তালেবানের ভেতরে বিদ্রোহের শঙ্কা, সংকটে আফগানিস্তান?
Published: 28th, February 2025 GMT
আফগানিস্তান এখন গভীর সংকটে। যে স্থিতিশীলতার একটি বিভ্রম এত দিন ধরে ছিল, তা এখন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর অবস্থায়। নারীরা কার্যত গৃহবন্দী। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা স্থগিত থাকায় মানবিক সংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অনেকেই একসময় তালেবান সরকারের ওপর ভরসা রেখেছিলেন। এখন তাঁরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। তালেবান নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ বিভক্তিও দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, এই ভাঙন আরও তীব্র হলে তালেবানের অভ্যন্তরেই বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে।
তালেবানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মতবিরোধের বিষয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন তাদের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আলোচনায় তিনি স্বীকার করেছেন যে ভিন্নমত রয়েছে। তবে তাঁর মতে তা সংঘাত বা লড়াইয়ের পর্যায়ে যায়নি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, তালেবানের অভ্যন্তরে গভীর বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে। আর তা ভবিষ্যতে বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আরও পড়ুনআফগান তালেবান ও সৌদি আরবের সম্পর্ক কি নতুন মোড় নিচ্ছে২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫তালেবান কখনোই একটি পুরোপুরি ঐক্যবদ্ধ সংগঠন ছিল না। দলটি মূলত পশতু গোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত। তবু ভৌগোলিক, জাতিগত ও গোত্রগত ভিত্তিতে তাদের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট। এমনকি নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রেও তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে নারীশিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে।
মোল্লা হিবাতুল্লাহর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা যাচ্ছে যে তিনি এখনো কঠোর আদর্শগত অবস্থানে অটল আছেন। তালেবানের রাজনৈতিক ও আদর্শিক ঐতিহ্য রক্ষার নামে তিনি চরম রক্ষণশীল গোত্রীয় মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে আছেন। দেশের অর্থনীতি, সামাজিক স্থিতিশীলতা, এমনকি তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও তিনি বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু নিজের নীতিতে একচুলও ছাড় দিতে রাজি নন।
তালেবান সরকার আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা স্থগিতের বিষয়ে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে তা মোল্লা হিবাতুল্লাহ ও তাঁর সমমনাদের জন্য একপ্রকার ‘আশীর্বাদ’ হিসেবে কাজ করতে পারে। কারণ, তিনি ইতিমধ্যেই দেশ থেকে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) বন্ধ করার পরিকল্পনা করছিলেন।
আরও পড়ুন তালেবানদের নিয়ে এখন কী করবে পাকিস্তান ২০ জানুয়ারি ২০২৫তবে বাস্তবতা হলো, আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাত পুরোপুরি নির্ভরশীল বিদেশি অনুদানের ওপর। একা এসব খাত টিকিয়ে রাখার সামর্থ্য তালেবান সরকারের নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তারা সম্প্রতি পোলিও টিকাদানের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে। আগের মতো বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা দেওয়ার অনুমতি নেই। শুধু মসজিদ ও গ্রাম্য কেন্দ্রগুলোতেই এই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে তালেবানদের ভেতরেও ক্রমেই ধারণা তৈরি হচ্ছে যে তাদের নেতা মোল্লা হিবাতুল্লাহ নিজের ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিকল্প কোনো পরিকল্পনা নিয়ে না আসে, কিংবা তালেবান সরকার নিজেই অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য উদ্যোগ না নেয়, বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়নের ব্যবস্থা না করে, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে পাকিস্তানও তালেবান সরকারকে খুব একটা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে না। এর মূল কারণ হলো পাকিস্তানি তালেবান বা টিটিপি (তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান)। তারা আফগান মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। পাকিস্তান আশা করেছিল, তালেবান সরকার টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। কিন্তু তারা এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে না।
