সুদ আয়ে রেকর্ড মুনাফা মেঘনা পেট্রোলিয়ামের
Published: 28th, February 2025 GMT
ব্যাংকে রাখা আমানতের সুদ বেড়ে যাওয়ায় মুনাফায় বড় উল্লম্ফন ঘটেছে সরকারি কোম্পানি মেঘনা পেট্রোলিয়ামের। গত ১০ বছরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসেই (জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির মুনাফা প্রথমবারের মতো ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সুদ আয়ে ভর করেই এ কোম্পানি এই রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা করেছে।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেঘনা পেট্রোলিয়াম চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকে আমানত রেখে ৩২২ কোটি টাকা সুদ পেয়েছে। এতে মুনাফার পরিমাণ ৩০১ কোটি টাকা, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের ১৮৯ কোটি টাকার চেয়ে ১১২ কোটি টাকা বা ৫৯ শতাংশ বেশি। মুনাফায় উল্লম্ফনে বড় ভূমিকা ছিল কোম্পানিটির ব্যাংকে রাখা আমানতে বিপরীতে পাওয়া সুদের।
মেঘনা পেট্রোলিয়াম গত বুধবার তাদের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বরে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের হাতে নগদ ও নগদের সমপরিমাণ অর্থ ছিল ৪ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। এই অর্থের বড় অংশই কোম্পানিটির ব্যাংকে আমানত হিসেবে জমা রেখেছিল। তাতে উল্লেখিত ছয় মাসে সুদ পেয়েছে ৩২২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে কোম্পানিটির হাতে নগদ ও নগদ সমতুল্য অর্থের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২০১ কোটি টাকা। তার বিপরীতে ২২৪ কোটি টাকার সুদ পেয়েছে। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির সুদ আয় ৯৮ কোটি টাকা বেড়েছে।
মেঘনা পেট্রোলিয়ামের গত ১০ বছরের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫ সালের পর থেকে ছয় মাসের হিসাবে কোম্পানিটি সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে ২০২৪ সালের শেষ ছয় মাসে। তাতে ১০ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির অর্ধবার্ষিক মুনাফা তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ২০১৫ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে কোম্পানিটির মুনাফা ছিল ৯১ কোটি টাকা। এরপর ২০১৮ সাল পর্যন্ত মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। মাঝে ২০১৯ ও ২০২০ সালে পরপর দুই বছর অর্ধবার্ষিক মুনাফা কমেছে। তবে ২০২১ সাল থেকে আবারও ধারাবাহিকভাবে তা বাড়তে শুরু করে, যা এবার প্রথমবারের মতো ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
তবে এক বছরের ব্যবধানে এক লাফে কোম্পানিটির মুনাফা ১১২ কোটি টাকা বাড়লেও সেই তুলনায় ব্যবসা বাড়েনি। গত বছরের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মেঘনা পেট্রোলিয়াম ১৪৩ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১১৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে ২৫ কোটি টাকা।
কোম্পানিটির শেয়ারের এখন যে বাজারমূল্য, তা এককথায় অবমূল্যায়িত। এ ধরনের শেয়ারে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগের ঝুঁকি খুবই কম।শাকিল রিজভী, পরিচালক, ডিএসইমেঘনা পেট্রোলিয়াম সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা জ্বালানি তেল দেশজুড়ে সরবরাহ ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিটি। তাদের আয়ের বড় উৎস জ্বালানি তেল বিক্রির কমিশন আয়। মেঘনা পেট্রোলিয়ামের পাশাপাশি যমুনা অয়েল ও পদ্মা অয়েল একই ধরনের ব্যবসা করে।
এদিকে মুনাফায় বড় লাফের পরও শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দামে তার খুব একটা ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৫০ পয়সা কমে হয়েছে ২০৬ টাকা।
রেকর্ড পরিমাণ মুনাফার কারণে শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও কমে ৪-এর নিচে নেমে এসেছে। অনিরীক্ষিত অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গতকাল কোম্পানিটির পিই রেশিও হয়েছে ৩ দশমিক ৭। এ কারণে শেয়ারবাজার বিশ্লেষকেরা কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করেন। তাঁরা বলছেন, শেয়ারবাজারে যে কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত যত কম, সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ তত বেশি ঝুঁকিমুক্ত।
