শুল্ককর ছাড়ের সুবাদে পর্যাপ্ত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। তবে আমদানির তথ্যের সঙ্গে মিলছে না বর্তমান বাজারের চিত্র। রমজান ঘনিয়ে এলেও স্বাভাবিক হচ্ছে না সরবরাহ। ফলে খুচরা বাজারে হন্যে হয়ে খুঁজেও তেল কিনতে পারছেন না ভোক্তা। সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে বাজার থেকে ভোজ্যতেল উধাও। সরকারি সংস্থাগুলো খুচরা পর্যায়ে ছোট ব্যবসায়ীদের সামান্য জরিমানা করেই শেষ করছে দায়িত্ব। তাতে ছোটরা বলির পাঁঠা হলেও হোতাদের টিকিটিও ছুঁতে পারছে না প্রশাসন।

গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 
ভোক্তা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার তদারকিতে কাগজে-কলমে কয়েকটি সংস্থা দায়িত্বে রয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে ভোক্তা অধিকারের কয়েকটি রুটিন অভিযান ছাড়া বাকিদের নেই তোড়জোড়। তদারকির প্রধানের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসন যেন ঘুমে। নড়াচড়া নেই বাজার মনিটরিংয়ে গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্সেরও। তদারককারীদের এমন গা-ছাড়া ভাবের খেসারত দিচ্ছেন ভোক্তা। চট্টগ্রামের বাজার থেকে তেল উধাও। একই রকম তথ্য মিলেছে ঢাকায়ও। 

তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছে, কারসাজির নেপথ্যে রয়েছে ভোজ্যতেল নিয়ন্ত্রণকারী শিল্প গ্রুপ, মিল মালিক ও ডিলাররা। তাদের শনাক্ত করার বিষয়ে কাজ চলছে।

রমজানের বাজারে তেলের সরবরাহ ঠিক রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট ১৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। তাতে আমদানি বেড়েছে। এনবিআরের তথ্যমতে, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি জানুয়ারি পর্যন্ত এই তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন। এর মধ্যে গত ৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনা থেকে এমটি আরডমোর শায়ানি ও এমটি ডাম্বলডোর নামের দুটি জাহাজে আনা হয় সাড়ে ২১ হাজার টন। ১০ ডিসেম্বর ব্রাজিল থেকে এমটি সানি ভিক্টরি ও আর্জেন্টিনা থেকে এমটি জিঙ্গা থ্রেশার জাহাজে এসেছে ৩০ হাজার ৬০০ টন। এই চার জাহাজে সবচেয়ে বেশি তেল এনেছে তিনটি শিল্প গ্রুপ। এর মধ্যে টি কে গ্রুপ এনেছে ২৫ হাজার টন, সিটি গ্রুপ ২০ হাজার টন এবং মেঘনা গ্রুপ ৭ হাজার টন। 

এত পরিমাণে তেল আমদানির পরও বাজারে সংকট চলছে। গতকাল চট্টগ্রামের বেশির ভাগ বাজারে মিলছে না এক ও দুই লিটারের বোতল। কয়েকটি স্থানে পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। 

যদিও বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, রমজান সামনে রেখেই স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। সংকট হওয়ার কথা নয়। কিছু ব্যবসায়ীর মজুতের প্রবণতার কারণেই সংকট তৈরি হয়েছে। 

চট্টগ্রামের বেশির ভাগ বাজারে ভোজ্যতেল না পাওয়ার অভিযোগ ভোক্তাদের। সরবরাহ সংকটের জন্য কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ও বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ, মিল মালিক ও ডিলাররা জড়িত থাকার অভিযোগ জানালেও নেওয়া হচ্ছে না কার্যকর পদক্ষেপ। উল্টো খুচরা বাজারে গিয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের সামান্য জরিমানা করে দায় সারছে ভোক্তা অধিদপ্তর। 

চট্টগ্রাম কাজীর দেউরি বাজারের এমএস স্টোরের মালিক লোকমান হোসেন বলেন, সবসময় বলির পাঁঠা হয় ছোট দোকানদাররা। অথচ কারসাজি করে শিল্প গ্রুপ, মিল মালিক ও ডিলাররা। তাদের কাউকে ধরারও রেকর্ড নেই। বহদ্দারহাটের আরএন ট্রেডিংয়ের মালিক মো.

নওশাদ বলেন, অনেক দিন ধরে তেল নেই। সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সাড়া পাচ্ছি না। কেউ কেউ তেল দিলেও এর সঙ্গে দুধ বা অন্য পণ্য কিনতে হয়।

ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন সমকালকে বলেন, এক দিন পরই রমজান। এখনও স্বাভাবিক হয়নি তেলের বাজার। আমরা একাধিকবার প্রশাসনকে বলেছি এর পেছনে কালো হাত আছে শিল্প গ্রুপ ও মিল মালিকদের। কিন্তু তাদের ব্যাপারে এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রমজানের আগে তেলের কৃত্রিম সংকট দাম আরেক দফায় বাড়ানোর পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছু নয়। সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ার দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না।

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক ফয়েজ উল্লাহ বলেন, এ বিষয়টি উদ্বেগের, তদারকি চলছে। কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছি। ছোটদের জরিমানা করা হলেও বড়দের ব্যাপারে নীরব কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন যেখান থেকে অভিযোগ পাচ্ছি, সেখানে অভিযান পরিচালনা করছি। তেলের কারসাজিতে শিল্প গ্রুপ, মিল মালিক ও ডিলাররা জড়িত থাকার তথ্য আছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কোথায় গোপনে মজুত করে কারসাজি করা হচ্ছে, সে তথ্য আমাদের কাছে নেই। 

