প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা থেকে খুলনায় এসে লাশ হলেন শিক্ষার্থী
Published: 28th, February 2025 GMT
খুলনায় প্রেমিকা সুরাইয়া আক্তার সীমার সঙ্গে দেখা করতে এসে লাশ হলেন রাজধানী ঢাকার বেসরকারি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাজকীর আহমেদ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুলনা নগরীর খানজাহান আলী থানার গিলাতলা বালুর ঘাট এলাকায় ভৈরব নদী থেকে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাজকীরের মামাতো ভাই আসিফ মাহমুদ নিহতের পরনে থাকা শার্ট-প্যান্ট দেখে লাশটি তাজকীরের বলে শনাক্ত করেন।
খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাজকীর আহমেদ গত ২১ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডির বাসা থেকে নগরীর গোয়ালখালী এলাকায় মামার বাড়িতে আসেন। সেখান থেকে খালিশপুরে প্রেমিকা সুরাইয়া আক্তার সীমার সঙ্গে দেখা করতে বের হন। এরপর থেকে গত ৭ দিন নিখোঁজ ছিলেন।
ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় শিক্ষার্থীর বাবা মুরাদ হোসেন গত ২২ ফেব্রুয়ারি খালিশপুর থানায় একটি জিডি করেন। পরবর্তীতে ২৫ ফেব্রুয়ারি ৭ জনকে আসামি করে অপহরণ মামলা করেন। ওই মামলায় তাজকীরের প্রেমিকা সীমাসহ ৩ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সীমার দাবি, তার মোবাইল ব্যবহার করে তার সাবেক স্বামী ইসমাইল হোসেন অভি তাজকীরকে ডেকে নিয়ে আসে।
তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে অভি পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার কিছুর সময় আগে খানজাহান আলী থানার গিলাতলা বালুর ঘাট এলাকায় ভৈরব নদীর তীরে বস্তাবন্দি একটি লাশ আটকে যায়। স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দিলে পুলিশ সন্ধ্যায় গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। পরে নিহতের মামাতো ভাই আসিফ মাহমুদ সেটি তাজকীরের লাশ বলে শনাক্ত করেন। পুলিশ জানায়, নিহতের বুকসহ শরীরের একাধিক স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (নর্থ) নাজমুল হাসান রাজীব জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে অর্ধগলিত লাশটি তাজকীরের কিনা। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মেরিন ড্রাইভে সাইক্লিস্টদের রোমাঞ্চকর সকাল
একপাশে সাগর, অন্যপাশে পাহাড়ের সারি। মাঝখানে দীর্ঘ সড়ক ধরে সাইকেল নিয়ে ছুটছেন কয়েক শ মানুষ। কে কার আগে গন্তব্যে পৌঁছাবেন সেই লক্ষ্যে ছুটছেন তাঁরা। দেশ-বিদেশের ৪০০ সাইক্লিস্ট নিয়ে আয়োজিত ‘মেরিন ড্রাইভ রেস ২০২৫’ ঘিরে আজ শুক্রবার সকালে এমনই দৃশ্য দেখা যায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে।
‘রাইড ফর গ্লোরি’ প্রতিপাদ্যে যৌথভাবে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। ছয়টি ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন সাইক্লিস্টরা। প্রতিযোগিতায় সার্বিক সহায়তা দেয় বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশন।
ভোর পাঁচটার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর পয়েন্টে জড়ো হতে থাকেন দেশ-বিদেশের সাইক্লিস্টরা। সকাল ছয়টায় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম। উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
পেশাদার ক্যাটাগরির সাইক্লিস্টরা দরিয়ানগর (প্যারাসেইলিং পয়েন্ট) থেকে শুরু করে টেকনাফের জিরো পয়েন্ট হয়ে বে-ওয়াচ হোটেলের সম্মুখে এসে সাইক্লিং শেষ করেন। পেশাদার গ্রুপের ফিনিশিং টাইম ছিল ৩ ঘণ্টা। আবার অপেশাদার ক্যাটাগরির প্রতিযোগীরা প্যারাসেইলিং পয়েন্ট থেকে হোটেল বে-ওয়াচ, বালিয়াখালী কাঁকড়া বিচ হয়ে আবার হোটেল বে-ওয়াচে সম্মুখে এসে শেষ করেন সাইক্লিং। তাঁদের ফিনিশিং টাইম ছিল আড়াই ঘণ্টা।
সকাল ১০টায় মেরিন ড্রাইভের ইনানীতে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এ সময় তিনি বলেন, কক্সবাজার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের একটি জায়গা। মেরিন ড্রাইভে প্রথমবারের মতো মেরিন ড্রাইভ রেসের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে দেশি-বিদেশি সাইক্লিস্টরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। এই প্রতিযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে।
দেশ ও সুস্থ জাতি গঠনে এ ধরনের প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আশা করি বাংলাদেশের যুবসমাজ প্রতিনিয়ত এই ধরনের শারীরিক কার্যকলাপে জড়িত থাকবে।’
প্রতিযোগীদের একজন তানহা আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভের এই রেস অসাধারণ। একপাশে সমুদ্র, অন্যপাশে পাহাড়ের সারি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন যে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে ৫৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলাম টেরই পাইনি। নারীরা যেন এ ধরনের আয়োজনে বেশি অংশ নিতে পারেন সে লক্ষ্যে উদ্যোগ ও প্রচারণা দরকার।’
প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বেশ কয়েকজন বিদেশি। তাঁদের একজন ব্রাজিলের নাগরিক লরা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ খুবই আন্তরিক। তাঁদের সঙ্গে এত সুন্দর মেরিন ড্রাইভে সাইক্লিং করা আনন্দের। কক্সবাজার খুবই সুন্দর।’
প্রতিযোগিতায় প্রফেশনাল (১৩-৪৪ বছর) ১১০ কিলোমিটারে নারী ও পুরুষ ক্যাটাগরিতে আলাদাভাবে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্পোরাল ফাতেমা খাতুন ও মিজানুর রহমান। ৫৫ কিলোমিটারের অ্যামেচার ক্যাটাগরিতে (১৩-৪৪ বছর) সেরা হন ব্রাজিলের লরা ও সৈয়দ মুবিন। এ ছাড়া নারী-পুরুষ উভয় ক্যাটাগরিতে (১৩-৪৪ বছর বয়সী) প্রথম ১০ জনকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সেনাবাহিনী প্রধান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রমুখ।