প্রতিবছর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা। প্রকাশনার মান যাই হোক, উন্নতি হয়েছে প্রকাশকদের। তাদের গাড়ি-বাড়ি বা বিদেশ সফরে ঘাটতি দেখা যায় না। ছোট প্রকাশকরা বড় হয়ে উঠেছেন। ১০ বছর আগে যারা মেলায় এক ইউনিটের স্টল পেতে অনেক কষ্ট করতেন, এখন তারা প্যাভিলিয়ন নেন। লেখক ও প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলা একাডেমির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এক দশকে মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৫ সালে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছিল ৩৫১টি। এবারের মেলায় তা এসে দাঁড়িয়েছে ৭০৮টিতে, যা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৪ সালে ৬৪২, ২০২৩ সালে ৬০১ এবং ২০২২ সালে ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।

প্রকাশকরা নানা সংকটের কথা জানালেও প্রতি মেলায় বই বিক্রির পরিমাণ নেহাত কম নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রায় ৬০ কোটি, ২০২৩ সালে ৪৭ কোটি, ২০২২ সালে ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। করোনাকালের মধ্যে ২০২১ সালে মেলায় বিক্রি হয়েছিল ৩ কোটি টাকার বই। এর আগে ২০২০ সালে ৮২ কোটি, ২০১৯ সালে ৮০ কোটি, ২০১৮ সালের ৭০ কোটি, ২০১৭ সালে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ, ২০১৬ সালে ৪২ কোটি এবং ২০১৫ সালে প্রায় ২২ কোটি টাকার বই বিক্রির তথ্য পাওয়া যায়।

বইমেলায় কয়েকজন তরুণ কবি-লেখকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, যেভাবে মেলা চলছে এতে সাহিত্যের বিকাশ ঘটবে না। নতুন পাঠক তৈরি হবে না। প্রকাশকরাও লাভবান হবেন না। একজন প্রকাশক ৩০০ কপি বই ছেপে ১০-২০ হাজার টাকা লাভ করছেন। এতে প্রকাশনা শিল্প দাঁড়াচ্ছে না, লেখকও লাভবান হচ্ছেন না। একজন প্রকাশককে কেন ১০০ তরুণ কবির বই ছাপতে হবে? ১০ জন তরুণের বই ১০টি প্রকাশনী যদি ছাপে, তখন প্রতিটি বই ৫০০ কপি বিক্রি হবে। কিছু প্রকাশক দায়িত্বশীল আছেন, বাকিরাও যদি দায়িত্বশীল হয়ে তরুণদের বই প্রকাশ করেন, তাহলে হয়। ১৮ কোটি মানুষের দেশে ১০০ জন পেশাদার প্রকাশক না থাকলে বলা যায় না প্রকাশনার সংকট কাটবে।

বিগত বছরগুলোয় ছাপা বইয়ের পাঠক বেড়েছে না কমেছে– এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হচ্ছে ডিজিটাল সংস্করণ বইয়ের (ই-বুক ও অডিও বুক) বাজার। বিশেষ করে তরুণ পাঠকরা কিন্ডল, মোবাইল ফোন বা অন্য ডিভাইসে বই পড়তে পছন্দ করেন। সেদিকে নজর রেখে দেশে ডিজিটাল সংস্করণের বই প্রকাশ ও বিক্রির কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বইটই, বইঘর ও সেইবই– এর নাম বেশি শোনা যায়। এ ছাড়া রকমারি ডটকমেও ই-বুক বিক্রি হয়।

খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পেঙ্গুইন র‍্যানডম হাউসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫ হাজার ছাপা সংস্করণ এবং ৭০ হাজার ডিজিটাল সংস্করণের বই প্রকাশ করে।

বইঘরের মালিকানা প্রতিষ্ঠান ই বি সলিউশন্স লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক সোমেশ্বর অলি সমকালকে বলেন, ই-বুক ও অডিও বুক এক বিশাল সম্ভাবনাময় খাত। প্রতিদিন এই নতুন ক্ষেত্রটি জনপ্রিয় হচ্ছে, বিক্রি বাড়ছে। বিনামূল্যের বইগুলোর ডাউনলোডের চিত্র এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে। অনেক প্রকাশনী এখন বইঘরসহ অন্য ই-বুক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাদের বইয়ের ডিজিটাল সংস্করণ বের করছে। এ বছর মেলায় প্রকাশের আগে ১০ লেখকের নতুন বইয়ের ডিজিটাল সংস্করণ এনেছে বইঘর। এই ই-বুকগুলোর দাম রাখা হয়েছে ছাপা সংস্করণের সমান। সেই সঙ্গে ছাপা সংস্করণে একটি কিউআর কোড দেওয়া থাকছে, যা দিয়ে একবার ই-বুক পড়া যাবে।

প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাতিঘরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাফর আহমদ রাশেদ সমকালকে বলেন, ১০ বছর আগে যেখানে ১০০ কপি বই বিক্রি হতো, সেখানে এখন ১২০ কপি বিক্রি হচ্ছে। তাহলে তো পাঠক বেড়েছে। তবে এই বৃদ্ধি আসলে যথেষ্ট নয়। এই পাঠকদের কেউ থ্রিলার, কেউ শিশুতোষ, কেউ উপন্যাস, কেউ গবেষণা, কেউ আবার রাজনীতির বই পড়েন। বই ভালো বিক্রি হয় এমন লেখক বাংলাদেশে খুবই কম। খুব হলে ১০ জন আছেন, যাদের বই বছরে ২ হাজার কপি বিক্রি হয়। ৫০০ কপি বই বিক্রি তো কোনো হিসাবের মধ্যে পড়ে না। একটি বইয়ের পেছনে আপনি কষ্ট করবেন, কিন্তু এক-দুই বছর পর তার আর বিক্রি নেই। পেঙ্গুইনের মতো প্রকাশনাগুলো একটি বই ৪০ বছর ধরে ছাপছে।

আরেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বললেন, বই যত কম ছাপবেন, তত খরচ বাড়বে। দিন দিন বই বিক্রি কমে আসছে, ফলে দামও বেড়ে যাচ্ছে। বিক্রি কম বলে দাম বেশি, না দাম বেশি বলে বিক্রি কম– তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু এটা ঠিক যে, পাঠক কমেছে। মোটা দাগে বই বিক্রির পরিমাণ বেশি দেখা যায়। কিন্তু আগে অল্পসংখ্যক বই বেশি বিক্রি হতো, এখন বেশিসংখ্যক বই অল্প বিক্রি হয়।

এ প্রসঙ্গে একজন জ্যেষ্ঠ লেখক বলেন, বই বিক্রি হয় না, অথচ প্রকাশনীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে– এটা তো একটা প্যারাডক্স।

কবি কামরুজ্জামান কামু বলেন, প্রকাশক বেড়ে থাকলে পাঠক অবশ্যই বেড়েছে। উৎপাদন বাড়ার অর্থ হচ্ছে, ভোক্তার সংখ্যাবৃদ্ধি। বইয়ের পাঠক মাঝে কমেছিল, সেটা আবার ঠিক হয়ে গেছে। অনলাইনের মাধ্যমেও মানুষ বই পড়ায় উৎসাহী হচ্ছে যে, ওই বইটি পড়তে হবে। বইয়ের স্বাদ তো আর অন্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া যায় না। ফলে বইয়ের পাঠক আছে। আগে একমাত্র মাধ্যম ছিল বই, সেটা তো আর পাবেন না এখন। তবে অন্য মাধ্যমের পাশাপাশি বইও পড়ে মানুষ। আগেও সব মানুষ বই পড়ত তা নয়। বই সহজলভ্য হয়েছে। ঘরে বসে অর্ডার দিলে হাতে পাওয়া যায়।
দেশ পাবলিকেশন্সের কর্ণধার অচিন্ত্য চয়ন বলেন, পাঠকের কথা ভেবে মানসম্পন্ন বই প্রকাশ করলে তা ধীরগতিতে হলেও ভালো বিক্রি হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোর পর্যবেক্ষণ বলছে, চটুল বইয়ের বদলে সিরিয়াস বইয়ের পাঠক বাড়ছে। আবার অনেক পাঠক ছাপা বইয়ের বদলে ই-বুক পড়ছেন। আসলে পাঠক নানাভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক প্রকাশক বলেন, সরকার পরিবর্তন হওয়ায় কিছু বই সরিয়ে ফেলতে হয়েছে। কিন্তু সরকার বদলের সঙ্গে বই সরানোর সম্পর্ক কী? এখানে কীভাবে বই বিকশিত হবে? রাষ্ট্র যদি সহনশীল না হয়, মতপ্রকাশ করতে না দেয়, কীভাবে বই করবেন?