এ নিয়ে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, কোনো শেয়ারের পিই রেশিও ৪-এর নিচে থাকা মানে বিনিয়োগের জন্য ওই শেয়ার খুবই উপযোগী ও লোভনীয়। কোম্পানিটির শেয়ারের এখন যে বাজারমূল্য, তা এককথায় অবমূল্যায়িত। এ ধরনের শেয়ারে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগের ঝুঁকি খুবই কম। বাজারে এ ধরনের বিনিয়োগযোগ্য শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়লে তাতে বিনিয়োগকারী ও বাজার উভয়ই উপকৃত হবে।
সরকারি এই কোম্পানি ২০০৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এটি ভালো মানের কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত। পাশাপাশি ঢাকার বাজারের সবচেয়ে ভালো মানের ৩০ কোম্পানির একটি। সর্বশেষ গত জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছর শেষে কোম্পানিটি তার শেয়ারধারীদের জন্য ১৭০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই কোম্পানির শেয়ারের প্রায় ৫৯ শতাংশ রয়েছে সরকারের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ৮ শতাংশ ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারী ও অল্প কিছু শেয়ার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর র ব যবধ ন জ ল ই ড স ম বর পর ম ণ ছয় ম স ব যবস ধরন র সরক র ক বছর
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের অর্থনীতিতে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আরেকটি পূর্বাভাস
২০২৫–২৬ অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতিতে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভারতের উন্নয়ন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতিপ্রকৃতি ও অর্থনৈতিক নীতিমালা পর্যালোচনা করে থাকে।
ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচের প্রতিবেদনে অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষা খাতের উন্নয়ন নিয়েও জোর দেওয়া হয়েছে। তারা বলছে, এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে সরকারের শিক্ষাব্যয় ২০৪৮ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের ৬ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রয়োজন রয়েছে। খবর ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের
প্রতিষ্ঠানটির নতুন পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ১ এপ্রিল শুরু হতে যাওয়া ২০২৫–২৬ অর্থবছরে ভারতীয় অর্থনীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচ বেশ জোর দিয়েই বলেছে, মানবপুঁজি উন্নয়নকে সমর্থন করে—এমন একটি সুপরিকল্পিত রাজস্ব কৌশল প্রয়োজন, যা আর্থিক কার্যক্রমে গতিশীলতা বজায় রাখে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির চলতি মার্চ সংস্করণে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ সমাপ্য অর্থবছরে ভারতের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০২৫–২৬ অর্থবছরে খানিক বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশে উন্নীত হবে। তবে ওই হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ভারতের রাজস্ব নীতি পুনর্বিন্যাস করতে হবে, যাতে বিকশিত ভারত অভিযাত্রা সফল করে তোলা যায়।
গত মাসে জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের (এনএসও) সংশোধিত প্রাক্কলনে ২০২৩ থেকে ২০২৫ অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, ৯ দশমিক ২ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৪–২৫ অর্থবছরের শেষ ত্রৈমাসিক অক্টোবর–ডিসেম্বরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমক ২ শতাংশ হয়েছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এই হার চতুর্থ ত্রৈমাসিক তথা জানুয়ারি–মার্চে আরও বেড়ে ৭ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচ। তবে আগামীকাল সোমবার শেষ হতে যাওয়া চলতি অর্থবছরের জন্য ভারতের জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় (এনএসও) বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে জিডিপিতে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বেসরকারি পর্যায়ের চূড়ান্ত ভোগব্যয়ে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অবশ্য ভারতের অর্থনীতিতে এত উচ্চ প্রবৃদ্ধি আর কখনো দেখা যায়নি।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা ফিচ রেটিংও ভারতের অর্থনীতি নিয়ে আগামী দুই বছরের জন্য পূর্বাভাস দিয়েছে। তারা বলেছে, ২০২৫-২৬ আর্থবছরে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর পরের অর্থাৎ ২০২৬-২৭ অর্থবছরে তা ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে যেতে পারে। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।