প্রত্যেক মানুষের জীবনেই একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে। আপনিও নিশ্চয় ব্যতিক্রম নন। সফল ব্যক্তিরা বলেন, নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে জীবনে শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন। আর শৃঙ্খলা আনার জন্য প্রয়োজন একটি রুটিন ওয়ার্ক। কীভাবে একটি কার্যকর রুটিন ওয়ার্ক মেনে চলবেন এবং নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে আরও কি কি মেনে চলা প্রয়োজন, জেনে নিন।

লক্ষ্য স্থির করা: বড় কোনো অর্জন করতে চাইলে কি চান, কেন চান আর কীভাবে আপনার এই চাওয়া পূরণ করবেন; এসব প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বা স্বপ্ন বাস্তবায়নে কখন কতটুকু সময় দেবেন তা ঠিক করে নিতে পারেন। 

ডেইলি রুটিন: দিনের শুরুটা কীভাবে করবেন, প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বের ভিত্তিতে কোন কাজ কখন সম্পাদন করবেন এই সবকিছু ডেইলি রুটিনে লিখে রাখতে পারেন। এবং সেই অনুযায়ী  ধ্যান, শরীরচর্চা, পড়াশোনা, কাজ, আউটিং সবকিছু করতে পারেন।  বড় লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ধাপে ধাপে কাজ এগিয়ে নিতে পারেন।
শৃঙ্খলা মেনে চলুন: গবেষকেরা বলছেন অনুপ্রেরণার আয়ুষ্কাল খুব কম হয়ে থাকে। কারও অনুপ্রেরণায় কাজ শুরু করলে ধীরে ধীরে ইচ্ছা-শক্তি কমে আসতে পারে। তাই অনুপ্রেরাণাকে বড় করে না দেখে নিজের সিদ্ধান্তকে বড় করে দেখতে পারেন। এবং লক্ষ্যে পৌঁছাতে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ এগিয়ে নিতে পারেন।  

আরো পড়ুন:

রোজা রাখলে শরীরে যেসব পরিবর্তন আসে 

রান্নায় হলুদ বেশি হয়ে গেলে করণীয়

পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ: প্রযুক্তির কল্যাণে পুরো পৃথিবীর কোথায় কখন কোন বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে সেগুলো ঘরে বসেও জানা যায়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক মিথ্যা খবর ভেসে বেড়ায়। এসব খবর দেখার ফলে আপনার মনে অস্থিরতা তৈরি হতে পারেন। সুতরাং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় দেওয়া ঠিক নয়। 

গবেষকেরা বলেন, কঠিন কাজগুলো আগে করলে উৎপাদনশীলতা অনেক বেড়ে যায়। 
 মানব জীবন কেবল মাত্র সুশৃঙ্খলভাবে এগোতে জানে না, মাঝে মধ্যে এই জীবনের একটু বিরতি প্রয়োজন হয়। একটানা মানসিক চাপ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে কাজ করে গেলে কাজের মান পড়ে যেতে পারে, মনে ও শরীরে ক্লান্তি ভর করবে। এতে উৎপাদনশীলতা কমে যাবে। তাই বিরতি নেওয়া খুব প্রয়োজন।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ঢেকে রাখা সেই মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরালে শেখ মুজিবের স্মৃতিচিহ্ন ভেঙে ফেলা হলো   

লালমনিরহাট শহরের শিশুপার্ক সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। ২৬ মার্চ জেলা প্রশাসন ওই ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি ও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কাপড় দিয়ে ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থান নেয় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম পার না হতেই রোববার জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্বের স্মৃতিচিহ্ন  ম্যুরাল ভাঙার কাজে হাত দেয়। 

এর আগে শনিবার দুপুুরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মঞ্চে দু’টি পক্ষ একই সময়ে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দুপুর সাড়ে ১১টায় ওই এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি করতে পারেননি। 

মুক্তিযুদ্ব স্মৃতি মঞ্চে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমনিরহাট শাখার প্রধান সমন্বয়ক হামিদুর রহমান ম্যুরাল অপসারণ ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরাতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, ‘এই ম্যুরালটি স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বহন করে না। বাকশাল প্রতিষ্ঠাকারী স্বৈরাচার শেখ মুজিবুর রহমানকে অতিরঞ্জিত উপস্থাপন ও ইতিহাস বিকৃতি করায় এর আগেও ১৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ম্যুরালটি ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫২, ৭১ এর সকল সত্য ইতিহাস অক্ষুণ্ণ রেখে অতিরঞ্জিত অংশ ও স্বৈরাচারের চিহ্ন ঢেকে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুরো দেয়াল ঢেকে দেয়, যা অনাকাঙ্খিত। কিছু স্বৈরাচারের দোসর তাদের ব্যক্তিগত  আক্রোশ, স্বার্থ উদ্ধার ও বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমকে ভুলভাবে প্রচার করতে থাকে এবং বিদ্বেষবশত মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবগত ছিল না, তাঁরা এমন কোনো দাবিও করে নাই। স্বৈরাচারের সকল চিহ্ন ও ম্যুরাল অপসারণ ছাত্রজনতার দাবি ও গণআকাঙ্খা।’ 

সংবাদ সম্মেলন শেষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধ এলাকায় যান। সেখানে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, ম্যুরালের মধ্যেই বৈষম্য রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানে যেমন অবদান রয়েছে তেমনি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানেরও অবদান রয়েছে। অথচ ম্যুরালে জিয়াউর রহমানের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। এটা বৈষম্য। এই ম্যুরাল রাখা ঠিক নয়।   

শনিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গেলে তোপের মুখে পড়েন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই ম্যুরালে ৫২ ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, ৭১ এর গণহত্যা, বিজয় উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দিয়ে চরম ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছেন জেলা প্রশাসন। পরে তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর দায় চাপিয়েছেন। ৭১ ও ২৪কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জাতিকে বিভাজিত করে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ৭১ এর অস্তিত্ব ধরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে অন্যগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো মতানৈক্য নেই। 
 
২৬ মার্চ বুধবার সকালে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দিতে গেলে কাপড় দিয়ে মুরাল ঢেকে রাখার বিষয়টি চোখে পড়ে। সনাক সদস্যরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিরে যান। পরে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দেন তাঁরা। গত ১৬ ডিসেম্বরও একই রকম ঘটনা ঘটায় জেলা  প্রশাসন। ১৪০ ফুট দীর্ঘ ওই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, উদিত সূর্য, ৭১ এর গণহত্যা, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানি, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।  

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দারের বক্তব্য জানতে তাঁর ফোনে মেসেজ এবং ফোন দিলে কোনো সাড়া মেলেনি।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