এদিকে কোনো বই নকল হলে (অনুমতি ছাড়া ভিন্ন প্রকাশনী ছাপলে) সুষ্ঠু সমাধান পাওয়া কঠিন। জানা গেল, বাতিঘরের একটি বই নকল করায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা অভিযুক্ত প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলতে যান। কিন্তু সেই প্রকাশক এ নিয়ে মোটেও বিব্রত নন। বরং তিনি নকল বইগুলো কিনে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এ নিয়ে মামলা করেও দীর্ঘসূত্রতার জটিলতায় পড়েন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বই ড জ ট ল স স করণ কর মকর ত বই ব ক র ষ ট কর র বই প

এছাড়াও পড়ুন:

মান যা-ই হোক, উন্নতি কেবল প্রকাশকের

প্রতিবছর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা। প্রকাশনার মান যাই হোক, উন্নতি হয়েছে প্রকাশকদের। তাদের গাড়ি-বাড়ি বা বিদেশ সফরে ঘাটতি দেখা যায় না। ছোট প্রকাশকরা বড় হয়ে উঠেছেন। ১০ বছর আগে যারা মেলায় এক ইউনিটের স্টল পেতে অনেক কষ্ট করতেন, এখন তারা প্যাভিলিয়ন নেন। লেখক ও প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলা একাডেমির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এক দশকে মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৫ সালে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছিল ৩৫১টি। এবারের মেলায় তা এসে দাঁড়িয়েছে ৭০৮টিতে, যা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৪ সালে ৬৪২, ২০২৩ সালে ৬০১ এবং ২০২২ সালে ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।

প্রকাশকরা নানা সংকটের কথা জানালেও প্রতি মেলায় বই বিক্রির পরিমাণ নেহাত কম নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রায় ৬০ কোটি, ২০২৩ সালে ৪৭ কোটি, ২০২২ সালে ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। করোনাকালের মধ্যে ২০২১ সালে মেলায় বিক্রি হয়েছিল ৩ কোটি টাকার বই। এর আগে ২০২০ সালে ৮২ কোটি, ২০১৯ সালে ৮০ কোটি, ২০১৮ সালের ৭০ কোটি, ২০১৭ সালে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ, ২০১৬ সালে ৪২ কোটি এবং ২০১৫ সালে প্রায় ২২ কোটি টাকার বই বিক্রির তথ্য পাওয়া যায়।

বইমেলায় কয়েকজন তরুণ কবি-লেখকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, যেভাবে মেলা চলছে এতে সাহিত্যের বিকাশ ঘটবে না। নতুন পাঠক তৈরি হবে না। প্রকাশকরাও লাভবান হবেন না। একজন প্রকাশক ৩০০ কপি বই ছেপে ১০-২০ হাজার টাকা লাভ করছেন। এতে প্রকাশনা শিল্প দাঁড়াচ্ছে না, লেখকও লাভবান হচ্ছেন না। একজন প্রকাশককে কেন ১০০ তরুণ কবির বই ছাপতে হবে? ১০ জন তরুণের বই ১০টি প্রকাশনী যদি ছাপে, তখন প্রতিটি বই ৫০০ কপি বিক্রি হবে। কিছু প্রকাশক দায়িত্বশীল আছেন, বাকিরাও যদি দায়িত্বশীল হয়ে তরুণদের বই প্রকাশ করেন, তাহলে হয়। ১৮ কোটি মানুষের দেশে ১০০ জন পেশাদার প্রকাশক না থাকলে বলা যায় না প্রকাশনার সংকট কাটবে।

বিগত বছরগুলোয় ছাপা বইয়ের পাঠক বেড়েছে না কমেছে– এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হচ্ছে ডিজিটাল সংস্করণ বইয়ের (ই-বুক ও অডিও বুক) বাজার। বিশেষ করে তরুণ পাঠকরা কিন্ডল, মোবাইল ফোন বা অন্য ডিভাইসে বই পড়তে পছন্দ করেন। সেদিকে নজর রেখে দেশে ডিজিটাল সংস্করণের বই প্রকাশ ও বিক্রির কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বইটই, বইঘর ও সেইবই– এর নাম বেশি শোনা যায়। এ ছাড়া রকমারি ডটকমেও ই-বুক বিক্রি হয়।

খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পেঙ্গুইন র‍্যানডম হাউসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫ হাজার ছাপা সংস্করণ এবং ৭০ হাজার ডিজিটাল সংস্করণের বই প্রকাশ করে।

বইঘরের মালিকানা প্রতিষ্ঠান ই বি সলিউশন্স লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক সোমেশ্বর অলি সমকালকে বলেন, ই-বুক ও অডিও বুক এক বিশাল সম্ভাবনাময় খাত। প্রতিদিন এই নতুন ক্ষেত্রটি জনপ্রিয় হচ্ছে, বিক্রি বাড়ছে। বিনামূল্যের বইগুলোর ডাউনলোডের চিত্র এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে। অনেক প্রকাশনী এখন বইঘরসহ অন্য ই-বুক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাদের বইয়ের ডিজিটাল সংস্করণ বের করছে। এ বছর মেলায় প্রকাশের আগে ১০ লেখকের নতুন বইয়ের ডিজিটাল সংস্করণ এনেছে বইঘর। এই ই-বুকগুলোর দাম রাখা হয়েছে ছাপা সংস্করণের সমান। সেই সঙ্গে ছাপা সংস্করণে একটি কিউআর কোড দেওয়া থাকছে, যা দিয়ে একবার ই-বুক পড়া যাবে।

