১৯৭৮ সালের ৯ জুলাই ভারতের দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন উর্বশী ঢোলাকিয়া। মা-বাবা ও ভাইয়ের স‌ঙ্গে সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে খ্যাতনামা একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের সুযোগ পান উর্বশী। সেই বিজ্ঞাপনে দক্ষিণী অভিনেত্রী রেবতির সঙ্গে দেখা যায় তাকে।

১১ বছর বয়সে ‘শ্রীকান্ত’ শিরোনামে একটি ধারাবাহিকে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। এর  মাধ্যমে ছোট পর্দায় অভিষেক ঘটে উর্বশীর। তারপর অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ার মন স্থির করেন। বলিউড অভিনেতা রাজ বব্বরের স্ত্রী নাদিরা বব্বরের নাটকের দলে যুক্ত হন তিনি। পাশাপাশি ভরতনাট্যমেরও প্রশিক্ষণ নেন।

 

আরো পড়ুন:

আমার মনে কোনো ক্ষোভ নেই: ইয়ামি গৌতম

বাংলাদেশি তরুণ গায়কের প্রশংসায় অরিজিৎ

উর্বশীর বয়স যখন ১৫, তখন ‘দেখ ভাই দেখ’ নামে একটি হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান। সেই ধারাবাহিকে অভিনয়ের সময় এক ব্যক্তির প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করেন উর্বশী। বাড়ির অমতে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে করেন উর্বশী। সিদ্ধার্থ কানানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উর্বশী বলেন, “আমি লোকটিকে পাগলের মতো ভালোবাসতাম। সেই সময়ে পৃথিবীর অন্য একটি দিক দেখতে চেয়েছিলাম। তখন আমার বয়স ছিল ১৬ বছর। আমি ম্যাচিউর ছিলাম না।”

 


 
বিয়ের পর উর্বশীর জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। অভিনেত্রীর দাবি, “বিয়ের পর তার উপর মানসিক নির্যাতন চলত, যা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি।”

 

বিয়ের এক বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৭ বছর বয়সে জমজ সন্তানের জন্ম দেন উর্বশী। তবে সন্তান নিয়ে সংসারে অশান্তি সহ্য করতে পারছিলেন না। ১৮ বছর বয়সে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন এই অভিনেত্রী। বিচ্ছেদের পর দুই পুত্রকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান উর্বশী। জমজ সন্তানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অভিনয়ও চালিয়ে যেতে থাকেন। স্কুলের পড়াশোনাও ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাকে।

 

অর্থাভাবেও দিন কেটেছে উর্বশীর। এ অভিনেত্রীর ভাষায়, “তখন সন্তানদের পড়াশোনার জন্য ১৫০০ রুপিও ছিল না আমার কাছে। কী করব বুঝতে পারতাম না। সেই ভয়াবহ দিনের মধ্যেও নিজের জীবনশক্তি হারাইনি।”

 

২০০০ সাল থেকে একের পর এক হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করতে শুরু করেন উর্বশী। ‘ঘর এক মন্দির’, ‘মেহেন্দি তেরে নাম কি’, ‘কাভি সওতন কাভি সহেলি’, ‘দেশ মে নিকলা হোগা চাঁদ’-এর মতো একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করেন। ২০০১ সালে তার ক্যারিয়ার অন্যদিকে মোড় নেয়।

 

২০০১ সালে ছোট পর্দায় প্রচার শুরু হয় ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’ নামে একটি ধারাবাহিক। এতে খলনায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন উর্বশী। চরিত্রটির নাম— কমলিকা। তার অভিনয় এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে, চরিত্রের নামেই পরিচিতি পেয়ে যান উর্বশী। ধারাবাহিকের পাশাপাশি ‘বাবুল’, ‘ইজ্জত’ সিনেমায়ও অভিনয় করেন তিনি।

 

সিঙ্গেল মাদার হিসেবে দুই সন্তানকে মানুষ করছেন উর্বশী। অভিনয়ের পাশাপাশি বিগ-বসসহ বিভিন্ন রিয়েলিটি শোয়ে অংশ নেন। একটি নাচের অনুষ্ঠানে মডেল-অভিনেতা অনুজ সাচদেবার সঙ্গে পরিচয় হয়। সেখানে থেকে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। শোনা যায়, বিয়ের কথাও ভেবেছিলেন তারা। কিন্তু অনুজের মা পুত্রবধূ হিসেবে উর্বশীকে মেনে নিতে নারাজ। ফলে ভেঙে যায় এই সম্পর্ক। ৪৫ বছরের উর্বশী এখনো একা জীবনযাপন করছেন।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বছর বয়স য় কর ন র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ফিরে চায় বিটিআরসি

