Prothomalo:
2025-04-24@00:44:09 GMT

মেলায় বিদায়ের সুর

Published: 28th, February 2025 GMT

এবার শনিবার ছুটির দিনে শুরু হয়েছিল অমর একুশের বইমেলা। শেষও হচ্ছে আরেক ছুটির দিন আজ শুক্রবারে। বেলা ১১টায় শুরু হবে শিশুপ্রহর দিয়ে, মেলা চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।

গতকাল থেকেই মেলায় ছিল বিদায়ের আবহ। প্রকাশকেরা খুশি হতে পারলেন না মেলা নিয়ে। এবার লেখকদেরও উপস্থিতি দেখা গেল না বিশেষ। তবে লোকসমাগম হয়েছিল অনেক। সে তুলনায় বেচাকেনা অল্প। প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহারের সঙ্গে কথা হলো সন্ধ্যায়। তিনি বললেন, মেলার আবার বারোয়ারি চরিত্র ফিরে এসেছে। মানুষ অনেক এসেছে, তবে যাঁরা প্রকৃতই বই পছন্দ করেন, কেনেন—তেমন মানুষের উপস্থিতি খুব কম। যাঁরা নির্দিষ্ট কোনো লেখক বা বিষয় নিয়ে বই করেন, তাঁদের বিক্রি সবচেয়ে কম। যাঁরা বিচিত্র ধরনের বই করেছেন, তুলনামূলকভাবে তাঁদের বিক্রি ভালো।

শিশুসাহিত্যিক দন্ত্যস রওশন বললেন, এবার মেলার ব্যবস্থাপনায়, পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল। অনেক অপ্রিয় ঘটনা ঘটেছে, তার একটা প্রভাব পড়েছে বিক্রিতে।

বাতিঘরের প্রকাশক দীপঙ্কর দাশ ও প্রধান নির্বাহী জাফর আহমদ রাশেদ জানালেন, মেলার বিক্রি নিয়ে তাঁরা হতাশ। এতটা নেমে যাবে বিক্রি, তা ভাবনাতেই ছিল না। মেলার পরিকল্পনা নিয়ে আয়োজকদের ঘাটতি ছিল।

প্রকাশদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, বিক্রি গত বছরের তুলনায় এক–তৃতীয়াংশের মতো। নবযুগের প্রকাশক অজিত রায় নন্দী, অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা, স্বপ্ন’৭১ এর প্রকাশক আবু সাঈদসহ ছোট–বড় অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রকাশক ও কর্মকর্তারা জানালেন, অনেকেরই এবার লোকসান হবে। বিশেষ করে ছোট প্রকাশকদের অবস্থা খারাপ। তবে বই বিক্রি কেন এমন ব্যাপক কমে গেল, সে বিষয়টি তাঁদের কাছেও পরিষ্কার নয়।

এ পরিস্থিতিতেও প্রচুর নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল মেলার তথ্যকেন্দ্রে নতুন বই এসেছে ১৭৬টি। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত নতুন বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৬৫। নতুন বই তিন হাজারের ঘর পেরিয়ে যাবে শেষ দিনে। কালও অনেক নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হলো। বিকেলে অন্যপ্রকাশের স্টলে মোড়ক উন্মোচন হলো গীতিকার আসিফ ইকবালের আত্মোন্নয়নমূলক বই যদি লক্ষ্য থাকে অটুট। লেখকের সঙ্গে শিল্পী ফাহমিদা নবী, লুৎফর হাসান, প্রকাশক মাজহারুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সায়মা রহমান তুলির বই একাকিত্ব ও মনের যত্ন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হলো সন্ধ্যায় স্বপ্ন ’৭১–এর স্টলে। এখান থেকে এবার এসেছে জিয়াউল সরকারের ব্যতিক্রমী ধারার গল্পগ্রন্থ সুরতহাল।

এবার নতুন বইগুলোর মধ্যে জলধী এনেছে সেলিম মোরশেদের সাহিত্য সংগ্রহ, নবযুগ এনেছে ড.

