুলি ছোড়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “যারা হামলা চালাতেন, তারা ও  তাদের কমান্ডাররা লক্ষ্যবস্তুতে থাকা জনতার কিছু সংখ্যক যেন মারা যায়, সে ব্যাপারে বিশেষ লক্ষ্য রাখতেন।”

আরো বলা হয়, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড আত্মরক্ষা বা অন্যদের প্রতিরক্ষা হিসেবে দেখানোর কোনো যুক্তি নেই। কারণ, হতাহতরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলেন। তারা সম্পত্তি ভাঙচুর করছিলেন না বা দাঙ্গাকারীও ছিলেন না। তারা কোনো হুমকিও ছিলেন না।”

ওএইচসিএইচআর জানায়, জুলাই মাসের বিক্ষোভের সময় বাংলাদেশে বিক্ষোভকারী ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্যাপক ও পদ্ধতিগত আক্রমণের অংশ হিসেবে হত্যা, নির্যাতন, কারারুদ্ধতা ও অন্যান্য অমানবিক কর্মকাণ্ডের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধির অনুচ্ছেদ ৭ (১) অনুযায়ী, একটি বেসামরিক জনসংখ্যার বিরুদ্ধে পরিচালিত ব্যাপক বা পদ্ধতিগত আক্রমণই মানবতাবিরোধী অপরাধ। 

ওএইচসিএইচআর জানায়, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনের সময় নির্দিষ্ট কিছু বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ করে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যা, নির্যাতন, কারাদণ্ড ও অন্যান্য অমানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছিল, যা রোম সংবিধির ধারা ৭ এর আওতায় পড়ে। 

এতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকালে নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যরা তাদের হেফাজতে বা নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যক্তিদের ওপরও নির্যাতন চালিয়েছে।

ওএইচসিএইচআর দাবি করেছে, বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ও পদ্ধতিগত আক্রমণ একটি সরকারি নীতি অনুসরণ করে পরিচালিত হয়েছিল বলে তাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে।

রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বিক্ষোভকে সহিংস ও বেআইনিভাবে দমন এবং ক্ষমতায় থাকার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করেন ও নির্দেশনা দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা পরিষেবা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বও সেই নীতি অনুসরণে সংঘটিত অপরাধ গোপন করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা চালায়, ইচ্ছাকৃতভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়, অন্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে এবং মিডিয়া, ভুক্তভোগী, ভুক্তভোগীর পরিবার ও আইনজীবীদের ভয় দেখায়।”

ঢাকা/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাইয়ে কিছু ক্ষেত্রে বিক্ষোভকারীদের খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়: জাতিসংঘ