বাবার অণুপ্রেরণায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন আজম খান
Published: 28th, February 2025 GMT
‘রেল লাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’ কিংবা ‘আলাল ও দুলাল’ গানগুলোর কথা মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সংগীতের ‘গুরু’ আজম খানের কথা। এমন অসংখ্য গানের স্রষ্টা আজম খানের আজ জন্মদিন। বেঁচে থাকলে ৭৬ বছরে পা দিতেন বরেণ্য এই শিল্পী।
১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর আজিমপুরে জন্মগ্রহণ করেন পপসম্রাট আজম খান। তার পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। ১৯৫৫ সালে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলের শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। পরের বছর তার বাবা কমলাপুরে বাড়ি নির্মাণ করেন। এরপর পুরো পরিবার সেখানে চলে যান। এরপর কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাইমারিতে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সালে টি অ্যান্ড টি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। মুক্তিযুদ্ধের পর পড়ালেখা আর আগায়নি।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসংগীত প্রচার করেন। ১৯৭১ সালে বাবার অণুপ্রেরণায় যুদ্ধে যাবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন এবং সড়ক পথে আগরতলা চলে যান তিনি। এ সময় তার লক্ষ্য ছিল সেক্টর ২-এ খালেদ মোশাররফের অধীনে যুদ্ধে যোগদান করা। আজম খান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ২১ বছর বয়সে। ওই সময় তার গাওয়া গান প্রশিক্ষণ শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা যোগাত। তিনি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ভারতের মেলাঘরের শিবিরে। যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কুমিল্লায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেন। কুমিল্লার সালদায় প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন।
আরো পড়ুন:
বইটির সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িত: দিঠি আনোয়ার
বাংলাদেশি তরুণ গায়কের প্রশংসায় অরিজিৎ
এর কিছুদিন পর তিনি পুনরায় আগরতলায় যান। এরপর তাকে পাঠানো হয় ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য। আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটা সেকশনের ইনচার্জ। এ সময় ঢাকা ও এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন তিনি। বিশেষত তিনি যাত্রাবাড়ি-গুলশান এলাকার গেরিলা অপারেশনগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পান। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল তার নেতৃত্বে সংঘটিত ‘অপারেশন তিতাস’। আজম খান তার সঙ্গীদের নিয়ে পুরোপুরি ঢাকায় প্রবেশ করেন ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। এর আগে তারা মাদারটেকের কাছে ত্রিমোহনীতে সংগঠিত যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত করেন।
আজম খানের কর্মজীবনের শুরু প্রকৃতপক্ষে ষাটের দশকের শুরুতে। ১৯৭১ সালের পর তার ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’ এবং আখন্দ ভ্রাতৃদ্বয় (লাকী আখন্দ ও হ্যাপী আখন্দ) দেশব্যাপী সংগীতের জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বন্ধু নিলু আর মনসুর গিটারে, সাদেক ড্রামে আর নিজেকে প্রধান ভোকাল করে করেন অনুষ্ঠান। ১৯৭২ সালে বিটিভিতে ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি সরাসরি প্রচার হয়। ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় এ গান দুটি। দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়ে যায় তাদের দল।
১৯৭৪-১৯৭৫ সালের দিকে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে বাংলাদেশ (রেললাইনের ওই বস্তিতে) শিরোনামের গান গেয়ে হইচই ফেলে দেন। তার পাড়ার বন্ধু ছিলেন ফিরোজ সাঁই। পরবর্তীতে তার মাধ্যমে পরিচিত হন ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ ও পিলু মমতাজের সঙ্গে। একসঙ্গে বেশ কয়েকটা জনপ্রিয় গান করেন তারা। এরই মধ্যে আরেক বন্ধু ইশতিয়াকের পরামর্শে সৃষ্টি করেন একটি রক ঘরানার গান ‘জীবনে কিছু পাব না এ হে হে’।
১৯৮১ সালের ১৪ জানুয়ারি ঢাকার মাদারটেকে সাহেদা বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন আজম খান। তাদের সংসারে এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। আজম খান ক্রিকেটারও ছিলেন। ১৯৯১—২০০০ সালে তিনি গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের পক্ষে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন। এ ছাড়া তিনি ‘গডফাদার’ নামক একটি বাংলা সিনেমায় ভিলেনের ভূমিকায় অভিনয় করেন। বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।
আজম খানকে বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সংগীতের ‘গুরু’ হিসেবে গণ্য করা হয়। তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে— ‘রেল লাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’ ইত্যাদি। ২০১১ সালের ৫ জুন অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান পপ গুরু আজম খান।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এমবাপ্পের জোড়া গোলে বার্সাকে ছুঁলো রিয়াল
স্প্যানিশ লা লিগায় শনিবার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাতে জয় পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। কিলিয়ান এমবাপ্পের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ও জোড়া গোলে তারা ঘরের মাঠে লেগানেসকে হারিয়েছে ৩-২ গোলে। আর এই জয়ে লা লিগার পয়েন্ট টেবিলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে। পাশাপাশি তারা শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার পয়েন্টও ছুঁয়ে ফেলেছে।
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই রিয়াল আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে। ৩২ মিনিটে আরদা গুলারকে বক্সের মধ্যে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় তারা। আর পেনাল্টি থেকে এমবাপ্পে গোল করে এগিয়ে নেন দলকে।
তবে লেগানেস দ্রুতই সমতা ফেরায়। মাত্র এক মিনিট পর দিয়েগো গার্সিয়া ফাঁকা জায়গা থেকে বল জালে জড়িয়ে দেন। এরপর ৪১ মিনিটে অস্কার রদ্রিগেজের বাড়িয়ে দেওয়া বল পেয়ে দানি রাবা গোল করে লেগানেসকে এগিয়ে নেন ১-২ ব্যবধানে।
অবশ্য বিরতি থেকে ফিরেই রিয়াল মাদ্রিদ সমতা ফেরায়। ৪৭ মিনিটে মিডফিল্ডার জুদ বেলিংহাম ক্রসবারে লেগে ফিরে আসা বলে দুর্দান্ত শট নিয়ে গোল করেন। এরপর ৭৬ মিনিটে এমবাপ্পে ফ্রি কিক থেকে চমৎকার একটি গোল করে রিয়ালকে জয় এনে দেন ৩-২ ব্যবধানে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচ থেকে ৬৩ পয়েন্ট সংগ্রহ করে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে আছে রিয়াল। ২৮ ম্যাচ থেকে সমান ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে যথারীতি বার্সেলোনা আছে শীর্ষে। আজ রোববার রাতে ২৯তম ম্যাচে জিরোনার মুখোমুখি হবে তারা। এদিকে লেগানেস ২৯ ম্যাচ থেকে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে ১৮তম অবস্থানে থেকে রয়েছে অবনমনের শঙ্কায়।
ঢাকা/আমিনুল