দেশের যে কোনো প্রয়োজনে সেনাসদস্যদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দরকার হলে জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারের সপ্তম কর্নেল অব দ্য রেজিমেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 

সেনাপ্রধান বলেন, আশা করব, ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের প্রত্যেক সদস্য অর্পিত দায়িত্ব সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করবে। এ রেজিমেন্টের প্রত্যেক সদস্য দেশের যে কোনো প্রয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালন করবে এবং প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকবে।

এর আগে সকালে রাজশাহী সেনানিবাসের শহীদ কর্নেল আনিস প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে সেনাপ্রধানকে অভিবাদন জানায় বাহিনীর একটি চৌকস দল। এর পর সেনাপ্রধানকে ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারের ‘কর্নেল’ ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে তিনি ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন।

সেনাসদস্যদের পেশাদার ও সুদক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর জানিয়ে অনুষ্ঠানে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, বিগত কয়েক বছরে ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট তথা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন ও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জামাদির সংযোজনসহ ভূ-উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, কর্নেল অব দ্য রেজিমেন্ট হিসেবে ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টকে যুগোপযোগী ও আধুনিক প্রযুক্তির যে কোনো প্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম জোগান দেওয়ার বিষয়ে সচেষ্ট থাকব। ইতোমধ্যে আমরা ইন্টেলিজেন্স ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি তৈরির কার্যক্রম শুরু করেছি, যা আমাদের সক্ষমতাকে অনেকাংশে বৃদ্ধি করবে। আত্মনির্ভরতাও অনেক বাড়াবে। 

অনুষ্ঠান শেষে সেনাবাহিনী প্রধান ১৯তম বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলনে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সেনাসদর ও ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

বাহারছড়ায় ‘সিনহা স্মৃতিফলক’ উদ্বোধন

কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শ্যামলাপুরে ‘সিনহা স্মৃতিফলক’ উদ্বোধন করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রধান অতিথির বক্তব্যে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেন সেনাপ্রধান।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে নিরস্ত্র মেজর (অব.

) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইনফ য ন ট র অন ষ ঠ ন কর ন ল সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে এখন এক ধরনের ব্যবসা শুরু হয়েছে

বৈষম্য বিলোপের স্লোগান তুলে হাজার হাজার মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছেন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন থেকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ক্রমেই অধরা হয়ে উঠছে। গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে এখন একধরনের ব্যবসা শুরু হয়েছে, অসংখ্য নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। এটি গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ছাত্র ইউনিয়নের ৪২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশে এ কথা বলেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা সামসি আরা জামান। তিনি আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে রাগীব নাঈম ও রাকিবুল রনির নেতৃত্বাধীন ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে সামসি আরা জামান জুলাই অভ্যুত্থানে তাঁর সন্তানসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার টালবাহানা করলে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে স্বজনহারা মানুষ আবারও রাজপথে নামবেন। বৈষম্য বিলোপের স্লোগান তুলে হাজার হাজার মানুষ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন থেকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ক্রমেই অধরা হয়ে উঠছে। গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে এখন একধরনের ব্যবসা শুরু হয়েছে, অসংখ্য নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। এটি নিশ্চিতভাবেই গণ–অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক তামজীদ হায়দার বলেন, জুলাইয়ে শুরু হওয়া সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মকে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকারীদের কাছে সরকার একরকম আত্মসমর্পণ করে বসে আছে। দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের আজ্ঞাবহতা বর্জন করে সরকারকে গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথে ফিরে আসতে বাধ্য করা হবে।

উদ্বোধনী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র ইউনিয়নের এই অংশের সভাপতি রাগীব নাঈম। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটাতে সক্ষম হলেও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এখনো সম্ভব হয়নি। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিশ্চিতে টালবাহানা, সব শহীদ পরিবারের কাছে সহায়তা পৌঁছাতে না পারা, শ্রমিকদের ওপর নির্বিচার গুলি চালানো, ছাত্র আন্দোলনে ন্যক্কারজনক পুলিশি হামলা অব্যাহত রাখাসহ নানা ঘটনা লক্ষ করছি। এসব ঘটনায় সরকারের ভূমিকা ও নিষ্ক্রিয়তা নিশ্চিতভাবেই শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি।’

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ছাত্র ইউনিয়নের এই অংশের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র ফেডারেশন, হরিজন ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র–যুব আন্দোলনসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশের পর একটি শোভাযাত্রা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, টিএসসি ও দোয়েল চত্বর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে শেষ হয়।

পরে বৃহস্পতিবার রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। কাউন্সিল শেষে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে এখন এক ধরনের ব্যবসা শুরু হয়েছে