ছোট ব্যবসায়ী বলির পাঁঠা, ধরাছোঁয়ার বাইরে হোতারা
Published: 28th, February 2025 GMT
শুল্ককর ছাড়ের সুবাদে পর্যাপ্ত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। তবে আমদানির তথ্যের সঙ্গে মিলছে না বর্তমান বাজারের চিত্র। রমজান ঘনিয়ে এলেও স্বাভাবিক হচ্ছে না সরবরাহ। ফলে খুচরা বাজারে হন্যে হয়ে খুঁজেও তেল কিনতে পারছেন না ভোক্তা। সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে বাজার থেকে ভোজ্যতেল উধাও। সরকারি সংস্থাগুলো খুচরা পর্যায়ে ছোট ব্যবসায়ীদের সামান্য জরিমানা করেই শেষ করছে দায়িত্ব। তাতে ছোটরা বলির পাঁঠা হলেও হোতাদের টিকিটিও ছুঁতে পারছে না প্রশাসন।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ভোক্তা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার তদারকিতে কাগজে-কলমে কয়েকটি সংস্থা দায়িত্বে রয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে ভোক্তা অধিকারের কয়েকটি রুটিন অভিযান ছাড়া বাকিদের নেই তোড়জোড়। তদারকির প্রধানের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসন যেন ঘুমে। নড়াচড়া নেই বাজার মনিটরিংয়ে গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্সেরও। তদারককারীদের এমন গা-ছাড়া ভাবের খেসারত দিচ্ছেন ভোক্তা। চট্টগ্রামের বাজার থেকে তেল উধাও। একই রকম তথ্য মিলেছে ঢাকায়ও।
তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছে, কারসাজির নেপথ্যে রয়েছে ভোজ্যতেল নিয়ন্ত্রণকারী শিল্প গ্রুপ, মিল মালিক ও ডিলাররা। তাদের শনাক্ত করার বিষয়ে কাজ চলছে।
রমজানের বাজারে তেলের সরবরাহ ঠিক রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট ১৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। তাতে আমদানি বেড়েছে। এনবিআরের তথ্যমতে, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি জানুয়ারি পর্যন্ত এই তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন। এর মধ্যে গত ৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনা থেকে এমটি আরডমোর শায়ানি ও এমটি ডাম্বলডোর নামের দুটি জাহাজে আনা হয় সাড়ে ২১ হাজার টন। ১০ ডিসেম্বর ব্রাজিল থেকে এমটি সানি ভিক্টরি ও আর্জেন্টিনা থেকে এমটি জিঙ্গা থ্রেশার জাহাজে এসেছে ৩০ হাজার ৬০০ টন। এই চার জাহাজে সবচেয়ে বেশি তেল এনেছে তিনটি শিল্প গ্রুপ। এর মধ্যে টি কে গ্রুপ এনেছে ২৫ হাজার টন, সিটি গ্রুপ ২০ হাজার টন এবং মেঘনা গ্রুপ ৭ হাজার টন।
এত পরিমাণে তেল আমদানির পরও বাজারে সংকট চলছে। গতকাল চট্টগ্রামের বেশির ভাগ বাজারে মিলছে না এক ও দুই লিটারের বোতল। কয়েকটি স্থানে পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
যদিও বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, রমজান সামনে রেখেই স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। সংকট হওয়ার কথা নয়। কিছু ব্যবসায়ীর মজুতের প্রবণতার কারণেই সংকট তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রামের বেশির ভাগ বাজারে ভোজ্যতেল না পাওয়ার অভিযোগ ভোক্তাদের। সরবরাহ সংকটের জন্য কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ও বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ, মিল মালিক ও ডিলাররা জড়িত থাকার অভিযোগ জানালেও নেওয়া হচ্ছে না কার্যকর পদক্ষেপ। উল্টো খুচরা বাজারে গিয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের সামান্য জরিমানা করে দায় সারছে ভোক্তা অধিদপ্তর।
চট্টগ্রাম কাজীর দেউরি বাজারের এমএস স্টোরের মালিক লোকমান হোসেন বলেন, সবসময় বলির পাঁঠা হয় ছোট দোকানদাররা। অথচ কারসাজি করে শিল্প গ্রুপ, মিল মালিক ও ডিলাররা। তাদের কাউকে ধরারও রেকর্ড নেই। বহদ্দারহাটের আরএন ট্রেডিংয়ের মালিক মো.
ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন সমকালকে বলেন, এক দিন পরই রমজান। এখনও স্বাভাবিক হয়নি তেলের বাজার। আমরা একাধিকবার প্রশাসনকে বলেছি এর পেছনে কালো হাত আছে শিল্প গ্রুপ ও মিল মালিকদের। কিন্তু তাদের ব্যাপারে এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রমজানের আগে তেলের কৃত্রিম সংকট দাম আরেক দফায় বাড়ানোর পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছু নয়। সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ার দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না।
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক ফয়েজ উল্লাহ বলেন, এ বিষয়টি উদ্বেগের, তদারকি চলছে। কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছি। ছোটদের জরিমানা করা হলেও বড়দের ব্যাপারে নীরব কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন যেখান থেকে অভিযোগ পাচ্ছি, সেখানে অভিযান পরিচালনা করছি। তেলের কারসাজিতে শিল্প গ্রুপ, মিল মালিক ও ডিলাররা জড়িত থাকার তথ্য আছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কোথায় গোপনে মজুত করে কারসাজি করা হচ্ছে, সে তথ্য আমাদের কাছে নেই।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঠিক করাসহ যাবতীয় বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমাদের কয়েকটি টিম শিগগির অভিযানে নামবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ জ র টন ভ জ যত ল ব যবস য় সরবর হ রমজ ন আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েটের হলে পানি-ওয়াইফাই বন্ধের অভিযোগ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক হল ভ্যাকেন্টের সময়সীমা পার হওয়ার পরও ছয়টি ছাত্র হলে এখনও কিছু শিক্ষার্থী রয়ে গেছে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হল গুলোর ওয়াইফাই লাইন ও পানি সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দিয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হল ভ্যাকেন্ট ঘোষণার পর বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে শুরু করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এস, এম, রশিদ হলের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, “আবাসিক হলগুলোতে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক হল ছাড়তে বাধ্য করার কৌশল হিসেবে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হল গুলোর ওয়াইফাই লাইন ও পানি সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দিয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কুয়েট-১৯ নামে ফেসবুক পেজেও এ সংক্রান্ত তথ্য প্রচার করা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পানি ও ওয়াইফাই লাইন বন্ধের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলে অবস্থানরত এক শিক্ষার্থী বলেন, “ইতিমধ্যে আমরা ভিসিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছি। আর যেহেতু আমরা ভিসিকে অবঞ্চিত ঘোষণা করেছি সেহেতু উনার আন্ডারে সিন্ডিকেটের যে সিদ্ধান্ত আসবে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিচ্ছি না। উনি আমাদের তিন ঘণ্টা যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। যেটা আপনারা দেখেছেন, দেশবাসী দেখেছে।”
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ বলেন, “হল ভ্যাকেন্ট ঘোষণার পরও যেসকল শিক্ষার্থী রয়ে গেছে প্রোভোস্ট ও শিক্ষকরা চেষ্টা করছে, ওদের সঙ্গে কথা হচ্ছে, ওদেরকেও বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বল প্রয়োগ করে নয়, বুঝিয়ে যেন ওদেরকে হল থেকে বের করা যায়। তবে, স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘাত এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই হল ভ্যাকেন্ট করা হয়েছে।”
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস