চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে হতাশায় ডুবিয়ে ফিরছেন শান্তরা
Published: 28th, February 2025 GMT
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ‘এ’ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে হাসিঠাট্টা করছিলেন অনেকেই। শোভন ভাষায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমদের নিয়ে টিপ্পনী কাটতেও দেখা গেছে। সমর্থকদের এভাবে হতাশা প্রকাশ করার কারণ হতে পারে প্রিয় দলের ব্যর্থতা মেনে নিতে না পারা। তাই পরোক্ষে নাজমুল হোসেন শান্তদের সমালোচনায় লিপ্ত হন তারা। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলতে না পারা দেশের মানুষের কাছে হতাশার। রাওয়ালপিন্ডির ব্যাটিংস্বর্গে কিউইদের বিপক্ষে লড়াই করার পুঁজি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ২২৮ রান আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩৬ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। টানা দুই হারে গ্রুপ পর্বেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষ। রাওয়ালপিন্ডিতে গতকাল ছিল আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ। সেটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়েছে। ১ পয়েন্টের ভাগ পেলেও রান রেটে এগিয়ে থাকায় ‘এ’ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলে তিন নম্বরে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করে আজ মধ্যরাতে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ দল।
আইসিসির এই ওয়ানডে টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ পেতে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে হারাতে সব কৌশল অবলম্বন করেছিল বাংলাদেশ। তারাই কিনা আট জাতির টুর্নামেন্টে হতাশ করেছে বাজে খেলে। গত আসরের সেমিফাইনালিস্টদের ব্যাটিং ছিল ব্যর্থতার প্রদর্শনী! ভারতের বিপক্ষে ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে পরাজয় নিশ্চিত করে শুরুতে। তাওহিদ হৃদয় ও জাকের আলী ১৫৪ রানের জুটি গড়তে না পারলে বড় পরাজয় হতো। ওই ম্যাচে প্রাপ্তি বলতে হৃদয়ের সেঞ্চুরি। বাঁচা-মরার দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিং ছিল খুবই বাজে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সুযোগ দিতে গিয়ে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন করায় ফোকাস নড়ে গেছে বলে মনে করা হয়। যার প্রভাব পড়েছে ব্যাটারদের পারফরম্যান্সে। শান্ত ছাড়া টপঅর্ডারে কেউই রান করতে পারেননি। শেষের লড়াই ছিল জাকের আলীর। ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিক বলতে একমাত্র জাকেরের দুই ম্যাচে রান করা। বোলিং বিভাগে নজরকাড়া পারফরম্যান্স বলতে লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন ও পেসার নাহিদ রানার বোলিং। রিশাদ ওয়ানডেতে প্রথম বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট খেলেছেন অভিজ্ঞদের মতো। ভারতের বিপক্ষে না খেলেও আলোচনায় ছিলেন ফাস্ট বোলার রানা। জোরে বোলিং করার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন টাইগার ফাস্ট বোলার। তাঁকে দেখা হচ্ছে ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক তারকা হিসেবে।
বৃষ্টির কারণে গতকাল রাওয়ালপিন্ডির শেষ ম্যাচটি পরিত্যক্ত না হলে আরেকটি পরীক্ষা হয়ে যেত বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে শক্তিশালী কিনা। প্রকৃতি সে সুযোগ না দেওয়ায় আক্ষেপ বাংলাদেশ অধিনায়কের, ‘আমি খুবই হতাশ। খুব করে চেয়েছি এই ম্যাচটি খেলতে। আবহাওয়ার ওপর তো কারও হাত নেই।’ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো করতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে টাইগার দলপতি বলেন, ‘এই সংস্করণে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে যেভাবে খেলছিলাম, শেষ দুই ম্যাচে পারিনি। আমরা ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারি। আমাদের কার্যকর একটি পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’ তবে ফাস্ট বোলিং নিয়ে গর্ব ছিল শান্তর, ‘আমরা ফাস্ট বোলিংয়ে সব সময় সংগ্রাম করতাম, গত কয়েক বছরে অনেক ফাস্ট বোলার এসেছে। কয়েকজন ফাস্ট বোলার দেশে আছে, যারা ভালো করছে। তাসকিন, রানা ও ফিজ এখানে এসেছে। আমাদের খুবই ভালো একটি বোলিং ইউনিট আছে। আশা করি, তারা নিজেদের নিয়ে কাজ করবে এবং দলের জন্য সেরাটা দেবে।’ ব্যাটিং বিভাগের উন্নতি করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘নেটে আমাদের ভালোভাবে প্র্যাকটিস করতে হবে। স্ট্রাইক রোটেশন নিয়ে ভাবতে হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করব, ছেলেরা বুঝতে পারছে আমাদের কী করতে হবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের ধাঁধার নাম বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট
দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডকে চোকার বলা হতো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল থেকে বেশির ভাগ সময় বিদায় নেওয়ায়। ২০২৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে নিউজিল্যান্ড সে দুর্নাম কিছুটা ঘোচাতে পেরেছে। ফাড়া কেটে যাওয়ায় আরও দুটি আইসিসি টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলেছে কিউইরা।
দক্ষিণ আফ্রিকাও গত বছর টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট। চোকারদের উন্নতি হলেও বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ উন্নতি দেখাতে পারছে না। পারফরম্যান্সের গ্রাফটা দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। তেইশের ওয়ানডে বিশ্বকাপে হতাশ করেছেন সাকিব আল হাসানরা। টানা দুই ম্যাচ হেরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা।
পাকিস্তানের কাছে শেষ ম্যাচ হেরে গেলে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ হবে। বাংলাদেশ আইসিসির টুর্নামেন্টে কেন এভাবে ব্যর্থ হয়, কারও কাছেই সে উত্তর নেই। টাইগারদের এমন পারফরম্যান্সে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার, নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাকরা রীতিমতো হতবাক।
বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ খেলে ১৯৯৯ সালে। সেই থেকে কোনো ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েনি। বিরতিহীন টি২০ বিশ্বকাপ খেলেছে ৯টি। অনিয়মিত হলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেছে। আট জাতির এই ক্রিকেট টুর্নামেন্টেই সেরা সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ।
২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজারা। সেমিতে উন্নীত হওয়ার পেছনেও প্রকৃতির হাত ছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে সেরা চারে জায়গা করে নিয়েছিল। ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেরা সাফল্য বলতে ১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। সেখানেও বৃষ্টির আশীর্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ।
তবে পারফরম্যান্সের বিবেচনায় সেরা বিশ্বকাপ গেছে ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে সুপার এইটে খেলেছিল। গ্রুপ পর্বে ভারতকে, সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল তারা। টি২০ বিশ্বকাপ বিবেচনা করা হলে ২০০৭ সালের প্রথম আসর। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সুপার এইটে খেলেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুলরা।
বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে অধারাবাহিকতার কারণ জানতে চাওয়া হলে হাবিবুল বাশার বলেন, ‘আমি আসলেই বুঝতে পারি না, কেন এমন হয়। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ নিয়ে আমার খুব দুঃখ। বাংলাদেশের সেরা দল খেলেছে ওই আসরে। অনেক টপ প্লেয়ার ছিল এবং চূড়ান্ত ফর্মে ছিল। তাদের সঙ্গে যারা ছিল তারাও চূড়ায় ছিল। সেরা দল নিয়েও আমরা ভালো করতে পারিনি, ফেল করেছি। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। বিশ্বকাপে গিয়ে ভিন্ন ক্রিকেট খেললাম।’
২০১০ সাল থেকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে উন্নতি দেখাতে শুরু করে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ঘরের মাঠে ভালো খেলছে। তারাই কেন বিশ্বকাপের মঞ্চে ব্যর্থ হচ্ছে?
কারণ খুঁজতে গিয়ে বাশার বলেন, ‘আমরা দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে যত ভালো, টুর্নামেন্টগুলোতে অত ভালো না। এশিয়া কাপে কিছু সাফল্য আছে। বিশ্বকাপ পর্যায় কেন যেন নিজেদের হারিয়ে ফেলি। বিশ্বকাপ মঞ্চে হয়তোবা অন্য দলগুলোর পরিকল্পনা ভালো থাকে। বিশ্বকাপে চাপ অনেক বেশি থাকে। আমরা হয়তো চাপ হ্যান্ডেল করতে পারি না। একই পারফরমার বিশ্বকাপে গিয়ে পারে না। বিশ্বকাপে দল হিসেবেও ভালো খেলতে পারি না।’
বাংলাদেশ দলের সঙ্গে পাকিস্তানে থাকা নির্বাচক রাজ্জাকের মতে, ‘বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ভালো করতে হলে যে মানের ক্রিকেট খেলতে হয়, আমরা তা করতে পারি না। এ রকম টুর্নামেন্টে ভালো খেলতে হলে বেশ কয়েকজন বড় পারফরমার লাগে। দল হিসেবে ভালো খেলতে হয়। এই দুই জায়গাতে হয়তো কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। আরেকটি কারণ হতে পারে– দলের সক্ষমতার চেয়েও প্রত্যাশা বেশি থাকে। যেটা খেলোয়াড়দের চাপে ফেলে।’