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঠিক করাসহ যাবতীয় বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমাদের কয়েকটি টিম শিগগির অভিযানে নামবে। 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ জ র টন ভ জ যত ল ব যবস য় সরবর হ রমজ ন আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

৪০ শতাংশ কাজ করে অর্ধেক বিল তুলে ঠিকাদার লাপাত্তা

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি উপজেলার গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। সে লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে কমিউনিটিভিত্তিক পানি সরবরাহ নামে পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু কাজ মাঝপথে ফেলে রেখে লাপাত্তা হয়ে গেছেন ঠিকাদার। এতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রায় ৫ হাজার পরিবার বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পাবে কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
এখন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় লোকজন চেয়ারম্যানদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। এতে বিপদে পড়েছেন জনপ্রতিনিধিরাও। এলাকার পানিতে প্রচুর আয়রন আছে জানিয়ে দুপচাঁচিয়ার আলতাফনগর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, এ পানি পান করে অনেকে নানান রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। সরকারের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আয়রনমুক্ত বিশুদ্ধ খাবার পানির সুবিধা পাবেন বলে আশা ছিল তাদের। কিন্তু ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছেন। এতে তারা হতাশ। কাজটি হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন।
প্রকল্পটির আওতায় দুপচাঁচিয়ার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে দুপচাঁচিয়া সদর, গুনাহার ও গোবিন্দপুরকে বেছে নেওয়া হয়। এ তিন ইউনিয়নে পরীক্ষামূলকভাবে ১৮টি ট্যাঙ্ক স্থাপন করে দুই হাজার পরিবারকে পানি সরবরাহ করা হবে। সে জন্য ৬২ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। আদমদীঘির ছয়টি ইউনিয়নের তিন হাজার পরিবার এ সুবিধা পাবেন। সে জন্য ব্যয় ধরা হয় ৭৭ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পানি সরবরাহ ইউনিট স্থাপন কাজের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দুই উপজেলার জন্য ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকার মেসার্স আমান অ্যান্ড কেয়া ট্রেডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ১৮ মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর শুরুর সময় ঠিক হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করে। 
জানা গেছে, দুপচাঁচিয়ার ১৬টি ইউনিটের মধ্যে দেবড়াশন, আলতাফনগর, চৌমুহনী বাজার, আমষট্ট, শেরপুর, কেউৎ ও বাজারদীঘির আটটি ইউনিটে বোরিংসহ কয়েকটির অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। আর কাজ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৪০ শতাংশ কাজ করে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা (বিল) তুলে নিয়েছে তারা। এর পর দেড় বছর ধরে লাপাত্তা ঠিকাদার।
প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এলাকার মানুষ খুশি হয়েছিলেন বলে জানান দুপচাঁচিয়ার গুনাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ আবু তাহের। তাঁর ভাষ্য, মাঝপথে কাজ বন্ধ করায় এলাকার মানুষ বলছে, প্রকল্পের টাকা চেয়ারম্যানরা মেরে খেয়েছে। এ কারণে কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। অন্যথায় কর্তৃপক্ষকে এলাকায় গিয়ে মানুষকে ব্যাখ্যা দিতে হবে, কেন কাজ হচ্ছে না।
দুপচাঁচিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাড়া 
দিচ্ছেন না। উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় চেয়ারম্যানরা কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সভার সিদ্ধান্তে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। এ সিদ্ধান্তও ঠিকাদারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
একই অবস্থা আদমদীঘিতেও। এ উপজেলায় একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৪০ শতাংশ কাজ করে অর্ধেক টাকা তুলে নিয়েছে। এখানে ২৬টি ইউনিটের মাধ্যমে তিন হাজার মানুষকে সুবিধা দেওয়ার কথা। কিন্তু ছয়টি ইউনিয়নে ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে ১২টি। আদমদীঘি সদর, নসরৎপুর, চাপাপুর, দুর্গাপুর, কুন্দ্রগ্রাম ও ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নে এসব স্থাপন করা হয়েছে।
প্রকল্পের কাজ মাঝপথে আটকে থাকায় এলাকার মানুষ চেয়ারম্যানদের চোর অপবাদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নসরৎপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা। তিনি বলেন, ‘আমরা এলাকায় যেতে পারছি না। দোষ করছে একজন, নাম হচ্ছে আরেকজনের।’
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহামুদ বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা আমাদের কটু কথা শোনান এ প্রকল্প নিয়ে। আমরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।’ অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমান অ্যান্ড কেয়া ট্রেডার্সের কর্ণধার আমান উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন বন্ধ রেখেছেন।
বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ঠিকাদারকে বারবার প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নের জন্য চিঠি দিয়ে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু তিনি যোগাযোগ করছেন না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ না করলে কার্যাদেশ বাতিল করে বিকল্প উপায়ে প্রকল্পটি সম্পন্ন করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বে ডেভেলপমেন্টস ও আনোয়ার গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর
  • অ্যাপল পিছিয়ে পড়ল
  • ত্রুটিপূর্ণ আমদানি বিলের দায় শোধ করতে পারবে ব্যাংক
  • ৪০ শতাংশ কাজ করে অর্ধেক বিল তুলে ঠিকাদার লাপাত্তা
  • ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত গেল বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ
  • কুবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ভুল প্রশ্ন সরবরাহ, আহ্বায়ককে অব্যাহতি 
  • ভোক্তাস্বার্থ সুরক্ষা জরুরি
  • বাঘাইছড়িতে অক্সিজেন না পেয়ে শিশু মৃত্যুর অভিযোগ
  • দিনাজপুরে চাল সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় ৩১৬ মিলের নিবন্ধন বাতিল
  • বাঘাইছড়িতে অক্সিজেন না পেয়ে শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ পরিবারের