গঠনের পর থেকেই স্বাধীনভাবে কাজ করত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। ২০১০ সালে আইন সংশোধনের মাধ্যমে সেই ক্ষমতা খর্ব করে সংস্থাটিকে মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। এতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর পর থেকে এই সংস্থা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে পড়ে। দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিটিআরসি স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ফিরে পেতে চাচ্ছে। এ জন্য টেলিযোগাযোগ আইনের সংশোধন বাতিল চেয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বিটিআরসি। একই সঙ্গে সংস্থাটি ২০০১ সালের টেলিযোগাযোগ আইনকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে। 

কী ছিল সংশোধনীতে
১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বোর্ড অধ্যাদেশের মাধ্যমে টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বোর্ড গঠিত হয়। অধ্যাদেশটি ১৯৯৫ সালে সংশোধন করা হয়। ২০০১ সালে প্রণিত হয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন। এই আইনের অধীনে ২০০২ সালের ৩১ জানুয়ারি বিটিআরসি যাত্রা শুরু করে। আইনটি ২০১০ সালে সংশোধনের মাধ্যমে বিটিআরসির ক্ষমতা অনেকাংশে খর্ব করা হয়। 
২০০১ সালের টেলিযোগাযোগ আইনের প্রস্তাবনায় বলা ছিল, ‘যেহেতু বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও দক্ষ নিয়ন্ত্রণ এবং টেলিযোগাযোগ সেবা নিয়ন্ত্রণের নিমিত্তে একটি স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠা, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা, কার্যাবলি ও দায়িত্ব কমিশনের কাছে হস্তান্তর এবং আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে বিধান করা সমীচীন, সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল।’ ২০১০ সালে আইন সংশোধন করে প্রস্তাবনা অংশে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ‘ক্ষমতা’ পরিবর্তন করে ‘কতিপয় ক্ষমতা’ করা হয়। 
আইনের ৩১ ধারায় কমিশনের ক্ষমতা বিষয়ে বলা ছিল, কমিশন টেলিযোগাযোগ সেবা বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স প্রদান, তা বাতিল করা, বেতার ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ, টেলিযোগাযোগ সেবার ট্যারিফ, কলচার্জ নির্ধারণ ইত্যাদি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। এই ক্ষমতা আংশিক খর্ব করে সংশোধিত আইনে লাইসেন্স দেওয়ার, লাইসেন্স হস্তান্তর বা বাতিল করার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন নেওয়ার বিধান করা হয়। মূল ১ ধারায় শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন’। ২০১০ সালে এটা পাল্টে করা হয় ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন’। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা সেই সময় এ ধরনের আইন সংশোধনের উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করে। 

বিটিআরসির উদ্যোগ
১৬ এপ্রিল বিটিআরসি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে একটি পত্র দেয়। সংস্থাটির মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুণ্ডু স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে বলা হয়, টেলিযোগাযোগ খাতে সম্পদের সুষম বণ্টন এবং সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনভাবে কাজ করা অপরিহার্য, যা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত শতাধিক সদস্য রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করেছে। টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে বিভিন্ন নীতিমালা, নির্দেশিকা, গাইডলাইন ইত্যাদি প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ আবশ্যক। কিন্তু ২০১০ সালে সংশোধনের মাধ্যমে এ বিষয়ে সরকারের পূর্বানুমোদন-সংক্রান্ত বিধান যুক্ত করা হয়। এতে লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন, প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, লাইসেন্সের নাম পরিবর্তন এবং ট্যারিফ অনুমোদনসহ বিভিন্ন অপারেশনাল কাজে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। 
চিঠিতে আরও বলা হয়, গত ৭ থেকে ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের সংস্কৃতির বিষয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। 
সংশোধিত আইন ২০১০ দ্রুত বাতিল করার জন্য টেলিযোগাযোগ  মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বিটিআরসি। পাশাপাশি ২০০১ সালের আইন যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিচ্ছে বিটিআরসি। 
বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী গত শনিবার এক সেমিনারে বলেন, টেলিযোগাযোগ আইন যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

সংশোধিত খসড়া
সূত্র জানিয়েছে, ২০০১ সালের আইনের সংশোধনে ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২৮৭তম কমিশন সভায়। কমিটি গত জানুয়ারি মাসে একটি সংশোধিত খসড়া কমিশনে জমা দেয়। কমিশন গত ১৩ জানুয়ারি এই খসড়া অনুমোদন করে টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠায়। এখন তা মন্ত্রণালয়ে আটকে রয়েছে। 
খসড়ায় আইনের ২ ও ১৮ ধারা সংশোধন করে ওটিটি, ডিজিটাল সেবা,  ভ্যালু এডেড সার্ভিস ইত্যাদি নতুন প্রযুক্তি ও সেবা-সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের পরিবর্তে কমিশন যুক্ত করা হয়েছে।  সরকারের পূর্বানুমোদনের শর্ত বাদ দেওয়া হয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ফিরে চায় বিটিআরসি