এখন পর্যন্ত তালেবানদের একমাত্র বড় সুবিধা হলো যে তাদের বিরোধীশক্তি দুর্বল। আফগানিস্তানের জাতীয় প্রতিরোধ ফ্রন্ট এখনো স্থানীয় জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আকৃষ্ট করার মতো রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, কৌশল বা আকর্ষণীয় নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারেনি।এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান আফগান শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে। একে তালেবান সরকারের ওপর চাপ তৈরির একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রথমে রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে শরণার্থীদের উচ্ছেদ শুরু হয়। পরে পুরো দেশ থেকেই তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তালেবান সরকার পাকিস্তানের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানালেও বাস্তবে শরণার্থীদের পুনর্বাসন নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। কারণ, তালেবান নেতারা মনে করেন, এই শরণার্থীদের বড় একটি অংশ তাঁদের বিরোধী।
পাকিস্তান আফগান শরণার্থীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তালেবান সরকারকে টিটিপির বিরুদ্ধে সহযোগিতায় বাধ্য করতে পারবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো নিঃসন্দেহে আফগানিস্তানের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেবে।
আরও পড়ুনভারত কি পাকিস্তান–তালেবান দ্বন্দ্বের সুযোগ নিচ্ছে১৫ জানুয়ারি ২০২৫মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা তাঁর ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দেশের প্রতিটি প্রদেশে উলামা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা। এই কাউন্সিলগুলো কার্যত তাঁর প্রশাসনের ‘চোখ ও কান’ হিসেবে কাজ করছে। এই অনুগত আলেমরা তালেবান কর্মকর্তাদের যেকোনো নিয়ম লঙ্ঘন কিংবা মতবিরোধ পর্যবেক্ষণ করে তা সরাসরি তাঁকে জানিয়ে দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব পিসের ফেলো অ্যান্ড্রু ওয়াটকিন্সের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তালেবান নেতৃত্বের মধ্যে ইমামের (তালেবানদের সর্বোচ্চ নেতা) এজেন্ডার প্রতি সত্যিকারের অসন্তোষ রয়েছে। তালেবানের অনেক সদস্যই মনে করেন, মোল্লা হিবাতুল্লাহ নিজের ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করছেন। তবে সমস্যা হলো, এই বিরোধীদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। তাঁরা একত্র হয়ে কাজ করছেন না বা কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে এগোচ্ছেন না। ফলে সংগঠিত কোনো প্রতিবাদ বা পদক্ষেপ গ্রহণ করা তাঁদের জন্য কঠিন।
অন্যদিকে মোল্লা হিবাতুল্লাহ তাঁর নীতি ও অবস্থান স্থির রেখে তালেবানের একটি বড় অংশকে প্রভাবিত করে চলেছেন। সম্প্রতি এক জনসমাবেশে তিনি বলেন, জিহাদ বা ‘সংগ্রাম’ বিদেশি বাহিনীর অপসারণ এবং আফগান প্রজাতন্ত্রের পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায়নি। জিহাদ এখনো চলছে। এর মূল লক্ষ্য হলো সমাজকে শুদ্ধ করা। কারণ, ‘শত্রুরা’ এখনো রয়ে গেছে।
তালেবানদের ভেতরে তাঁর জনপ্রিয়তা ও কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে দলটির অভ্যন্তরীণ বিরোধীরা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। এদিকে চীন, রাশিয়া, সৌদি, আমেরিকার নতুন প্রশাসনসহ বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিধর রাষ্ট্র আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা করছে, যাতে দেশটি নতুন কোনো হুমকির উৎস না হয়ে ওঠে। তবে তালেবান সরকার কতটা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত, আর দলটির ভেতরে কতটা ঐক্য রয়েছে, তার ওপরই নির্ভর করছে যে বিশ্বসম্প্রদায় তাদের সঙ্গে কতটা কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে।
তালেবানের মধ্যে বিদ্রোহের সম্ভাবনা নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যদি তা বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে তালেবান সরকারের সহযোগিতা আরও বিলম্বিত হতে পারে। আর যদি অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ সফল হয়, তাহলে আফগানিস্তান সম্পর্কে বৈশ্বিক মূল্যায়ন বদলে যেতে পারে। এর ফলে দেশটি আরও গভীর অস্থিরতার দিকে যাবে।
এখন পর্যন্ত তালেবানদের একমাত্র বড় সুবিধা হলো যে তাদের বিরোধীশক্তি দুর্বল। আফগানিস্তানের জাতীয় প্রতিরোধ ফ্রন্ট (এনআরএফ) একটি সামরিক জোট। তারা এখনো স্থানীয় জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আকৃষ্ট করার মতো রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, কৌশল বা আকর্ষণীয় নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে দেশটিতে কার্যকর কোনো বিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠেনি।
এই বাস্তবতায় তালেবান সরকারের ভেতর থেকে বিদ্রোহের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে প্রশ্ন হলো, তারা কি মোল্লা হিবাতুল্লাহর বিরুদ্ধে সফলভাবে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে পরবর্তী সময়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবে? যদি তালেবান ভেঙে পড়ে, তাহলে দলটি জাতিগত ও গোত্রীয় বিভাজনের শিকার হবে।
