খুলনায় প্রেমিকা সুরাইয়া আক্তার সীমার সঙ্গে দেখা করতে এসে লাশ হলেন রাজধানী ঢাকার বেসরকারি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাজকীর আহমেদ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুলনা নগরীর খানজাহান আলী থানার গিলাতলা বালুর ঘাট এলাকায় ভৈরব নদী থেকে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাজকীরের মামাতো ভাই আসিফ মাহমুদ নিহতের পরনে থাকা শার্ট-প্যান্ট দেখে লাশটি তাজকীরের বলে শনাক্ত করেন।

খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাজকীর আহমেদ গত ২১ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডির বাসা থেকে নগরীর গোয়ালখালী এলাকায় মামার বাড়িতে আসেন। সেখান থেকে খালিশপুরে প্রেমিকা সুরাইয়া আক্তার সীমার সঙ্গে দেখা করতে বের হন। এরপর থেকে গত ৭ দিন নিখোঁজ ছিলেন।

ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় শিক্ষার্থীর বাবা মুরাদ হোসেন গত ২২ ফেব্রুয়ারি খালিশপুর থানায় একটি জিডি করেন। পরবর্তীতে ২৫ ফেব্রুয়ারি ৭ জনকে আসামি করে অপহরণ মামলা করেন। ওই মামলায় তাজকীরের প্রেমিকা সীমাসহ ৩ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সীমার দাবি, তার মোবাইল ব্যবহার করে তার সাবেক স্বামী ইসমাইল হোসেন অভি তাজকীরকে ডেকে নিয়ে আসে। 

তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে অভি পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার কিছুর সময় আগে খানজাহান আলী থানার গিলাতলা বালুর ঘাট এলাকায় ভৈরব নদীর তীরে বস্তাবন্দি একটি লাশ আটকে যায়। স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দিলে পুলিশ সন্ধ্যায় গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। পরে নিহতের মামাতো ভাই আসিফ মাহমুদ সেটি তাজকীরের লাশ বলে শনাক্ত করেন। পুলিশ জানায়, নিহতের বুকসহ শরীরের একাধিক স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে।   

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (নর্থ) নাজমুল হাসান রাজীব জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে অর্ধগলিত লাশটি তাজকীরের কিনা। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমাকে হ্যান্ডকাফ পরানো অমর্যাদাকর

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হ্যান্ডকাফ দেখিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমাকে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়েছে। এটা আমার জন্য লজ্জাজনক ও অমর্যাদাকর।’ 

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যার অপরাধের মামলায় রোববার অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে শাজাহান খানকেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এ সময় হাতকড়া পরানো নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন আসামি, পুলিশ, প্রসিকিউশন।

এর আগে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শাজাহান খান, হানাসুল হক ইনুসহ ১৮ জনকে এদিন প্রিজন ভ্যান থেকে হাতকড়া পরিয়ে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নেওয়া হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে তাদের তোলা হয় কাঠগড়ায়। এর মধ্যে শাজাহান খানসহ কয়েকজনকে হাতকড়া পরানো অবস্থায় কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। 

ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, প্রিজন ভ্যানে থাকা অবস্থায় সাবেকমন্ত্রী-এমপিদের পেছনে হাতমোড়া করে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। যা লজ্জাজনক ও অমর্যাদাকর।  

এদিকে ট্রাইব্যুনালে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে এসব আসামিদের হ্যান্ডকাফ, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরানো হয়েছে। তবে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, সামনের দিনে এখানে আর হ্যান্ডকাফ পরানো যাবে না। যারা এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

শাহজাহান খান বলেন, ‘অতীতে আমরা রাজাকারদের হাতকড়া পরাইনি, আমাদের কেন হাতকড়া পরানো হয়েছে? এটা লজ্জাজনক।’ 

এ সময় মুহম্মদ ফারুক খানের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, ইতোপূর্বে এই আসামিদের হ্যান্ডকাফ ছাড়াই ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হত। কিন্তু কিছুদিন ধরে তাদের হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ট্রাইব্যুনালে আনা হচ্ছে। বিশেষ করে আজ কাঠগড়ায় হাজির করার পরেও কয়েকজন হ্যান্ডকাফ পড়ানো অবস্থায় ছিলেন। 

এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য জানতে চান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান। পুলিশের দুই সদস্য বলেন, পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে আসামিদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিতে হবে।

চেয়ারম্যান বলেন, উনাদের হ্যান্ডকাফ পরানোর প্র্যাকটিস তো এই ট্রাইব্যুনালে নেই, পরাচ্ছেন কেন? 

ট্রাইব্যুনালকে পুলিশ সদস্য নুরুন্নবী জানান, পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামিদের হ্যান্ডকাফ, হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে এভাবে হাজির করা হয়েছে। 

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আসামিদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের হ্যান্ডকাফ পরানোর নিয়ম রয়েছে। আর কোর্টরুমে আসার আগেই সেটা খোলা হয়। তবে পুলিশ সদস্যরা আসামিদের আজকের আচরণ নিয়ে যেটা আমাদের বলেছেন, তা বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা। 

এ সময় শাহজাহান খান বলেন, প্রিজন ভ্যান থেকে নামার আগেই আমাকে পেছনে দুই হাতমোড়া করে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়েছে। আর এজলাসে উঠানোর পর হ্যান্ডকাফ খোলা হয়েছে। আমি তখন পুলিশকে আপত্তি জানিয়ে বলেছি, তোমরা আমাকে নামার আগেই হ্যান্ডকাফ পরাচ্ছো কেন? তাহলে আমি কীভাবে গাড়ি থেকে নামবো। তারা আমার কোনো কথা শুনেনি। 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। পরিবারের আরও ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার ন্যূনতম মর্যাদাটুকু চাই। সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এ সময় প্রশ্ন করেন, ‘আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ দল?’

এদিন এই মামলার ১৭ আসামিকে কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তারা হলেন সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আনিসুল হক, ড. আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক দুই উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, ডা. দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, বিচারপতি এ এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, সাবেক এমপি সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিম, সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম। 

এছাড়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