প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাতিঘরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাফর আহমদ রাশেদ সমকালকে বলেন, ১০ বছর আগে যেখানে ১০০ কপি বই বিক্রি হতো, সেখানে এখন ১২০ কপি বিক্রি হচ্ছে। তাহলে তো পাঠক বেড়েছে। তবে এই বৃদ্ধি আসলে যথেষ্ট নয়। এই পাঠকদের কেউ থ্রিলার, কেউ শিশুতোষ, কেউ উপন্যাস, কেউ গবেষণা, কেউ আবার রাজনীতির বই পড়েন। বই ভালো বিক্রি হয় এমন লেখক বাংলাদেশে খুবই কম। খুব হলে ১০ জন আছেন, যাদের বই বছরে ২ হাজার কপি বিক্রি হয়। ৫০০ কপি বই বিক্রি তো কোনো হিসাবের মধ্যে পড়ে না। একটি বইয়ের পেছনে আপনি কষ্ট করবেন, কিন্তু এক-দুই বছর পর তার আর বিক্রি নেই। পেঙ্গুইনের মতো প্রকাশনাগুলো একটি বই ৪০ বছর ধরে ছাপছে।

আরেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বললেন, বই যত কম ছাপবেন, তত খরচ বাড়বে। দিন দিন বই বিক্রি কমে আসছে, ফলে দামও বেড়ে যাচ্ছে। বিক্রি কম বলে দাম বেশি, না দাম বেশি বলে বিক্রি কম– তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু এটা ঠিক যে, পাঠক কমেছে। মোটা দাগে বই বিক্রির পরিমাণ বেশি দেখা যায়। কিন্তু আগে অল্পসংখ্যক বই বেশি বিক্রি হতো, এখন বেশিসংখ্যক বই অল্প বিক্রি হয়।

এ প্রসঙ্গে একজন জ্যেষ্ঠ লেখক বলেন, বই বিক্রি হয় না, অথচ প্রকাশনীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে– এটা তো একটা প্যারাডক্স।

কবি কামরুজ্জামান কামু বলেন, প্রকাশক বেড়ে থাকলে পাঠক অবশ্যই বেড়েছে। উৎপাদন বাড়ার অর্থ হচ্ছে, ভোক্তার সংখ্যাবৃদ্ধি। বইয়ের পাঠক মাঝে কমেছিল, সেটা আবার ঠিক হয়ে গেছে। অনলাইনের মাধ্যমেও মানুষ বই পড়ায় উৎসাহী হচ্ছে যে, ওই বইটি পড়তে হবে। বইয়ের স্বাদ তো আর অন্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া যায় না। ফলে বইয়ের পাঠক আছে। আগে একমাত্র মাধ্যম ছিল বই, সেটা তো আর পাবেন না এখন। তবে অন্য মাধ্যমের পাশাপাশি বইও পড়ে মানুষ। আগেও সব মানুষ বই পড়ত তা নয়। বই সহজলভ্য হয়েছে। ঘরে বসে অর্ডার দিলে হাতে পাওয়া যায়।
দেশ পাবলিকেশন্সের কর্ণধার অচিন্ত্য চয়ন বলেন, পাঠকের কথা ভেবে মানসম্পন্ন বই প্রকাশ করলে তা ধীরগতিতে হলেও ভালো বিক্রি হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোর পর্যবেক্ষণ বলছে, চটুল বইয়ের বদলে সিরিয়াস বইয়ের পাঠক বাড়ছে। আবার অনেক পাঠক ছাপা বইয়ের বদলে ই-বুক পড়ছেন। আসলে পাঠক নানাভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক প্রকাশক বলেন, সরকার পরিবর্তন হওয়ায় কিছু বই সরিয়ে ফেলতে হয়েছে। কিন্তু সরকার বদলের সঙ্গে বই সরানোর সম্পর্ক কী? এখানে কীভাবে বই বিকশিত হবে? রাষ্ট্র যদি সহনশীল না হয়, মতপ্রকাশ করতে না দেয়, কীভাবে বই করবেন?

এদিকে কোনো বই নকল হলে (অনুমতি ছাড়া ভিন্ন প্রকাশনী ছাপলে) সুষ্ঠু সমাধান পাওয়া কঠিন। জানা গেল, বাতিঘরের একটি বই নকল করায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা অভিযুক্ত প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলতে যান। কিন্তু সেই প্রকাশক এ নিয়ে মোটেও বিব্রত নন। বরং তিনি নকল বইগুলো কিনে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এ নিয়ে মামলা করেও দীর্ঘসূত্রতার জটিলতায় পড়েন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