বিনয়েন্দ্র নাথ চৌধুরীর বৌদ্ধ সাহিত্য, মনীন্দ্র কুমার গুপ্তর ভারতীয় সাধক, প্রথমা এনেছে এ কে এম সুফিউল আনামের ইয়েমেনে অপহৃত এক বাঙালির কাহিনি: অপহরণের ৫৪৫ দিন, ইউপিএল এনেছে শওকত হোসেন মাসুমের কেলেঙ্কারির অর্থনীতি: বাংলাদেশের অর্থনীতির পেছনের অনর্থনীতি, ঋদ্ধি এনেছে আলমগীর সাত্তারের ছোটদের এরোপ্লেন আবিষ্কারের কাহিনি, মূর্ধন্য এনেছে ইকবাল খোরশেদের কবিতা বুকপকেটের পদ্য, পুঁথিপ্রকাশ এনেছে ইমরান মাহফুজের গণ-অভ্যুত্থানবিষয়ক বই নির্মম জুলাই ও গণ-অভ্যুত্থানে আহত লেখক, পাঠক সমাবেশ এনেছে হাসান হাফিজের স্মৃতির সময়।

আফ্রিকা দক্ষিণ

লেখক মো. তৌহিদ হোসেন তাঁর কূটনৈতিক জীবনের শেষ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর ব্যাপক পরিভ্রমণের সুযোগ হয়। নিজের আগ্রহে অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে দেশগুলোর মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। সে অভিজ্ঞতার বিবরণই সরল ও অনাড়ম্বর ভাষায় কিন্তু আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন আফ্রিকা দক্ষিণ বইয়ে। বইটি সাধারণ পাঠকের কাছে এক অজানা জগতের দ্বার উন্মোচন করবে। মো. তৌহিদ হোসেন বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিচারে ধীরগতি, হতাশা কাটে না ভুক্তভোগীদের

রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বিচার শেষ হয়নি এখনও। এ ঘটনার তিনটি মামলার একটি উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে আটকে আছে। সাক্ষী না আসার কারণে অন্য দুটির বিচার চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগও উঠছে।

এদিকে মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানা ছাড়া অন্য সবাই জামিনে মুক্ত। এমন পরিস্থিতিতে দেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্র্যাজেডির বিচার নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। হাজারো ভুক্তভোগী শ্রমিক ও হতাহতের পরিবারে দেখা দিয়েছে হতাশা।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভারে আট তলাবিশিষ্ট রানা প্লাজা ধসে পড়লে ১ হাজার ১৩৬ পোশাক শ্রমিক নিহত হন। পঙ্গুত্ববরণ করেন ১ হাজার ১৬৯ জন। জীবিত উদ্ধার করা হয় প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিককে। ঘটনার পরের দিন অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে আরেকটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। দুর্নীতি দমন কমিশন ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে মামলা করে। হত্যা মামলার ৩৯ আসামির মধ্যে কারাগারে আছেন কেবল রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। অন্যদের মধ্যে সাতজন পলাতক এবং ৩১ জন জামিনে আছেন। 

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিনুল হক আমিন বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার কারণে ভয়াবহ এই ট্র্যাজেডির বিচার আজও শেষ হয়নি। বিচার বিভাগেরও দায় রয়েছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার চাইলে বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব।’ 

দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করেছেন সাভারের শিউলি খানম। এক যুগেও বিচার না হওয়ায় তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আমার ডান পাশ অবশ হয়ে গেছে। ভারতে গিয়ে তিনবার চিকিৎসা নিয়েছি, চার মাস পর আবার যেতে হবে।’ 

প্রায় সাত বছর আগে শিউলির স্বামী মারা গেছেন। এখন তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং সুচিকিৎসা প্রত্যাশা করেন তিনি।

হত্যা মামলার পরিস্থিতি

হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ভবন মালিক, গার্মেন্ট মালিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের ৪১ জনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বর্তমানে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৯৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। 

১৫ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল, কিন্তু সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন আগামী ১৯ মে।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবুল কালাম খান সমকালকে বলেন, ‘মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য এখনও নেওয়া হয়নি। বিচার শেষ করতে হলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।’

তিনি জানান, সাক্ষীরা হাজির না হলে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে। এতে সাক্ষী অনুপস্থিতির সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে।

ইমারত আইনে মামলায় স্থগিতাদেশ

ভবন নির্মাণে ত্রুটি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে করা মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ জুন ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। তবে চার্জ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। এই স্থগিতাদেশ এখনও প্রত্যাহার না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ইশতিয়াক হোসেন বলেন, ‘উচ্চ আদালত ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শিগগির অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে হাইকোর্টে আবেদন করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হবে।’

ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলায়ও ধীরগতি

রানা প্লাজা ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে করা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ জিয়াউর রহমানের আদালতে। ২০১৭ সালের ২১ মে সোহেল রানাসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন (জাহাঙ্গীর) সমকালকে বলেন, ‘গত ২৪ মার্চ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল, কিন্তু সাক্ষী উপস্থিত হননি। আগামী ১২ মে পরবর্তী শুনানি হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