তবে আফগানরা চাইলে নিজেদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে পারে। এর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হবে শান্তিপূর্ণভাবে তালেবানকে তাদের কঠোর নীতিগুলো পরিবর্তন করতে বাধ্য করা। তবে সমস্যা হলো, আফগানিস্তানে তালেবানবিরোধী সামাজিক শক্তি, প্রবাসী আফগানরা ও বুদ্ধিজীবী মহল রাজনৈতিক, নৈতিক ও সামরিক সমর্থনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর দিকেই তাকিয়ে থাকে। গত ৫৫ বছরের সংঘাত ও বিদেশি হস্তক্ষেপের ফলে তারা স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী কোনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি।
এই অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাই তাদের রাজনৈতিকভাবে নাজুক করে তুলেছে। ফলে তারা বহির্বিশ্ব থেকে অনুপ্রেরণা খোঁজার চেষ্টা করছে। উদাহরণ হিসেবে, পাকিস্তানে পশতুন তাহাফুজ মুভমেন্টের (পিটিএম) মতো আন্দোলনগুলোর মধ্যে তারা অনুপ্রেরণা খুঁজছে। এমনকি তারা মানজুর পশতিন ও আলী ওয়াজিরের মতো ব্যক্তিদের আদর্শ হিসেবে দেখছে।
মুহাম্মদ আমির রানা পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক
পাকিস্তানের ডন থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত ল ব ন সরক র র আফগ ন স ত ন র শরণ র থ দ র ত ল ব নদ র র জন ত ক সহয গ ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে ১৪০ কোটি মানুষের মাত্র ১০ শতাংশের ইচ্ছামতো খরচ করার সামর্থ্য আছে: প্রতিবেদনে তথ্য
ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটির বেশি। কিন্তু মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের কাছে নিজের ইচ্ছামতো খরচ করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে বলে ‘ব্লুম ভেঞ্চারস’ নামের একটি অর্থ সহায়তাকারী সংস্থা জানিয়েছে। অর্থাৎ বাড়তি পণ্য বা পরিষেবা কেনার ক্ষমতা ওই ১৩ বা ১৪ কোটি মানুষের কাছে রয়েছে, বাকি প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের সেই ক্ষমতা নেই।
ব্লুম ভেঞ্চারস একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংস্থা, যারা নতুন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করে। তারা তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে ভারত সম্পর্কে এ তথ্য জানিয়েছে।
ব্লুম ভেঞ্চারস বলেছে, ওই শীর্ষ ১০ শতাংশই তাদের ক্রয়ক্ষমতার মাধ্যমে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাজার ও বিক্রিকে সচল রাখছে। কিন্তু এই ১০ শতাংশ ক্রমশ বাড়ছে না, অর্থাৎ আরও বেশি মানুষের সম্পদ বাড়ছে না। বরং এই ১০ শতাংশেরই শুধু অর্থ ও সম্পদ ক্রমশ বাড়ছে, অর্থাৎ ধনী আরও ধনী হচ্ছে।
তবে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতে আরও ৩০ কোটি মানুষের একটা শ্রেণি তৈরি হচ্ছে, যাদের কনজিউমার বা উপভোক্তা বলা যেতে পারে। এরা সবেমাত্র খরচ করতে শুরু করেছে। তবে হয়তো এর অন্যতম কারণ এটা নয় যে তাঁদের আয়রোজগার বেড়েছে। কিন্তু খরচ করার নতুন রাস্তা তৈরি হয়েছে, যা হলো ইউপিআই বা ‘ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস’, অর্থাৎ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ আদানপ্রদান করা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থা তাদের বিক্রয় কৌশলে পরিবর্তন আনছে। বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো ক্রমশ আরও বেশি দামি পণ্য বাজারে আনছে। কারণ, তারা বুঝতে পারছে, ভারতের ধনী আরও সম্পদশালী হচ্ছে। অর্থাৎ যাঁর একটি গাড়ি আছে, তিনি আরও গাড়ি কিনতে চাইছেন বা বিদেশি গাড়ি কিনতে চাইছেন।
ব্লুম ভেঞ্চারসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ কারণে অত্যধিক দামি বাসস্থান বা প্রবল দামি ফোনের বিক্রয় ও ব্যবহার ভারতে বাড়ছে।
অন্যদিকে কম দামের পণ্যের বিক্রয় সেই হারে বাড়ছে না। অর্থাৎ যিনি সস্তার ফোন বা পণ্য কেনেন, তিনি দ্বিতীয় ফোন বা জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাইরে বাড়তি আর কিছুই কিনতে পারছেন না।
প্রতিবেদনে উদ্ধৃত তথ্য অনুসারে, শীর্ষ ১০ শতাংশ ভারতীয় এখন জাতীয় আয়ের ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশের অধিকারী, যা ১৯৯০ সালের ৩৪ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। অর্থাৎ বিশ্বে ভারতই প্রথম, যেখানে ১০ শতাংশের সম্পদ ৩৫ বছরে ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।
জনসংখ্যার নিচের দিকের মানুষের সম্পদ ২২ দশমিক ২ থেকে কমে ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে, অর্থাৎ মধ্য ও নিম্নবিত্তের মানুষের সম্পদ এ সময়ে কমে গিয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, ভারতের জিডিপি কনজিউমারদের খরচ করার ক্ষমতার ওপরে ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ফলে আয়ের সুষম বণ্টনব্যবস্থার উন্নতি না হলে ব্যবসায়িক সংস্থাগুলো ভবিষ্যতে ক্রমবর্ধমানভাবে শুধু উচ্চ আয়ের গোষ্ঠীর জন্য পণ্য বানাবে এবং পরিষেবা দেবে। ফলে জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রান্তিক থেকে আরও প্রান্তিক হয়ে পড়বে।
অতীতে একাধিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ভারতের ভবিষ্যতের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করলেও এই প্রথম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় আর্থিক সংস্থা দেশে ধনী ও দরিদ্রের অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিপদ নিয়ে সচেতন করল।